অনাবৃষ্টি
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1443বার পড়া হয়েছে।
সেদিন হঠাৎ তাকে বললাম, তোমায় একটা নাম দেব, যে নামে কেবল আমি তোমায় ডাকব। কি নেবে না? বলল- আচ্ছা রেখ, তা কি নাম দেবে শুনি। বললাম- আজ নয়।
ভাবলাম, ওর নাম দেব ‘বৃষ্টি’, যার সাথে আমাদের একেক জনের সম্পর্ক একেক ধরনের।কেউবা তার মাঝে ভিজতে ভালবাসে কেউবা ভালবাসে তার রিমঝিম শব্দ শুনতে।আর কেউবা তার সমাপ্তি লগ্নের দিকে চেয়ে থাকে অধীর আগ্রহে। কিন্তু কবি সাহিত্যিকরা বৃষ্টিকে এঁকেছেন কল্পনার শত রঙ দিয়ে একেক জন একেক ভাবে। বিশেষ করে পল্লীকবি জসীম উদ্দীন বৃষ্টিকে পল্লীর জীবন-যাত্রায় এমন এক অবিচ্ছেদ্য অংশে রূপ দিয়েছেন সত্যিই যেন বাংলার নিসর্গিক চিত্র বৃষ্টি ছাড়া অসম্পূর্ণ রয়ে যায়।
যেমনটি দেখা যায় গ্রীষ্মের কাঠফাঁটা রোদে ধূ-ধূ বালূময়, শ্রীহীন এক অসবুজ মাঠ, যেখানে চৈত্রের প্রচন্ড রৌদ্রে মাটি চৌচির হয়ে যায় , ঘাসগুলো হয়ে যায় বিবর্ণ , যেখানে দৃষ্টি বেশী দূর এগোয় না আর প্রচন্ড তাপে রাখাল ছেলে তার গরুগুলো নিয়ে যেতে পারে না । কিন্তু বৃষ্টি এসে যখন এই উওপ্ত মাঠকে ছুঁয়ে যায় তখন শ্রীহীন মাঠের দৃশ্যপট কিছু দিনের মধ্যে পাল্টে যায় । সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির মস , শৈবাল , টেরিস , ছএাক ইত্যাদি জন্মে । আর তখন রাখাল ছেলের দল গরু-ছাগল নিয়ে আবার মাঠের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে চলে অবিশ্রান্ত । আর বিকালে বাড়ী ফিরে পরদিন আবার মাঠপানে রওনা দেয়। অপর দিকে কবর কবিতার সেই বৃদ্ধ দাদুর মত বহু লোক বলদ-জোয়াল নিয়ে মাঠ পানে রওনা হয় সারা দিন জমিতে চাষ করে সোনার ফসল ফলাবে বলে। এমনি ভাবে কিছুদিন পর সারা মাঠ সবুজ, হলদে, সোনালি হরেক রঙে রঙ্গিন হয়। কোথাও কাঁচা কোথাও পাঁকা কোথাও বা কাঁচা-পাঁকা ধান আবার কোথাও হলুদ, সরিষার ক্ষেত। সবকিছু মিলে এ যেন জসীম উদ্দীনের “নকশী-কাঁথার মাঠ”!
