বিজ্ঞাপন
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 885বার পড়া হয়েছে।
একবিংশ শতাব্দীর চতুর্থ দশকের কোন এক শরতের সকালে গুরুত্বপূর্ণ এক আলোচনা চলছে।
রুদ্ধদ্বার বৈঠক।
আলোচনায় আছেন জাতিসংঘের মহাসচিব ও তার বিশেষ দূত, নাসার মহাপরিচালক ও পাঁচটি ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রের শীর্ষ প্রতিনিধিরা।
আলোচনার সিদ্ধান্ত যদি সঠিক আর ইতিবাচক হয় তবে সেটা হয়তো পুরো পৃথিবীর দুই হাজার কোটি মানুষের জীবনযাত্রার মান একধাপ এগিয়ে দেবে।
‘আমি তাদের প্রস্তাবপত্রটি খুব ভালোভাবে পড়ে দেখেছি।’, নাসার মহাপরিচালক বলতে থাকেন, ‘আমাদের কোন ক্ষতি কিংবা তারা বৈজ্ঞানিক কোন গবেষণায বাধা দিবে না বলে লিখিত দিবে।’
‘শুধু বিশ বছরের জন্য ওরা দুইশটা লেজার সিগনাল সেন্টার বসাবে। আর সেটা বসানোর পুরো দায়িত্ব নাসাকেই বহন করতে হবে। ওরা মোট খরচের পাঁচগুণ নাসাকে অগ্রীম দেবার প্রস্তাব দিয়েছে। আর পুরো কাজটি সম্পন্ন হলে তারা প্রতিবছর জাতিসংঘের সকল ধরনের খরচ বহন করবে। প্রতিবছর বিশ মিলিয়ন দরিদ্র মানুষকে ওরা দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে জাতিসংঘ নির্ধারিত অর্থ জাতিসংঘের কোষাগারে জমা দিবে।’, নাসার মহাপরিচালক একসাথে সকল প্রস্তাবগুলো সংক্ষেপে পড়ে যান।
‘পুরো প্রস্তাবটি অত্যন্ত লোভনীয়। তবে সেখানে বেশকিছু ফাক ফোকড় থাকতে পারে।’, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলতে থাকেন। ঠিক তখন জাতিসংঘের এক প্রতিনিধি জানান যে প্রস্তাবদাতা কোম্পানীর শীর্ষ তিন কর্মকর্তা আলোচনায় যোগ দিতে চলে মকরত।
এ ঘটনার সূত্রপাত প্রায় তিনমাস আগে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও বিক্রির দিক থেকে সবচেয়ে বেশী আয় করা ঔষধ কোম্পানী জাতিসংঘকে একটি প্রস্তাব দেয়। তাদের নতুন একটি ঔষধ বাজারজাত করনের জন্যই এই প্রস্তাব। পুরো প্রস্তাবটি মাত্র দশলাইনের কিন্তু এর মাঝেই জড়িত রয়েছে নাসা ও পুরো পৃথিবীর দুই হাজার কোটি মানুষ।
জাতিসংঘের মহাসচিব উঠে দাঁড়িয়ে ঔষধ কোম্পানীর প্রধানের সাথে করমর্দন করে বসতে অনুরোধ করেন।
‘আমরা সরাসরি আলোচনায় চলে যেতে পরি।’, নাসার মহাপরিচালক বলেন।
মাথা নেড়ে হালকা একটু হাসি টেনে ঔষধ কোম্পানীর প্রধান সম্মতি দেন। তারপর তিনিই শুরু করেন, ‘দেখুন আমরা চাইলে পুরো প্রকল্পটা আমরা নিজেরাই করতে পারতাম। ভবিষ্যতে কোন আইনি ঝামেলায় পড়তে চাচ্ছি না বলেই আমরা সবার সাথে একটা চুক্তি করতে চাচ্ছি। যদিও ভবিষ্যতে আমরা কোন আইনি ঝামেলায় পড়ব বলে মনে করি না।’
সবাই জানে এবং বুঝে যে আসলেই কোম্পানীটি ভবিষ্যতে কোন ঝামেলায় পড়ত না। তারপরও তারা পৃথিবীর সব মানুষের কথা ভেবেছে।
‘আপনারা দু’শ লেজার সেন্টার বসিয়ে ঠিক কী করতে চান?’ নাসার মহাপরিচালক জানতে চান।
