অর্জন
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1330বার পড়া হয়েছে।
একদিন জনতা ব্যাংক, কুয়েট শাখার জানালার সামনে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় বাঁয়ে তাকিয়ে দেখেছিলাম ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের দিক থেকে কালো বোরখা পরা, মাথায় ওড়না দেওয়া, গাঢ় ফর্শা একজন মেয়ে হাসতে হাসতে ব্যাংকের দিকে আসছে। ঠোঁট একটু মোটা। দাঁতগুলি সুন্দর। মুখটা অসাধারণ। মাঝারি ধরণের লম্বা। স্বাস্থ্য ভাল। আমার একদম সামনে দিয়ে এক ইঞ্চি উঁচু হিলওয়ালা স্যান্ডাল পায়ে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তার ঐ হাসি দেখে আমি অভিভুত হয়ে গিয়েছিলাম।
তার ঐ সুন্দর মুখটি আমার মনে প্রচণ্ড ছাপ মেরেছিল। তাই পরের বার দেখামাত্রই তাকে চিনে নিতে আমার ভুল হয়েছিল না। এরপর যখনই সে ক্যাম্পাসের রাস্তায় হেঁটে যেত তখনই আমি অদ্ভুত আকর্ষণে তাকিয়ে থাকতাম। তাকিয়ে থাকতে আমার ভাল লাগত। সে যখন হাসতো তখন আমি অভিভুত হয়ে যেতাম।
এরপর তিন বছর কেটে গেছে।
মেয়েটা কুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী। আর আমি এখানে চাকরি করি। কুয়েটের ভিতরেই থাকি। কিছুদিন পর তার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষা শেষ হলেই তার ক্যাম্পাসে আসা বন্ধ হয়ে যাবে এটা ভাবতেই বুকের মধ্যে শুন্যতা অনুভব করলাম। তার ছন্দে ছন্দে চলা, সুন্দর হাসি আর কোনদিন দেখতে পারবো না? তার মধুর কন্ঠ আর শুনতে পাবো না কোনদিন? সারাজীবনের জন্য তাকে হারিয়ে ফেলবো? সে কোনদিন জানতেও পারবে না যে তার রূপে এক মানব কতটা পাগল ছিল?
তাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে যে স্মরণিকা বের করা হয়েছে তা সংগ্রহ করলাম। তার মায়া জড়ানো ছবিটা দেখে তাকে চিনে নিয়ে তার নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার, ই-মেইল ঠিকানা, পছন্দ ইত্যাদি জেনে নিয়ে তার কাছে এক সকালে ই-মেইল পাঠালাম। তাতে লিখলামঃ
রুমা,
নববর্ষের শুভেচ্ছা। আর জন্মদিনের অগ্রিম শুভেচ্ছা রইল।
আমি জানি, আপনি ভাবছেন যে আমি কে? ইসরাত জাহান, আমি আপনার একজন শুভাকাংখি। এটা রিয়েলি সত্য যে আপনার পিতামাতার পরই আমি আপনার শ্রেষ্ঠ শুভাকাংখি।
আপনার পরীক্ষা ১৭/০১/২০০৮ ইং তারিখে শুরু হবে। আপনি কি আপনার পরীক্ষা নিয়ে চিন্তিত? প্লিজ চিন্তা করবেন না। বাহ্যিকভাবে আপনার পারসোনালিটি খুব সুন্দর। আশা করি আপনার মনটাও খুব সুন্দর, কারণ আপনি গান ভালবাসেন। তাই আপনার পরীক্ষা খারাপ হতেই পারে না। উপরন্তু আপনার পরীক্ষা যাতে খুব ভাল হয় সেজন্য আমি দোয়া করবো। সুতরাং পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা করবেন না।
ইসরাত জাহান, প্লিজ বিশ্বাস করুন, সত্যিই আপনার পিতামাতার পরই আমি আপনার সবচেয়ে ভাল শুভাকাংখি। তাই আমার ই-মেইলের উত্তর দিবেন প্লিজ।
সবসময় ভাল থাকবেন।
লাভলু
