পুনে (ইন্ডিয়া)…… ভ্রমন (শেষ)
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 634বার পড়া হয়েছে।
পার্বতী পাহার দেখা শেষ হলে আমরা আবার রওয়ানা হলাম দিনকার জাদুঘরের উদ্দেশ্যে………..
কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা দিনকার যাদুঘরে উপস্থিত হলাম ।
ঢুকে দেখি উনারা বলে নো ক্লিক । মানে ছবি তুলতে পারব না । এইডা কিছু হইল । এত সুন্দর সংগ্রহ আর ছবি তুলতে পারব না । তারপরও কয়েকটা ক্লিক দিছি লুকিয়ে ।
৪। আগেকার রাজা বাদশাদের রাণীদের জিনিসপত্র দেখে খুব ভাল লাগছিল । খুব সুন্দর করে সাজানো জিনিসপত্র …….. ।
৫। পান সুপারী কাটা যন্ত্র থেকে শুরু করে সবই প্রাত্যাহিক জীবনের ব্যবহার্য জিনিস……
৬। কাপড় বুনার মেশিন । ঢুল তবলা, নানান বাদ্যযন্ত্র । কাঠের তৈরী সোফা সেট, অনেক অনেক সুন্দর কাটের তৈরী জিনিস ছিল । ধ্যত্তেরী ছবিই তুলতে পারলাম না । ম্যাডাম সাথে থাকাতে । ঘুরে ঘুরে দেখা ছাড়া আর করার কিচুই ছিল না । ফাকে এক ভাইয়াকে দিয়ে নিজের কয়েকটা ছবি তুলালাম ।
রাজা দিনকার কেলকার যাদুঘর পুনে , মহারাষ্ট্র, ভারত
রাজা দিনকার কেলকার এর পুত্রের অসময়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় । তার স্মৃতির প্রতি উৎসর্গীকৃত এই যাদুঘরটি (১৮৯৬-১৯৯০)।
১৪তম শতাব্দিতে থেকে তিনতলা বিশিষ্ট এই ভবনটিতে বহুসংখ্যাক ভাষ্কর্য সংগৃহীত আছে । হাতির দাঁতের তৈরী বিভিন্ন অলংকার, স্বর্ণ এবং রৌপ্যের তৈরী অলংকার, নানান বাদ্যযন্ত্র (বিশেষ সুক্ষ্ম সংগ্রহ) এবং যুদ্ধ অস্ত্রসমূহও রয়েছে ।
এখানে ১৯২০ সাল থেকে সংগ্রহ শুরু হয়েছিল এবং ১৯৬০ সালে এখানে প্রায় ১৫ হাজার সামগ্রী অন্তর্ভূক্ত ছিল । ১৯৬২ সালের মধ্যে ড: কেলকার মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের Archaeology বিভাগের দায়িত্বে দেন সংগ্রহের জন্য ।
যাদুঘরে ঝুলিতে এখন ২৫ হাজারের উপরে বস্তু সামগ্রী আছে প্রদর্শনের জন্য । এগুলোর বেশীর ভাগই ১৮ এবঙ ১৯ শতাব্দী থেকে সংগৃহ শুরু হয়েছে যা প্রধানত দৈনন্দিন জীবন থেকে ভারতের বিভিন্ন আলংকারিক আইটেম এবং অন্যান্য শিল্প বস্তু যেমন- ভারতীয় শিল্পীদের তৈরী করা দরজার ফ্রেম, জাহাজ অলংকরণ, বাদ্যযন্ত্র , চিত্রকর্ম এবং ভাস্কর্য্যসমূহ এগুলো তাদের অসামান্য শিল্পকর্মের উদাহরণ উপস্থাপন করে ।
এর অন্যতম আকর্ষন মাস্তানী মহল । রাজা কেলকার কর্তৃক প্রণীত মাস্তানী মহল (পেশওয়া বাজি রাও এর স্ত্রী) ছিল অন্যতম ।এখানে সংগ্রহে আছে সুন্দর টুকরা বীজ উপর গণেশ এর খোদাই করা মূর্তি; গণেশ এর মূর্তি যা খুবই বিরল । বাম দিকে ট্র্যাংক এর সাথে প্রদর্শিত গণেশের মূতির্টি নির্মান বা আঁকা কঠিন ছিল ।
যাদঘর ঘুরে দেখা পর্যন্তই ছিল ট্যুরের অংশ । সেখান থেকে আমরা মার্কেট চলে গিয়েছিলাম ।
বাকি কয়দিন ট্রেনিং শেষে আর ঘোরাঘুরি হয়নি শুধু কেনাকাটা ছাড়া ।
=============== ১০ মিনিট সমুদ্রে=========================
