মন চলে যায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে (পর্ব-২)
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1034বার পড়া হয়েছে।
পূর্বে প্রকাশের পর…
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতঃ
বিকাল ৪:৩০ মিনিটে আমরা সবাই বাসে উঠলাম। ধীরে ধীরে বাস এগিয়ে যাচ্ছে সী-বীচের উদ্দেশ্য। বাস যতই সামনে যাচ্ছে ততই আমাদের আনন্দ বেড়ে যাচ্ছে। ৫ মিনিটের মধ্যে বাসটি সী-বীচের সামনে এসে থামল। সবাই বাস থেকে নেমে সাগরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। বালুর উপর দিয়ে জুতা পা দিয়ে হাঁটতে পারছি না। তবুও হেলে দুলে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। সামনে তাকিয়ে দেখলাম দিগন্ত বিস্তৃত সাগর। শুধু পানি আর পানি। যেন দুনিয়াব্যাপী এক গালিচা। ঐ সুদূর দিগন্তে সাগর আর আকাশ এমনভাবে একাকার হয়ে গেছে যে তাদের আর আলাদা করা যায় না। তাদের মাঝে এত মিল দেখে বুঝা যায় যে তারা একে অপরের সাথে কিভাবে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
নূরুল হুদা স্যার আমাদেরকে সর্তক করে দিয়েছেন ভাটার সময় যাতে সাগরে না নামি। তখন লাল পতাকা উড়ানো থাকে। আমি তখন চারপাশে তাকিয়ে লক্ষ্য করে দেখলাম এখন লাল পতাকা উড়ানো। তার মানে এখন ভাটা। তাই আর ভয়ে সাগরের পানিতে নামিনি। কিন্তু সাগর যে আমাকে কাছে পেতে চায়। আমি যত দূরেই দাঁড়াই না কেন সাগর এসে আমাকে ছুঁয়ে যায়। অনেক দূরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলাম। আর অমনি বিশাল ঢেউ এসে আমাকে ভিজিয়ে দিয়ে যায়। আমার সাথে ছিল হাফিজ, নিশিথ, জুবায়ের। তাদেরকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ঝাউগাছের দিকে চলে গেলাম। সারি সারি ঝাউগাছ এক নয়নাভিরাম দৃশ্য সৃষ্টি করেছে। গাছের ছায়ায় ক্লান্ত পথিক প্রশান্তির জন্য এখানে বসে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখান থেকে চলে আসলাম সূর্যাস্ত দেখার জন্য। সূর্যের দিকে মুখ করে সাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছি। তখন আমার মনে হয়েছিল যে, আমি দুনিয়াতে সব চেয়ে বেশি সুখী। আমার কোন দুঃখ নেই। নেই কোন পাপ। আজ আমি মুক্ত, পবিত্র। দুনিয়ার সমস্ত কথা ভুলে আনমনে তাকিয়ে আছি সূর্যের দিকে। ডিমের কুসুমের মতো সূর্যের পানে আমাদের ক্যামেরাটি লকেট ল্যান্সের মতো তাক করে ক্লিক্ ক্লিক্ শব্দে সূর্য মামাসহ কালো সেলুলয়েডের ফিতায় আমাদের চেহারা বন্ধি হয়ে গেল।
[সাগর পাড়ে দাঁড়িয়ে ভ্রমন প্রিয়াসী শিক্ষক, বন্ধু ও লেখক।]
মুরগীর কুসুমের মতো সকাল বেলা সূর্য উঠে। সেটি আভা ছড়ায় সারা পৃথিবীব্যাপী। পানির উপর ভাসতে থাকে সূর্য। সারাদিন শেষে বিকেল বেলা সূর্য লাল টক টকে হয়ে যায়। পশ্চিমাকাশ যেন আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। তারপর আস্তে আস্তে সূর্যের ত্যাজ কমতে থাকে। এভাবে সূর্যের ত্যাজ কমতে কমতে আমার চোখের সামনে লাল টকটকে থালার মতো সূর্যটি টুপ করে সাগরের লোনা পানিতে ডুবে গেল। সত্যি এ এক অপরূপ নয়নাভিরাম দৃশ্য। কিন্তু বিদায়ী সেই লগ্ন আমার হৃদয়কে ব্যাথাতুর করে দিল। এই প্রথম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে