তক্ষক
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 5182বার পড়া হয়েছে।
তক্ষক সাপের কথা আমি প্রথম পড়ি শরৎ চন্দ্র চট্টোপধ্যায় এর অরক্ষনিয়া নামক ছোট গল্পতে।গল্পের নায়িকা যখন তার বিধবা মায়ের সাথে মামা বাড়ি যায় তখন সে সন্ধ্যা রাতে শুনতে পায় আজব এক ডাক । সে সভয়ে তার মাকে জিজ্ঞেস করলে তার মামী উত্তর দেয় এটা তক্ষক সাপের ডাক ।
আমার ধারনা ছিল এটা মানে এই তক্ষক সাপ আর দশটা সাপের মতই লম্বা লিকলিকে ,কিলবিলিয়ে চলা এক প্রাণি। দুনিয়ার তাবৎ সরীসৃপ জাতীয় প্রাণি কে আমি যে শুধু ভয় পাই তা নয় সাথে প্রচণ্ড ঘৃণাও করি ।
যাই হোক তক্ষক সম্পর্কে আমার ভুল ভাঙ্গে যখন আমি সচক্ষে এই সর্প দর্শন করি । জনাব তক্ষক এর সাথে আমার সাক্ষাত হয়েছিল নীলগিরি রিসোর্টে ।
বান্দারবান ক্যান্টনমেন্ট থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা রওয়ানা দেই নীলগিরি এর উদ্দেশ্যে । বিকালের শেষ ভাগে পৌঁছাই সেখানে । পৌঁছেই নীলগিরির সৌন্দযে বিমহিত হয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ি ফটোসেশনে ।
তারপর গোসল সেরে হালকা চা নাস্তা খেয়ে নিলাম।বারান্দায় কাঠের চেয়ারে বসে দুচোখ ভরে দেখছি মেঘেদের খেলা ।
হঠাত কেয়া আপুর ডাকে আমি আর সিন্থি রুমে চলে যাই আর সেল ফোনটা ফেলে যাই চেয়ারে । কতক্ষণ পর যখন ফোন টা আনতে যাব ,শুনি এক অদ্ভুত শব্দ ।বারান্দা থেকেই আসছে শব্দটা থেমে থেমে ।কে যেন ডাকছে তক… খক ।
অবাক চক্ষে আপুর দিকে তাকাতেই বলল তোদের সালাম দিতে আসছে তক্ষক । একসাথে তিনজনে মানে আমি সিন্থি আর শিল্পি চিৎকার করে উঠলাম মানে কি? তক্ষক সাপ? বাপরে !!!
কেয়াপুর দারুন সাহস ।সে পরদা একটু সরিয়ে দেখাল আমাদের সাপ কে । ওমা দেখি এই সাপ সেই সাপ না মানে কিলবিলে কিছু না ।
বড়সর টিকটিকির মত ।তবে শরীরের চেয়ে মাথাটা বেশ বড় আর চোখ দুটো লাল । বেশ ভয়ংকর লাগছিল । মনে হচ্ছিল চোখ দুটো জ্বলছে ।
ক্যামেরা জুম করে দুইখান ছবি তুললাম ।
এরপর স্বভাবতই ইচ্ছে হল এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানার তাই সাহায্য নিতে হল গুগল এর ।
তক্ষক (Gecko) কর্ডাটা পর্বের একটিসরীসৃপ প্রজাতি।পিঠেরদিকধূসর, নীলচে-ধূসরবানীলচেবেগুনি-ধূসর।সারাশরীরেথাকেলালওসাদাটেধূসরফোঁটা।পিঠেরসাদাটেফোঁটাগুলিপাশাপাশি৭-৮টিসরুসারিতেবিন্যস্ত।কমবয়সীতক্ষকেরলেজেপরপরগাঢ-নীলওপ্রায়সাদারঙেরবলয়রয়েছে।মাথাঅপেক্ষাকৃতবড়, নাকেরডগাচোখাওভোঁতা।চোখবড়বড়, মণিফালিগড়নের।লেজসামান্যনোয়ানো।দৈর্ঘ্যনাকেরডগাথেকেপাপর্যন্ত১৭সেমিএবংলেজওপ্রায়ততটা।তক্ষকেরডাকচড়া, স্পষ্টওঅনেকদূরথেকেশোনাযায়।ডাকেরজন্যইএইনাম।কক্কক্ আওয়াজদিয়েডাকশুরুহয়, অতঃপর ‘তক্-ক্কা’ ডাকেকয়েকবারওস্পষ্টস্বরে।এরাকীটপতঙ্গ, ঘরের টিকটিকি ছোটপাখি ও ছোটসাপ খেয়ে থাকে।ছাদেরপাশেরভাঙাফাঁক-ফোঁকড়বাগর্তেঅথবাগাছেবাসকরে।
