আজ হিলারি তেনজিং-এর এভারেস্ট জয়ের ৬০ বছর
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1973বার পড়া হয়েছে।
মাউন্ট এভারেষ্ট হিমালয় পর্বতমালায় অবস্থিত সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে শীর্ষবিন্দুর উচ্চতার হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে এর উচ্চতা ৮,৮৪৮ মিটার (২৯,০২৯ ফুট) । এটি হিমালয় পর্বতমালার একটি অংশ, এশিয়ার নেপাল এবং চীনের সীমানার মধ্যে এর অবস্থান।
নেপালের কালা পাথর থেকে এভারেষ্ট
পৃথিবীর এই উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ সব ধরণের পর্বতারোহীদের আকর্ষণ করে- একেবারেই নতুন পর্বতারোহী থেকে শুরু করে বহু অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পোড়-খাওয়া পর্বত-অভিযাত্রীরাও এতে সফল আরোহণের জন্যে পেশাদার পর্বত পথ-প্রদর্শকদের পেছনে দেদারসে টাকা খরচ করতে দ্বিধাবোধ করে না। পর্বতারোহীরা নেপালের পর্যটন আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস, কারণ এভারেষ্ট পর্বতশৃঙ্গ আরোহণে ইচ্ছুক প্রত্যেক পর্বতারোহীকে নেপাল সরকারের কাছ থেকে ২৫,০০০ মার্কিন ডলার মূল্যের একটি ব্যয়বহুল পারমিট সংগ্রহ করতে হয়। এতে আরোহণ করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ২১০ জন পর্বতারোহী প্রাণ হারিয়েছেন, এর মধ্যে ৮ জন ১৯৯৬ সালে পর্বতের অত্যন্ত উঁচুতে ঝড়ের কবলে পড়ে প্রাণ হারান। বিশেষত ডেথ জোন এ আবহাওয়া এতোটাই প্রতিকূল যে বেশিরভাগ সময় হতভাগ্য পর্বতারোহীর মৃতদেহ সেখান থেকে উদ্ধার করা সম্ভবপর হয় না। এরকম কিছু দৃশ্য আদর্শ পর্বতারোহণ রুট থেকে লক্ষ্য করা যায়।
সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া হিসেবে আবিষ্কার
পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতসমূহের অবস্থান এবং পরিচয় শনাক্ত করার লক্ষ্যে ১৮০৮ সালে পরাধীন ভারতে ব্রিটিশরা বৃহৎ ত্রিকোণমিতিক জরিপ আরম্ভ করে। জরিপকাজে নিঁখুত পরিমাপের জন্যে ১১০০ পাউন্ড অজনের থিয়োডোলাইট ব্যবহৃত হয়। দক্ষিণ ভারত থেকে জরিপকাজ আরম্ভ করে জরুপকারী দল ক্রমাগত উত্তরদিকে সরতে থাকে এবং ১৮৩০ সালে তারা হিমালয়ের পাদদেশে পৌঁছায়। কিন্তু রাজনৈতিক এবং ঔপনিবেশিক আগ্রাসনের ভয়ে নেপাল সরকার ব্রিটিশদের তাদের দেশে প্রবেশাধিকার দেবার ব্যাপারে অনিচ্ছুক ছিল। জরিপ দলের নেপালে প্রবেশের সকল আবেদনই প্রত্যাখান করা হয়।