সন্ধ্যার পর অধীর আগ্রহ নিয়ে ই-মেইল চেক দিয়ে উত্তর পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম।
সে লিখেছে,
হে (Hey), আপনার ই-মেইলের জন্য ধন্যবাদ। প্রথমেই আমি আপনার সম্পর্কে জানতে চাই। কারণ আপনি আমার শুভাকাংখি এবং অবশ্যই আপনার সম্পর্কে জানার আমার অধিকার আছে। আপনি যদি আপনার নামটা জানান তবে আমি সত্যিই আনন্দিত হবো।
ভাল থাকেন/থাকো
বাইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইই
ছোট্ট একটা ই-মেইল। কিন্তু ই-মেইলের সুন্দর কথাগুলো এবং চপলতাপূর্ণ বিদায় জানানোটা পড়ে আমার সাড়া শরীরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লো।
দেরী না করে আমি তাকে ধন্যবাদ এবং আমার পরিবার সম্পর্কে জানিয়ে আবার ই-মেইল পাঠালাম।
পরদিন সকালে ই-মেইল চেক দিয়ে যখন দেখলাম তার কাছ থেকে কোন মেইল আসেনি তখন খুব হতাশ হলাম। বিকালে আবার চেক দিলাম কিন্তু হতাশই হতে হলো। পরদিন সকালেও কোন ই-মেইল পেলাম না। এরপর চার/পাঁচ দিন কেটে গেল। কিন্তু ই-মেইল এল না।
অনেক চিন্তা করে একটা উপায় বের করলাম। আমার যে নাম ই-মেইলে দিয়েছিলাম সে নাম দিয়ে তার মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে তার সাথে কথা বলার অনুমতি চাইলাম। কিন্তু কোন রেসপন্স পেলাম না। আধা ঘণ্টা পর পর তিন বার এসএমএস পাঠালাম। এরপর সে মিস কল দিল। আমি আনন্দে লাফিয়ে উঠলাম।
তারপর ফোন করলাম।
সে রিসিভ করলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেমন আছেন?
সে বলল, ভাল।
আমি বললাম, আপনাকে আমি কয়েকদিন আগে একটা ই-মেইল পাঠিয়েছিলাম। আপনি সেটা পেয়ে আমার সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। আমি আমার সম্পর্কে জানিয়ে আবার ই-মেইল পাঠিয়েছি। আপনি পাননি?
সে বলল, আমি আর ই-মেইল চেক দেইনি।
সে আবার বলল, আমাকে কিভাবে চেনেন?
আমি বললাম, এই ধরুন রাস্তায় চলার পথে আপনাকে দেখেছি।
সে বলল, তাতে তো আর আমি গান ভালবাসি সেটা জানা সম্ভব না তাই না?
আমি বললাম, আপনারা যে স্মরণিকা বের করেছেন সেখান থেকে ই-মেইল ঠিকানা এবং আপনি যে গান ভালবাসেন তা জেনেছি।
সে বলল, আপনি কোথায় থাকেন?
আমি সত্যি কথাটা বললাম না। বললাম, নিউ মার্কেটের আশেপাশে।
ওদের বাড়ির ঠিকানাটা নিউ মার্কেটের কাছাকাছি বলে অবাক কন্ঠে বলল, নিউ মার্কেটের আশেপাশে?
আমি বললাম, হ্যাঁ।
সে বলল, আমি মনে করেছিলাম যে আমার কাজিন মজা করে ই-মেইল পাঠিয়েছে। তাই উত্তর দিয়েছিলাম।
আমি হতাশ হলাম। কারণ আমি আমার নামটাও তো ই-মেইলে উল্লেখ করেছিলাম। তার ই-মেইলের কথার সাথে এখনকার কথার মিল না পেয়ে অবাক হলাম।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি বিরক্ত হচ্ছেন?
সে খুব ঘরোয়া ও ঘনিষ্ঠ কন্ঠে বলল, আমার পরীক্ষা চলছে তো, তাই পড়ছি।
তার ঘরোয়া, ঘনিষ্ঠ ও অন্যরকম কন্ঠটা আমার শরীরে কাঁপন তুলল।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, আবার কবে পরীক্ষা আছে?
