Today 23 Nov 2024
banner
নোটিশ
ব্লগিং করুন আর জিতে নিন ঢাকা-কক্সবাজার রুটের রিটার্ন বিমান টিকেট! প্রত্যেক প্রদায়কই এটি জিতে নিতে পারেন। আরও আছে সম্মানী ও ক্রেস্ট!
banner

ধারাবাহিক উপন্যাস “নিয়োগ পত্র” – দশম পর্ব

লিখেছেন: মিলন বনিক | তারিখ: ২৮/১০/২০১৩

এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1558বার পড়া হয়েছে।

দশম পর্ব
(এগার)
শহরটা বড় আর্টিফিসিয়াল।
এখানে ব্যস্ত মানুষগুলোর গোধুলি লগ্ন দেখার সুযোগ হয় না। দুর্ভাগ্য তিমিরেরও। সন্ধ্যাটা কেটে যায় ছাত্র ছাত্রীদের সাথে যোগ বিয়োগ, গুন ভাগ কিংবা ডেবিট ক্রেডিট নিয়ে। অংকের সমাধান সহজে পাওয়া যায়। নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে তা সহজ হয়ে উঠে। নিজের জীবনের সমাধানটা প্রায়ই গরমিল। কিছুতেই হিসেব নিকেশ মিলে না।
তিমির কলেজ ষ্ট্রীট ধরে হাটছে। আর মাত্র ক’টা দিন। এখন ডিসেম্বর মাস। ছেলে মেয়েদের পরীক্ষা চলছে। শেষ হলে কিছুদিনের জন্য বাড়ী চলে যাবে। বেতনটা পাওয়া হলে এক জোড়া নতুন জুতা কেনা দরকার।
দুপুরে রান্নার কিছুই ছিল না। অনন্তদাকে মাত্র দু’টো ডিমের পয়সা দেওয়া হয়েছে। বাড়ীতে নতুন ধান উঠেছে। এবার ফসলটাও ভালো। ঝড় বন্যা হয়নি। জমির যা ফসল তাতে মাস ছয়েক চলবে। ছোট ভাইটা সের পাঁচেক নতুন চাল নিয়ে এসেছে। সাথে নতুন চালের পিঠা আর খেজুরের রাফ। মা পাঠিয়েছে। তিমির বাসায় ছিল না। অনন্তদার হাতে রেখে গেছে সব। সাথে অপুর ছোট্ট একটা চিঠি।
দাদা সামনে আমার এস এস সি ফরম ফিলাপ। দেড় হাজার টাকার মত লাগবে। বাবা বলেছে পুরোটা দিতে পারবে না। পারলে তুমি হাজার খানেক টাকা দিও।
শম্পা। তিমিরের ছোট বোন। সে লিখেছে- বড়দা জানুয়ারীতে আমি ক্লাস সিক্সে যাচ্ছি। নতুন স্কুলে আমার একটি নতুন জামা চাই। চিটি সংবাদ দু’টোই তিমিরকে অস্থির করে তুলছিল। এদিকে ঘর রাখতে গেলে জমিদারকে পাঁচশো টাকা দিয়ে যেতে হবে। নিজের জন্য এক জোড়া জুতো দরকার। সেটা আর কিছুতেই ভাবতে পারছে না। মনের অস্থিরতা ক্রমশঃ বাড়ছে।
তিমিরের বড্ড তৃষ্ণা পেয়েছে। সামনেই একটা কুলিং কর্নার। দুপুরে লোকজন তেমন নেই। একজন মহিলা চেয়ারে বসে নাস্তা সারছে। পরনে সাদা এপ্রোণ। তিমির একগ্লাস জল চাইল। মহিলাটি আড়চোখে তাকিয়ে আছে। তিমির খেয়াল করেনি। গ্লাস নামিয়ে রাখতেই মহিলাটি দ্রুত চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠে বলল- আরে! যেভাবে পানি পান করছিস তাতে মনে হচ্ছে সমুদ্র মন্থন করছিস। তোর এ কি অবস্থা। কোথায় যাচ্ছিস। বোস বোস..অনেকদিন পরে দেখা।
তিমির লজ্জিত হয়। অপরিচিত মহিলা। হঠাৎ তুই তোকারি করে বলছে। দোকানদার হা করে তাকিয়ে আছে। কিছুটা আত্ম সম্মানবোধে লাগলেও সামলে নিল। চোখ ফিরিয়ে দেখল। সংগীতা জলদাশ। ক্লাস মেট। একসাথে মেট্রিক পাশ করেছে। ছোটবেলা থেকে একই স্কুলে লেখাপড়া। নার্সিং-এ ভর্তি হয়েছিল। এখন সংসারী। অনেকখানি বদলে গেছে। চেহারায় স্কুল জীবনের সেই চঞ্চলতা এখনও আছে। হাত ধরে টেনে বসালো গোল টুলে। আমাকে চিনতে পেরেছিস।
– চিনব না মানে। তুই সংগীতা।
– ঠিক বলেছিস। তবে কথা বলছিস না যে। কি ভাবছিস ? কোথায় আছিস ?