সব বাধা-বিপত্তি তুচ্ছ করে ব্রিটিশ জরিপকারী দল কাজ চালিয়ে যায় এবং ১৫০ মাইল (২৫০ কিমি)দূর পর্যন্ত অবস্থিত পর্যবেক্ষণ স্টেশন থেকে হিমালয়ের জরিপ কাজ সম্পন্ন করে। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বছরের কেবল শেষ তিন মাস জরিপকাজ চলত।১৮৪৭ সালের শেষ দিকে ব্রিটিশ প্রধান জরিপকারক এন্ডু ওয়াহ হিমালয়ের পূর্ব দিকে অবস্থিত সবাজপুর স্টেশন থেকে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন করেন। সে সময় বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া হিসেবে বিবেচিত হত কাঞ্চনজঙ্ঘা। ওয়াহ কাঞ্চনজঙ্ঘার ১৪০ মাইল (২৩০ কিমি) পূর্বে আরো উঁচু একটি পর্বত লক্ষ্য করেন। প্রায় একই সময়ে জন আর্মস্ট্রঙ নামে তার এক কর্মচারীও একটি ভিন্ন অবস্থান থেকে চূড়াটি লখ্য করেন এবং একে peak-b হিসেবে অভিহিত করেন। ওয়াহ পরবর্তীতে মন্তব্য করেন যে যদিও পর্যবেক্ষণ হতে বোঝা যাচ্ছিলো যে peak-b কাঞ্চনজঙ্ঘা অপেক্ষা উচ্চতর, তা সত্ত্বেও প্রমাণের জন্যে আরো নিকটতর স্থান হতে পর্যোবেক্ষণ প্রয়োজন ছিলো। ওয়াহ কাজটি এগিয়ে নেবার জন্যে তেরাইতে একজন কর্মকর্তাকে প্রেরণ করেন, কিন্তু মেঘের কারণে জরিপকাজ চালানো সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।
১৮৪৯ সালে ওয়াহ সেখানে জেমস নিকলসনকে প্রেরণ করেন। নিকলসন ১১৮ মাইল দূরে অবস্থিত জিরল থেকে দুটি পর্যবেক্ষণ লিপিবদ্ধ করেন। অতঃপর নিকলসন আরো পূর্বে সরে যান এবং পাঁচটি বিভিন্ন স্থান হতে তিরিশেরও অধিক পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন করেন, যার মধ্যে নিকটতমটি ছিল এভারেস্টের ১০৮ মাইল (১৭৪ কিমি) দূর হতে নেয়া।
নিকলসন অতঃপর ভারতের গঙ্গা-তীরবর্তী শহর পাটনায় ফিরে যান এবং পর্যবেক্ষণ হতে প্রাপ্ত উপাত্ত সমূহ নিয়ে হিসাব-নিকাশ আরম্ভ করেন। তার খসড়া উপাত্ত হতে তিনি peak-b এর উচ্চতা নির্ণয় করেন ৩০,২০০ ফুট (৯,২০০ মিটার), কিন্তু এটি ছিল আলোর প্রতিসরণ জনিত ত্রুটি অগ্রাহ্য করে নির্ণীত উচ্চতা। তবুও এই খসড়া হিসাব থেকে তিনি বুঝতে পারলেন, peak-b এর উচ্চতা কাঞ্চনজঙ্ঘা হতে বেশি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে নিকলসন ওই সময়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন এবং তার হিসাব-নিকাশ অসমাপ্ত রেখেই দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হন। মাইকেল হেনেসি নামক ওয়াহর একজন সহকর্মী সে সময়ে নামবিহীন চূড়াগুলিকে রোমান সংখয়্যায় প্রকাশ করা আরম্ভ করেন এবং সেই রীতি অনুযায়ী peak-b এর নতুন নাম হয় peak-XV (চূড়া-১৫)। ১৮৫২ সালে বাঙ্গালি গণিতবিদ ও জরিপকারক রাধানাথ শিকদার দেরাদুনে অবস্থিত জরিপ সদর-দপ্তরে বসে হিসাব-নিকাশ করে এভারেস্টের সঠিক উচ্চতা আবিষ্কার করেন এবং একে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি এনে দেন।তিনি নিকলসনের তথ্যের ভিত্তিতে ত্রিকোণমিতিক পদ্ধতিতে এই হিসাব সম্পন্ন করেন।
নামকরণ
