Today 23 Nov 2024
banner
নোটিশ
ব্লগিং করুন আর জিতে নিন ঢাকা-কক্সবাজার রুটের রিটার্ন বিমান টিকেট! প্রত্যেক প্রদায়কই এটি জিতে নিতে পারেন। আরও আছে সম্মানী ও ক্রেস্ট!
banner

ধাক্কা কিংবা ঠেলা দিয়ে নয়

লিখেছেন: ওয়াহিদ মামুন | তারিখ: ১০/০৯/২০১৪

এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1816বার পড়া হয়েছে।

 

রাত পৌনে নয়টার দিকে অফিস থেকে বের হয়ে তেজগাঁও রেল ক্রসিং পার হয়ে হেঁটে ফার্মগেইট এলো মামুন। তারপর টেম্পুতে সায়েন্স ল্যাবরেটরি পৌঁছালো। ফের টেম্পুতে চড়ে টেনারীর মোড়ের কিছুটা পূর্বে নেমে তার আপার বাসায় গিয়ে দেখলো, তার মামা এসেছেন।

মামুনের মুখের দিকে তাকিয়ে মামা বললেন, ‘‘অফিস করে একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেছিস। তোর চাকরিটা আসলে অত্যধিক খাটুনির।’’
মলিন মুখে সামান্য হাসলো মামুন। সে বুঝলো যে নিশ্চয়ই তার মুখে ক্লান্তির ছাপ ফুটে উঠেছে। সেই সকাল আটটায় অফিসে ঢুকেছিল। একটা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ-এ গার্মেন্ট সেকশনে চাকরি করে সে। তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ট্রাক স্ট্যান্ডের উত্তরে অফিস।

কুয়েটে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে তার মামা লেকচারার হিসাবে আছেন। বর্তমানে ঢাকায় বুয়েটে মাস্টার্স করছেন। শহীদ স্মৃতি হলে থাকেন। মামুন মিরপুর বার নাম্বারে মেসে থাকে। গ্রামের বাড়ি পাবনা থেকে তার বাবা-মা এসেছেন আপার বাসায়। তাই মামুন এখানে এসেছে।

কয়েক মাস পর মামা জানালেন যে কুয়েটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। মামার পরামর্শ অনুযায়ী সেকশন অফিসার পদে দরখাস্ত করলো মামুন।

ইন্টারভিউ কার্ড পাওয়ার পর ভাইভা পরীক্ষা দিতে মামার সাথে কলাবাগান থেকে ঈগল পরিবহণের গাড়িতে চড়ে প্রথমবারের মত খুলনায় গিয়ে কুয়েট আবাসিক এলাকায় মামার বাসায় উঠলো মামুন।

একদিন পর পরীক্ষা দিয়ে বিকেলে ঘুরলো। সাজানো গোছানো ক্যাম্পাসটা খুব ভালো লাগলো ওর। রাতে ঢাকায় রওয়ানা দিলো।

খুব খুশি হলো সেইদিন, যেদিন জানলো, ওই পদের জন্য সে নির্বাচিত হয়েছে।

বর্তমানে মামুন যে চাকরি করে তাতে তিন বেলা খাওয়া, অফিস করা আর রাতে কয়েক ঘণ্টা ঘুমানো ছাড়া কোনো দিকে চোখ দেওয়ার সুযোগ নেই। শুক্রবারও দুপুর পর্যন্ত অফিস করতে হয়। মামুন ভাবলো যে কুয়েটে জয়েন করলে এই যান্ত্রিক জীবন থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

অফিস থেকে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে খুলনায় রওয়ানা দিলো সে।

পরদিন সকালে কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনে সংস্থাপন শাখায় গেল। হঠাৎ এক লোকের কিছু কথা ওর কানে এলো। তিনি বললেন, ‘‘এই প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কত কাজ করলাম তবু প্রমোশন পেলাম না। আর বাইরের লোক হয়ে নিয়োগ পেয়ে গেল!’’

লোকটির দিকে তাকালো মামুন। দেখলো যে দাঁড়িওয়ালা পঞ্চাশ বছরের বেশি বয়সী এক লোক। মামুন ভাবলো যে কথাগুলো কি তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন?

যে লোকটির টেবিলের সামনে বসে আছে মামুন তাকে বারান্দায় ডেকে আনলো। তাকে বিষয়টা বলে এর ভেতরের ব্যাপারটা জানাতে অনুরোধ করলো। তিনি সব খুলে বললেন।

দাঁড়িওয়ালা লোকটি সহকারী সেকশন অফিসার পদে আছেন। তিনিও প্রমোশনের জন্য দরখাস্ত করেছিলেন। কিন্তু নিয়োগপত্র পেয়েছে সে। এতে লোকটি খুব দুঃখ পেয়েছেন। এখানকার চাকুরেদের তো প্রমোশনের আশা ও দাবী থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।

মামুন জানলো যে এখানে সরাসরি প্রমোশনের সিস্টেম নেই। সব নিয়োগের ক্ষেত্রেই নতুন করে পরীক্ষা দিতে হয়। কিন্তু যারা এখানে চাকরি করেন তাদের তো প্রমোশন পাওয়ার অধিকার অবশ্যই আছে। ওর কাছে জয়েন করাটা অন্যের মুখের গ্রাস কেড়ে নেওয়ার মত লাগলো। অপরাধবোধেরও সৃষ্টি হলো। আরও জানলো যে নিয়োগের জন্য একটি প্যানেল করা হয়েছে। তার পরে দাঁড়িওয়ালা লোকটি আছেন। সে জয়েন না করে লিখিত দিলে তিনি জয়েন করার সুযোগ পাবেন।