সে বলল, আগামীকাল।
আমি বললাম, ঠিক আছে, আমি আজ রাখছি, পরে আবার ফোন করবো।
সে কিছুই বলল না।
আমি ফোন রেখে দিলাম।
তারপর আমি দ্বিতীয় ই-মেইলের কথাগুলোই তাকে এসএমএস করে পাঠিয়ে দিলাম।
পরদিন সকালে আমি তাদের ডিপার্টমেন্টের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইলাম তাকে দেখবো বলে। খুলনা শহর থেকে ভার্সিটির গাড়ি এলে অডিটরিয়ামের সামনে সবাই নামল। ভীড়ের মধ্যে তাকে দেখতে পেলাম। তার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম যাতে সে বুঝতে না পারে যে আমি তাকে দেখার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। কিছুক্ষণ পর সে সামনে এলে তার বামপাশটা এবং গেট দিয়ে ঢোকার সময় তার পিছনটা দেখলাম। এই মেয়েই আমার ই-মেইলের উত্তর দিয়েছে এবং গতকাল আমার সাথে অনেকক্ষণ কথা বলেছে মনে পড়তেই শরীরটা শিহরে উঠল।
বিকাল পাঁচটায় অফিস থেকে বের হয়ে গাড়ির কাছাকাছি গিয়ে দূর থেকে দেখলাম সে গাড়ির দিকেই আসছে। বোরখার উপরে চাদর জড়ানো। আমি গাড়িতে উঠে দুই/তিন সিট পিছনে গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পর সামনের দরজা দিয়ে সে গাড়িতে উঠলো। তার মাথায় নিল রংয়ের ওড়না। পায়ে চমৎকার স্যান্ডাল। শীতের বিকেলে তাকে খুব নির্মল আর সুন্দর দেখাচ্ছে। এই কোলাহলপূর্ণ পরিবেশের মাঝে তার অপরূপ সৌন্দর্যকে বেমানান মনে হল। আমার সামনের সিটে বসার সময় আমাকে মনোযোগ দিয়ে ভাল করে তাকিয়ে দেখলো।
আমি অবাক হলাম। আমাকে চিনে ফেলেছে নাকি? কিন্তু চিনলো কিভাবে?
একটু পর গাড়ি ছেড়ে দিল। আসলে আজ দেখবো যে সে গাড়ি থেকে কোন জায়গায় নামে। প্রায় আধা ঘণ্টা পর নিউ মার্কেটের কাছে গাড়ি থামতেই সে সিটের বামপাশ থেকে ডানপাশে সরে এসে নেমে গেল। আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম যে নিউ মার্কেটের কাছাকাছিই তাদের বাড়ি।
কুয়েটে ফিরে এসে রাতে তাকে বেশ কয়েকবার ফোন করলাম। কিন্তু সে রিসিভ করলো না। অবশেষে রিসিভ করলো। কিন্তু পুরুষ কন্ঠে একজন জিজ্ঞেস করলো, কিরে, ফোন করেছিস কেন?
