বিজ্ঞান কল্পকাহিনী : পঞ্চম স্বীকার্য (তৃতীয় পর্ব)
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1047বার পড়া হয়েছে।
রাতের খাবারের পর আলিম আর তার স্ত্রী মৌমি দুইজনই বসে মেইলের কথাগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করল।
‘আমি শিওর তোমার পরিচিত বন্ধুবান্ধবের কেই এই মেইল দিয়েছে।’ মৌমি বলে।
‘হতে পারে।’ তারপর একটু থেমে, ‘কিন্তু কেন করবে?’
‘তোমার সাথে মজা করল। তুমি তো সাইন্স ফিকশন, ফ্যান্টাসী, ভুতের গল্প পছন্দ কর তাই হয়তো এমন করেছে।’
‘হতে পারে।’ আলিমও বলে।
এরই মধ্যে প্রতিটা মেইলই আলিম প্রিন্ট দিয়ে ফেলল। তারা দুজনই বারবার সেগুলো পড়তে থাকল।
‘মেইলটা যে তোমার পরিচিত সার্কেলের কেউ দিয়েছে সেটা প্রমান করা কিন্তু খুবই সোজা।’ মৌমি আলিমের হাতে চায়ের কাপ তুলে দিয়ে বলল।
‘কীভাবে?’
‘ভাল করে পড়লে দেখবে নিশ্চয়ই কোন ফাঁক-ফোকড় আছে।’
‘সেটা কী রকম?’
‘আমি কী ভাবে বলব? চল, চেষ্টা করে দেখি।’
আলিম আর মৌমি দুজনই ডাইনিং টেবিলের পাশাপাশি দুটো চেয়ারে বসে প্রথম মেইলটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে শুরু করে।
মৌমি বলে, ‘যোগাযোগ করার একটি মাত্র মাধ্যম বলতে প্রহী ইমেইলের কথা লিখেছে। সে তোমার ডিটেইলস তুলে ধরে তোমাকে চমকে দিতে চেয়েছে। তাই না?’
‘হু’
‘ভাল করে পড়লে কিন্তু এখানে চমকানো কিংবা অবাক হবার মতো কোন কথা নেই। তুমি কি বল?’
‘হ্যাঁ। এখানে অবাক হবার কিছুই নেই। আমি কিন্তু অবাকও হয়নি।’ আলিম জবাব দেয়।
‘তবে’, আলিম বলে চলে, ‘মেইলের তারিখ দেখে আমি অবাক হয়েছি। ডোমেইন নেম চেক করেও ঐ মেইলের ডোমেইন এর অস্তিত্ব পাইনি।’
‘তাহলে প্রথম মেইলের ক্ষেত্রে এটাই একমাত্র রহস্য। তবে এ রকম কিন্তু হতে পারে। আমি কম্পিউটার রিলেটেড তেমন একটা বুঝি না তারপরও মনে হয় এটা অসম্ভব না।’
‘সেটা ঠিক।’
‘চল দ্বিতীয়টা পড়ি। নাকি আবার চা খেতে ইচ্ছে করছে?’ মৌমি বলে।
‘দিতে পার।’ আলিম সম্মতি দেয়।
মৌমি যতক্ষণে চা আনল আলিম ততক্ষণে দ্বিতীয় মেইলটা বেশ কয়েকবার পড়ে ফেলল।
মৌমিও পড়ল, ‘এই মেইলে অবশ্য তেমন কোন তথ্য নেই, একমাত্র পাঠানোর তারিখ ছাড়া।’
‘হ্যাঁ’ আলিম একমত হয়।
তৃতীয় মেইলটা পড়া শুরু করেও আলিম আবার দ্বিতীয় মেইলটায় চলে আসে।
‘দেখ একটা লাইন লেখা যেখানে সে সংশয় প্রকাশ করেছে যে আদৌ আমি মেইলটা পেয়েছি কিনা।’
‘হ্যাঁ তাতে কি?’
‘সে যদি ভবিষ্যৎ থেকে মেইল করতে পারে তবে সে কোন মেইল পড়ার অটো নোটিফিকেশন পাবে না!’ আলিম বলে।
‘তাই তো!’
‘তাহলে হতে পারে যে আমার কোন পরিচিত বন্ধুরাই এটা করেছে।’ আলিম জবাব দেয়।
‘চল তৃতীয় মেইলটা পড়ি।’ মৌমি বলে।
‘এখানে কিন্তু মেইল পাওয়ার একটা নিশ্চয়তার কথা ইঙ্গিত আছে।’ আলিম বলে।
‘আর কোন সূত্র?’ মৌমি বলে।
‘প্রহী নামের লোকটা কোন কিছুর ব্যাপারে একটু তাড়াহুড়ার মাঝে আছে মনে হচ্ছে।’
‘হুম’ তাই তো দেখছি।
‘সে কারনেই আমি তাকে একটা ফিরতি মেইল দিয়েছিলাম এই যে দেখ।’ আলিম মেইলটা মৌমির দিকে এগিয়ে দেয়। মৌমি সেটা পড়ে।
‘আমি প্রহীকে মেইল করার সাথে সাথেই সে জবাব দেয়। মনে হয় সে আগে থেকেই লিখে রেখেছিল।’
‘আমারও সেটাই মনে হচ্ছে।’ মৌমি চায়ের কাপটা নামিয়ে রেখে জবাব দেয়।
‘প্রহী কোন একটা আবিস্কারের কথা বলছে। কোন একটা সূত্রের কথা বলছে। আবার সে বলছে, সে নাকি আমারই বংশধর!’