– এইতো এখানে। তোর সামনে।
– ফাজলামি করছিস।
– এতগুলো প্রশ্ন একসাথে করলে কোনটার উত্তর দেবো বল। তোর এই স্বভাবটা এখনও গেল না। জামাই কিছু বলে না।
সংগীতার আর একটা বদ অভ্যাস হচ্ছে গা ছুঁয়ে কথা বলা। বন্ধুদের সাথে কথায় কথায় হাত টানবে, কান টানবে, কাঁধে পেটে চিমটি দেবে। এর মধ্যে দু’বার চিমটি দেওয়া হয়ে গেছে। তিমির টুলটা আরও সামনে টেনে নিয়ে বলল-
– তোর কথা ভাবছি। কত পরিবর্তন হয়েছে তোর।
– পরিবর্তনের কি হলো। কি খাবি বল।
– কিছু না। বাসায় যাচ্ছি। ভাত খাবো।
– চাকরি কোথায় করছিস।
– কোথাও না।
– মানে। ফাজলামি করছিস।
– মোটেই না।
– তবে মিথ্যা বলছিস কেন।
– সত্যি বলছি। তিমির নিজের কষ্টটা দীর্ঘশ্বাস চেপে আড়াল করে। তুই তো চাকরী করছিস নিশ্চয়।
– হ্যাঁ। বছর দু’য়েক হলো।
– কোথায়।
– সি এম সি-তে। প্রথম পোষ্টিং দিয়েছিল কুতুবদিয়া। মোটেও ভালো লাগেনি। অনেক কষ্টে বদলী হয়েছি।
– যাক্ ভালোই হলো। শুনলাম বিয়ে করেছিস।
– এই বেত্তমিজ। মুখের আড় রেখে কথা বলতে পারিস না।
– ও সরি।
– আবার সরি। তুই দেখছি আগের মতোই আছিস। কথায় কথায় সরি বলা। আরে বেকুব, বিয়ে কি আমি করেছি না আমাকে করেছে।
– ঐ একই কথা। একটা হলেই হলো। তা ভাগ্যবানটা কে। কি করেন।
– সব কথা দোকানে বসে বলা যাবে না। বাসায় চল। আমিও যাচ্ছিলাম। ডাল ভাত দু’টো খেতে খেতে কথা বলবো। তোর তাড়া নেয়তো।
– না, তবে চারটার আগে রিলিজ দিতে হবে।
– ঠিক আছে আগে চল তো। কাঁধে একটা মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলল সংগীতা।
দোকান থেকে বাসার দুরত্ব বেশী নয়। আট দশ মিনিটের পথ। ফুটপাত ধরে হাটছে দু’জন। তিমির সংকোচ করছে। সংগীতার স্বামী যদি দেখে ফেলে কি মনে করবে। সংগীতার সে ভয় নেয়। অবশ্য বিবাহিতা বলে হয়তো অনেক কিছু এড়িয়ে যেতে পারছে। হাটতে হাটতে কথা বললো সংগীতা। তোর সাথে দেখা হয়ে ভালোই হলো। সবার খোঁজ খবরটা নেওয়া যাবে। অনেকদিন কারও সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয় না। একবার সুজনের সাথে দেখা হয়েছে। ব্যাটা প্রেম করে বিয়ে করেছে। কোন একটা প্রাইভেট ফার্মে আছে বললো। বিয়ের চার মাস পরেই বাবা হয়ে গেছে।
– তা কি করে সম্ভব। বলল তিমির।
– কেন সম্ভব নয়। বিয়ের আগে যা হবার হয়ে গেছে। পূর্ব প্রেম। বুঝলি হাদা রাম। সংগীতা হাসল।
– বুঝেছি। তা তুই কি মা হতে চলেছিস।