‘আমাদের প্রস্তাবনা অনুযায়ী চুক্তি সম্পাদনের পূর্বে সেটা প্রকাশ করতে আমরা বাধ্য নই।’ কোস্পানীর প্রধান বলেন।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি বলেন, ‘আপনারা বলেছেন টানা বিশ বছরের জাতিসংঘের সকল খরচ এবং প্রতিবছর বিশ মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দেওয়ার খরচ বহন করবেন।’, বিশেষ প্রতিনিধি কোম্পানীর প্রধানের দিকে তাকিয়ে একটু জোড় গলায় বলেন, ‘আমরা চাই প্রকল্প বাস্তবায়নের একবছরের মধ্যে আপনারা পাঁচ বছরের সকল খরচ অগ্রীম দিয়ে দেবেন।’
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ সবাই বুঝতে পারলেন জাতিসংঘের প্রতিনিধি একটি অকল্পনীয় বিশাল অংকের খরচ অগ্রীম দাবি করেছেন। এমনকি বিশেষ প্রতিনিধিও প্রস্তাবটা তুলেই বুঝতে পারলেন যে একটি অবাস্তব প্রস্তাব দিয়ে ফেলেছেন।
কোম্পানীর প্রধান তার চীফ ফিনানসিয়াল অফিসারের সাথে মাথা নুইয়ে কথা বলে ক্যালকুলেটরে কিছু ডিজিট চেপে জাতিসংঘের প্রতিনিধির দিকে মুচকি হেসে বললেন, ‘আমরা রাজি। আপনারা এটা চুক্তিপত্র রাখতে পারেন।’
‘আমরা খুব শ্রীগ্রই মঙ্গলে মনুষ্যবাহী এক মহাকাশযান পাঠাব। দশ বছরের প্রজেক্ট এটা। আমরা চাই তার পুরো খরচ আপনারা বহন করবেন।’ এবার কথা তুলেলেন নাসার মহাপরিচালক।
‘এর আনুমানিক বাজেট কত হতে পারে?’ ঔষধ কোম্পানীর প্রধান জানতে চান।
‘প্রায় পঁচাত্তর বিলিয়ন ডলার।’
প্রতিউত্তরে ঔষধ কোম্পানীর প্রধান বলেন, ‘আমরা এই পঁচাত্তর বিলিয়ন ডলার দিতে রাজী তবে মহাকাশযানের নামটা আমরা দিব।’
‘শুধু নামের বিনিময়ে আপনারা পঁচাত্তর বিলিয়ন ডলার দিবেন!’ মার্কিন প্রতিরক্ষমন্ত্রী অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন।
‘হ্যাঁ।’ একটু থেমে ঔষধ কোম্পানীর প্রধান যোগ করেন, ‘আমরা আসলে আমাদের চুক্তিপত্রটা খুবই দ্রুত শেষ করতে চাইছি। আমরা সময় নিতে চাই না।’
জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘আমার মনে হয় আমরা আমাদের সকল বিষয়গুলো তুলে ধরতে পেরেছি।’ বলে তিনি সবার দিকে চোখ বুলাতে থাকেন। সবাই মৌন সম্মতি দিয়ে দিল।
তারপর চুক্তিপত্রটিতে সর্বপ্রথমে স্বাক্ষর করেন জাতিসংঘের মহাপরিচালক, নাসার মহাপরিচালক, মার্কিন প্রতিরক্ষমন্ত্রীসহ পাঁচটি ক্ষমতাশালী দেশের প্রতিনিধিরা। আর ঔষধ কোম্পানীর পক্ষ থেকে কোম্পানীটির শীর্ষ তিন কর্মকর্তা।
ঔষধ কোম্পানীর প্রধান স্বাক্ষর করার সময় তার চীফ ফিনানসিয়াল অফিসার নীচু স্বরে বলেন, ‘স্যার আমরা মোটামুটি পানির দরে ব্যাপারটা করতে পারলাম।’
কোম্পানীর প্রধানও নীচু স্বরে বললেন, ‘আমরাও তাই মনে হয়।’
চুক্তিস্বাক্ষরের পর জাতিসংঘের মহাপরিচালক বললেন, ‘এবার আমাদেরকে কি একটু বলবেন যে আপনারা ঠিক কী করতে চাইছেন?’