বাংলাদেশ মায়ানমার লাওস চিন থাইল্যান্ড কম্বোডিয়া ভিয়েতনাম সহ পৃথিবীর বিভিন্নদেশেপ্রায়৬০০প্রজাতিরতক্ষকেরবাস। (সূত্রঃ উইকিপিডিয়া)
অনেকে ভুল ক্রমে তক্ষককে বিষাক্ত সরীসৃপ হিসেবে চিহ্নিত করে। আসলে এরা অত্যন্ত নিরীহ প্রানি ।
সম্প্রতি এক খবর পড়ে তো আমার চক্ষু ছানাবড়া !! তক্ষক ধরতে পারলেই কোটিপতি !! মানুষের অন্ধ বিশ্বাস আর কুসংস্কারের কারনে বিপন্ন এই তক্ষক ।দেশিয় কি সব ওষুধ বানানোর জন্য নির্বিচারে তক্ষক ধরা হচ্ছে আবার চিনে এর চাহিদা থাকার জন্য পাচার ও করা হচ্ছে। দেশীচিকিৎসায়এদেরতেলব্যবহূতহয়।বর্তমানে এই প্রাণিটির অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন ।ব্যাপকনিধনইএর বিপন্ন হওয়ারকারণ।
পরিবেশের ভারসাম্য আর প্রাণী বৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এই চোরা শিকারিদের কারনে ।
মানুষ সত্যি অদ্ভুত প্রানি ।সবকিছু যেনে বুঝেও তারা ভুল পথে পা বাড়ায়। যার শুরু আছে তার শেষ আছে ,যে একবার চলতে শুরু করে সে কখন না কখনো অবশ্যই থামবে । প্রকৃতির কিছু নিয়ম আছে যা অমোঘ । অথচ সবকিছু যেনেও চির যৌবন পাওয়ার জন্য মানুষ আজ তক্ষকের ভক্ষক । একে তো ব্যাপক হারে বন জঙ্গল ধ্বংস করে বিপন্ন করা হচ্ছে প্রানিকুল তার উপর আবার ওষুধ বানানোর জন্য হত্যা আর পাচার করা হচ্ছে তক্ষক।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা আর একটি প্রজাতিকে বিলুপ্ত হবার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য যথাযথ করতিপক্ষের এখনই পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে । অন্যথায় আরও কিছু প্রাণির মত পৃথিবী থেকে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে এই প্রাণি।
৪,৯৩৬ বার পড়া হয়েছে
ওমা টিকটিকি কি তক্ষক সাপ নাকি ?অবাক হয়ে গেলাম আপনার পোষ্ট পড়ে।মজার বিচিত্র বৈশিষ্টয জানলাম।
অনেক ধন্যবাদ পোষ্টটির জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
ধন্যবাদ আপু । টিকটিকি আর তক্ষক একি পরিবার ভুক্ত হলেও এরা এক না । একটু বড় আর অনেক রঙের হয় । এরা ছোট টিকটিকি ধরে খায়
আমিও চিনি এই তক্ষক, এটি দেখতে প্রায় টিকটিকির মত, তবে ছোট কালে তক্ষকের ডাক শুনে খুব ভয় পেতাম।
আমিও এর ডাক শুনে দারুন ভয় পেয়েছিলাম
এই প্রথম এর নাম শুনলাম।
টিকটিকির মতই দেখতে।
ধন্যবাদ আপি
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ 🙂
আপি কেমন আছেন? আর কোথাও ভ্রমণে যাবেন না?
দুঃখিত আপি উত্তর দিতে দেরি হয়ে গেল ,আসলে দৌড়ের উপর আছি ।ভিসা নিয়ে বসে আছি কিন্তু সবার ছুটির জন্য ভারত জেতে পারছি না ।আশা করি নেক্সট মাসে বা জানুয়ারিতেই যাব
জানা গেলো অনেককিছু…
অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য ভাল থাকুন 🙂