স্বচক্ষে দেখতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হল। এতোদিন শুধু পত্র পত্রিকায়, বইয়ে পড়ে, টেলিভিশনে দেখে বিশ্বাস হচ্ছিলনা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত যে এত সুন্দর। আজ হাজার হাজার মানুষ এক সাথে সূর্যাস্ত দেখছে। অবশ্য এর আগে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত দেখেছিলাম। তবে সেটা কক্সবাজারের মতো নয়নকাড়া নয়। এখানে আছে ছাতা ও চেয়ার। ঘন্টা হিসেবে ভাড়া নিয়ে বসে এই অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করা যায়। সন্ধ্যা ৬টায় আমরা এখান থেকে বার্মিজ মার্কেটে যাই। যার যার পছন্দ মতো কেনাকাটা করে ৯টায় বাসায় ফিরে আসি।
[বার্মিজ মার্কেটে মেয়েরা দোকানে কেনাবেচা করছে।]
১৯ তারিখ ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠি। দাঁত ব্রাশ করে হাত মুখ ধুয়ে সাগরে গোসল করার জন্য খালি পায়ে গেঞ্জি ও প্যান্ট পড়ে রওয়ানা হলাম। সাথে মোশারফ স্যার, হাফিজ, জুবায়ের, নিশিথ, সাবিনা, মনিকা, মুনছুর ভাই, শৈলাস দাসহ আরো অনেকে। হাঁটতে হাঁটতে আমরা পৌনে পাঁচটায় সাগরের তীরে চলে আসলাম। আজকে আমরাই মনে হয় প্রথম সাগরে আসলাম। অন্যকোন লোকজন তখন দেখিনি। তারপর ধীরে ধীরে লোকজন এসে ভীড় জমালো। সবাই প্যান্ট গুচিয়ে পানিতে নামলাম। এখন সাগরের তীরে সবুজ পতাকা উড়ানো দেখে বুঝতে পারলাম পানিতে নামতে আর কোন ভয় নেই। আমি, জুবায়ের, নিশিথ, হাফিজ একদম কোমর পানিতে নেমে গেলাম। আর ক্লিক্ ক্লিক্ করে ছবি তুলছি একে অপরের। বিশাল ঢেউ এসে আমাদেরকে ডুবিয়ে দিচ্ছে। লোনা পানিতে দাপাদাপি আর ঢেউয়ের তালে তালে নাচানাচি করার মজাই যেন আলাদা। আমি লক্ষ্য করে দেখলাম ঢেউ আসার সাথে সাথে পায়ের নীচ থেকে বালুগুলো সরে যাচ্ছে। যখন বড় ঢেউ আসে তখন ডুব দিয়ে পানির নিচে চলে গেলাম। একবার ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে ড্রাইভ দিতে গিয়ে পড়ে যাই। আজ সমুদ্রে গোসল করতে পেরে নিজেকে খুবই প্রফুল্ল মনে হচ্ছে। মনে হয় যেন সমস্ত পাপগুলো সাগরের লোনা পানিতে ধুয়ে গেছে। এখন যেন আমি নিষ্পাপ। মাছ ধরা, ঝিনুক কুড়ানো, দৌঁড়াদৌড়ি সবই করলাম। তখন এতই আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছি যে দুনিয়ার কথা সবই ভুলে গেলাম।
[সাগরের লোনা পানিতে উত্তাল ঢেউয়ের সাথে লড়াই করছেন লেখক]
এদিকে কিছুক্ষণ পর সূর্য মামা পাহাড় ভেদ করে পূর্ব আকাশে উদিত হলো। অগ্রহায়ণের জ্বলন্ত সূর্য ও তার ত্যাজ ধীরে ধীরে পশ্চিমাকাশের দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে। প্রায় দু’ঘন্টা সাগরের লোনা পানির সাথে আলিঙ্গন করে হোটেলে ফিরে আসলাম। এখানে এসে আবার পরিষ্কার পানি দিয়ে গোসল করলাম।
[চেয়ার ও ছাতা ভাড়া নিয়ে বসে সাগরকে কাছ থেকে দেখছে লেখক।]
[সাগরের গর্জন]
আজ আমরা লাইট হাউজের পাশে কলাতলীতে হোটেল ‘লেমিছ’ এ উঠলাম। এখান থেকে সী-বীচ খুব কাছে। আগের চারজনই এখানে রূম নিলাম। আমাদের রুম নম্বর ৩০৮, ৪র্থ তলা। রূমে টিভি, টেলিফোনসহ সব সুযোগ সুবিধা আছে। এর নীচে পউষালী রেস্টুরেন্ট এ আমরা সকালের নাস্তা করি।
চলবে…
১,০৪১ বার পড়া হয়েছে
আমির ভাই ভাল লাগলো।
ধন্যবাদ মালেক ভাই। ভাল থাকুন। সঙ্গে থাকুন।