আমি বললাম, একটু কথা বলতে চেয়েছিলাম।
সে বলল, তুই আমার বোনকে কিন্তু অনেক বিরক্ত করছিস। আর যদি বিরক্ত করিস তবে কিন্তু খুলনার নোনা জল খাওয়ায়ে দিমু।
আমি হতবাক হয়ে গেলাম। রুমার কোন ক্ষতি করা তো আমার উদ্দেশ্য নয়। পাবনা থেকে এখানে এসেছি চাকরি করতে। চাকরি করতে এসে তার সাথে দেখা হয়েছে। আমি তাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি। আমি মনে করি যে তাকে জীবনসঙ্গিনী হিসাবে পেলে স্ত্রীর কাছ থেকে মানুষ যা চায় তার চেয়েও বেশি তার কাছ থেকে আমি পাব। বিনিময়ে আমিও তাকে দিতে চাই তার থেকেও অধিক। আর লোকটা কিনা এভাবে কথা বলছে! তাই ঘৃণা জন্মালো লোকটার প্রতি। কিন্তু আমি খুব বিনীতভাবে একরাশ বেদনা নিয়ে বললাম, ঠিক আছে। ভুল হলে ক্ষমা করবেন। আর কোনদিন ফোন করবো না।
সে চুপ হয়ে গেল। মনে হলো, সে হয়তো ভেবেছিল যে আমিও তার মত স্বরেই কথা বলবো, কিন্তু তা না করে আমি তার কাছে ক্ষমা চাওয়ায় সে অবাক হয়ে গেছে।
কয়েক মুহূর্ত পর সে বলল, ঠিক আছে।
খুব রাগ হলো। আমার দুটো সিম কার্ড। একটা বাংলালিংক ও একটা গ্রামীন। রুমার সাথে যোগাযোগ করছিলাম বাংলালিংক এর সিম দিয়ে। সীমটা খুলে ফেলে সাথে সাথে ভেঙ্গে ফেললাম। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম আর ফোন করবো না।
কিছুদিন পর ইলেক্ট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টের এক কলিগ আমাকে বলল যে এবার পরীক্ষা শেষ করেছে এরকম দুইজন মেয়ে নাকি তাকে জিজ্ঞেস করেছিল যে সে আমাকে চেনে কিনা। সে বলেছিল যে খুব ভাল করেই চেনে, আমার সাথে তাদের আলাপও করিয়ে দিতে পারে। তারপর তারা জিজ্ঞেস করেছিল যে আমি কেমন লোক। সে বলেছিল যে ভাল লোক। এটা শুনে আবার মনের মধ্যে আশা জেগে উঠলো। আফসোস হলো সীমটা ভেঙ্গে ফেলার জন্য।
ভালোবাসা দিবসের দিন দুপুরে খুলনা যাওয়ার জন্য গাড়িতে গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পর রুমা তার দুইজন বান্ধবীকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো। ওদের হাতে রজনীগন্ধার স্টিক। একজন বসলো ইঞ্জিন কভারের উপর। আরেকজন বসলো দুই সীট পরে। আর তার সাথে দাঁড়িয়ে রুমা কথা বলতে লাগল। আমি আরও তিন সীট পরে ডান পাশে বসে আছি। ডানপাশের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছি এমন সময় আমার বাম কনুইতে কে যেন ঘেঁষা দিয়ে পিছন দিকে চলে গেল। আমি ঘার ঘুরিয়ে দেখলাম রুমা তখন আমার এক সীট পরে বামপাশে বসে আছে। আমার পিছনে গাড়িতে সে ছাড়া আর কেউই নেই। তবে কি রুমা-ই আমাকে ঘেঁষা দিয়েছে? রুমা ঘেঁষা দিয়েছে ভাবতেই শরীরের মধ্যে শিহরণ অনুভব করলাম। কিন্তু কেন ঘেঁষা দিয়েছে তা বুঝতে পারলাম না।
গাড়ি তখনও ছাড়েনি। রুমা ওর এক বান্ধবীকে চেঁচিয়ে বলল, শনিবারে আমাদের বাড়িতে যাবি কিন্তু।
বান্ধবীটি বলল, কেন, সেদিন কি তোর জন্মদিন? গেলে মিষ্টি খাওয়াবি তো?
আর কিছু বলল না। আমার মনে প্রশ্ন জাগল। রুমার জন্মদিন তো আরো কয়েক মাস পরে। তবে কি আমি জন্মদিনের অগ্রিম শুভেচ্ছা জানিয়েছি বলে আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে ও কথা বলল? ঐ কথার ভিতরে কি আমার জন্য কোন ধাঁ ধাঁ লুকিয়ে আছে?
নিউ মার্কেটের ওখানে গাড়ি ত্থেকে নামলাম। নামার পর দাঁড়ি, টুপিওয়ালা এক হুজুর মতন লোক আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর আমাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কি লাভলু?
আমি বললাম, হ্যাঁ। কিন্তু আপনি কে?
