ভূটান…. দ্রুক ইয়ুল বা থান্ডার ড্রাগন এর দেশ ( প্রথম পর্ব )
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1434বার পড়া হয়েছে।
ভূটান কে বলা হয় দ্রুক ইয়ুল বা থান্ডার ড্রাগনের দেশ । একে এশিয়ার সুইজারল্যান্ডও বলা হয়ে থাকে । হিমালয়ের কোলে শান্ত স্নিগ্ধ এক অসাধারন সৌন্দর্য ভূমি এই থান্ডার ড্রাগনের দেশ।সাগর আমার অনেক ভাল লাগে কিন্তু তারচেয়েও অনেক অনেক বেশি ভাল লাগে পাহাড় । পাহাড়ের এক আলাদা সৌন্দর্য আর আকর্ষণ আছে ।কেমন যেন মন পাগল করা আকর্ষণ ।তাই পাহাড়ের কাছে বেড়ানোর সুযোগ পেলে আমি পারতপক্ষে তা হাত ছাড়া করিনা ।
সেবার যখন আমরা পাঁচ জন ভূটান গেলাম সময়টা ছিল সেপ্টেম্বর এর মাঝামাঝি । পাঁচজন না বলে সাড়ে চারজন বলাই সমীচীন কারন আমাদের সফরসঙ্গী সফেন তখন বেশ ছোট বালিকা ।আমাদের পুরো দলটি ছিল নপুরুষ দল ।অর্থাৎ এই দলের সবাই নারী ।
এই কারনে ঝামেলা হয়েছে অনেক কম কারন মাতব্বরি করতে আবার তারা ভিষন ওস্তাদ । 😀
যাইহোক ভূটান গিয়েছিলাম আমরা বাই রোড ।শ্যামলী পরিবহণ এর বাসে লালমনিরহাট জেলার বুরিমারি স্থল বন্দর দিয়ে ভারতের কুচবিহার এর চেংরাবান্ধা বন্দরে যেতে হয় । আমরা কল্যাণপুর থেকে বাসে উঠে প্রথমে থামলাম বগুরার হাইওয়ে রেস্তরাঁয় । রাতের খাবার খেয়ে আবার যাত্রা শুরু ।এরপর রাত চারটার দিকে আবার একটা পেট্রোল পাম্প এ থামল বাস । কেয়া আপুর তাড়া খেয়ে আমি আর সফেন ও অনিচ্ছা সত্তে নামলাম । প্রথমে সফেন গেল ওয়াশ রুমে কিন্তু সে ঢুকেই ফেরত এল ।বেচারা কিছুতেই যেতে চাচ্ছিল না কিন্তু উপায় নাই মার ধমক খেয়ে তাকে যেতেই হল। এর পর আমার পালা । বিস্তারিত না বলে শুধু এটুকু বলি বের হয়েই চলে গেলাম কলতলায় আর অনেকক্ষণ বমি করলাম । সে এক জঘন্য অভিজ্ঞতা ।
ভোর পাঁচটার দিকে পৌঁছালাম বুড়িমারি সীমান্তে । নয়টার আগে কাস্টমস শুরু হয় না তাই বিশ্রাম ঘরে শুয়ে বসে বিশ্রাম করার ব্যাবস্থা আছে।
সকাল আটটার দিকে বের হলাম চারপাশটা দেখার জন্য আর এই সময় ছালাদিয়া হোটেল (একমাত্র এরকম হোটেল আছে) এ বসে নাস্তা খেলাম তেল ছাড়া পরোটা ,ডিম আর চা ।
নয়টার কিছু পরে কাস্টমস এর কার্যক্রম শুরু হল । বাংলাদেশে কাস্টমস এর কাজ শেষ করে হেটেই গেলাম ভারত । কুলি আমাদের ব্যাগ বোচকা টেনে নিয়ে গেল । বেশ কিছুটা নো ম্যান্স ল্যান্ড ।
একি মাঠ একি নদী অথচ পিলার বলে দিচ্ছে এপারে বাংলাদেশ আর ওপারে ভারত । যাইহোক চ্যাংরাবান্ধা গিয়ে ভারতের ইমিগ্রেশন শেষ করলাম ।
সেখান থেকে জলপাইগুড়ি হয়ে জঁয়গা ।কিন্তু আমরা ইমিগ্রেশন হয়ে যাওয়ার পর আর বাসে উঠি নাই ।সাথে অভিজ্ঞ জেসমিন আপা ছিলেন যিনি বললেন অযথা সময় নষ্ট না করে চল আমরা সরাসরি জয়গাঁ যাই । আমরা গাড়ি ভাড়া করে চললাম জঁয়গা । এটা ভারতের পশ্চিম বঙ্গের কুচবিহার জেলা । এখান থেকে ভূটান যাবার পথটাকে বা হাইওয়ে কে ওঁরা বলে ভূটান পথ । সমরেশ মজুমদার না কার বইয়ে যেন পড়েছিলাম ভুটান পথে যেতে দিনের বেলায় গা ছম ছম করে । আসলেই অনেক নীরব নিস্তব্ধ রাস্তা ।
দুপাশে অরগানিক চা এর বাগান । আর এই পথেই পড়ে ভারতের তিনটি সংরক্ষিত বন জলদাপাড়া ,হাসিমারা আর তিতিক্ষেত্র । তবে একটা জিনিষ আমার দারুন লাগলো আর সেটা হল আমরা যে পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম তার দুপাশে যে দেহাতি বাড়িঘর ছিল সবগুলাই দারুন পরিচ্ছন্ন আর গাছপালায় ঘেরা। সব বাড়ির আঙ্গিনায় ফুলের গাছ আছে ।