তারপরও সবাই প্লান করলাম যে মুম্বে পৌছে আমরা কিছুক্ষনের জন্য হলেও সমুদ্রে যাব । তাই ট্রেনিং শেষে ১৮ তারিখ বেলা ২টায় রওয়ানা হলাম মুম্বের উদ্দেশ্যে । কিন্তু ভাগ্য খারাপ পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যা ৭টা বেজে গেছিল । তবুও আমরা মত পাল্টাইনি । রাত হলেও গ্রুপে গ্রুপে সমুদ্রে যাব এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা রেডি হই সমুদ্রে যাব বলে ।
সে মোতাবেক প্রত্যেক মেয়ের সাথে যে কোন একজন বা দুজন ছেলে থাকবে ঠিক । আমি আর দুইজন কলিগ ভাইয়া সিএনজিতে উঠলাম বিচে যাবার জন্য ।হায় মাবুদ বেটা বীচ শুনতে গিয়া শুনছে ব্রীজ । সে আমাদেরকে নিয়ে ব্রীজে নামাইয়া দিছে । একুল ওকুল দুইকুলই হারাই । মানে সাথীদের হারিয়ে ফেলেছি । ব্রীজে গিয়ে দেখি লোকজনের হাটাচলা নাই । গুটি কয়েক সিএনটি, অটো চলছে …… কাউরে জিগ্যেস করব তাও পাচ্ছি । সাথের ভাইয়ারা বলতেছে,ফাতেমা আপু আপনি দুরে দাড়ানো ছেলেদের জিগ্যেস করুন আমরা তো হিন্দি কথা বলতে পারি না ।
তো আমি কয়েক জন ছেলে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আড্ডা দিছিল । তখন আমি এক্সকিউজ মি বলে, জিগ্যেস করলাম এহা পর বীচ কাহা হে? হাম বাংলাদেশ সে আয়া । হাম লোগো কো বীচ দেখনা হে ।
হায় মাবুদ এরা দেখি বীচ বলতে ব্রীজ বলে ।
আমাকে দেখাইয়া দিল যে, ও তো ব্রীজ হে
আমি বললাম….. নেহি এ নেহি । বীচ বীচ, হাম লোগোকো সমুন্দর দেখনা হে ।
তখন গিয়া বুঝলো বেটারা । তখন আমাকে বুঝায়ে দিল যে একটা ট্যাক্সি করে জুহু বিচ নামের জায়গায় যেতে । উফ কি যে পরিস্থিতি । যাই হোক থ্যাংকু বলে এদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ট্যাক্সি নিলাম ।
উরে বাপসসসসসসস সেই ট্যাক্সি তে উঠলাম কোন কূল কিনারা পাচ্ছি না । আমরা তিনজনই ভয় পাচ্ছিলাম । কোথায় নিয়ে যাচ্ছে । কিছুই বুঝতেছি না । এদিকে ট্যাক্সি বিল দেখে চক্ষু চড়কগাছ ।যাচ্চি তো যাচ্ছিই……… অবশেষে জুহু বিচে পৌঁছলাম । উফ সমুদ্র দেখব মনে করেই সব কষ্ট শেষ হয়ে গেলমুহুর্তে । তিনজনই গেলাম বিচের কাছে …….. সাদা সাদা ঢেউ আসছে । কি মজা লাগতেছে আমার ।কিন্তু সময় বেশী নাই । ভাইয়ারা বলতেছেন আপু নাইমেন না ।সময় নাই বেশী । কে শুনে কার কথা । আমি স্যান্ডেল হাতে নিয়ে এক দৌঁড় পানিতে……… ইশ সে আনন্দ ভাষায় বুঝাতে পারব না ।
১।
২। আমাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে
সাদা সাদা ঢেউ অনেক দুর থেকে এসে আমাকে কোমড় পর্যন্ত ভিজিয়ে দিল । আশে পাশের মানুষের আনন্দও দেখতে লাগলাম প্রাণ ভরে । ছোট ছোট বাচ্চারা কি সুন্দর খেলছে পানিতে । কিছু ছবি উঠালাম … মাত্র ১০/১৫ মিনিট থেকে চলে আসলাম ।
৮। কি ময়লা সে বিচটা দেখেন ইয়া ছি । ময়লায় দাড়িয়ে আমি ……
১৩। একটা আপু বলল মোজে ভি এক ফটো উঠানি হে । তো তুলে দিলাম……
এখন ভাইয়ারা বলতেছে যে আরেকটা বিচে যাবে । কি যেন নামটা মনে করতে পারছি না । যেই কথা সেই কাজ ……আবার ট্যাক্সি নিলাম
১৫।
আবারো সেই একই অবস্থা রাস্তা ফুরায় না । উৎকণ্ঠা বাড়ছে তিনজনেরই । একজন তো সে জায়গায় যেতে নারাজ । আর একজন বলছে আর তো আসা হবে না এ জায়গায় । প্লিজ এক নজর দেখে যাই।
