আবহাওয়া পরিবর্তনে শিশুর যত্ন
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1292বার পড়া হয়েছে।
হঠাৎ বৃষ্টি, ভ্যাপসা গরম, কখনও ঠান্ডা বাতাস- আবহাওয়ার এ যখন-তখন পরিবর্তনকে ছোট-বড় কেউই সহ্য করতে পারে না। বিশেষ করে ছোটরা তো নয়ই। তাই বরষাকালে ছোটদের অসুখে ভুগতে দেখা যায় বেশি। এ সম্পর্কে ইউনাইটেড হাসপাতালের কনসালটেন্ট (নবজাতক ও শিশুরোগবিষয়ক) ডা. নার্গিস আরা বেগম বলেন, বরষার শুরুতেই নানা ধরনের অসুখ-বিসুখের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। বিশেষ করে শিশুরা আক্রান্ত হয় বেশি। এ সময় শিশুদের জন্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। এ সময় বড়দের সামান্য অসচেতনতা হয়ে উঠতে পারে বড় সমস্যার কারণ। এ সময় ছোট শিশুদের ভাইরাস জ্বর, সর্দি, কাশি, হাম, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, ডিসেন্ট্রি, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও জন্ডিসে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। গত কয়েক বছরে বর্ষাকালে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও উল্লেখ করার মতো। এক্কেবারে ছোট্ট শিশুরা তো নিজেদের কথা বলতে পারে না, তাই মাকে খেয়াল রাখতে হবে শিশুর গরমে অস্থির লাগছে কিনা। শিশু ঘেমে ভিজে উঠলে তাকে পাতলা সুতি কাপড় পরাতে হবে। বেশি করে বিশুদ্ধ পানি পান করানো ও গা-হাত-পা মুছে আলো বাতাসযুক্ত সুন্দর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় রাখতে হবে। প্রয়োজনে স্যালাইন পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা ভালো। শিশুর সর্দি-জ্বর হলে লেবুর চা বার বার খাওয়ানো ভালো। এতে ‘সি’ ভিটামিনের অভাব পূরণ হয়ে শিশু দ্রুত আরোগ্য লাভ করে।
বরষাকালে হঠাৎ ঠান্ডায় কখনও কখনও শিশুদের জ্বরের সঙ্গে গলাব্যথা দেখা দেয়। গলাব্যথা দু’তিনদিন থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। গলাব্যথা বা টনসিল আক্রান্ত শিশুদের কখনোই ফ্রিজের ঠান্ডা পানি, ঠান্ডা খাবার, আইসক্রিম, জুস খেতে দেয়া উচিত নয়। এ ছাড়া বরষাকালে শিশুদের সর্দি-জ্বরের সঙ্গে চোখের ওপরের অংশ ফুলে যায়, নাক বন্ধ হয়ে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। অনেক সময় সর্দি ঘন হয়ে হলুদ হয়ে যায়, যা সাইনোসাইটিসের লক্ষণ। তাই বরষাকালে বাইরে বেরোনোর সময় অবশ্যই ছাতা বা রেইনকোট ব্যবহার করুন। প্রয়োজন ছাড়া শিশু যাতে বাইরে না যায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত। অন্যদিকে দেখা যায়, গলাব্যথা দু-তিন দিনের বেশি থাকে আর এ কারণে শিশুদের টনসিলাইটিস হয়, যা হচ্ছে টনসিল গ্লান্ডের প্রদাহ। এর সঙ্গে শুকনো কাশিও থাকতে পারে। এ কাশির জন্য রাতে ঘুম ভেঙে যায়। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিশুর টনসিলাইটিসের সঙ্গে ক্যারিনিটিসও হয়েছে। তার মানে টনসিলের আশপাশের জায়গাতেও ইনফেকশন হয়েছে। আর যদি শিশু ঠান্ডা কিছু খায়, এতে গলা বসে যায়, কণ্ঠ শুনতে কর্কশ লাগে- এটাকে ল্যারিংজাইটিস বলা হয়। এ সময় শিশুকে কম কথা বলতে দিতে হবে। দরকার মতো অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াতে হবে। মাঝে-মধ্যে শিশুদের ঠান্ডা লেগে নাকের পেছনে অফবহড়রফ মষধহফ বড় হয়েও নাক বন্ধ এবং সর্দি হতে পারে, তাই ডাক্তারের পারামর্শ অনুযায়ী ঠিক মতো পরীক্ষা অর্থাৎ এক্স-রে করিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। ভ্যাপসা গরমে শিশু-কিশোররা অ্যালার্জিজনিত অসুখেও আক্রান্ত হয়। বৃষ্টির পানি গায়ে পড়লেই ঘন ঘন হাঁচি দেয় এবং নাক দিয়ে পানি পড়তে থাকে। এ রোগকে অ্যালার্জিক রিরিটিস বলা হয়। এটা খুবই কষ্টকর। কেননা শিশুদের সারাক্ষণ নাক পরিষ্কার করতে হয় এবং নাকে মাঝে-মধ্যে ঘা দেখা দেয়। তাই ঘরে তৈরি নরমাল স্যালাইন পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করলে উপকার পাওয়া যায়। আবার এর জন্য অ্যান্টিহিস্টাসিন সিরাপ ও নাকের স্প্রে ব্যবহার করলেই এরা বেশ ভালো থাকে। কখনও কখনও অতিরিক্ত গরম ও ঘামের জন্য কানের ভেতর চুলকানি হয়, তখন অপরিষ্কার জিনিস দিয়ে কান চুলকালেই কানে ফোঁড়া হতে পারে। কানে যদি ফোঁড়া হয় এবং সেটা ফেটে পুঁজ বের হয়, তাহলে ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরিষ্কার করিয়ে ওষুধ খাওয়াতে হবে। আবার কোনো শিশুর যদি আগে থেকে