উচ্চতা নির্ণয় করার পর পর্বতচূড়াটির সঠিক নামকরণ হয়ে দাঁড়ায় পরবর্তী চ্যালেঞ্জ। জরিপকারী দল চাচ্ছিল পর্বতচূড়াগূলোর স্থানীয়ভাবে প্রচলিত নামগুলো সংরক্ষণ করতে (উদাহরণস্বরূপ কাঞ্চনজঙ্ঘা ও ধবলগিরি স্থানীয় নাম)। কিন্তু ওয়াহ বললেন তিনি প্রচলিত কোন স্থানীয় নামের সন্ধান পাননি। বিদেশীদের জন্যে তিব্বত ও নেপাল উন্মুক্ত না থাকায় তার স্থানীয় নামের অনুসন্ধান বাধাগ্রস্ত হয়। বেশ কিছু স্থানীয় নাম প্রচলিত থাকলেও এদের মধ্যে সুপরিচিত ছিল তিব্বতিদের ব্যাবহার করা কয়েকশ’ বছরের পুরনো নাম চোমোলুংমা, যা কিনা ১৭৩৩ সালে দ্য’নভিল কর্তৃক প্যারিসে প্রকাশিত একটি ম্যাপে ব্যবহার করা হয়। তবে ওয়াহ যুক্তি উথথাপন করেন যে যেহেতু অনেকগুলো স্থানীয় নাম প্রচলিত তাই এদের থেকে সঠিক নামটি বেছে নেওয়া দুঃসাধ্য। তাই তিনি তার পূর্বসূরি ভারতের প্রাক্তন জরিপ পরিচালক জর্জ এভারেস্টের নামে পর্বতচূড়াটির নামকরণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি লেখেন-
”আমার সম্মানিত পূর্বসূরি জরিপ প্রধান কর্ণেল স্যার জর্জ এভারেস্ট আমাকে প্রতিটি ভৌগোলিক উপাদান স্থানীয়ভাবে প্রচলিত নামকরণ করতে শিখিয়েছিলেন। কিন্তু এই পর্বতটি, যা কিনা খুব সম্ভবতঃ পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত- এর কোন স্থানীয় নাম আমরা খুঁজে পাইনি, আর কোন স্থানীয় নাম থেকে থাকলেও নেপালে প্রবেশের আগে তা আমাদের পক্ষে নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব নয়। এরমধ্যেই চূড়াটির নামকরণ করার সুযোগ এবং পাশাপাশি দায়িত্বও আমার কাঁধে বর্তেছে……এমন একটি নাম যা কিনা দেশ-বিদেশের ভূগোলবিদরা জানবে এবং পৃথিবীর সভ্য জাতির লোকদের মুখে মুখে ফিরবে।” জর্জ এভারেস্ট ওয়াহের প্রস্তাবকৃত নামটির বিরোধিতা করেন এবং ১৮৫৭ সালে রয়েল জিওগ্রাফিক সোসাইটিকে বলেন এই নামটি হিন্দীতে লেখা সম্ভব নয় এবং ভারতের স্থানীয়রা নামটি উচ্চারণ করতে পারবে না। তবে তার এই আপত্তি ধোপে টেকেনি – ১৮৬৫ সালে রয়েল জিওগ্রাফিক সোসাইটি আনুষ্ঠানিকভাবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতচূড়ার নামকরণ করে মাউন্ট এভারেস্ট।
কোড ম্যাসেজ
‘‘স্নো কন্ডিশনস ব্যাড স্টপ অ্যাডভান্সড বেস এবানডন্ড মে টোয়েন্টিনাইন স্টপ অ্যাওয়েটিং ইমপ্রুভমেন্ট স্টপ অল ওয়েল’’ এই ম্যাসেজের অর্থ হচ্ছে: ‘‘হিলারি এবং তেনজিং ২৯ মে এভারেস্টের সর্বোচ্চ চূড়া জয় করেছে৷’’ ১৯৫৩ সালের পহেলা জুন এই তথ্য লন্ডনে পৌঁছায়৷ এভারেস্টের সর্বোচ্চ শিখরে মানুষের পদচিহ্নের খবর শুনে উৎসবে মেতে ওঠে সবাই৷
শুরুর দিককার অভিযানসমূহ
১৮৫৫ সালে আলপাইন ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন টমাস ডেন্ট তার বই Above The Snow Line এ মন্তব্য করেন যে এভারেস্ট পর্বতে আরোহণ করা সম্ভব।