সে বলল, আমাকে চিনতে পারছো না? আমি ফারুক।
এবার চিনলাম। আমার ভার্সিটি জীবনের বন্ধু। ও ছিল আমার ক্লাসমেট। ও থাকতো মহসিন হলে। আর আমি থাকতাম এস এম হলে। তখন তার এরকম বেশভুশা ছিল না। তাই প্রথমে চিনতে পারিনি। এরপর অনেক কথা হলো। ও খুলনায় জীবন বীমা কর্পোরেশনে চাকরি করে। ওর বাসা কোথায় তা জিজ্ঞেস করায় যে এলাকার কথা বলল তাতে মনে হলো যে রুমাদের বাড়ির কাছাকাছিই হবে। ওর মোবাইল নাম্বার নিলাম এবং আমারটাও দিলাম। বিদায় নেয়ার সময় বলে আসলাম যে আবার যেদিন খুলনায় আসবো সেদিন তার সাথে দেখা করবো।
হঠাৎ একটা বিষয় আমার মাথায় এল। গাড়ির মধ্যে রুমা আমাকে ঘেঁষা দিয়ে সীটে গিয়ে বসার পর ওর সীটে ও একাই ছিল। কিন্তু তার আগে সীটে বসা ওর বান্ধবীর সাথে ও যখন দাঁড়িয়ে কথা বলছিল তখন তো ওর বান্ধবীর সীটেও ও বসতে পারতো। কিন্তু তা না বসে আমার সাথে ঘেঁষা দিয়ে আমার কাছাকাছি সীটে বসলো কেন? তবে কি সে আমাকে তার পাশে বসার আহবান জানিয়েছিল? তাই তো! তখন আমি এটা বুঝতে পারিনি কেন? নিজের নির্বুদ্ধিতায় মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা হল। সিদ্ধান্ত নিলাম যে শনিবার খুলনায় গিয়ে রুমাদের বাড়ির কাছে যাবো। কোন চমক তো থাকতেও পারে আমার জন্য।
শনিবার খুলনা শহরে ফারুকের বাসা যে এলাকায় সেই এলাকায় গিয়ে ফারুকের কাছে ফোন করলাম। তারপর তার সাথে এক দোকানে দেখা করে চা, নাস্তা খেলাম। রুমাদের বাড়ির ঠিকানা আমার মুখস্থ। কিন্তু লোকেশনটা আমার জানা নেই। তাই ফারুককে কিছু বুঝতে না দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলার ফাঁকে রুমাদের বাড়ি যে রোডে সেই রোডটা কোথায় তা তার কাছে জিজ্ঞেস করলাম। সামনেরই একটা রোড দেখালো সে। ওকে সাথে করে সেই রোডে প্রবেশ করে কিছুদূর এগিয়ে যেতেই একটা বাড়ির গেটের সাথে লাগানো ঠিকানার সাথে রুমাদের ঠিকানাটা মিলে গেল। এত সহজে বাড়িটা খুঁজে পেলাম বলে ভাল লাগল। বাড়িটার সামনে রাস্তার ওপারে গিয়ে দাঁড়িয়ে বাড়িটার দিকে তাকালাম। পাঁচ তলা বিশাল বাড়ি। আমি আকাশ থেকে পড়লাম। রুমারা এত ধনী তা আগে চিন্তাও করিনি।
ফারুকের মাধ্যমে একটা কাজ উদ্ধার করে ফেললাম তাকে কিছুই না জানিয়ে, এটা চিন্তা করে নিজেকে প্রতারক মনে হল। কিন্তু ভাবলাম পরে সময় নিয়ে ফারুককে বিষয়টা জানাবো।
ফারুকের সাথে গল্প করছি এমন সময় হঠাৎ রুমাকে দেখে চমকে উঠলাম। সে সবসময় যেরকম বোরখা পরে তা থেকে কিছুটা সর্ট একটা বোরখা পরে দৃঢ় পদক্ষেপে বাড়ির গেট দিয়ে বাইরে বের হয়ে এল। আজকে ওকে আগের থেকে স্লিম, কম বয়সী ও আরো আকর্ষণীয় লাগল। আমাদের সামনে দিয়ে সে হেঁটে বড় রাস্তার দিকে চলে গেল। এত বড় চমক দেখার জন্য আমি বিন্দুমাত্রও প্রস্তুত ছিলাম না। তাই কেমন যেন দিশাহারা হয়ে পড়লাম। কি করবো তা সহসা বুঝে উঠতে পারলাম না।
