আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরি
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1150বার পড়া হয়েছে।
১.স্বপ্নপুরী
ঈদের কেনাকাটা করতে বেরিয়েছিলাম। প্রতি বছরের মতো এবারও গিয়েছিলাম কয়েকটা নামকরা শপিংমলে। শপিংমল থেকে এত দামে কেনাকাটা করার মতো সামর্থ আমার নেই। আমি যাই দেখতে।
শপিংমলগুলোতে ঢুকে ওয়াও! অদ্ভুত ডেকোরেশান আর চোখ জলসানো লাইটিং দেখে মনে হবে এ এক রঙ্গীন জগতে এসে পড়েছি। নতুন ডিজাইনের পোশাকে ভর্তি দোকানগুলো। জরির পোশাক, সাঝের পোশাক, ল্যাটেস্ট ডিজাইনের কারুকাজের পোশাকে ভর্তি মল। একেকটার ওজনও কম না। অধিকাংশ পোশাকই এসেছে আমাদের পাশের দেশ থেকে। সেই দেশের নামকরা নায়িকাদের নামে নামে পোশাক। দেখলে চোখ দাঁড়িয়ে যায়। আর দাম শুনলে চোখ দুটো লাফিয়ে উঠে কপালে।
মনে মনে হিসেব করে দেখলাম, এখানকার একটি ছোট্ট জামার মূল্য দিয়ে একটি পরিবারের ঈদের আনন্দ-উৎসব হয়ে যায় ভালোভাবে।
শপিংমলগুলোতে আমার মতো বয়সের মেয়েদের পোশাকই বেশি। দামও বেশি। মৌমাছির মতো এসে ভিড় করছে বড়লোকের ছেলেমেয়েরা। তারা হনহন পনপন করে হাঁটছে। তাদের হাঁটাচলার মধ্যে বড়লোকি ঢঙ আছে। একটু নাচের ছন্দে হাঁটে। পায়ের গোড়ালি সহজে লাগে না মাটিতে। অধিকাংশ ছেলেরা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট ও শ্যাণ্ডো গেঞ্জি পরে আর মেয়েরা টাইড প্যান্ট গেঞ্জি পরে এসেছে।
ছেলে-মেয়েদের হাতে-পায়ে, চোখের কোণায় পরা আছে নানা রকমের অদ্ভুত অলংকার। অলংকারের চিপায় রঙ্গীন ফিতা ও সুতারবাধা আছে মাদুলি। গলায় মালা তবজিহছড়া। চশমা আছে তবে চোখের না, কপালের। তাদের কথায় আর ব্যবহারের ভাবটাও জানি কেমন একটু সে-ই রকম। দেখলে ভালই লাগে। তারা ঝটপট জামা দেখছে। পটাপট কথা বলছে। লেটেস্ট ডিজাইন চায়। এমন ডিজাইন যে, এর আগে কেউ পরবে তো দূরের কথা চোখেও দেখেনি, এমন পোশাক! দোকানদার বেটাও কম না। চাপা মারে আর জামা দেখায়। জামা দেখে পছন্দ হলে ছেলে বা মেয়েটি খালি ইশারা করলেই হলো, সাথে সাথে প্যাকেট হয়ে যায়। ছেলে-মেয়েদের আনন্দের সীমা নেই। তারা দামি জামাটি কিনে হেলে-দুলে চলে যায়। নামে দামে ছক্কা।
পোশাকগুলো দেখে আমি মনে মনে ভাবছি, এই পোশাক পরে কি মাটিতে পা ফেলে হাঁটা যাবে? নাকি মখমলের ওপর দিয়ে কোনো এক স্বপ্নের জগতে গিয়ে হাঁটতে হবে। কেমন হবে সেই হাঁটাহাঁটির দেশটা? পরেই মনে হলো “আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরি… “গানটি।
আমি মাঝেমধ্যে দু একটা কাপড় হাতে ধরে দেখেতে চেয়েছি। এত দাম কিশের জন্য। ওম্মা কাপড়ে হাত দিতেই একটা ছেলে এসে বলল, আপু বসেন, যেমনটি চাইবেন তেমনটিই আছে, এইমাত্র এসেছে কাপড়গুলো। সবটি মানাবে আপনাকে, বসেন, বসেন। সমাদর এড়াতে না পেরে বসলাম আড়াআড়িভাবে।
আমি বললাম, এই জামাটার দাম কত?
