আষাঢ়ষ্যের প্রথম দিবস
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 2177বার পড়া হয়েছে।
‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো এক বরষায়…’ অথবা ‘এমন দিনে তারে বলা যায় এমন ঘনঘোর বরিষায়’ এভাবেই বাংলা সাহিত্যে বর্ষা বিভিন্ন রূপ নিয়ে উপস্থিত হয়। কখনো প্রেমের ঋতু, আবার কখনো বা বিরহের। বর্ষার রিমঝিম শব্দে কখনো আবার মনের মধ্যে ওঠে বিদ্রোহের ঝড়। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ আর প্রিয় মানুষের হাতের একগুচ্ছ কদমফুল জানিয়ে দেয় বর্ষার আগমন বার্তা। বৃষ্টির দেখা মিলুক আর নাই মিলুক আজ শনিবার পয়লা আষাঢ়। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে তাপবিনাশী ও প্রাণষ্পর্শী ঋতু বর্ষার প্রথম দিন, তথা আষাঢ়ষ্যের প্রথম দিবস।
বর্ষা বাঙালীর জীবন, পরিবেশ, কৃষ্টি, সামাজিকতা, আনন্দ-বেদনা, চলন-বলন, গান, উৎসব, ব্যবসা-বাণিজ্য, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে ঘিরে বিপুল-ভাবে আলোকবর্তিকা সৃষ্টি করে আছে। বাঙালীকে আবিষ্ট করে রেখেছে সার্বিক বোধন আর আরাধনায়।
আদিকাল থেকে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় বর্ষা ঋতু নিয়ে রয়েছে উচ্ছ্বসিত বন্দনা, অনুরাগ ও স’তি। রহস্যময়ী এ বর্ষার রূপ, বৈচিত্র্য, চমক, বর্ণচ্ছটা এবং আকাশ- প্রকৃতির গভীর মিতালী শিল্প-সাহিত্যের সরস উপকরণ হিসাবে আবহমানকাল থেকেই অনুপ্রাণিত ও স্পন্দিত করে আসছে শিল্পী, কবি ও সাহিত্যিকদের।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা সম্ভারেও বর্ষা দখল করে আছে উল্লেখযোগ্য স’ান। বর্ষা ছিল কবির একটি প্রিয় ঋতু। তাই তাঁর বিভিন্ন গানে উঠে এসেছে মেঘ-মেদুর বর্ষার রূপ ঐশ্বর্যের শিল্পিত বর্ণনা। তিনি লিখেছেন- ‘বজ্র মানিক দিয়ে গাঁথা, আষাঢ় তোমার মালা/ তোমার শ্যামল শোভা বুকে বিদ্যুতেরই জ্বালা ॥/ তোমার মন্ত্রবলে পাষাণ গলে, ফসল ফলে/ মরু বহে আনে তোমার পায়ে ফলের ডালা ॥…’ অথবা ‘বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর,/ আউশের ক্ষেত জলে ভরভর,/ কালি-মাখা মেঘে ওপারে আঁধার ঘনিয়েছে দেখ্ চাহি রে।/ ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে…’। বিশ্বকবির এই শাশ্বত পঙতি যুগলের ছন্দের মত ঝরঝর বর্ষণ আজ হবে কিনা জানা নেই কারো। তবে কবির এমনই আহ্বানের মতো দেশবাসীরও আশা, বর্ষার আগমনে তাপিত গ্রীষ্মের দীর্ঘ অধ্যায়ের অবসান হবে। দাবদাহে হাঁসফাঁস হয়ে ওঠা মানুষগুলো স্বসি- পাবে। জলভরা মেঘের আষাঢ় এসে যবনিকা টেনে দেবে বহমান দীর্ঘ তাপদহনের জ্বালা- যন্ত্রনার অধ্যায়ের, অর্থাৎ গ্রীষ্মের।
বর্ষার আগমনে দাবদাহে কাহিল মানবকুলের সঙ্গে মুক্তি পাবে প্রকৃতি এবং উদ্ভিদরাজিও। শানি-, স্বসি- ও জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে পেতে তাই মানুষ ও প্রকৃতি উভয়ের মধ্যেই চলছে একে বরণ করে নেয়ার নানা আয়োজন। আষাঢ়স্যের প্রথম দিবসে বৃষ্টি হবে কি হবে না, তা বলা যায় না। কারণ বদলে গেছে বাংলার আবহাওয়া ও জলবায়ুর গতি- প্রকৃতি। যেমন, গ্রীষ্মে এবার কালবৈশাখী ঝড় হয়নি তেমন। তবে বৃষ্টি হয়েছে কিন’ প্রয়োজনের চেয়ে কম। দাবদাহে নাভিশ্বাস উঠেছে মানব ও প্রাণীকুলের।