কান পাকা রোগ থাকে, বরষাকালে অনেক সময় সেটা বেড়ে যেতে পারে। সুতরাং বৃষ্টিতে ভেজা থেকে মাকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে, যাতে তার শিশুর কানে কোনো অবস্থাতেই পানি না ঢোকে। মা যদি অসতর্ক থাকেন তাহলে এই কান পেকে শিশু শ্রবণশক্তি হারিয়ে বধির হয়ে যেতে পারে। আবার ভ্যাপসা গরমের জন্য কানের ভেতর ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে। এই আবহাওয়ায় ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে। এই ফাঙ্গাল ইনফেকশন খুব সহজেই ছড়ায়। কানে তখন চুলকানি হয়। শিশুরা নখ, চুলের ক্লিপ, কাঠি বা পুরনো কটনবাড দিয়ে কান চুলকানোর চেষ্টা করে। অথবা মা তার শাড়ির আঁচল দিয়ে কান পরিষ্কার করার কারণে কান ব্যথা হয়ে পানি ঝরে। এটাকে অটোমাইকোসিস বলে। শিশুকে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে নিয়ে কান পরিষ্কার করাতে হবে ও ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। মায়েদের মনে রাখতে হবে, শিশু যদি কানে ব্যথার কথা বলে তারা যেন কানে সরিষার তেল না দেন। এতে কানের প্রদাহ বেড়ে যায়।
চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ম্যালেরিয়া রোগের বেশ প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। সেখানকার মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া জ্বর হচ্ছে- সুতরাং মশা যাতে আক্রমণ না করে সেজন্য মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে। প্রয়োজনে মশার জন্মস্থান ধ্বংস করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস করতে হবে। ভ্যাপসা গরমে খাবারদাবার খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, তাই যতটা সম্ভব খাবার-দাবার বাসি করবেন না। শিশুদের ফ্রেশ খাবার খাওয়াবেন। মনে রাখবেন, যে কোনো রোগের প্রতিষেধকের চেয়ে রোগ হওয়ার আগে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা উচিত।
সামগ্রিকভাবে বরষাকালে সারাদেশের শিশুদের জন্য বলছি- এ সময়ে শিশুদের খাবারের ব্যাপারেও যত্নশীল হতে হবে। এ সময় যথেষ্ট পুষ্টির জন্য ডিম, কলা, সবজি-খিচুড়ি, বিভিন্ন ধরনের ফরমালিনমুক্ত মাছ দেয়া যেতে পারে। প্রচুর টাটকা ও সুস্বাদু দেশি ফল যেমন- পেয়ারা, জাম, জামরুল, আনারস, আম, আমড়া ইত্যাদি খাওয়ানো উচিত। এসব ফল পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত। এসব মৌসুমি ফল শিশুর ভিটামিন সি-র চাহিদা পূরণ করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। খেয়াল করে প্রতিদিন অন্তত একটি ফল শিশুর খাদ্য তালিকায় রাখা প্রয়োজন। যেসব শিশু ফল খেতে পারে না বা চায় না, তাদের জুস করে দেয়া যায়। ছয় থেকে এক/দুই বছর পর্যন্ত শিশুদের পর্যাপ্ত পরিমাণ মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে এবং সঙ্গে ঘরের তৈরি মৌসুমি শাকসবজি, ভাত-মাছও খাওয়াবেন। এতে শিশু সুস্থ থাকবে, সহজে অসুস্থ হবে না। অতি গরমে গায়ে ফোস্কা ও রেস উঠতে পারে। তাই সুতির জামা-কাপড় পরাবেন বাচ্চাকে। তা হলে হিটরেস তাকে আক্রান্ত করবে না। শিশুকে যাই খাওয়ান না কেন অবশ্যই পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করাতে হবে। তা না হলে শিশু পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আর খাবার খাওয়াতে হবে অবশ্যই ধৈর্যের সঙ্গে। যেসব শিশু বুকের দুধ পান করে সেসব মায়েরও ঠান্ডা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। কারণ মা আক্রান্ত হলে শিশুও একই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বরষাকালে খেয়াল রাখতে হবে চারপাশ যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। সেঁতসেঁতে পরিবেশ রোগ-জীবাণু ছড়ায় তাড়াতাড়ি। সুতরাং শিশুকে সর্বোত্তমভাবে সুস্থ-সুন্দর রাখতে ঘর-বাড়ি আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখা ও যতটা সম্ভব শিশুর প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়া বাঞ্ছনীয়।
১,২৭৫ বার পড়া হয়েছে
উপকারী পোণ্ট
সুন্দর ভাননার প্রয়াস
ছোট্ট সোনামনির জন্য বেশ কাজে আসবে।
ধন্যবাদ জানাই আপনাকে –
উপকারি পোস্টের জন্য ধন্যবাদ
ভাল থাকুন
শিশুদের যত্ন নিয়ে খুব উপকারী পোস্ট । আশা করছি শিশুর বাবা-মায়েরা এ ব্যাপারে আমাদের চেয়েও বেশি সচেতন । অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানবেন ।
কত কি শেখার
ভালই