পছন্দ হয়েছে কি না বলেন, আপনাদের সাথে দামে কোনো সমস্যা হবে না। দাম আমরা কখনোই বেশি রাখি না। আমরা হোলসেলার। আমাদের মালের এক্সট্রা অর্ডিনারি কোয়ালিটি আছে।
দাম বলল দোকানদার। এ দাম বলার মধ্যে যে কত আর্ট আর ফ্যাশান করল যদি দেখতে!
আমি বললাম, আমি আসলে কাপড় কিনতে আসিনি, দেখতে এসেছি। আমি কি আপনাকে ডিসটার্ব করলাম।
আরে না না না কিযে বলেন, তবে দাবি রইল এ দামে নিলে আমার এখান থেকে নিবেন। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম…!
২.আমারও আছে একটা জগৎ
আমার মা-বাবার ইচ্ছা আমি যেন ভালো একটা জামা নিই। আমি মা-বাবাকে বললাম, বাজেট কত? তাঁরা যা বললেন, আমি আনন্দে লাফিয়ে উঠলাম। বললাম, টাকাগুলো আমাকে দাও। আমার পোশাক আমি কিনব। টাকাগুলো হাতে পাবার পরপর আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল আমাদের গ্রামের বাড়ির গরিব প্রতিবেশি রাহেলা, সুমনা, মিনারা, মরিয়ম আর সুফিয়ার কথা। আনন্দে মুখটা চিকচিক করে উঠল। কম দামের মধ্যে আমার ও তাদের জন্য দেশী কাপড় কিনে মনের আনন্দে বাসায় ফিরলাম।
একটি দামি জামা পরে একা আনন্দ করার চেয়ে কম দামের কয়েকটা জামা নিয়ে সবাই মিলে আনন্দ করা অনেক আনন্দের।
আমি মোবাইলফোনে তাদের জানিয়ে দিয়েছি। বলেছি, `অই তরা আছছ কেমুন। ভালোনি? একটা সুখবর আছে।’
`তাড়াতাড়ি কও সুসংবাদটা কি’, বলল ওরা।
বললাম, `তগর লাইগ্যা জামা কিনছি। থ্রি পিস। যেই সুন্দর!’
ওরা সুমাপু বলে আনন্দে লাফিয়ে উঠল। `তাড়াতাড়ি আসো। তোমাকে ওয়েলকাম জানানোর জন্য আমরা রেডি অইয়া আছি।’
এ আমার অনেক আনন্দের একটা জগৎ!
১,৩৫৭ বার পড়া হয়েছে
আপনি প্রথম পেইজে একাধিক লেখা পোস্ট করেছেন ।
লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগল। সবার সাথা ভাগাভাগি করে ঈদ করাতে আপনার আনন্দ অনেক বেড়ে যাক, এই কামনা করছি। অনেক ভালো থাকুন…
’’আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরি’’
এটা একটা গানের কলি। আমার মনে হয় নামটা পরিবর্তন করে দিলে ভাল হয়।
প্রথম পেইজে একাধিক পোস্ট দেওয়া ঠিক না। দয়া করে নিয়মাবলি অনুসরণ করুন। ভাল লিখছেন। খুব ভাল লাগছে। চালিয়ে যান।
সুখপাঠ্য হয়েছে আপনার লেখা। বেশ ভালো লেগেছে।
আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরি
কথা তো তাই ছিল
কিন্তু চুরি আর দূর্নীতির জন্য পারলো কই।