মানুষরূপী ছারপোকারা…!
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1657বার পড়া হয়েছে।
সুমনা’র মনটা বিষিয়ে আছে অনেকক্ষন থেকেই। নিজের টেবিল এ থুম মেরে বসে আছে আর হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে। একটু আগে সে বস’এর ঝাড়ি খেয়েছে যাকে বলে রাম ঝাড়ি। সে কেন ঝাড়ি খেল সেটা ক্যালকুলেশন করছে বসে বসে কিন্তু হিসাবটা মিলছেনা কিছুতেই। অবশ্য সুমনার বস’কে সে থুরাই কেয়ার করে। ওই বেটাকে তাঁর রক্তচোষা ছারপোকা ছাড়া কিছুই ভাবতে ভাল লাগেনা। মানুষ এত অমানুষ হয় কি করে তা ভেবে পায়না সুমনা। আর উপর আল্লাহ এদেরকে আনলিমিটেড সম্পদ দিয়ে রাখে যা কিভাবে কাজে লাগাবে সেটাই বুঝে উঠতে পারেনা এরা। ঠিক এই মুহুর্তে সুমনার মেজাজ খারাপ হচ্ছে আল্লাহর উপর…যা আজকাল প্রায়ই হয়। ইদানিং সুমনার কেবলই মনে হয় স্বয়ং বিধাতাও বুঝি তাঁর উপর অবিচার করছেন তা না হলে…! আর ভাবতে পারেনা সুমনা। মনে মনে বস’কে ইচ্ছেমত গালিগালাজ করছে। এর মধ্যে দুইবার সালাম দিয়েছে বস। তারপরও সে নড়ছেনা বসেই আছে। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। সে জানে এখন কিছু অহেতুক কাজ দিবে বস যা করতে গিয়ে সে আরও বিরক্ত হবে আর গালি’র পরিমান বেড়ে যাবে (মনে মনে)। সুমনার বস’এর ইচ্ছেই হল কিভাবে ষ্টাফদের বেশিক্ষন আটকে রাখা যায়। সারাদিন বসিয়ে রেখে ঠিক বের হওয়ার আগমুহুর্তে একটা কাজ ধরিয়ে দেবে যা শেষ করতে আরও ঘন্টা খানেক মিনিমাম লেগে যাবে।
রোজ রোজ এমনটা আর ভাল লাগেনা সুমনার কিন্তু কি করবে সে? ঘরে বাবা অসুস্থ, মা স্কুল টিচার, ছোট ভাই বোনদের পড়াশুনা সব মিলিয়ে অনেক খরচ যা মায়ের একার পক্ষে সম্ভব না। সুমনা চায় মা’কে একটু রিলিফ দিতে। তাই প্রতিদিন যখনই জবটা ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে ঠিক তখনই তাঁর সামনে ভেসে উঠে অনেক ক্লান্তিতে ভরা মায়ের মায়াবী মুখখানা । সে কারণে শত কষ্টেও সুমনা দাঁতে দাঁত চেপে সব সয়ে যায়। অবশ্য মাস গেলে ভাল একটা এমাউন্ট আসে তাঁর হাতে। টাকাটা সে মায়ের হাতে তুলে দিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে কিছুটা।
বস ডেকে নিয়ে আজও যথারীতি কিছু কাজ ধরিয়ে দিলেন। যা শেষ করতে সুমনার সাড়ে সাতটা বেজে যায়। সবাই চলে গেছে মুটামুটি দু-তিন জন ছাড়া। কোনমতে কাজটা শেষ করে ঘরের দিকে পা বাড়ায় সে। রাস্তায় প্রচন্ড যানজট। ইদানিং মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে তা। সারা রাস্তা সুমনা বস’কে গালি দিতে থাকে যেমন করে ঠিক ছোট্টবেলায় বন্ধুদের সাথে মারপিট করে হেরে গেলে গালি দিত। সে মনে মনে বস’কে বলছে “বেটা খচ্চর! তোর যেন কলেরা হয় যাতে করে ১৫দিন তুই আর অফিস না আসতে পারিস”। উহ কি ভালোটাই না হত ১৫ দিন ওই বদ লোকটা অফিস না আসলে। তারপর আবার গালি দিচ্ছে “ তুই একটা ‘ডিওজি’ সাব…তুই গু’ খা…কাঁচা গু’ না…শুকনা গু’…তেলের মধ্যে ফ্রাই করে কড়মড় করে চিবিয়ে খা…শুয়োড় একটা”। আজও বুয়া এসে চিল্লাচ্ছিল বেতন হয়নি তাঁর। সুমনার খুব মায়া হল তাই সে তাঁর ব্যাগ খুলে ৭০০ টাকা দিয়ে দিল। আল্লাহ জানেন এই টাকা সে কবে পাবে। সেদিন ড্রাইভার এসে অনেক দুঃখ প্রকাশ করল সুমনার কাছে। কাকডাকা ভোর থেকে রাত ১২টা/১টা পর্যন্ত ডিউটি করে। কোন ডে অফ নেই তাঁর অথচ অসুখ বিসুখ হলে একদিন ছুটিও পায়না সে বেতন কেটে রাখে। বেটা এমন বদ এর বদ দু-চার পয়সা পর্যন্ত হিসাব করে তখন এত বিরক্তি লাগে সুমনার, সে ভাবে তখন ৫০ পয়সা দান করে আসি গিয়ে রক্তচোষাটা’কে। মনে হয় সে হাসিমুখে হাত পেতে তাও নেবে। খচ্চর একটা! কতকাল এরা এভাবে জুলুম করে যাবে অসহায় মানুষগুলোর উপর তা আল্লাহ পাকই জানেন!!!
