Today 23 Nov 2024
banner
নোটিশ
ব্লগিং করুন আর জিতে নিন ঢাকা-কক্সবাজার রুটের রিটার্ন বিমান টিকেট! প্রত্যেক প্রদায়কই এটি জিতে নিতে পারেন। আরও আছে সম্মানী ও ক্রেস্ট!
banner

আশা পূরণ

লিখেছেন: ওয়াহিদ মামুন | তারিখ: ১৬/০৯/২০১৩

এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1480বার পড়া হয়েছে।

বই পড়া আমার খুবই পছন্দের একটা কাজ। যখন কোন বই আমার ভাল লাগে তখন বইটির লেখকের প্রতি মনের মধ্যে শ্রদ্ধা জেগে ওঠে।
চাকরীর সুবাদে প্রেস-এর লোকদের সাথে আমার আলাপ হয়। আমি কুয়েটে চাকরী করি। আমার বাড়ি পাবনা জেলায়। আমাদের অফিসের মাধ্যমে কুয়েটের ডায়েরী বের করা হয়। ডায়েরীর প্রাথমিক কম্পিউটার কম্পোজের কাজটা আমি করি। পরে সফট কপি প্রেস-এ দেই। প্রেস থেকে ডায়েরী বের করে দেওয়া হয়। এভাবে বই প্রকাশ করার পদ্ধতিটা আমার জানা হয়ে যায়।

কিন্তু আমার লেখালেখির যোগ্যতা নেই বলে খুব আফসোস হয়।

আমার বাবার অনেক লেখা আছে। সবই প্রবন্ধ টাইপের। পত্রপত্রিকায় মাঝে মাঝে তার লেখা প্রকাশিতও হয়। কিন্তু আমরা অনেকগুলি ভাই-বোন হওয়ায় একজন হাই স্কুলের শিক্ষক হয়ে আমাদের মানুষ করতেই তিনি হিমশিম খেয়েছেন। তাই বই প্রকাশ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন নি। বিষয়টা আমাকে খুব ব্যথিত করে।

আমার মাথায় একটা আইডিয়া আসে যে বাবার লেখা বই আকারে বের করলে কেমন হয়? আইডিয়াটা বাস্তবসম্মত কিনা তা যাচাইয়ের জন্য আমার ছোটভাই এবং বাবার সাথে কথা বললাম। তারা আমাকে বই প্রকাশ করার জন্য অনুপ্রেরণা দিলেন। বাড়ি থেকে একটা লেখা বাছাই করে তা ফটোকপি করে নিয়ে এসে কম্পিউটার কম্পোজ করে ফেললাম।

তারপর আমার বাবার কাছে কুরিয়ারে পাঠিয়ে দিলাম কারেকশনের জন্য। কিছুদিন পর তিনি আমার কাছে ফেরত পাঠালেন। আমি কারেকশন করে ফেললাম। কোন প্রকাশকের মাধ্যমে বই বের করা যায় সে ব্যাপারে খোঁজ খবর করে খুলনার এক প্রকাশকের কথা জানতে পারলাম।

তার সাথে দেখা করতে গেলাম। তিনি জানালেন যে পান্ডুলিপিটা তার কাছে দিতে হবে। তিনি একজনকে দিয়ে পড়াবেন। তিনি তা পড়ে প্রয়োজনীয় কারেকশনও করতে পারেন। কিন্তু আমার মতে ত্রিশ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বাবার লেখার মান নিম্নমানের নয়। আর লেখাটি হাতছাড়াও হয়ে যেতে পারে। তাই লেখা তার কাছে হস্তান্তর করতে মন সায় দিল না। তাই সেখান থেকে চলে এলাম।

এরপর কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। এমন সময় আমার বাবা একদিন ফোন করে জানালেন যে তার পরিচিত আমাদের এলাকার একজন লোক ঢাকায় থাকে। তার নাম্বার দিয়ে আমাকে তার সাথে কথা বলতে বললেন।

আমি ফোন করে সব জানালাম। তিনি আমাকে বললেন যে আমাদের এলাকার একজন লোকের বাংলাবাজারে নিজস্ব প্রকাশনা আছে। চাহিদামাফিক টাকা দিলেই তিনি বই প্রকাশ করে দিবেন। তার কথা শুনে দুশ্চিন্তামুক্ত হলাম।

আমি সফট কপি নিয়ে ঢাকায় গিয়ে প্রকাশকের সাথে দেখা করে তার কম্পিউটারে তা সেভ করে দিলাম। কিছু টাকা দিয়ে এলাম, বাকি টাকা বই হাতে পাওয়ার পর দিব।

আমার বাবার লেখাগুলো পর্যায়ক্রমে বই আকারে বের করার কাজটা মনে মনে আমার জীবনের সাথে যোগ করে ফেললাম।