– আরে না। এত তাড়াতাড়ি অত ঝামেলায় জড়াতে চাই না। এখন ভালোই আছি।
– বিয়ে হয়েছে কবে।
– বছর দেড়েক।
– নিমন্ত্রন করলি না যে।
– হঠাৎ করেই হয়েছে।
– তবে কি সুজনের মতোই।
– অনেকটা তাই। তবে বেশীদিন ছুটাছুটি করতে পারিনি। পরিচয়ের এক বছরের মধ্যেই বিয়ে করে ফেলেছি।
– যাক বাবা। ভালোই করেছিস। মেয়েরা আসলে সোভাগ্যবতী। অনেকটা অল্প বয়সেই জীবনের পরিপূর্ণতা পেয়ে যায়।
– তোদের বয়সী হলে তো বুড়ি বলিস। কেউ বিয়ে করতে চায় না।
– তোর যা ফিগার, তাতে কিন্তু কেউ অমত করবে না।
– এ্যাঁই তোর হিংসে হচ্ছে। আবার বাম কাঁধে একটা খোঁচা।
– হিংসে হবে না কেন। এই যেমন তোকে দেখে আমার বড় দিদির মত লাগছে। বিয়ের পর তুই আরও সুন্দর হয়ে গেছিস। একাধারে গিন্নি ও কর্মজীবি। তোর দু’দিকেই সুখ। কোন কিছুর কমতি নেই। খুব ভালো লাগছে রে।
ওরা ততক্ষনে বাসার কাছাকাছি পৌছে গেছে। দোতলায় উঠে দরজা নক করতেই বার তের বছরের একটি মেয়ে দরজা খুলে দিল। ঘরে ঢুকেই সংগীতা জিজ্ঞাসা করল- কি রান্না করেছিস।
মেয়েটি দরজা বন্ধ করে বলল-দাদা বাবু সকাল মলা মাছ এনেছে।
– তোর দাদা বাবু খেয়ে গেছে তো।
– হ্যাঁ।
– ডিম আছে।
– আছে।
– তাড়াতাড়ি দু’টো ডিম ভেজে দে।
মেয়েটি দিচ্ছি বলে রান্না ঘরে পা বাড়ায়। শো-কেসের উপর বাঁধানো হাফ সাইজের বড় একটা ছবি। একজন সংগীতা অন্যজন স্বামী। তিমির জিজ্ঞাসা করল-ইনি বুঝি তোর স্বামী। বেশ হ্যান্ডসামতো।
– হ্যাঁ। তুই বোস। আমি কাপড়টা ছেড়ে আসি।
– সংসারটা বেশ সুন্দর ভাবে সাজিয়েছিস কিন্তু।
সংগীতা আলনা থেকে এক গোছা কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। দেওয়ালে আরও একটা ফুল ছবি। দাঁড়ানো। পেছনের দৃশ্যটা গাছ গাছরায় ভরা। কোন স্টুডিওতে তুলেছে। সংগীতার খুব কাছাকাছি মুখ নিয়ে দাড়িয়ে আছে স্বামী। সম্ভবত: বিয়ের আগে তোলা। সংগীতাকে খুব লজ্জিত দেখাচ্ছে। তাছাড়া শাঁখা সিঁদুরও নেয়। সংকোচ বোধ থেকে সংগীতাকে আরও সুন্দর লাগছে। হয়তো ছবি তুলতে চায়নি। কিংবা বাধ্য হয়ে তুলতে হয়েছে।

দু’কামড়ার ঘর। রান্নাঘরে যেটুকু জায়গা তাতে ডাইনিং টেবিল বসানোর জায়গা নেয়। সংসারে তিনজন মাত্র মানুষ। খাওয়ার পালাটা কোন ভাবে সেরে নেয়।