অফিসটাতে রুলস রেজুলেশন বলতে কিচ্ছু নেই…চরম স্বেচ্ছাচারিতা যাকে বলে। শুনেছি প্রাইভেট সেক্টরগুলোর নাকি এমন বেহাল দশাই আজকাল। এসব শুনে সুমনার মনটা আরও বিষিয়ে উঠে। প্রতিটা জায়গাতেই ডিসক্রিমিনেশন চরমে। অনেক অফিসে তো মেয়েই নেবেনা আর যারা নেয় তারা মেয়েটাকে কখনও মানুষ ভেবে বিচার বা বিশ্লেষন করেনা, তাঁর মেধার চেয়ে আউটলুকিং’টা বেশি গুরুত্ব পায়। কেমন যেন গা’ গুলায় সুমনার। সেও খেয়াল করেছে তার চেয়ে সিনিয়র কলিগদের মনোবৃত্তি। তাঁদের গসিপিং এর টপিক্সই হলো মেয়ে কলিগদের ড্রেসআপ আর আউটলুকিং নিয়ে। সুমনা শিউড়ে উঠে যখন শুনে মেয়েদের শারীরিক ফিটনেস নিয়েও কথা বলে এরা। অনেক অফিস এ নাকি মেয়ে ষ্টাফদের ইমিডিয়েট বস’রা ইশারা ইংগিতে অন্যরকম অফার দেয়। না বুঝতে পারলে কাজ নিয়ে খারাপ ব্যবহার করে আর বিভিন্নভাবে হয়রানি করে, অনেকসময় সেই মেয়েটাকে চাকরি পর্যন্ত হারাতে হয়, সুমনা এমন একজনকে জানে যার চাকরি চলে যাওয়ার পেছনের কারণটা এমনই। সেদিন সুমনার খুব মন খারাপ হয়েছিল এসব শুনে, ভয়ও পেয়েছিল সে আর মনে মনে প্রভুকে বলেছিল “প্লিজ প্রভু সেভ টু অল অফ আস”। এ দিক দিয়ে সুমনা অনেক শান্তিতে আছে বলা যায়। অফিস কলিগরা ওকে মুটামুটি সামঝেই চলে আর তাছাড়া অনেক রেস্পেক্ট ও করে। সেটা সুমনা টের পায়। কেউ কেউ আছে সুমনা থাকা অবধি অপেক্ষা করে, একসাথে বের হয়। যাই হোক সব মিলিয়ে সুমনার আর জবটা ছাড়া হয়না। ভাবে কোথায় যাব? সব জায়গায়ই তো রক্তচোষারা উৎ পেতে আছে…! বিরক্তি আর ঘৃণা নিয়ে আবারও সব রক্তচোষা ছারপোকাদের উদ্দ্যশ্যে বলে উঠে “তোরা গু’ খা… কাঁচা গু’ না…শুকনা গু’…তেলের মধ্যে ফ্রাই করে কড়মড় করে চিবিয়ে খা…শুয়োড়ের দল”…!
সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১১
সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১১
১,৬১৪ বার পড়া হয়েছে
আপনি লিখে যান । আপনার লেখার বক্যের গঠন চমৎকার । বাস্তবতাকে কি সুন্দর করে উপস্থান করেছেন। ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।
০১/ বস
০২/ স্ত্রী
আমি প্রায়ই বলে থাকি,
কারো জীবনে যদি এ দুটির যে কোন একটি খারাপ হয় তার জীবনটাই যেন দুঃখে গড়া, কারণ ইচ্ছে করলেই কেউ এই দুটির কোনটি পরিবর্তন করতে পারেনা।
বাস্তবতাকে খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপণ করেছেন। ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।
কি বলব আপি বলার ভাষা নাই। ইতানরে শুকনা গু খাওয়ানোই দরকার। ভদ্রতার মুখোশ পড়া খবিশগুলান
ভাল লাগল লেখা
এমন চিত্রও দেখা যায়
খুব বাড়ছে
বেশ ভাল ভাবনার প্রয়াস
ভাল লাগলো অনেক