কিন্তু ট্যাক্সির ভাড়া নিয়ে মহাচিন্তিত । তিনজনেরই পকেটের অবস্থা ভাল না । আমার তো নাই ই । আমার যা ছিল সবাই ধার নিয়ে শেষ করে দিছে ।
অবশেষ পৌছলাম সেখানে । আসলেই অনেক সুন্দর জায়গা । বসা যেত এখানে অনেক্ষন কিন্তু সময় হাতে ছিল না । হোটেলে ফিরতে হবে । এখানে অবশ্য পানিতে নামার কোন সুযোগ ছিল না । শুধু বাঁধাই করা সাগরের পাড়ে কিছুক্ষন বসার স্বাধ ছিল । কপোত কপোতিরা যেভাবে বসেছিল একটু লজ্জাও লাগছিল …….. দুর থেকে ঢেউ এসে পাড়ে ধাক্কা দিচ্ছিল আর গর্জনে যেন মনটা ভরে গেছিল । রাস্তায় কি সুন্দর ঘোড়ার গাড়ি চলছে রং বেরঙে সাজানো । অদ্ভুত মুহুর্তগুলো কিন্তু খুবই অল্প সময় ।
১৭। দ্বিতীয় বিচে দুর থেকে এমন সুন্দর দেখাচ্ছিল
তারপর তাড়াহুড়া করে আবার ট্যাক্সি নিলাম । কিন্তু কিন্তু কিন্তু …… কোন ট্যাক্সিওয়ালাই হোটেলের নাম চিনে না । আর আমরা সে জায়গাটার নাম বলতে পারতেছিলাম না । …. অনেক খোঁজাখুজির পর পেলাম একজন বৃদ্ধ শিখ ড্রাইভারকে তিনি রাজী হলেন যদিও তিনিও চিনতে পারছিলেন না সে জায়গার নাম ।
ভয়ে তিনজনই ঘামতেছিলাম । কি আজব হোটেলের ঠিকানা নিলাম না কেন? অথবা যে স্যারের কাছে ফোন ছিল তার নাম্বারও ছিল না । রাস্তায় জিগ্যেস করতে করতে যাচ্ছি আর ট্যাক্সি বিল বাড়ছে তো বাড়ছেই । রাত প্রায় ১১ টা বাজে । মোম্বে শহরটা তেমন সুন্দর লাগেনি ।
বাংলাদেশের মতই এলোমেলো আর গিজ গিজ । এক জায়গায় আমাদের ট্যাক্সি জ্যামে পড়ল । ঠিক সেই মুহুর্তে এক দল হিজরা আসল জানালার পাশে ছিল ভাইয়াটা….. ওরা বলছে হায় আল্লাহ কুছ তো দে…… কুছ তো দে . কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এক হিজরা দেখি ভাইয়ার গালে ঠুয়া মারতে এগিয়ে এল । হিহিহিহি হাসতে হাসতে আমি শেষ । ভাইয়া তো ভয়ে গুটি সুটি মেরে বসে আছে । তখনই ট্যাক্সিটা ছেড়ে দিল আমরাও বেচে গেলাম । শেষ পর্যন্ত জিগাইতে জিগাইতে ঠিকানায় এসে পৌছলাম বারটা বাজে । বিল উঠছিল ৭০০ রুপি ….. এটা শুধু দ্বিতীয় বিচ থেকে হোটেল পর্যন্ত ।
এখানে অনেক ঘটনা ঘটেছে । লিখতে গেলে বড় হয়ে যায় । তাই লিখলাম না আর । হোটেলের ছোট রুমে আমরা সবাই যে যার মত এসে পৌছলাম। দেখলাম সবাই মাত্র ৩৫ রুপি ভাড়া দিয়ে সমুদ্র দেখে এসেছে । আমরা কই গেছিলাম আল্লাহ মালুম । সবাই কি সুন্দর সমুদ্র থেকে ঝিনুক কুড়িয়ে এনেছে । আর আমার কপালই খারাপ এত দুরে গিয়ে কিচুই করতে পারলাম না । তবুও তো সমুদ্র দেখেছি । কি মজা । জীবনের প্রথম সমুদ্র।
ভ্রমন পর্ব এখানেই সমাপ্ত । আমি জানি সবাই আমার প্রতি খুবই বিরক্ত । কতগুলা পর্ব দিছি । কিন্তু উপায় ছিল না কারণ ছবি বেশী দিলে পর্ব ছোট ছোট করে দিতেই হচ্ছে । মাফ করবেন বিরক্ত করার জন্য ।
৭১২ বার পড়া হয়েছে
খুব সুন্দর ভ্রমন পোষ্ট। বেশ মনে ধরেছে, তোমার সাথে আমিও ঘুরে আসলাম পুনেতে। অনেক অন্নেক ভালোলাগা আর মুগ্ধতা।
অনেক ধন্যবাদ আপু
ইচ্ছে আছে যাওয়ার।
ইনশাল্লাহ গেলে ছবি তুলবেন বেশী করে
আমার সাধ হয় যেতে ।
ইচ্ছে হলে ঘুরে আসতে পারেন
ধন্যবাদ
সুন্দর অতি সুন্দর
সংগ্রহ অতি সুন্দর
খুব ভাল থাকবেন
থ্যাংকস দাদা ভাল থাকুন