কিন্তু এটা বুঝলাম যে ফারুকের কাছ থেকে তারাতারি বিদায় নেয়া দরকার। কিভাবে বিদায় নেবো সেই ফন্দি খুঁজতে লাগলাম। চিন্তা করলাম, ফারুকের সাথে অনেকক্ষণই তো কথা বলেছি। তাই এখন বিদায় নিলেও তা ও স্বাভাবিকভাবেই নেবে। কিন্তু বিদায় নেয়ার কথা বলাতে সে তার বাসায় যেতে বলল। আমি আরেকদিন যাব বলে এবং আমার ওখানে ওকেও যেতে বলে তারাতারি বিদায় নিলাম।
বড় রাস্তায় গিয়ে এদিক ওদিক তাকালাম। দেখলাম একটু দূরে রুমা দাঁড়িয়ে আছে। আমি কাছে যেতেই সে একটা রিক্সা ডাক দিল। সে রিক্সায় উঠে আমাকে বলল, রিক্সায় এসো।
আমি চুম্বকের মত রিক্সায় উঠে বসলাম। সংকোচ করার সময়ই পেলাম না।
রিক্সা ছেড়ে দেওয়ার পর জিজ্ঞেস করলাম, সেদিন আপনার ভাইকে দিয়ে আমাকে ওভাবে অপমান করিয়েছিলেম কেন?
সে বলল, তোমাকে তো আমি আগে চিনতাম না। তুমি কোন শ্রেণীর লোক তা জানার জন্য আমার তো কিছুদিন সময়ের প্রয়োজন থাকতে পারে না-কি? অত অধৈর্য হলে চলবে?
আমি বললাম, এবার বুঝেছি কেন আপনি আমাকে ওভাবে অপমান করিয়েছিলেন।
সে বলল, বুঝলে খুবই ভাল। কিন্তু আমি তুমি করে বলছি আর তুমি আপনি আপনি করছো কেন?
আমি বললাম, এই প্রথম সরাসরি কথা বলছি। তাই তুমি বলতে লজ্জা লাগছে।
সে বলল, পুরুষ মানুষের আবার লজ্জা কিসের? লজ্জা পায় তো মেয়ে মানুষ।
আমি বললাম, পুরুষ মানুষ কি নির্লজ্জ হবে?
সে বলল, না তা না। কিন্তু বেশি লজ্জা না থাকাই ভাল।
আমি বললাম, কোথায় যাবেন এখন?
সে বলল, তোমার ব্যাপারে আমাদের খোঁজখবর নেয়া হয়ে গেছে। আমরা তৃপ্ত। তাই তুমি যেখানে নিয়ে যাবে সেখানেই যাবো। যদি তোমার সাথে কোথাও হারিয়ে যেতে বলো তাতেও আমি রাজি।
রুমার কথা শুনে খুব শিহরিত হলাম, কেঁপে উঠল আমার শরীরটা। চেপে ধরলাম ওর হাত। হাতের স্পর্শে শিহরণ বহু গুণে বেড়ে গেল। আরো জোর দিয়ে চেপে ধরলাম ওর হাতটা। ভাবলাম, রুমাকে আমার মনের কথা জানিয়ে খুব ভাল একটা কাজ করেছি। কারণ তার ভালোবাসা পাওয়া আমার এক অসাধারণ অর্জন।
১,৪১১ বার পড়া হয়েছে
ভাল লিখেছেন । চালিয়ে যান ।
আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ভাই। আমার জন্য দোয়া করবেন।
অনেক বড় কিন্তু বেশ সুন্দর গল্প…ভালো লাগা থাকলো….
ভাল লাগা জানানোর জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
খুব ভাল লিখেছেন
ভাল লাগলো
আরও লিখুন………………….
আপনার সুন্দর মন্তব্যে খুব অনুপ্রাণিত হলাম ভাই। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
গল্পটি খুব ভালো লেগেছে।
ভাল লাগা জানানোর জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
অর্জন পড়ে ভাল লাগল।
ধন্যবাদ।