দুঃসাহসী শাহীন (পর্ব-৪)
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1468বার পড়া হয়েছে।
॥ শাহীনদের পরিবার ॥
শাহীনের বাবা রিদওয়ান সাহেব আধুনিক শিক্ষিত মানুষ। পেশায় প্রভাষক। ধার্মিক পরিবারের সন্তান। ধার্মিক সৎ পিতা-মাতার প্রভাব পড়েছে তাঁর জীবনাচরণে। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি নামায-রোযাসহ ইসলামী জীবনাচরণে অভ্যস্ত। স্ত্রী বেগম রিদওয়ানও আধুনিক শিক্ষিতা। তিনিও ধর্ম-কর্মে অভ্যস্ত। তাঁদের দু’ছেলে, এক মেয়ে। বড় ছেলে ফাহিম রিদওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। মেয়ে ফারহানা রিদওয়ান মহিলা মাদরাসায় পড়ে। সবার ছোট শাহীন রিদওয়ান নরসিংদী শহরে হিলফুল ফুযুল একাডেমীতে ৭ম শ্রেণীতে পড়ে। এর আগেও রিদওয়ান সাহেব একটি মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। বাসর রাতের প্রথম সাক্ষাতেই তিনি বুঝতে পারেন, তাঁর নববধু ধর্মের প্রতি খুবই বিরাগভাজন। সারা রাত বোঝানোর পরও কোনো বাঞ্চিত পরিবর্তন না হওয়ায় এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে ঘোরতর আপত্তি করতে থাকায়, তিনি সে স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য হন। তিনি মনে করেন, স্ত্রী ধর্ম-কর্মে অভ্যস্ত না হলে এর ক্ষতিকর প্রভাব সন্তানদের উপরও পড়বে। আর সন্তানদেরে শৈশবে ধর্মীয় অনুশীলনে অভ্যস্ত না করালে পরবর্তীতে তাদের পক্ষে আলোকিত মানুষ হওয়া খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তাই তিনি বাসায় থাকাকালীন প্রতি ওয়াক্ত নামাযের সময়ই ছেলে-মেয়েদেরকে নামাযের ব্যাপারে তাগিদ দেন।
ঐদিনও ফযরের নামাযের পূর্বে রিদওয়ান সাহেব ছেলে-মেয়েদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে মসজিদে চলে যান। বড় ছেলে ফাহিম রিদওয়ান নামাযে গেলেও, ছোট ছেলে শাহীন রিদওয়ান যায়নি। মসজিদ থেকে এসে শাহীনকে বিছানায় শোয়া দেখে ভর্ৎসনা করেন তিনি। এরপর মসজিদ থেকে শাহীনের ফিরতে বিলম্ব হওয়ায় রিদওয়ান সাহেব প্রথমে ভাবছিলেন, সে হয়তো নামায শেষে মক্তবের পড়া পড়ে বাসায় আসবে। কিন্তু মক্তব ছুটি হয়ে যাবার পরও ফিরতে না দেখে, তার খোঁজে মসজিদে যান রিদওয়ান সাহেব। ওখানে গিয়ে ‘শাহীন ঐদিন মসজিদে যায়নি’ শুনে অবাক হন তিনি। একটি ছেলের মুখে শোনেন, সে শাহীনকে রেললাইনের দিকে যেতে দেখেছে। তিনি তখন রেললাইনের আশে-পাশেসহ এদিক-সেদিক খোঁজাখুজি করেন। শহরের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে খবর নেন। এরপর দূরের আত্মীয়দের বাড়িতেও খোঁজ নেন। কোথাও কোনো সন্ধান না পাওয়ায় পড়ে যান মারাত্মক দুর্ভাবনায়। থানায় ডায়েরি করেন। অনেক পীর-দরবেশের দ্বারস্থ হন। তাবিজ-তদবীর করেন। দেশময় খুঁজে বেড়ান। কিন্তু কোথাও কোনো সন্ধান মিলেনি শাহীনের। ছেলেহারানোর মর্মবেদনায় তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দু’জনই শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। বিশেষ করে তাঁদের একমাত্র মেয়ে ফারহানা কেঁদে-কেটে একেবারে ক্লান্ত হয়ে যায়। বাসায় থাকা কালীন দূরন্ত শাহীনের চঞ্চলতা ও দুষ্টুমী সারাক্ষণই তাকে প্রাণবন্তো করে রাখতো। ভাইয়ের বিয়োগ-ব্যথায় এখন সে নীরব-নিথর। বড় ছেলে ফাহিম ঢাকা থেকে ছুটিতে বাড়িতে এসেই শাহীনের একটি নতুন দুষ্টুমীর খবর শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকতো। এখন সেও পাথর হয়ে গেছে। তারপরও অব্যাহত থাকে খোঁজাখুঁজি।