সারাজীবন যখন আমাকে এই কাজটা করতে হবে তখন এই ধরণের কাজকে যে মেয়ে মূল্য দেবে সেইরকম একজন মেয়েকে জীবনসঙ্গিনী হিসাবে বেছে নেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম।

সাথে সাথে একজনের সুন্দর মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠল। তার নাম রুনা। কুয়েটের ছাত্রী। খুলনা শহরে তাদের বাড়ি। তিন বছর হলো তাকে দেখছি। সবসময় সে বোরখা পরে। কেবলমাত্র ভার্সিটিতে এক অনুষ্ঠানের দিন সন্ধ্যায় তাকে সালোয়ার কামিজ পরা অবস্থায় দেখেছিলাম।

তাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে তার মোবাইল নাম্বার ও বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করলাম।

ঢাকা থেকে প্রকাশক ফোন দিয়ে আমাকে ঢাকা যেতে বললেন। আমি ঢাকা গেলাম। তার সাথে বইয়ের প্রচ্ছদ পছন্দ করা এবং কারেকশন সংক্রান্ত কিছু কাজ করলাম।

একটা আইডিয়া এল মাথায়। রুনাকে ইমপ্রেস করার জন্য কিছু গিফট দেবো তাকে। আমার প্রিয় নায়ক পিয়ার্স ব্রসনান এর ফিল্ম-এর একটা ডিভিডি, কয়েকটা গল্পের বই এবং পছন্দের গান দিয়ে কয়েকটা ক্যাসেট করে করলাম।

খুলনা এসে একদিন দুরু দুরু বুকে তাকে ফোন দিলাম।
আমি বললাম, কেমন আছেন?
সে বলল, আপনি কে বলছেন?
এই প্রথম তার সাথে কথা বলছি। তার সুন্দর কন্ঠ আমার ভিতরে উত্তেজনার সৃষ্টি করলো।
আমি বললাম, আমাকে আপনি চিনবেন না। তবে আমি আপনার একজন বড় ধরণের শুভাকাংখী।
সে বলল, আমাকে কিভাবে চেনেন?
আমি বললাম, এই ধরুন, আপনাকে চলাফেরার পথে দেখেছি।
সে বলল, আমার কাছে ফোন করেছেন কেন?
আমি বললাম, আমি আপনাকে কিছু গিফট করতে চাই।
সে বলল, কেন?
আমি বললাম, আপনাকে আমি খুব পছন্দ করি তো তাই।
সে বলল, কিন্তু গিফট তো নিতে পারব না।
আমি বললাম, বেশি কিছু নয়। সামান্য ক্যাসেট, বই, ডিভিডি এসব আর কি।
সে বলল, কিন্তু আপনাকে আমি চিনি না জানি না। আপনার গিফট আমি নেব কেন?
আমি বললাম, চিনে নেব।
সে বলল, আপনি দিতে চান। আমি নেব না, ব্যস।
এই বলে ফোন রেখে দিল। আমি খুব হতাশ হলাম।

চিন্তা করলাম কি করা যায়।

সে আমার গিফট নিতে রাজী হলো না। এরপরও যদি তা তার ঠিকানায় পাঠাই তবে সেটা হবে পাগলামির সামিল। কিন্তু আমি তো তার প্রেমে পাগলই। কাজেই পাগল যেমন অযৌক্তিক কাজ করে আমি তাই করবো। তার ঠিকানায় গিফট পাঠাবো।

একটা চিঠি লিখে গিফটগুলির সাথে প্যাকেটে ভরে কুরিয়ারে তার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলাম।

কয়েকদিন পর কুরিয়ারের দোকান থেকে আমাকে জানাল যে প্যাকেটটা রিসিভ করা হয়নি। ফেরত এসেছে। আমি খুব কষ্ট পেলাম। প্যাকেটটা নিয়ে এলাম।

কয়েকদিন পরই ফেব্রুয়ারী মাস শুরু হবে। বাবার বই বাংলা একাডেমির বইমেলায় থাকবে। ভাবতেই খুব ভাল লাগছে। খুলনার একটা প্রেস থেকে বাবার ফটো সম্বলিত তিনশোটা পোস্টার ছাপিয়ে আনলাম।

ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথমদিকে ঢাকায় প্রকাশকের কাছে গিয়ে দেখলাম বই খুবই সুন্দর হয়েছে। দেখে প্রাণটা জুড়িয়ে গেল। প্রকাশককে অনেক ধন্যবাদ জানালাম। কিছু বই তার স্টলে রাখলাম। ভার্সিটি জীবনের ফ্রেন্ড রতনকে সাথে করে কার্জন হল এবং বইমেলা এলাকায় কিছু পোস্টার লাগালাম। ক্লান্ত হয়ে একটা দোকানে বসে ছোলা, পিঁয়াজু আর চা খেয়ে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে একটু ঘোরাঘুরি করে বইমেলায় গিয়ে স্টলের সামনে দাঁড়ালাম।

