চাঁদ আর সূর্য কথন ( কোরিয়ার রূপকথার গল্প )
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 2878বার পড়া হয়েছে।
সে অনেক অনেক দিন আগের কথা । এক গহীন বনের ধারে বাস করত এক বিধবা মহিলা । বেশ কিছুদিন আগে তার স্বামী মারা গেছে । ছোট্ট দুই ছেলে মেয়ে নিয়েই তার সংসার । তারা ছিল খুব গরিব । মা সারা দিন কাজ করে যে খাবার পেত তা দিয়েই একবেলা খেয়ে তাদের দিন কাটতো ।
একদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে মা চলে গেছে কাজে ,যাবার সময় বারবার ছেলে মেয়ে কে সাবধান করে গেছে যেন তারা দূরে না যায় আর সন্ধ্যা হলেই দরওয়াজা বন্ধ করে বসে থাকে ।
দিনভর কাজ শেষে মা ভাবছে আহা আমার বাছাদের নিশ্চয় অনেক ক্ষুধা পেয়েছে । সে যে বাসায় কাজ করত তারা ছিল অনেক ধনী আর দয়ালু । সেই ধনী পরিবারের গৃহ মালিকের বউ তাকে অনেক গুলো পিঠা দিল যাতে সে ছেলেমেয়ে নিয়ে পেট ভরে খেতে পারে ।
গরিব মা তার ছেলে মেয়েদের জন্য পিঠাগুলো ভাল করে বেঁধে বাড়ির পথ ধরল। যেহেতু সে থাকে বনের প্রান্তে এক ছোট্ট কুটিরে তাই সে তাড়াতাড়ি পা চালাল যাতে কোন বিপদে না পড়ে । কিন্তু সেদিন তার ভাগ্যটাই ছিল খারাপ । হঠাত এক বিশাল বাঘ তার পথ আগলে দাড়াল । বাঘ দেখে তো সেই গরিব মা ভীষণ ভয় পেল । সে ভয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগল । বাঘ তখন হুংকার দিয়ে বলল , ” আমি ভীষণ ক্ষুধার্ত বল কই খেতে পারি ” ? মহিলাটি সভয়ে উত্তর দিল ,” আমার কাছে কিছু পিঠা আছে ,আপনি খান ” ।
বাঘ তখন একে একে সবগুলো পিঠা খেয়ে ফেলল কিন্তু তারপর ও তার ক্ষুধা মিটল না ।
লোভী বাঘ আরও পিঠা চাইলে মহিলা রাগান্বিত হয়ে বলল যে ,তুমি আমার বাচ্চাদের সব খাবার খেয়ে ফেললে তারপর ও তোমার ক্ষুধা মেটে না? বাচ্চাদের কথা শুনে বাঘের চোখ চকচক করে উঠল। গরিব মহিলাটি তখন তার ভুল বুঝতে পেরে বলল না না আমার কোন বাচ্চা নেই ।কিন্তু ততক্ষণে জা বুঝার বাঘ বুঝে ফেলেছে ।
সে মনে মনে ভাবল আহ আমি তো বাচ্চাদের ভীষণ ভালবাসি কারন তারা খুব সুস্বাদু । একথা ভাবার সাথে সাথেই সে থাবা মেরে মহিলাকে মেরে ফেলল আর তার পোশাক পরে চলল কুটিরের দিকে ।
ওদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছে অথচ মা এখন এল না এই চিন্তায় ছেলেমেয়ে দুটো কান্না করছিল । এমন সময় বাঘ এসে দরজায় খটখট কড়া নারল । মেয়ে জিগ্যেস করল ,কে তুমি?
দুষ্টু বাঘ বলল আমি রে ,তোদের মা ।
ছেলেটির মনে কেমন যেন সন্দেহ হল ।সে আবার প্রশ্ন করল মা তোমার গলার স্বর এমন লাগছে কেন? বাঘ আবার উত্তর দিল ঠাণ্ডা লেগেছে বাছা । কিন্তু ভাইবোনের মনে সন্দেহ দানা বেধে উঠল ।
বোনটি বলল মা তোমার হাত দেখাও তো ।
বাঘ দরজার ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিল ।ওমা !!তোমার হাত এত কাল আর লোমশ কেন মা? সভয়ে জিগ্যেস করল ছেলে । দুষ্টু বাঘ তখন আটার মাঝে হাত দিয়ে হাত সাদা করে আবার দেখাল ।
কিন্তু ভাইটি এর মাঝে বাঘের লেজ দেখে ফেলেছে । ভয়ে অস্থির হয়ে দুই ভাইবোন তখন জানালা গলে পালালো । এদিকে বাঘ যখন দেখল ভাইবোন জানালা দিয়ে পালাচ্ছে সেও তাদের পিছু নিল । প্রাণভয়ে দুই ভাইবোন এক গাছের ডালে আশ্রয় নিল । ওদিকে দুষ্ট বাঘটি তাদের পিছু নিয়ে চলে এল গাছের নিচে । গাছের নিচেই ছিল এক কুয়া । কুয়ার পানিতে সে দেখল গাছে বসা দুই ভাইবোনকে ।
ব্যাস অমনি সে চেষ্টা করতে লাগলো গাছে ওঠার । বাঘকে গাছে উঠতে দেখে ভাইবোন আরও উঁচুতে উঠতে লাগলো ।
ভয়ে অস্থির দুই ভাইবোন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাল তাদের বাঁচানোর জন্য । সেই সময় আকাশ দিয়ে যাচ্ছিল পরীর দল । শিশুদের আকুতি শুনতে পেয়ে তারা ঈশ্বরের আদেশক্রমে দুই ভাইবোনকে আকাশে উঠিয়ে আনল আর দুষ্ট বাঘটিকে ফেলে দিল কুয়ার পানিতে ।
আকাশে গিয়ে ভাইবোন কি করবে তাই ভাই টিকে চাঁদ আর বোনকে সূর্য বানিয়ে রেখে দেয়া হল আকাশে ।
২,৪৮০ বার পড়া হয়েছে
শিশুতোষ মজার গল্প ভাল লাগল
ধন্যবাদ আপু ,পড়ার জন্য ।
অনেক ভালো লাগলো গল্পটি , লেখককে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ
মন দিয়ে পড়ার জন্য পাঠক কেও ধন্যবাদ 🙂
বাহঃ যথার্থ রুপকথার গল্পের মত।চমৎকার ছবিসহ চমৎকার গল্প। ধন্যবাদ মিলি উপভোগ্য পোষ্টটির জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ।চমৎকার মন্তব্য গুলো পেয়ে মনে হচ্ছে আমার অনুবাদ করা সার্থক 😀