বিষয়টা নিয়ে অনেক চিন্তা করলো মামুন। অবশেষে লিখিত দিলো।

কয়েক মাস পর মামীর ভাইয়ের বিয়েতে খুলনা গেল মামুন। তার মামার শ্বশুর বাড়ি কুয়েটের পাশেই। মামার বাসা থেকে হেঁটে সেখানে যাওয়ার সময় কালো বোরকা পরা, প্রায় মামুনের সমান লম্বা, ফর্শা, সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী একজন মেয়ে পাশ থেকে ওকে জিজ্ঞাসা করলো, ‘‘আপনি তো সাইফুল ইসলাম স্যারের ভাগ্নে, তাই না?’’
মামুন বললো, ‘‘হ্যাঁ।’’
সে জানতে চাইলো, ‘‘যদি কিছু মনে না করেন তবে আপনাকে কি একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে পারি?’’
মামুন বললো, ‘‘অবশ্যই পারেন।’’
সে জিজ্ঞাসা করলো, ‘‘আপনি কি কুয়েটের চাকরির চেয়েও ভালো কোনো সুযোগ পেয়েছেন?’’
মামুন বললো, ‘‘না।’’
সে অবাক হয়ে জানতে চাইলো, ‘‘তাহলে এখানে জয়েন করলেন না কেন?’’
অল্প সময়ের আলাপচারিতায় তাকে খুব আন্তরিক লাগলো মামুনের কাছে। মামুন বললো, ‘‘অনার্সে পড়ার সময় এক টিচার উপদেশ দিয়েছিলেন, ‘আপনাদের জীবনের লক্ষ্য আকাশকে ছিদ্র করে চলে যাবে। কিন্তু কাউকে ধাক্কা দিয়ে নয়, কাউকে ঠেলা দিয়ে নয়, এগিয়ে যাবেন ঠিক নিজের মত করে।’ স্যারের কথাগুলো আমার খুব ভালো লেগেছিল। আমার মনকে প্রবলভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল। সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, জীবনে চাকরি কিংবা কোনো কিছু পাওয়ার ক্ষেত্রে কখনও অন্যায় করবো না। তদবির কিংবা অন্য কোনো উপায় অবলম্বন করে নয়, নিজ যোগ্যতায় যা পাবো তাই নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবো, শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে তাই থাকা উচিৎ।’’
কিছুক্ষণ মামুনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে সে বললো, ‘‘আপনি যার কথা ভেবে চাকরিতে জয়েন করেন নি, আমি তার মেয়ে। আমার নাম সুমাইয়া।’’
আশ্চর্য হয়ে মামুন বললো, ‘‘তাই?’’
সুমাইয়া বললো, ‘‘হ্যাঁ, আমি বি. এল. কলেজে অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ি। ঠিক আছে, আসি। আবার দেখা হবে, কথা হবে।’’
সুমাইয়ার শেষের কথাটা মামুনকে ভাবিয়ে তুললো।

১,৭৮৩ বার পড়া হয়েছে

লেখক সম্পর্কে জানুন |
বাড়ি পাবনা জেলায়। বর্তমানে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) কর্মরত। মানুষের মানুষ থাকা ও মানুষ হয়ে ওঠার জন্য পড়াটাই বোধ করি সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন। তাই আমি বই পড়া ভালোবাসি।
সর্বমোট পোস্ট: ৩৫ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ২৮৬ টি
নিবন্ধন করেছেন: ২০১৩-০৬-১৮ ০৪:১২:৫১ মিনিটে
banner

৯ টি মন্তব্য

  1. রাজিব সরকার মন্তব্যে বলেছেন:

    বাহ…দারুণ…………।

  2. গোলাম মাওলা আকাশ মন্তব্যে বলেছেন:

    কেন হবে না , আর ভাবার ই বা কি আছে—- পৃথিবি গোল ঘুরতে ঘুরতে দেখা হয়ে যাবে। গল্প বলায় কেমন একটি ত্রুটি আছে।

  3. নাজমুল হক পথিক মন্তব্যে বলেছেন:

    লেখার গাঁথুনি বেশ. ভাল লাগলো। আরও লেখার অপেআ রইলাম।

    • ওয়াহিদ উদ্দিন মন্তব্যে বলেছেন:

      ভালো লাগা জানানোর জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনার সুন্দর মন্তব্যে খুবই অনুপ্রাণিত হলাম। ভালো থাকবেন। সালাম ও শ্রদ্ধা জানবেন।

  4. এই মেঘ এই রোদ্দুর মন্তব্যে বলেছেন:

    জীবনের বাস্তব গল্প ভাল লাগল। কতগুলো কথা মনে ধরল।

  5. ওয়াহিদ উদ্দিন মন্তব্যে বলেছেন:

    আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ। শ্রদ্ধা জানবেন।

  6. সবুজ আহমেদ কক্স মন্তব্যে বলেছেন:

    দারুণ মুগ্ধ হলাম পড়ে লাল লাগলো লিখা

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করতে লগিন করুন.

go_top