অসহনীয় তাপে, লু হাওয়ার দাপটে বাংলাদেশ ধুঁকেছে এবারও। ইতো-মধ্যে দেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে প্রায় ৪২ ডিগ্রী (রাজশাহীতে) সেল-সিয়াস তাপমাত্রা। দাবদাহের কারণে রোগ- বালাইসহ নানা ধরণের দুঃসহ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সবাইকে। বর্ষার আগমনে দুর্ভোগের সেই পালা ফুরিয়ে আসবে, এ আশায় মানুষ আনন্দে উদ্বেল ও উৎফুল্ল এবং মুক্তির আকুল প্রতিক্ষায় দেশবাসী।
চিরকালই বর্ষাঋতু’র আবাহন এই দেশের প্রকৃতিকে বদলে দেয় নানারূপে, নানা চিত্রধারায়। নদ-নদীতে বাড়তে থাকে জলের ধারা। খাল-বিলে ফিরে আসে চিরচেনা রূপের বহর। মৌসুমী বায়ুর বহতায় প্রকৃতির অন-র জুড়িয়ে দেয় শীতল বাতাস আর বৃষ্টিমাখা বায়ুস-র। প্রাণান- শানি-র পরশ ফিরে আসে সামাজিক জীবনে।
এছাড়া কেতকীর মনমাতানো সুগন্ধ, কদমফুলের চোখ জুড়ানো শোভা ও পেখম খোলা ময়ূরের উচ্ছ্বল নৃত্যের আবাহন থাকে এই আষাঢ়েই। তাই প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ আষাঢ়কে বলেছেন- ‘ধ্যানমগ্ন বাউল- সুখের বাঁশি’।
তবে বর্ষা নিয়ে নবযৌবন আর যৌব-নের কবিদের আদিখ্যেতা থাকলেও একে নিয়ে অনুযোগেরও কমতি নেই। কাব্যলক্ষ্মীর সাধনায় যাদের আগ্রহ কম, তাদের অনেকের কাছেই বর্ষা ভোগানি-রও বটে। কেননা আষাঢ় মানেই বৃষ্টির ঘনঘটা। বৃষ্টির তোড়ে যাওয়া যায় না ঘরের বাইরে। বিশেষ করে নগরের রাস-ায় বের হওয়া অনেক সময়ই নিয়ে আসে চরম দুর্ভোগ কমে যায় দিন-মজুরের আয়-উপার্জন। গ্রামাঞ্চলেও অনেক সময়ে কাজের ব্যাঘাত ঘটে। বর্ষার ঢল অনেক সময়ে বন্যারও কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তারপরও বর্ষা নিয়ে যে যাই বলুক বা ঘটুক, বর্ষা যে বাঙালীর মনন জুড়ে এক ভিন্নমাত্রা যোগকারী ঋতু সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
বর্ষার আগমন সবার জীবনে বয়ে আনুক সুখানুভতি। বর্ষার ছটায় নাগরিক মন ভিজে যাক। সকল ক্লান্তি ভুলে গেয়ে উঠুক মন- এসো নীপবনে ছায়াবিথী তলে/এসো করো স্নান নবধারা জলে…।
২,৩২০ বার পড়া হয়েছে
বর্ষা নিয়ে দারুন প্রবন্ধ পড়লাম। মনে করে দেয় অতীতের সেই স্মৃতি।
ভাল লাগল, আমরা তো ভুলে যেতেই বসেছিলাম বর্ষাকে এখন আর বর্ষা নিয়ে নতুন কিছু রচিত হয় না।
বর্ষা আসে তার আপন রুপ নিয়ে। ভাল লাগল।
সমসাময়িক সম্পাদকীয় ভাল লাগল।
ছবিটা খুব সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ।
বর্ষা নিয়ে দারুন প্রবন্ধ পড়লাম,ভাল লাগল।
সুন্দর লিখেছেন তো !
অসংখ্য অসংখ্য ভাল লাগা জানিয়ে দিলাম ।
দারুন ভাবনার লিখা
শুব কামনা থাকবে
সুন্দর লিখেছিলেন
এখন আর লিখেন না কেনো