অবনী দিঘীর জলে
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1521বার পড়া হয়েছে।
সকাল টা খুব আলোকিতই কাটলো অবনীর। বাপের একমাত্র মেয়ে তাই তাকে বাসার কোন কাজ করতে হয়না। শুধু স্নিগ্ধ গাঙচিল হয়ে চারপাশ টা দেখেই সময় চলে যায় তার। রাবিতে বাংলা ডিপার্টমেন্ট এ পড়ুয়া ছাত্রি অবনী অতল।
ছোট ভাই আছে। তবে এটা মানব নয়। বিড়াল। কিউট একটা বিড়াল পুষেন অবনী নামের চশমা পড়ুয়া অষ্টাদশী বালিকা অবনী। খুব ভালবাসেন উনি এই জীবটিকে। তার যখন মন খারাপ হয় তখন সে বিড়ালটির সাথে কথা বলে। বিড়ালের ভাষা হয়তো সে বুঝতে পারে তাই তার মন খারাপের ক্ষনে সঙি হয়ে কথা বলার যোগান দেয় বিড়াল প্রজাতিরর জীবটি। অবনীর খুব ভাল একজন বান্ধুবি আছে। ছোট বেলা থেকেই ওরা একসাথে বড় হয়েছে। শিক্ষাজীবন ও একই সাথে। ওর নাম নেহেনা মাধুবী। ঠিক যেন মাধুবী লতার মতই ঐ মেয়েটি। যার কথা বলছিলাম, ঐযে অবনীর বান্ধুবি। ঠোটের পাশে একটা কাল তিলক আছে।
ওরা একজন অন্যজনকে বকুলফুল বলে ডাকে। একদিন নেহেনা কে নিয়ে অবনী একটি কবিতা লিখে, যদিও আমার কাছে তার পূর্ন টা নেই তবে কিছু অংশ এখানে দিলাম।
“বকুলফুল আজ তোমার কথা আমার ঠোটে লেপটে গেল
জানিনা কিভাবে যে কথাটার সাথে প্রণয় হল”
কবিতাটা আমার কাছে খুব দারুন লেগেছিল তখন, যখন অবনীর ডাইরি টা প্রথম পড়েছিলাম। সেদিন শনিবার, অবনীর পড়ার রুমটা খুব সুন্দর করে সাজালো সে। আজ তার কবিতার কবি তাদের বাসায় আসবে। যাকে কেন্দ্র করে ঘিরে আছে তার শত কবিতা। ওদের সম্পর্কের শুরু হয় বছর তিনেক আগে।
একদিন ছেলেটা অবনী কে ছোট খামে চিরকুট পাঠায়। আর লেখা ছিল দুজনের প্রেম তত্বের সংবিধান। প্রথমে অবনী না বলে দেয়। কিন্তু ছেলেটা বারবার তার কাছে চিরকুট পাঠায়। একদিন অবনী নিজেই ওকে বলে, “এই তোমার কি সময় হবে? চলনা আমরা কোন কফি শপে বসে কফি খাই।” ছেলেটি সাথে সাথেই রাজি হয়ে অবনী কে নিয়ে গেলেন কফি শপে।
ওখান থেকে দুজন বেড়িয়ে আবার হাটতে শুরু করলেন অবনীর স্মৃতি বিজরীত প্যারিসের রাস্তায়। আস্তে আস্তে তাদের মাঝে ভালবাসার জ্যামিতিক সরল রেখা অঙ্কিত হয়। ছেলেটি অবনী একটি নাম দেয় ‘বৃষ্টি’ আর অবনী ও তাকে বলে দে আজকে থেকে ওকে মেঘ বলে ডাকবে। এভাবেই মেঘ আর বৃষ্টি একে অপরের প্রমে জরিয়ে যায়। অবনী তার মেঘের জন্য হাত পাখা বানায় আরর তাতে সুই সুতোয় নকশি কাথার মত লিখে “দেয় ভুলনা আমায়”।
এখন বলা যায় সে ই তার ভালবাসার মানুষ।
আজ অবনী ওই মানুষটির জন্য নিজ হাতে কফি বানাবে। আজ সে নিজের কফির স্বাদ প্রিয়জন কে দেবে। সে আসবে আসবে বলে অপেক্ষার প্রহর গুনছে অবনী। হটাত মনে পড় রাস্তার পাশ থেকে কুড়িয়ে আনা চড়ুই পাখির বাসাটির। এক্কেবারে নতুন একটি বাসা। গত রাতে বৈশাখী বাতাসে হয়তো তাকে মাটিতে পরতে হয়েছিল। এটা এখানে আসার ও একটা সুন্দর কাহীনি আছে বলি শুনুন।
