জীবনের অর্থ কী ?
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1065বার পড়া হয়েছে।
সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হাঁটছিলাম আপন মনে। একটি দেশি কুকুর আবর্জনার স্তূপে খাবার খুঁজছে। খবই সাধারণ একটা দৃশ্য। কিন্তু যে জিনিসটা আমাকে কষ্ট দিল সেটা হল কুকুরটির পেছনের পা দু’টো ভাঙ্গা। অনেকটা ঝুলে থাকার মত অবস্থা। সামনের দু’টো পা দিয়ে সে চলাফেরা করে আর পেছনের পা দু’টো মাটিতে হেঁচড়ে হেঁচড়ে সাথে যায়। আমার ধারণা ‘আশরাফুল মাখলুকাতেরই’ (ক্রিকেটার আশরাফুল নয়) কেউ মজা করেত গিয়ে তার পা দু’টি ভেঙ্গে দিয়েছে। শুরু হয়েছে তার কষ্টের জীবন। প্রভু (মানুষ) ভক্তির জন্য কুকুরের অনেক সুনাম আছে। আর সেই প্রভুদেরই কেউ তার পা দু’টি ভেঙ্গে দিয়ে তাকে এমন কষ্টের দিকে ঠেলে দিল। এখন তাকে এই কষ্টটা বা কষ্টের জীবনটা বহণ করে নিয়ে যেতে হবে মৃত্যু পর্যন্ত। প্রাণী হিসেবে মানুষের জীবনটাও কি এমনই নয়। কষ্ট কিংবা সুখ – জীনটাকে কেবল অন্তিমের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়াটাই সার। আর কী অর্থ আছে জীবনের?
রাস্তার পাশে যে মানুষটা রোগ-শোক-ক্ষুধার যন্ত্রণা সঙ্গী করে বেঁচে আছে, ঐ কুকুরটির মত তাকেও অপেক্ষা করতে হচ্ছে সেই পর্যন্ত যতক্ষণ না তার জীবন বাতির তেল পুড়ে শেষ হচ্ছ। যে নারী কিংবা পুরুষটি শহরের রাস্তার ধারে কিংবা প্রত্যন্ত কোনো গ্রামে অন্তিমের অপেক্ষায় প্রহর গুণছে তার জীবনের অর্থ কী। প্রহর গুণাই যেন তার কাজ। তবে আমরা যদি একেবারে বিপরীত মেরুতে চলে যাই সেখানে বাস করে তারা যাদের আছে অনেক অনেক টাকা। এখানে দৃশপট ভিন্ন। তাদের ব্যাপারটা একেবারেই আলাদা। তাদের জীবনটা অনেক মজার। টাকার জন্য তাদের জীবনের কোনো সাধ আহ্লাদ বা কোনো কিছুই আটকে থাকছে না। বিষয়টা মজার না? তারা বাস করে শীত এবং তাপ নিয়ন্ত্রিত বিলাসবহুল প্রাসাদ কিংবা অট্টালিকায়। তবে আমি শুনেছি তাদেরও নাকি দুঃখ আছে। টাকা দিয়ে নাকি সব সুখ কিনতে পাওয়া যায় না। তাই তাদেরও নাকি অনেক অপার্থিব সাধ বা স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যায়। তাদেরও কিন্তু সেই অন্তিমের অপেক্ষায়ই থাকতে হয়। কারণ তাদের জন্যও অন্তিম মুহূর্তটা এসে যায়। কিন্তু মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তাদের লোভ কিন্তু একটুও কমে না। এই লোভের কারণে তারা মৃত্যুর আগে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ হিসেবে তাদের যে দায়িত্বটা ছিল সেটা পালন করতে পারে না। পারে না প্রাচুর্যের একটা অংশ বঞ্চিতদের মাঝে বন্টন করে দিতে।