জর্জ ম্যালোরি তার ১৯২১ সালের অভিযানের সময় উত্তরদিক থেকে এভারেস্টে আরোহণ করার পথ আবিষ্কার করেন। ঐ অভিযানটি ছিলো মূলতঃ অনুসন্ধানমূলক অভিযান, চূড়ায় ওঠার মত প্রয়োজনীয় উপকরণ অভিযাত্রী দলটির ছিলো না। ম্যালোরির নেতৃত্বে (যিনি এই অভিযানের মাধ্যমে এভারেস্টের প্বার্শদেশে পা রাখা প্রথম ইউরোপিয়ানে পরিণত হন) দলটি উত্তরের গিরিখাতের ৭,০০৭ মি (২২,৯৮৯ ফুট) আরোহণ করে। সেখান থেকে চূড়ায় ওঠার জন্যে ম্যালোরি একটি সম্ভাব্য রুট পরিকল্পনা করেন, কিন্তু তার সহযাত্রীরা এরকম একটি দুঃসাহসিক অভিযানের জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। তাই সেবার তিনি ফিরে যান।
ব্রিটিশরা ১৯২১ সালের অভিযানে হিমালয়ে প্রত্যাবর্তন করে। এতে জর্জ ফিনচ প্রথমবারের মত অক্সিজেন ব্যবহার করে পর্বতারোহণ করেন। তার আরোহণের গতি ছিলো বিস্ময়কর – ঘন্টায় প্রায় ৯৫০ ফুট (২৯০ মি)। তিনি ৮,৩২০ মিটার (২৭,৩০০ ফুট) ওপরে ওঠেন, যা ছিল সর্বপ্রথম কোনো মানুষের ৮,০০ মিটারের বেশি উচুতে আরোহণ। ম্যালোরি এবং কর্ণেল ফেলিক্স দ্বিতীয়বারের মতো ব্যর্থ অভিযান করেন। ম্যালোরির নেতৃত্বাধীন দলটি উত্তরের গিরিখাত বেয়ে নামতে গিয়ে ভূমিধ্বসের কবলে পড়ে এবং সাতজন কুলি নিহত হয়।
পরবর্তী অভিযান হয় ১৯২৪ এ। ম্যালোরি এবং ব্রুসের প্রাথমিক প্রচেষ্টা স্থগিত করতে হয় যখন খারাপ আবহাওয়ার কারণে ক্যাম্প VI নির্মাণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। পরবর্তী প্রচেষ্টা চালান নর্টন এবং সমারভিল, তারা অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়াই অভিযানে নামেন এবং চমৎকার আবহাওয়ার সুবিধা পেয়ে নর্থ ফেস থেকে গ্রেট কুলোয়ির পর্যন্ত পরিভ্রমণ করেন। নর্টন ৮,৫৫৮ মিটার (২৮,০৭৭ ফুট ) পরিভ্রমণ করেন, যদিও যদিও শেষ এক ঘন্টায় তিনি মাত্র ১০০ ফুটের মতো উঠেছিলেন। ম্যালোরি শেষ চেষ্টা হিসেবে দ্রুত অক্সিজেন সরঞ্জাম যোগাড় করে এভারেস্টে অভিযানের আয়োজন করেন। এবার তিনি সঙ্গী হিসেবে নেন তরুণ এন্ড্রু আর্ভিংকে। ৮ জুন, ১৯২৪ তারিখে জর্জ ম্যালোরি ও এন্ড্রু আর্ভিং উত্তর গিরিখাত দিয়ে এভারেস্ট-চূড়া বিজয়ের মিশন শুরু করেন। এই অভিযান থেকে তাদের আর ফিরে আসা হয়নি। ১৯৯৯ ম্যালোরি ও আর্ভিং রিসার্চ এক্সপেডিশন নর্থ ফেসের নিচে, ক্যাম্প-VI এর পশ্চিমে একটি তুষার গহবর থেকে ম্যালোরির মৃতদেহ উদ্ধার করে। তারা দু’জন এভারেস্ট চূড়ায় ১৯৫৩ সালে হিলারি ও তেনজিং এর স্বীকৃ্ত সর্বপ্রথম বিজয়ের আগে আরোহণ করতে পেরেছিলেন কিনা তা নিয়ে পর্বতারোহী সমাজে বহু বিতর্ক রয়েছে।