কিন্তু আমি যেটা ভাবছি, “নকশী কাথার মাঠ”-এর পিছনে যে বিষয়টি জড়িত তা হল বৃষ্টি! এই বৃষ্টি না হলে নকশী কাঁথার মাঠ না হয়ে তো আগুনের মাঠ হত! আসলে বৃষ্টিই পারে সবকিছুকে সজীব করতে, ধূ-ধূ বালুময় মাঠে নতুন প্রাণ দিতে; আবার তার অনুপস্থিতি পারে সবুজে-শ্যামলে ঘেরা পল্লী গ্রামকে এক শ্রীহীন জনপদে পরিণত করতে আর পারে সবুজ এক প্রান্তরকে ধূ-ধূ মরুভূমিতে পরিণত করতে। বৃষ্টির অনুপস্থিতিতে প্রকৃতি যেমন বিবর্ণ রূপ ধারণ করে তেমনি তার অভাবে মানুষের হৃদয়ে শূণ্যতার সৃষ্টি হয়। সত্যি, তার ভালোবাসা আছে বলেই প্রকৃতি এত সুন্দর আর সুন্দর তার বুকে বিচরণশীল সকল জীব। ভোরের ঘুম ভাঙ্গানো পাখীর কলরব আর মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ানো রঙ-বেরঙের প্রজাপতি আর পাখী এসব কিছুই পল্লী গাঁয়ের আপরূপ লীলা। কিন্তু , আমি ভাবি কি জানো? যদি সে কোন দিন অন্যত্র চলে যায় কাউকে কিছু না বলে, চলে যায় কল্পনার সীমার বাইরে আমাদেরকে ভুলে দূরে, বহু দূরে! তাহলে সে দিন গ্রাম বাংলার চিত্র কেমন হবে? হবে হয়ত হিরশিমা অথবা নাগাসাকি । কিন্তু আমার প্রিয় কবির কাব্য গ্রন্থটা কি সেদিন অযত্নে অবহেলায় চির বিলীন হবে? নাকি আগের মতই সে তার আবেদন ধরে রাখবে এই বাংলায়?
ভাবি, পারবে না।
কারণ, বৃষ্টির অভাবে তো সকল হৃদয়ে এক শূন্যতা বিরাজ করবে । সেখানে তো কোন আশা নেই, আলো নেই, ভালোবাসা নেই। আছে কেবল অসীম অন্ধকার , যেখানে কোন দিন আর আলো জ্বলবে না । তবে সত্য যে, বৃষ্টি ভালো না বাসলেও, ভুলে গেলেও , অন্যত্র চলে গেলেও কেউ তাকে ভুলতে পারবে না। তার দুটি রূপের মধ্যে প্রথম (সবুজায়ন) রূপটা চিরকালে মানুষের মাঝে স্মৃতি হয়ে থাকবে। হয়ত বা তাকে দূর হতে দেখে মনের অজান্তে বলবে , “অনাবৃষ্টি’’ ।
মেহেদী হাছান
জা.বি.
ফার্মেসী বিভাগ।
১,৪৮২ বার পড়া হয়েছে
ভালো লাগলো… দারুণ লেগেছে… আমার পাতায় আমন্ত্রণ ।
দারুন হয়েছে লেখাটি। শুভ কামনা রইল।
সুন্দর লিখেছেন। ভাল লাগল।
মেহেদী ভাই যেভাবে শুরু করেছেন তাতে স্বাভাবিক ভাবেই আমরা আশা করেছিলাম যাকে একটা নাম দিবেন বলে গল্প শুরু করেছিলেন তার সম্পর্কেই গল্পটা লিখবেন কিন্তু আর কিছুই বললেন না। বৃষ্টি আর অনাবৃষ্টির প্রাকৃতিক বর্ননা ভালই হয়েছে কিন্তু যেভাবে শেষ করেছেন তাতে গল্পের শুরুটা খাপ খেলো না।
কারণ, বৃষ্টির অভাবে তো সকল হৃদয়ে এক শূন্যতা বিরাজ করবে । সেখানে তো কোন আশা নেই, আলো নেই, ভালোবাসা নেই। আছে কেবল অসীম অন্ধকার , যেখানে কোন দিন আর আলো জ্বলবে না । তবে সত্য যে, বৃষ্টি ভালো না বাসলেও, ভুলে গেলেও , অন্যত্র চলে গেলেও কেউ তাকে ভুলতে পারবে না। তার দুটি রূপের মধ্যে প্রথম (সবুজায়ন) রূপটা চিরকালে মানুষের মাঝে স্মৃতি হয়ে থাকবে। হয়ত বা তাকে দূর হতে দেখে মনের অজান্তে বলবে , “অনাবৃষ্টি’’ ।
শেষ প্যারা টা ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ।
মনে মনে ভেবেছিলাম
ভালবাসার গল্প,
সম্পূর্ণ পড়ে দেখলাম
ভালবাসা অল্প।
নির্বিচারে কাটছি গাছ
সেদিকে নাই দৃষ্টি,
কেন বলছি অনাবৃষ্টি
এতো মোদের সৃষ্টি।