অনেক কথা
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1255বার পড়া হয়েছে।
অদৃষ্টের লিখন–
কিছু কিছু সত্য খুব তিক্ত হয়। আর যেখানে এধরণের সত্যের তিক্ততা রয়েছে সেখানে সত্য প্রকাশ না করাই উত্তম। কারণ এমন কিছু সত্যের জন্যে মৃত্যুর আশঙ্কাই থাকে বেশি। আর যেখানে মৃত্যুর আশঙ্কা আছে সেখানে মিথ্যার কাছে নত হওয়া সত্যের দুর্বলতা নয়। তাই এরূপ মিথ্যার কাছে হেরে যাওয়া সত্যের বিজয়। তবে অসত্যকে ত্যাগ করে সত্যের সঙ্গে পথ চলতে পারলেই সার্থক পথিক। চেষ্টাই সবকিছু অর্জন। তাই ন্যায় হোক বা অন্যায়, সত্য হোক বা মিথ্যে যেখানে যা পেয়েছি, দেখেছি, জেনেছি, শোনেছি এবং কল্পনা করেছি সমস্ত কিছু অনেক কথায় ধারণ করার প্রয়াসটুকু করেছি। তাতে আমাকে নিতে হয়েছে কোথাও বিদ্রূপের আশ্রয়, কোথাও কটাক্ষের, কোথাও কল্পনার, কোথাও দর্শনের, কোথাও শ্রবণের, কোথাও অভিজ্ঞতার এবং কোথাও বাস্তবতার। আশা করি, মিথ্যাকে কোথাও তেমন একটা প্রশ্রয়াশ্রয় দিইনি এবং সবকিছুতে সত্য ও সততাকে প্রধান্য দিয়ে উদ্দিষ্ট-অভীষ্টে পৌঁছার চেষ্টা করছি। কোথাও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়নি এমন কথা ভুলেও বলা যাবে না। তজ্জন্যে হয়তো লাঞ্ছনার অবধি থাকবে না। তাই হয়তো মহাত্মার কাছে মোক্ষণ আছে কিন্তু নিয়তির কাছে হয়তো নেই। অদৃষ্টের লিখন কোথায় নিয়ে যায় কেউ জানে না। কিন্তু আমাকে খুঁজতে হবে অদৃষ্টের লিখন এবং দৃষ্টের স্থান সন্ধান দেবেন অদৃষ্টদাতা।
ছোটবেলায় স্কুলে যাওয়ার একটা প্রবল আগ্রহ ছিল, তেমন বই ফাড়ারও আগ্রহ কম ছিল না। একটু বুঝদার হলে বই ফাড়া বন্ধ হয়ে স্কুল পালানোর আগ্রহটা বেড়ে চলল বেশি তবে পড়ার আগ্রহটা কমল না। দুর্ভাগ্য আমার, সংসারে অভাব-অনটন নেমে এলে একদিন মাতৃভূমি থেকে নয় একেবারে মাতৃভাষা থেকেও বিতাড়িত হতে হয়। তারপর ধীরে ধীরে সবকিছু ভুলে বিভূঁই-শ্রীঘরকেই আপন করে নিতে হয়। পরের ভাষা আয়ত্ত করতে করতে নিজের ভাষা চাপা পড়ে গেল অনেকটা। ক্রমে বিস্মরণ হতে লাগল নিজের বুলি। একসময় প্রিয়ার চিঠিতে ‘স্মৃতি’র বিস্মৃতে ‘সিরিতি’ লেখাও শুরু করে দিলাম নির্দ্বিধায়। দীর্ঘদিনপর ফিরলাম বাড়ি : প্রিয়া দেখি আড়িপণে অভিমানী–স্মৃতির এলবাম খুলে বলল, একি পাগলামি! আমি দুহাত চেপে বললাম, হায় হায় আর বলো না লক্ষ্মীটি, দোষ আর টাকা দুটো যে লুকাতে হয়, আবার চর্চা হবে ঢের। অতঃপর শুরু করলাম কথা, আস্তে আস্তে মনের রিক্ত সিন্দুকে জমা হতে লাগল তিক্ত সিন্ধুর অনেক কথা।
চলবে…
১,২৩৩ বার পড়া হয়েছে