১৯৫২ সালে এডোয়ার্ড ভিস-ডুনান্ট এর নেতৃত্বাধীন একটি সুইস অভিযাত্রী দল নেপাল দিয়ে এভারেস্টে আরোহণের চেষ্টা করার অনুমতি লাভ করে। দলটি খুমবু আইসফলের মধ্য দিয়ে একটি রুট প্রতিষ্ঠা করে এবং দক্ষিণ গিরিখাতের ৭,৯৮৬ মিটার (২৬,২০১ ফুট) আরোহণ করে। রেমন্ড ল্যাম্বার্ট এবং শেরপা তেনজিং নোরকে দক্ষিণ-পূর্ব রিজের ৮,৫৯৫ মিটার (২৮,১৯৯ ফুট) ওপরে ওঠেন, যা ছিল উচ্চতা আরোহণে মানুষের নতুন রেকর্ড। তেনজিং এর এই অভিজ্ঞতা ১৯৫৩ সালে ব্রিটিশ অভিযাত্রী দলের সঙ্গে কাজ করার সময় সহায়ক হয়। তেনজিং জন্মেছিলেন তিব্বতী গ্রাম মায়জ এ এবং বড় হয়েছিলেন নেপালে।
হিলারি ও তেনজিং এর সর্বপ্রথম এভারেস্ট জয়
৩২ বছরের চেষ্টার পর ভূপৃষ্ঠের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টের চূড়ায় প্রথমবারের মতো মানুষের পা পড়ল ১৯৫৩ সালের ২৯ মে। নিউজিল্যান্ডের এডমুন্ড হিলারি ও নেপালের তেনজিং নোরগে- দুই মহাদেশের দুই মানুষ একসঙ্গে জয় করলেন এভারেস্টকে। বরফঢাকা ২৯ হাজার ৩৫ ফুট উচ্চতা পেরিয়ে এভারেস্টে পা রাখেন তারা ২৯ মার্চ সকাল সাড়ে ১১টায়। তবে তাদের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয়ের খবর মানুষ জেনেছিল ২ জুন। নেপাল ও তিব্বত জুড়ে বিস্তৃত হিমালয় পর্বতমালার সর্বোচ্চ চূড়াই হলো এভারেস্ট। স্যার জর্জ এভারেস্ট নামে ১৯ শতকের এক বৃটিশ ভূমি জরিপকারীর নামে এই পর্বতচূড়ার নাম।
বিবিধ রেকর্ড
১৯৭৫ সালের ১৬ মে প্রথম নারী হিসেবে এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করার কৃতিত্ব লাভ করেন জাপানের জুনকো তাবেই।
প্রথম দুইবার এভারেস্টে উঠতে সক্ষম হন শেরপা নাওয়াং গোম্বু। ১৯২২ সালের ২০ মে তিনি এই রেকর্ড অর্জন করেন। প্রথমে ১৯৬৩ সালে একটি আমেরিকান অভিযানে এবং ১৯৬৫ সালে একটি ইন্ডিয়ান অভিযানের মাধ্যমে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো এভারেস্ট করেন।
প্রথম প্রতিবন্ধী হিসেবে ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টম হুইটেকার এভারেস্টের চূড়ায় উঠেন। একটি কৃত্রিম পা নিয়েও তিনি এভারেস্ট জয় করে বিশ্ববাসীকে চমকে দেন।
নেপালের আপা শেরপা সবচেয়ে বেশিবার এভারেস্ট জয় করেছেন। ১৯৯০ সালের ১০ মে থেকে ২০১১ সালের ১১ মে পর্যন্ত তিনি মোট ২১ বার তিনি এভারেস্টের চূড়ায় পা রেখেছেন। নন শেরপা হিসেবে এই রেকর্ড আমেরিকান পর্বতারোহী ও অভিযানের গাইড ডেভ হানের দখলে। ১৯৯৪ সালের ১৯ মে থেকে ২০১২ সালের ২৬ মে পর্যন্ত মোট ১৪ বার এভারেস্ট জয় করেছেন তিনি।
প্রথম জয়, প্রথম মৃত্যু
২০১০ সালের ২৩ মে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্টের সর্বোচ্চ শেখরে পা রাখেন মুসা ইব্রাহীম (বামে)৷ সেই জয়ের খবরে আনন্দের বন্যা নামে বাংলাদেশে৷ আর ২০১৩ সালে এভারেস্ট জয় করে ফেরার পথে মারা যান সজল খালেদ৷
কে আগে চূড়ায় উঠেছিল?