বিয়ের পর সংগীতার শ্যামলা রংটা কিছুটা উজ্জল হয়েছে। রংটা কালো বলে স্কুল জীবনে সবাই কালী বলে ডাকতো সংগীতাকে। তাতে রাগ না করলেও মনে মনে খুব কষ্ট পেত। কালো মেয়েদের একটা মনোঃকষ্ট থাকে। এখন আর শ্যামলা মনে হয় না। বলতে হয় উজ্জল শ্যামলা। কালো মেয়েদের চোখ নাকি খুব সুন্দর হয়। সংগীতার সুন্দরের মধ্যে চোখ দুটো আর দেহের অপূর্ব গড়ন। মায়াবী চেহারা। ফ্লোরে পিড়ি পেতে খেতে বসেছে দু’জনেই। সংগীতা নিজেই দু’টো থালে করে ভাত বেড়ে নিয়ে এসেছে। তিমির হাত ধুয়েই জিজ্ঞাসা করল-তোর স্বামীর নামটা তো বললি না।
– অমিত। অমিত কুমার সেন।
– বেশ সুন্দর নাম তো। কি করেন।
– একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে এক্সিকিউটিভ হিসাবে আছে।
– তেমন ভালো কিছু নেই, কিছু মনে করিস না। সংগীতা ভাত মুখে দিয়ে বলল।
– সামাজিকতা রক্ষা করছিস।
– আরে না। এমনি বললাম।
– তবে মনে করার কি আছে। আমরা ব্যাচেলর মানুষ, বুঝলি। শুধু ডিম সেদ্ধ আর ভাত হলেই হয়ে যায়।
– বিয়ে করছিস না কেন।
– খাওয়াবো কি। তোর স্বামীকে বলে একটা চাকরীর ব্যবস্থা করে দিতে বল না।
এ কথা বলতে যেন তিমিরের আর কোন লজ্জা নেয়। মুখস্থ হয়ে গেছে। আবার ভাবল, এভাবে বলাটা ঠিক হয়নি। অথচ যেটা সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন সেটা না বললেও নয়। তারপর কথার পাশ কাটিয়ে বলল-
– আরে বাদ দে তো ওসব। তোর স্কুল জীবনের কথা মনে পরে। সেই যে ম্যাট্রিক পরীক্ষার সময় আমরা সবাই একসাথে ছিলাম। আমি আর গৌতম। আর তোরা আটজন মেয়ে। একটা ঘরে কেমন গাদাগাদি থাকতাম। কত হৈ চৈ। কত আনন্দ।
– তখন তো তুই এতটুকু ছিলি।
– বড় হলে কি আর ওভাবে এক ঘরে থাকতে পারতাম।
– কেন কি হতো। সংগীতা হাসলো।
– সেটা তখন বুঝা যেত। এখন তো আর কিছু বুঝানো সম্ভব নয়। আসলে তখন আমরা সবাই ছিলাম বন্ধু। সবার মধ্যে আন্তরিকতা ছিল। আমার মনে হচ্ছে আজও আমরা সেটা ভুলতে পারিনি।
– সত্যি পারি নি রে। সেই দিনগুলো কি ভোলা যায়।
কথায় কথায় খাওয়া শেষ হয়। তিমির হাত ধুয়ে বিছানায় বসল। সিগারেট জ্বালায়। আপত্তি করল সংগীতা। আমার কিন্তু এই জিনিষটা একদম পছন্দ নয়। ছেড়ে দিতে পারিস না। অমিত খুব খেত। বিয়ের দু’মাসের মাথায় অনেক কষ্টে ছাড়িয়েছি।
– ভালো করেছিস। তোর মত বউ পেলে আমিও ছেড়ে দেব।
– আমাদের ক্লাসের ফার্ষ্ট বয় অতনুকে তোর মনে আছে। জিজ্ঞাসা করল তিমির।
– হ্যাঁ। অনেকদিন দেখা হয় নাই। কোথায় আছে এখন।