প্রায় দুই কি আড়াই ঘণ্টা ড্রাইভ করে আমরা পৌঁছালাম জয়গাঁ ইমিগ্রেশন অফিস এ ।ইমিগ্রেশন অফিসার আমাদের পরামর্শ দিলেন যেন আগামীবার দার্জিলিং ঘুরে যাই ।দার্জিলিং ভুটানের মতোই পাহাড়ি সুন্দর দেশ আর খরচ ভুটানের চেয়ে অনেক কম । আমরা উনাকে বললাম অবশ্যই দার্জিলিং যাব কোন এক সময় আর সেই সাথে এই কথাও দিতে হল তখন উনার জন্য পদ্মার ইলিশ ভাজা নিয়ে আসব।ভদ্রলোক বেশ আমুদে ।
আনুস্ঠানিকতা শেষ করে উঠলাম ট্যাক্সিতে, মাত্র দুই মিনিটের পথ ।নামিয়ে দিল ভুটান গেটের সামনে । গেটের ওপাশেই অন্য দেশ তাই ট্যাক্সি নিয়ে যাবার প্রশ্নই উঠে না ।
বাক্স পেটারা নিয়ে হেঁটেই চলে গেলাম ভুটান । গেটের এই পার এ ভারত আর ওইপার এ ভূটান।
ভূটান গেট পার হয়ে চলে আসলাম ।সেখান এ আবার ইমিগ্রেশন । গেটের কাছেই অফিস ।ইমিগ্রেশন শেষ করে আমরা ছুটলাম জেরক্স বা ফটোকপির দোকান খুঁজতে ।সেই রাতটা আমরা ফুয়েন্টশলিং থাকতে চাচ্ছিলাম না তাই ভাবলাম সরাসরি রাজধানী থিম্ফু চলে যাই।ভুটানে প্রতিটা শহরে যাওয়ার জন্য আলাদা ভাবে পারমিট/অনুমতি নিতে হয় । আমাদের ভিসাতে ছিল ফুয়েন্টশলিং এর নাম তাই থিম্ফুর জন্য পাসপোর্টের জেরক্স কপি(ফটো কপি) জমা দিয়ে আর একটা ফর্ম পুরন করে থিম্ফু আর পারো এর অনুমতি নিতে হল।
এই অনুমতি নিতে গিয়ে বাধল এক ঝামেলা কারন ঝুম বৃষ্টি । কি ফ্যাসাদ এই না পরলাম । ভুটান এর সরকারি অফিস এ ছাতা মাথায় যাওয়া যায় না ,তাতে নাকি রাজার অসম্মান হয় । কনিষ্ঠতম সদস্য হিসাবে সফেনকে আর দ্বিতীয় কনিষ্ঠতম হিসাবে আমাকে সফেন কে পাহারা দেবার জন্য একটা ছাউনির মাঝে দাড় করিয়ে রেখে কেয়া,জেসমিন আর নাসরিন আপুত্রয় গেল অনুমতি আনতে ।ছাউনি আমাদের বৃষ্টির ছাঁট থেকে পুরোপুরি রক্ষা করতে পারছিল না । আমরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখলাম বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢালু পথে পানির ঢল আর ভাঙ্গা ভাঙ্গা হিন্দিতে বকবক করলাম গার্ড এর সাথে । বৃষ্টির কি প্রচণ্ডতা ।সবকিছু ছিঁড়েখুঁড়ে পানির স্রোত নেমে আসছিল । এরমধ্যে তারা অনুমতি নিয়ে ফিরে এল কিন্তু তুমুল বৃষ্টির জন্য আমরা কোথাও যেতে পারছিলাম না। সবাই অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকলাম ছাউনিতে ।
যেমন ঝপ করে বৃষ্টি এসেছিল তেমনি হুট করে চলেও গেল ।মুহূর্তেই আকাশটা পরিস্কার হয়ে গেল। আর গাছপালা গুলোকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন এই মাত্র ভাল করে সাবান শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করে উঠল । এরপর আমরা মোড়ের কাছে এগুলাম গাড়ি ঠিক করার জন্য । বৃষ্টির কারনে আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে আর তার মাঝেই এসে পড়েছে জলপাইগুড়ি হয়ে অন্য যাত্রীরা । এদের মাঝে এক বাঙালি ভদ্রলোক সেলিম ভাই এর সাথে আপুদের বিশেষ করে নাসরিন আর জেসমিন আপুর ভালই সখ্যতা গড়ে উঠল ।
আমরা ফোর হুইলার গাড়ি ঠিক করলাম কারন এ পথে ট্যাক্সি চলে না আর বৃষ্টি হলে তো আরও না কারন পানির ঢলে গাড়ি ভেসে যেতে পারে । সেলিম সাহেব ,উনার স্ত্রী আর এক ভাই না বন্ধু উঠলেন আর এক গাড়িতে ।দেশের বাইরে অল্প সময়ের জন্য গেলেও নিজের দেশের লোক জনকে অনেক আপন মনে হয় ।
যাই হোক বিকাল চারটায় কিছু পরে আমরা রওনা দিলাম থিম্ফুর উদ্দেশ্যে। আধা ঘন্টার ভিতর শহর ছেড়ে আমরা হাইওয়ে তে উঠলাম । মাঝে মাঝে ওই বাংলাদেশী পরিবারটির গাড়ি দেখা যাচ্ছিল কিন্তু অল্পক্ষনের মধ্যেই ওরা দৃষ্টিসীমার আড়ালে চলে গেল । (চলবে)
১,৪১১ বার পড়া হয়েছে
এত সুন্দর পোষ্ট ।
যেন পরিভ্রমণ হল ।
ভাল লাগল
ফোরামে পড়এছিলাম এখন আবার পোস্টটির ছবি দেখে ভাল লআগল