নিউজিল্যান্ডের এডমান্ড হিলারি আর শেরপা তেনজিং নোরগে (ছবিতে বামে) এভারেস্ট জয়ের পর এক নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷ এই দু’জনের মধ্যে কে আগে চূড়ায় পা রেখেছিলেন তা নিয়ে শুরু হয় তুমুল রাজনৈতিক বিতর্ক৷ নেপাল এবং ভারত এই জয় তাদের দাবি করে৷ তবে এভারেস্ট জয়ের কয়েক বছর পর হিলারি জানান, চূড়ায় ওঠার সময় তিনি তেনজিং এর থেকে কয়েক পা সামনে ছিলেন৷
অক্সিজেন ছাড়াই এভারেস্ট জয়
হিলারি ও তেনজিং-এর সেই ঐতিহাসিক অভিযানের পরের তিন দশকে বহু পর্বতারোহী বিভিন্ন পথ ধরে এভারেস্টে উঠেছেন৷ ১৯৭৮ সালে সাউথ টাইরোলিয়ান রাইনহোল্ড মেসনার (ডানে) এবং অস্ট্রেলিয়ান পিটার হেবেলার (বামে) অক্সিজেনের বাড়তি জোগান ছাড়াই এভারেস্ট জয় করেন৷
শেরপারা পথ দেখান
শেরপাদের সহায়তা ছাড়া কারো পক্ষে এভারেস্টের চূড়া জয় করা কার্যত অসম্ভব৷ তাঁরা এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার পথের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সদা তৎপর৷
দলে দলে এভারেস্ট জয়
১৯৯০ দশকের দিকে দল বেধে পর্বতারোহীরা এভারেস্ট জয় শুরু করেন৷ সেই সময় থেকে প্রতিবছর শত শত পর্বতারোহী এভারেস্টের চূড়ায় উঠছেন৷ রেকর্ড বলছে, এখন অবধি কমপক্ষে ৬,০০০ বার সফলভাবে এভারেস্টের চূড়া জয় করেছে মানুষ৷ আবহাওয়া ভালো থাকলে নির্দিষ্ট কিছু সময়ে এভাবেই এভারেস্টের চূড়ার দিকে যাত্রা করেন পর্বতারোহীরা৷
চূড়ায় পর্বতারোহীদের ভিড়
সফলভাবে এভারেস্টের চূড়ায় উঠতে চূড়ান্ত পর্যায়ে অ্যাডভান্সড বেস ক্যাম্প থেকে কমপক্ষে চারদিন সময় লাগে আর এই সময়টা আবহাওয়া অবশ্যই ভালো থাকতে হবে৷ সাধারণত একইসময়ে অনেক অভিযাত্রী চূড়ার দিকে যাত্রা করেন, কেননা সবাই আবহাওয়ার পূর্বাভাষের উপর নির্ভরশীল৷ ফলে একদিনে অনেক পর্বতারোহীকে চূড়ায় এভাবে ভিড় করতে দেখাটা স্বাভাবিক৷
৮০ বছরে এভারেস্ট জয়
এভারেস্ট প্রতি বছরই চলে রেকর্ড গড়ার এবং ভাঙার খেলা৷ এই বসন্তে আশি বছর বয়সি জাপানি বৃদ্ধ ইউচিরো মিউরা এভারেস্টের সর্বোচ্চ চূড়ায় পা রেখেছেন৷ এর আগে ২০১০ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে এভারেস্ট জয় করেন জর্ডান রেমেরো৷ দুটোই রেকর্ড৷
পর্যটক কমাতে অনাগ্রহী নেপাল
এভারেস্টের চূড়ায় আরোহনের ক্ষেত্রে বিশেষ কোন বিধিনিষেধ আরোপ করার পক্ষে নয় নেপাল৷ বরং প্রয়োজনীয় টাকা থাকলে যেকেউ চেষ্টা করতে পারে এভারেস্ট জয়ের৷
বাংলাদেশের এভারেস্ট জয়
২০১০ সালের ২৩ মে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন মুসা ইব্রাহীম৷ এরপর আরো চারজন বাংলাদেশি এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছেন৷ এদের মধ্যে দু’জন মেয়ে৷ আর ২০১৩ সালে চূড়া জয় করে নামার পথে ‘ডেথ জোনে’ মারা যান সজল খালেদ৷
তথ্যসূত্র ও ছবি :- ইন্টারনেট, বিভিন্ন দৈনিক ও উইকিপিডিয়া
nbsp;
২,১৬০ বার পড়া হয়েছে
সফলতা ছুঁয়ে যাক সবার প্রাণে…
মানবজাতির উন্নয়নের সাক্ষি এই পোষ্ট..
অনেক তথ্যপূর্ণ লেখা..
শুভকামনা রইল
আমার প্রথম পোষ্ট সবার প্রতি শুভেচ্ছায় একটু ঘুরে আসুন। কিছু প্রশ্ন করেছিলাম।
এভারেস্ট সম্পর্কে এত তথ্যসমৃদ্ধ পোস্ট করার জন্যে সম্পাদককে ধন্যবাদ …
এভারেস্ট সম্পর্কে ভাল কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পোস্ট করার জন্য সম্পাদককে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এভারেস্ট এ যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। জানি তা পারব কিনা।
এভারেস্ট চূড়ায় উঠার স্বপ্ন আমার অনেক আগে থেকে। জানি না স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা।
তথ্যবহুল পোস্ট
ভাল লাগা জানিয়ে গেলাম ।
চমৎকার ছবি সম্বলিত লিখাটি ভাল লেগেছে।আমার তথ্যভান্ডার ও সমৃ্দ্ধ হয়েছে।ধন্যবাদ আনোয়ার ভাই।
অনেক অজানা বিষয় জানা গেল
ধন্যবাদ