বাবার বইটা জীবজগতের সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে লেখা। স্টলের একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখলাম উনিশ/কুড়ি বছর বয়সের দুইজন মেয়ে বাবার বইটা নেড়ে চেড়ে দেখছে আর নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করছে। কিছুক্ষণ পর এক কপি কিনে নিয়ে চলে গেল। ব্যাপারটা দেখে আমি খুব আনন্দিত হলাম। মেয়ে দুইজনের জন্য মনে মনে দোয়া করলাম।

জিগাতলা আমার এক ভাইয়ের বাসায় বাকী বইগুলো রাখলাম। কিছু বই খুলনা নিয়ে এলাম। খুলনাও কিছু পোস্টার লাগালাম। একটা বইয়ের লাইব্রেরীতে কয়েকটা বই রাখলাম।

একটা বই ছাপানোর কাজ সম্পন্ন করতে পেরে খুব ভাল লাগল। কিন্তু রুনা আমার ডাকে সারা দিচ্ছে না বলে শান্তি পাচ্ছি না।

সন্ধ্যার পর আমার এক খালাত ভাইকে সাথে করে খুলনা শহরে গেলাম। রুনাদের বাড়ির সামনে এবং আশেপাশে কিছু পোস্টার লাগিয়ে এলাম।

আমি রুনার কাছে আমার পরিচয় দিইনি। একটা এসএমএস-এ আমার পরিচয় দিলাম। বাড়ির সম্পর্কে জানালাম। আর তাদের বাড়ির সামনে পোস্টার লাগানোর কথাটা জানালাম। সে আমার গিফট এর প্যাকেটটা ফেরত পাঠানোয় আমি যে খুব কষ্ট পেয়েছি তা জানালাম। আর জানালাম, যে বইয়ের পোস্টার তাদের বাড়ির কাছে লাগিয়েছি সে বইটা তার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিব। অনুরোধ করলাম সে যেন তা রিসিভ করে।

এরপর তিনটা বই প্যাকেট করে ডাক মারফত রেজিস্ট্রি করে প্রাপ্তি স্বীকার পত্র সহ পাঠিয়ে দিলাম।

কিছুদিন পর পিয়ন প্রাপ্তি স্বীকার পত্রটা আমার কাছে দেওয়ায় তাতে দেখলাম স্বাক্ষরের জায়গায় রুনার পুরো নাম ইসরাত জাহান রুনা লেখা আছে। এতে আমি যে কতটা আনন্দিত হলাম তা প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নেই।

ধন্যবাদ জানিয়ে সাথে সাথে রুনাকে এসএমএস পাঠালাম।

একদিন বিকালে ভার্সিটির গাড়িতে খুলনা শহরে গেলাম। আমার সিটের সামনেই রুনা তার দুই বান্ধবীর সাথে সিটের একপাশে বসে আছে।

কালো বোরখা পরে আছে সে। সাদা ওড়না। এক ইঞ্চি উঁচু হিলওয়ালা স্যান্ডাল পায়ে তার। পায়ের সুন্দর গোড়ালি দেখা যাচ্ছে।

গাড়ি খুলনা পৌঁছানোর পর রুনা সীট থেকে উঠে দাঁড়ালো। আমি ওর দিকে তাকালাম। ও দু হাত দিয়ে ওড়না উপরে উঠিয়ে আবার ভাল করে মাথার উপর দিল।

তারপর আমার দিকে তাকিয়ে সামান্য একটু হাসলো। সেই হাসিতে ফুটে আছে স্পষ্ট আমন্ত্রণ। সে গাড়ি থেকে নেমে গেল। দিয়ে গেল আমার আশা পূরণ হওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত। দেরী না করে তার পিছু নিয়ে আমিও গাড়ি থেকে নেমে গেলাম।

১,৫৪৫ বার পড়া হয়েছে

লেখক সম্পর্কে জানুন |
বাড়ি পাবনা জেলায়। বর্তমানে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) কর্মরত। মানুষের মানুষ থাকা ও মানুষ হয়ে ওঠার জন্য পড়াটাই বোধ করি সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন। তাই আমি বই পড়া ভালোবাসি।
সর্বমোট পোস্ট: ৩৫ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ২৮৬ টি
নিবন্ধন করেছেন: ২০১৩-০৬-১৮ ০৪:১২:৫১ মিনিটে
banner

৩ টি মন্তব্য

  1. শাহ্‌ আলম শেখ শান্ত মন্তব্যে বলেছেন:

    তারপর কি রুনাকে জীবন সংগী করে পেলেন ?

  2. আমির হোসেন মন্তব্যে বলেছেন:

    বই পড়া আমার খুবই পছন্দের একটা কাজ। ———আমারও

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করতে লগিন করুন.

go_top