অবনী প্যারিসের পথে হাটার সময় চোখ যায় ঐ বেওয়ারিশ পাখির বাসাটির দিকে। হটাত সে দাড়িয়ে পড়লো রাস্তায়। বকুলফুল জানতে চাইলো কেনো আজ সে এমন করে হটাত রাস্তায় দাড়িয়ে পরলো? বকুলফুলের দিকে আপাত দৃষ্টিপট তাকিয়ে বলল, “ওই দেখেছিস ওটা কি? চড়ুই বাসা। মনে হয় গত রাতে পড়েছে। দারা আমি নিয়ে আসি ”
তারপর ওটাকে যতন করে বাসায় আনে আর ঝাড়া দিয়ে দেয়ালে টাঙিয়ে দেয়।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধা ঘনিয়ে এলো তারপরে ও অবনীর ভালবাসার মানুষটি এলোনা তার হাতে বানানো কফির মঘে ঠোটের স্পর্স লাগাতে। ফোন ও উঠাচ্ছে না। অবনী তো রেগে একাকার হয়ে আছে। আজ ফোন উঠালেই ধমক খাবে। তারপর হটাত সে ফোন দিল আর বলে আজ টিউশনি থেকে ফিরছে অনেক দেরিতে তাই আর ওদের বাসায় আসা হয়নি। অবনী ও তা মেনে নিল। যেহেতো বেচারা দুস স্বিকার করেছে। অবনী আজ তার কাছে বাহানা ধরে। বলে তাকে নিয়ে আগামীকাল ভার্সিটির লেকের পাড়ে হাটতে যাবে। মেঘ ও তাতে রাজি হয়ে যায় তবে মেঘের পছন্দ মত বৃষ্টিকে হলুদ শাড়ি পড়ে আসতে হবে।
পরদিন কথানুযায়ী অবনী বাসা থেকে হলুদ শাড়ি পড়ে বেড়িয়ে প্যারিসের রাস্তায় হাটা শুরু করে আর বায়ের দালান ঘেসা গলিটার দিকে তাকায়। শুধু অপেক্ষা আর একাকিত্ব বাসা বাধে তার বুকে। সে ভাবতে থাকে পড়ন্ত বিকেলের পরে যেমন করে দিনের আলোটা তলিতে যায় তেমন জকরে কি তার দিনটা ও তলিয়ে যাবে.? নাকি ধৈর্যেরা তার সাথে এক্কাদোক্কা খেলা করে? কিন্তু সৃস্টিকর্তার কি নির্মম পরিহাস! আজো মেঘ এলোনা তার বৃষ্টিরর সাথে দেখা করতে। অবনী অনেক্ষন অপেক্ষা করতে করতে এখন আশা ছেরে দিয়েছে। কিন্তু হটাত তার মাথায় যেনো মেঘে মেঘে ঘর্সনের ফলে সৃষ্ট বাঁজ পড়লো! মেঘ অবনীর ই বান্ধুবি বকুলফুল কে নিয়ে রিক্সায় চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এ শহরের ভিড়ে।
অবনী ওদের আড়াল করে নেয়। বকুলফুলের দিকে তাকিয়ে সে নিজের তিনবছরের ভালবাসাকে বিসর্জন দেয়। তারপর বৃষ্টির ফেসবুক ওয়ালে নিজেই একটি কবিতা লিখে জীবনের সমাপ্তি টানেন দিঘীর জলে আত্মহত্যাজ করে। পরদিন সকালে মেঘ হাটতে আসেন তার পাড়ে আর সে ই প্রথম বৃষ্টির হলুদ শাড়ি পড়ে ভেসে উঠা লাশ দেখেন। যেনো কোন পড়ি হলুদ শাড়ি পড়ে ভেসে উঠেছে দিঘীর জলে।
১,৪৮৫ বার পড়া হয়েছে
বেশ ভাল লাগল, সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ।
তোমার গল্প কবিতায় প্যারিসের নাম থাকে কেনো
গল্প ভাল লাগল।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর ভেতর একটা রাস্তা আছে যার নাম “প্যারিস সড়ক” তাছারা আমার লেখা একটা কবিতা এবং এ গল্পটার লোকেশন ঐ যায়গাটা তাই প্যারিস আসছে @ছবি আপি
bakko binnash shohaj ab sorol vasha
কিউট একটা বিড়াল পুষেন অবনী নামের চশমা পড়ুয়া অষ্টাদশী বালিকা অবনী – এক লাইনে অবনী দুবার এসে গেলো যে, লেখা ভালো লাগলো ।
হাসান ইমতি ভাইয়ের সাথে সহমত
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,..
শুভ কামনা
ভাল ভাবনার প্রকাশ