কবি আহসান হাবীবের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1634বার পড়া হয়েছে।
কবি আহসান হাবীব ছিলেন যশস্বী সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও সম্পাদক। তার জন্ম ২ জানুয়ারি ১৯১৭, পিরোজপুর জেলার শঙ্করপাশা গ্রামে। তিনি ১৯৮৫ সালের ১০ জুলাই ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। চলন্তিকার পক্ষ থেকে আমরা শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
পিরোজপুর গবর্নমেন্ট স্কুল ম্যাগাজিনে তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯৩৫ সালে, কবিতাটির নাম ছিল ‘মায়ের কবর পাড়ে কিশোর’। কিশোর আহসান হাবীবের সে কবিতা তখনকার স্কুলশিক্ষক ও ছাত্রদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল।
আহসান হাবীবের পেশাগত জীবন কেটেছে সাংবাদিকতায়। কিন্তু মননে তিনি ছিলেন গভীর শিল্পানুরাগী কবি। তাঁর কবিতায় খুঁজে পাওয়া যায় আত্মমগ্নতা ও গীতিময়তা। একপ্রকার সি্নগ্ধতার পরশে তিনি পাঠক চিত্তকে আকর্ষণ করেন। গভীর জীবনবোধ তাঁর কবিতার আরেকটি বৈশিষ্ট্য। তাঁর ‘সারা দুপুর’ কাব্যগ্রন্থের ‘আলো আঁধারের দর্শন’ কবিতার অংশবিশেষ নিম্নরূপ_
ওরা এখন পার হতে চায় দুর্গম দীর্ঘ পথ,
শোনো ওরা বলে, রাত শেষ হয়ে এল!
পূর্বাশার আলো ঐ দেখা যায়!
আহা অবুঝ ওরা বোঝে না।
ওদের ফিরিয়ে দাও তুমি,
ফিরিয়ে দাও আমাদের বাহুবন্ধনে_
সামনে ওদের কী গভীর অন্ধকার।
ওদের অপরাধ তুমি নিও না।
ওরা বলে, রাত শেষ হয়ে এল আমাদের পেছনে
আমরা বলি, সামনে তোমাদের রাত নামছে
তোমরা ফিরে এসো।
আশা-সে ত মরীচিকা, আমরা বলি।
ওরা বলে, আশাই জীবন, জীবনের শ্রী।
ওরা এগিয়ে যায় স্বচ্ছন্দে,
আমরা অবাক হই।
১৯৩৭ সালে তিনি কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ‘আজাদ’ পত্রিকায় সাব-এডিটর হিসেবে যোগ দেন। ১৯৩৭ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যনত্ম মাসিক ‘বুলবুল’-এর সহকারী সম্পাদক, ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যনত্ম মাসিক ‘সওগাত’_এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যনত্ম ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’র স্টাফ আর্টিস্ট, ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যনত্ম ফ্রাঙ্কলিন বুক প্রোগ্রামসের প্রকাশনা উপদেষ্টা এবং ১৯৬৪ সাল থেকে মৃতু্যর পূর্বদিন পর্যনত্ম ‘দৈনিক পাকিসত্মান’, পরে ‘দৈনিক বাংলায়’ রূপানত্মরিত পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মাসিক ‘মোহাম্মদী’ ও ‘ইত্তেহাদ’-এর সঙ্গেও সম্পাদনা সূত্রে কিছুকাল জড়িত ছিলেন।
আহসান হাবীবের কবিজীবন রোমান্টিকতার অনুসারী। তবে তা সমাজ ভাবনাবিচ্ছিন্ন নয়। সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল প্রায় প্রবাদতুল্য। এ দেশের বহু লেখক ও কবির জীবনের প্রথম রচনা তাঁর হাত দিয়েই প্রকাশিত হয়। সাহিত্যক্ষেত্রে তাঁদের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে তাঁর প্রচেষ্টা ছিল দৃষ্টানত্মস্থানীয়।
আহসান হাবীবের উলেস্নখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে : কাব্যগ্রন্থ ‘রাত্রিশেষ’ (১৯৪৭), ‘ছায়াহরিণ’ (১৯৬২), ‘সারাদুপুর’ (১৯৬৪), ‘আশায় বসতি’ (১৯৭৪), ‘মেঘ বলে চৈত্রে যাবো’ (১৯৭৬), ‘দুই হাতে দুই আদিম পাথর’ (১৯৮১), ‘প্রেমের কবিতা’ (১৯৮২) ও ‘বিদীর্ণ দর্পণে মুখ’ (১৯৮৫); কাব্যানুবাদ : খসড়া (১৯৮৬); উপন্যাস : ‘অরণ্য নীলিমা’ (১৯৬২); শিশুসাহিত্য : ‘জোছনারাতের গল্প’, ‘রাণী খালের সাঁকো’, ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’ (১৯৭৭); ‘ছুটির দিন দুপুরে’ (১৯৭৮), অনুবাদ : ‘প্রবাল দ্বীপে তিন বন্ধু’, ‘অভিযাত্রী কলম্বাস’ (১৯৫৯), ‘রত্নদ্বীপ’, ‘রাজা বাদশা হাজার মানুষ’, ‘এসো পথ চিনে নিই’, ‘ইন্দোনেশিয়া’ (১৯৬৬), ‘ছোটদের পাকিসত্মান’ (১৯৬৩ ব.) ও ‘বোকা বোকাই’ (যুগ্ম রচনা); সম্পাদিত গ্রন্থ : ‘বিদেশের সেরা গল্প’ ও ‘কাব্যলোক’ (১৯৬৮)। আহসান হাবীব তাঁর সাহিত্যকৃতির স্বীকৃতিস্বরূপ যে সব পুরস্কার লাভ করেন, সেগুলোর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য : ‘ইউনেস্কো সাহিত্য পুরস্কার’ (১৯৬০-৬১), কবিতার জন্য ‘বাংলা একাডেমী পুরস্কার’ (১৯৬১), ‘আদমজী পুরস্কার’ (১৯৬৪), ‘নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক’ (১৯৭৭), ‘একুশে পদক’ (১৯৭৮), ‘আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার’ (১৯৮০), ‘পদাবলী সাহিত্য পুরস্কার’ (১৯৮২) ও ‘আবুল কালাম স্মৃতি পুরস্কার’ (১৯৮৪)।
১,৭২৭ বার পড়া হয়েছে
শ্রদ্ধাভরে শ্মরণ করছি বাংলার সেই সন্তানকে যার কারণে আমাদের সাহিত্য জগৎ আজ সমৃদ্ধ।
কবি আহসান হাবীবের মৃত্যু বার্ষিকীতে কবিকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাচ্ছি।
কবির মৃত্যুবার্ষিকীতে কবিকে শ্রদ্ধাঞ্জলী জানাচ্ছি।
বিনম্র শ্রদ্ধা
শান্তি কামনা করি ।