রিদওয়ান সাহেব প্রথম প্রথম মনে করেছিলেন, নামাযের জন্য ভর্ৎসনা করায় অভিমান করে হয়তো কোন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে উঠেছে শাহীন। কিন্তু পরিচিত সব আত্মীয়ের বাড়ি খোজাঁখোজির পরও কোনো সন্ধান না পাওয়ায় ; যতোই দিন যাচ্ছে, ততোই অজানা আশঙ্কা দানা বাঁধতে থাকে তাঁর মনে। একপর্যায়ে আশঙ্কা জাগে, হয়তো কোনো আন্তর্জাতিক শিশু-কিশোর অপহরণ ও পাচারকারী দলের অপহরণের শিকার হয়েছে শাহীন। এরপর মনের পর্দায় ভেসে উঠে অপহরণকারীদের গোড়ার বিদেশী চক্রের লোমহর্ষক অপকর্মের নারকীয় দৃশ্যপট। ভাবতেই তাঁর দেহ-মন শিউরে উঠে! সমাজ-সভ্যতার প্রতি মনটা বিদ্রোহী হয়ে উঠে! তার মনে প্রশ্ন জাগে যে সময়ে, একটি সমাজে শিশু-কিশোরদের জীবনের নিরাপত্তাই থাকে না ; সে সময়কে সভ্যতার যুগ বা সে সমাজকে সভ্য সমাজ বলে তৃপ্তি লাভের স্বার্থকতা কোথায়? আর সভ্যতাই যদি না আসলো, তাহলে এ আধুনিক শিক্ষা-দীক্ষার ফলাফলই বা কী? তবুও তাঁর এ আশঙ্কার কথা স্ত্রীকে তিনি বলেন না। কারণ, মায়ের মন স্বভাবতই একটু দুর্বল থাকে বিশেষ করে সন্তানের ব্যাপারে। তবে শত দুর্ভাবনার মাঝেও রিদওয়ান সাহেব স্রষ্টার করুণার ব্যাপারে নিরাশ হন না ; বরং আশা পোষণ করেন, আল্লাহর রহমতে তাঁর ছেলেকে একদিন ফিরে পাবেনই।
শিক্ষিতা এবং পত্রিকা পড়–য়া বেগম রিদওয়ানও পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে শিশু-কিশোর অপহরণ ও পাচারকারী চক্রের খবরা-খবর জানতেন। একপর্যায়ে তাঁর মনেও ছেলে শাহীনের ব্যাপারে এধরনের দুশ্চিন্তা দানা বাঁধতে শুরু করে। একদিন তিনি স্বামীকে বলেই ফেললেন, “তাহলে কী আমাদের কলিজার টুকরা শাহীন আন্তর্জাতিক শিশু-কিশোর পাচারকারী দলের হাতেই পড়ে গেলো?” স্ত্রীর এ প্রশ্নের মুখে নির্বাক হয়ে যান রিদওয়ান সাহেব। তারপরও তিনি তাঁর আশার কথাই জানান স্ত্রীকে। আল্লাহর অপার করুণা থেকে নিরাশ না হওয়ার এবং ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানান তিনি। সব শেষে দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে তিনি আবারও বলেন যে, তাঁর মন বলছে একদিন মুক্ত হয়ে ফিরে আসবেই ইনশা-আল্লাহ তাঁদের কলিজার ধন।
১,৫৮০ বার পড়া হয়েছে
কাউছার আলম ভাই এই পর্বটি ও খুব ভাল লেগেছে। ভাল একটা পর্যায় এগুতেছে গল্পটি বুঝতে পারতেছি। পরের পর্বের আশায় রইলাম।
ধন্যবাদ আরিফ ভাই ঊৎসাহ প্রদান করার জণ্যে।
যতই পড়ছি ততই ভাল লাগছে।
দোয়া করবেন আমির ভাই যেন আপনাদের সুন্দর সুন্দর লেখােউপহার দিতে পারি।
পর্ব চারে এসে ঢুকলাম। বেশ ভালো লিখেন আপনি। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ।
এই পর্বটিও পড়লাম, চলুক…সাথে আছি
সাথে থাকার জন্যে ধন্যবাদ।
পড়লাম ভাই।
এ পর্বতে একটু আকর্ষণীয় ভাব পেলাম ।
ভাল লাগল গল্প
শুভেচ্ছা