আমার চিন্তাটা মনে হয় হতাশাবাদের দিকে চলে যাচ্ছে। আসলে আমি বলতে চাচ্ছি এই দুই মেরুর মধ্যে একটা সেতু বন্ধন তৈরী হলে কিন্তু পৃথিবীতে চলতে পারে জীবনের উৎসব। ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ হিসেবে টাকা ওয়ালারা যদি তাদের দায়িত্বটা পালন করত তবেই এটা সম্ভব হত। আর মাঝখানে যারা আছে তাদের জীবনটা একভাবে চলেই যাবে সেই অন্তিমের দিকে। বিদেশে দেখা যায় অনেক পয়সার মালিক যারা তারা তাদের সম্পদের একটা অংশ কিংবা পুরোটাই উইল করে দান করে যান তাদের বিপরীত মেরুতে অবস্থানকারী বঞ্চিতদের জন্য। বিল গেটস তার সম্পূর্ণ সম্পদ বিল এন্ড ম্যালিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের জন্য উইল করে রেখেছেন। আবার ওয়ারেন বাফেট তার ৯০% সম্পদ উইল করে রেখেছেন। আমাদের দেশেও আগে ধনী লোকেরা ওয়াকফ করতো। সেসব ওয়াকফ সম্পত্তির অনেকগুলো এখনও মানুষের উপকারে আসছে। কিন্তু এখন আর কেউ সেরকম ওয়াকফ করে না। এখন সবাই সবকিছু নিজের জন্য করে। কেউ চিন্তা করে না যে, চোখ বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে এসব সম্পদ আর আমার থাকবে না। বার ভুতের জন্য তারা সমানে টাকা কামাচ্ছেন বৈধ হোক কিংবা অবৈধ।
আরেকটা জিনিস পৃথিবীর অন্যান্ন দেশে হয়ে থাকে। সেটা হল যাদের সামর্থ আছে তারা সমাজের সুবিধা বঞ্চিত এক বা একাধিক শিশুকে দত্তক নিয়ে নেন। সমাজের বৈষম্য হ্রাসে এর একটা বিরাট অবদান আছে। আমাদের দেশে এর প্রচলন দেখা যায় না। আমাদের দেশে দত্তক কেবল তারাই নেন যাদের কোনো সন্তান নেই। আমাদের ধনীরা প্রতিবেশী গরীবের দুঃখটাকে মনে হয় বেশ উপভোগ করেন। তাদের থেকে সেবা যত্ন নেওয়া ছাড়াও তাদের দেখিয়ে দেখিয়ে সুখটা ভোগ করে অনেক মজা পান।
১,১১৪ বার পড়া হয়েছে
লেখাটা বেশ ভাল লেগেছে–কিছুটা গতানুগতিক হলেও দু তিনটি বিন্দুর ওপরে সুন্দর আলকপাত লক্ষ্য করা গেছে।আর লেখার স্টাইল বেশ ভাল লেগেছে।
অশেষ ধন্যবাদ ভাই……………..
আরেকটা জিনিস পৃথিবীর অন্যান্ন দেশে হয়ে থাকে। সেটা হল যাদের সামর্থ আছে তারা সমাজের সুবিধা বঞ্চিত এক বা একাধিক শিশুকে দত্তক নিয়ে নেন। সমাজের বৈষম্য হ্রাসে এর একটা বিরাট অবদান আছে। আমাদের দেশে এর প্রচলন দেখা যায় না। আমাদের দেশে দত্তক কেবল তারাই নেন যাদের কোনো সন্তান নেই। আমাদের ধনীরা প্রতিবেশী গরীবের দুঃখটাকে মনে হয় বেশ উপভোগ করেন। তাদের থেকে সেবা যত্ন নেওয়া ছাড়াও তাদের দেখিয়ে দেখিয়ে সুখটা ভোগ করে অনেক মজা পান।
———————————————————–
আপনার উপরোক্ত কথাগুলো ভাল লেগেছে। একমত পোষন করলাম।
অশেষ ধন্যবাদ ভাই…………….
আপনার লেখার সাথে সহমত ।
অশেষ ধন্যবাদ ভাই…………….
আসলে অসহায়ত্ব দেখতে দেখতে মানুষ অসহায়ত্বকেও স্বাভাবিক বলে নিয়ে নিচেছ । এটা খুবই কষ্টের । প্রত্যেকটি মানুষেরই উচিৎ সামর্থঅনুযায়ী সকলকে সাহায্য করা । ধণ্যবাদ সুন্দর লেখার জন্য ।