ঔষধ কোম্পানীর প্রধান খুশীতে হেসে বললেন অবশ্যই, ‘আপনারা হয়তো জানেন কিছুদিন আগে আমাদের একটি ঔষধ এফডিএ অনুমোদন পেয়েছে। নাম, জেনন পিল। যা প্রতিদিন একটি করে গ্রহণ করলে মানুষের শরীরের সকল ধরনের পুষ্টির অভাব যেমন দূর হবে তেমনি ক্ষুধাও লাগবে না বললেই চলে। আর একই সাথে মানুষের তারুণ্য দীর্ঘায়িত হবে। মোটকথা মাত্র একটি পিল প্রতিদিন গ্রহন করলে মানুষের তারুণ্য তিনগুণ সময় পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে। প্রতিটি পিল মাত্র চার ডলার দাম থাকবে।’ সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতে থাকে, ‘আর নাসা আমাদের হয়ে চাঁদে যে দু’শ লেজার সেন্টার বসাবে সেখানে লেজারগুলো চালু করলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ প্রতিরাতে দেখতে পাবে চাঁদের বুকে লেখা, সুস্থ ও দীর্ঘ জীবনের জন্য প্রতিদিন একটি জেনন পিল।’
‘তাতে লাভ?’ নাসার মহাপরিচালক জানতে চান।
‘ভেবে দেখুন পুরো পৃথিবীর দুই হাজার কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র একহাজার কোটি মানুষও যদি প্রতিদিন একটি করে জেনন পিল খায় তাহলে আমাদের প্রতিদিন বিক্রি হবে চার হাজার কোটি অর্থাৎ চল্লিশ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ প্রতিদিন আমাদের লাভ থাকবে নূন্যতম বিশ বিলিয়ন ডলার। একবছরে প্রায় সাড়ে সাত হাজার বিলিয়ন ডলার। বিশ বছরে প্রায় এক ট্রিলিওন ডলার লাভ!” ঔষধ কোম্পানীটির প্রধানের সাসিটি যেন পুরো পৃথিবীর সমান চওড়া হয়ে গেল, ‘দীর্ঘ জীবন কে না চায়!’
‘তাহলে আপনারাতো পুরো চুক্তিটি বলতে গেলে বিনামূল্যেই পেয়ে গেলেন।’ জাতিসংঘের মহাপরিচালকের মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে কথা বের হলো।
‘হ্যাঁ, বলতে পারেন বিনামূল্যে!’
১,০১১ বার পড়া হয়েছে
জেনন পিল আবিষ্কারের কথা জানলাম–এর মধ্যে কতটা বাস্তবতা নিহিত আছে?বিগ্যান এ ব্যাপারে কতটা এগোতে পেরেছে?
আজ না হলেও একদিন ঠিকই হবে।
এই ধরণের বিজ্ঞান ভিত্তিক কল্পকাহিনী পড়তে ভালই লাগে।
আমারও পড়তে আর লিখতে ভাল লাগে।
ভাল লাগল। আরো এধরনের কাহিনী চায়।
ধন্যবাদ।
কে চায়?
ভাল লাগলো তবে আরও ভাল করে আরেক একবার পড়তে হবে।
শুনে ভাল লাগল। আবার পড়ে বলবেন কেমন লাগল।
পড়লাম, ভালো লাগল।
জেনে খুশী হলাম।
ভেবে দেখুন পুরো পৃথিবীর দুই হাজার কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র একহাজার কোটি মানুষও যদি প্রতিদিন একটি করে জেনন পিল খায় তাহলে আমাদের প্রতিদিন বিক্রি হবে চার হাজার কোটি অর্থাৎ চল্লিশ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ প্রতিদিন আমাদের লাভ থাকবে নূন্যতম বিশ বিলিয়ন ডলার। একবছরে প্রায় সাড়ে সাত হাজার বিলিয়ন ডলার। বিশ বছরে প্রায় এক ট্রিলিওন ডলার লাভ!” ঔষধ কোম্পানীটির প্রধানের সাসিটি যেন পুরো পৃথিবীর সমান চওড়া হয়ে গেল, ‘দীর্ঘ জীবন কে না চায়!’
‘তাহলে আপনারাতো পুরো চুক্তিটি বলতে গেলে বিনামূল্যেই পেয়ে গেলেন।’ জাতিসংঘের মহাপরিচালকের মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে কথা বের হলো।
‘হ্যাঁ, বলতে পারেন বিনামূল্যে!’
ব্রিলিয়ান্ট।চমৎকার গল্প। মেধা প্রতিভা নিখুত লেখন শৈলী সুন্দর ঘটনা সবকিছু পাওয়া গেল এই বৈজ্ঞানিক কাহিনীতে।এটা কি একটাই পর্ব।
লেখককে অনেক অনেক ধন্যবাদ চমৎকার কাহিনী লেখার জন্য।আশা করব সামনে লেখক আমাদের আরও বিচিত্র অভিনব বিজ্ঞান কাহিনী উপহার দিবেন।
অনেক শুভকামনা লেখকের জন্য।