‘পুরো ব্যাপারটা কেমন জানি অতিমাত্রায় সায়েন্স ফিকশন হয়ে গেল না?’ মৌমি বলে।
‘প্রহী আসল না নকল সেটা জানার একটা সহজ পরীক্ষা করা যায়।’
‘কী?’
‘আজ সেপ্টেম্বরের ষোল তারিখ। এখন বাজে রাত এগারোটা। তাকে একটা মেইল দিই। সতের সেপ্টেম্বরে কী ঘটবে সে যেন সেটা জানায়। যদি দেখি ঠিক ঠিক মিলে যাচ্ছে তাহলে বুঝব এখানে ভবিষ্যতের কোন যোগাযোগ আছ।’
‘ভাল বুদ্ধি। চল এখনই পরীক্ষা করি।’ মৌমির চোখ দুটোতে যেন একটা ঝিলিক দেখা গেল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আলিম লিখল-
জনাব প্রহী
আপনার মেইল গুলো পড়েছি। বলতে পারেন খুব ভালোভাবেই পড়েছি। আমার ধারণা আমার বন্ধু শ্রেণীর কেউ আমার সাথে মজা করছে। তারপরও আমি আপনাকে মেইল করছি এক অদ্ভুত কারণে। কারণটা না হয় আপনার জানা নাই থাকল। আপনি যদি সত্যি সত্যি ছয়শ বছর পরের মানুষ হন তাহলে নিশ্চয়ই আপনি জানবেন আগামীকাল ২০১২ সালের সতের সেপ্টেম্বরে কী কী ঘটবে! আপনাদের রেকর্ডে আছে এরকম নূন্যতম দশটা ঘটনা আমাকে অতিসত্ত্বর জানাবেন।
বিনীত
আলিম।
‘ঠিক আছে না? কী বল?’ আলিম মৌমিকে বলল।
‘হ্যাঁ।’ এখন বুঝব আসল না নকল।
হিসেব অনুযায়ী এখনই উত্তর আসার কথা। আলিম মেইল বক্সে রিফ্রেশ করে। কোন উত্তর নেই।
‘গতবার কিন্তু সাতে সাথেই উত্তর এসেছিল।’আলিম বলে।
‘একটা ব্যাপার কিন্তু এখনও আমরা কেউই খেয়াল করিনি।’
‘কী?’
‘ছয়শ বছর পরের মানুষ আমাদের মেইল দিল অথচ ভাষার কোন বিবর্তন নাই। এখনকার মতই। অবাক না?’ মৌমি বলে।
‘হ্যাঁ!’
‘তারমানে নিশ্চিত কেউ তোমাকে বোকা বানাচ্ছে!’
আলিম আবারও রিফ্রেশ করে। কোন মেইল নেই।
‘হ্যাঁ বোকা বানিয়েছে। অনেকক্ষণ ধরে খালি খালি সময়ও নষ্ট করলাম। কেমন জানি ডিটেকটিভ ডিটেকটিভ ভাব ধরলাম। এত বড় বেকুব জীবনে হইনি।’ আমিল বলে।
‘থাক বাদ দাও। সময়টা কিন্তু ভালোই কেটেছে।’ মৌমি বলে।
‘সেটা বলতে পার।’
‘চল ঘুমাতে যাই।’ মৌমি বলে।
‘খালি খালি বোকা সাজার জন্য লজ্জাই লাগছে।’ আলিম বলে।
‘বাদ দাওতো চল ঘুমাই।’ মৌমি সান্ত্বনার ভঙ্গিতে বলে।
আলিম তখন দশমবারের মত রিফ্রেশ করল।
উত্তর নেই।
সে কম্পিউটার অফ করে দেয়।
আলিম তখনও জানত না যে আগামীকাল সারাদিনে পৃথিবীতে অনেক ঘটনাই ঘটবে যা সে সকাল বেলাই জেনে যাবে!
সে আরও জানত না যে গনিতের বহু পুরনো এক রহস্যময় সমাধান দেখার সৌভাগ্য তার হতে যাচ্ছে।
চলবে …
১,১০৯ বার পড়া হয়েছে
কাহিনী পড়ে ভাল লাগল।
ভাল লাগল । কিন্তু ঘটনা বড়ই ধীর গতিতে এগুচ্ছে । শুভ কামনা ।
আলিম তখনও জানত না যে আগামীকাল সারাদিনে পৃথিবীতে অনেক ঘটনাই ঘটবে যা সে সকাল বেলাই জেনে যাবে!
সে আরও জানত না যে গনিতের বহু পুরনো এক রহস্যময় সমাধান দেখার সৌভাগ্য তার হতে যাচ্ছে।
এবার রিপ্লাই দতে দেরী করছে কেন প্রহী?পড়ছি ঘটনা নাটকীয়তায় গড়াচ্ছে এবার।
আমিও আলিমের ভূত প্রেত রহস্য উপন্যাস আচানক ৩৭ সাল এসব খুব দেখতাম।এখন ভয় পাই।জীবনের মায়া চলে আসছে।
অসাধারন বিজ্ঞান কাহিনী উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় আছি ভালবাসা আগ্রহ নিয়ে।