– গ্রাজুয়েশন সিয়ে বাবার ব্যবসা দেখছে। ভালোই আছে। আসলে আমরা সবাই ভাবতাম ওর সাথে বুঝি তোর প্রেম ট্রেম আছে।
– বাদ দে ওসব। সংগীতা দীর্ঘশ্বাস ছাপতে চেষ্টা করল।
– রীতা, সুচন্দা, লাকী ওদের কি খবর।
– লাকীর এখনও বিয়ে হয়নি। এবার বাড়ী গিয়ে ওর সাথে দেখা হলো। একটা কেজি স্কুলে শিক্ষকতা করছে। সুচন্দা তো রীতিমত সংসারী। দুই সন্তানের মা। আর রীতা–সংগীতা থামল। কিছু একটা লুকানোর চেষ্টা করছে। মুখ ফুটে বলতে পারছে না। কিছুক্ষন আমতা আমতা করল। তিমির জিজ্ঞাসা করল-থেমে গেলি যে।
– না। এমনি। রীতার সাথে তোর দেখা হয়েছে।
– হয়েছিল। অনেকদিন আগে। আমি তো চিনতেই পারিনি।
– সংসারী না ব্যাচেলর।
– বলতে গেলে দু’টোই। ও কিভাবে যে এত বদলে গেল বুঝতে পারছি না। অথচ ক্লাসে কত শান্ত স্বভাবের ছিল। কারও সাথে কথাও বলত না।
তিমির সিগারেটের অর্ধাংশটা মেঝেতে ফেলে আবার কুড়িয়ে নেয়। বাইরে ফেলে দিয়ে বলল-তোর বর যদি আবার সন্দেহ করে। তারপর রীতা সম্মন্ধে কি যেন বলছিলি।
– ওর জীবনটা অন্য রকম হয়ে গেছে রে। শুনেছি হোটেলেও রাত কাটায়। বলল সংগীতা। তিমির অবাক হয়। এ যেন কানে শোনা অথচ বিশ্বাস করতে পারছে না। মান তুই বলছিস রীতাÑÑÑ তিমির থামে।
– অনেকটা তাই। আমিও জিজ্ঞাসা করেছিলাম।
– কি বললো।
– বললো এটায় আমার নিয়তি। জীবনে যা চেয়েছিলাম তাই যখন পাওয়া হলো না তখন আর নিজেকে ধরে রেখে লাভ কি। তাছাড়া যতদিন এ দেহের সোন্দর্য্য আছে ততদিন, তারপর একদিন নিজেই হারিয়ে যাবো। ওর কথা শুনে আমার ভীষন ঘৃণা হচ্ছিল। রীতা বুঝতে পেরে মৃদু হেসে বলেছিল-তোর খুব ঘৃনা হচ্ছে তাই না। এটাই স্বাভাবিক। তারপর বলল-চলি। তোদের সাথে আর কোনদিন যেন দেখা না হয়। সত্যি সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। সারারাত ঘুমাতে পারিনি। শুধু রীতার কথা ভেবেছি। অমিতকে বলেছি। ও বললো কিছু কিছু মানুষের জীবন এমনই হয়। যা কল্পনা করা যায় না। না পাওয়ার ব্যর্থতায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে যে ওখান থেকে ফেরানো যায় না।

তিমির চিত্রাপিতের মত শুনছিল। মনের সমস্ত কথা আটকা পরে আছে। ঘৃনা হলো নিজের উপর। আমাদের মত পুরুষরা রীতাকে ভোগ করছে। কি ভীবৎস সে দৃশ্য। রীতা নিজেকে ধরে রাখার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। তাও একজনের জন্য। যাকে সে ভালোবাসত। মনে পরে রীতার সাথে একবার দেখা হয়েছিল। বছর দু’য়েক আগে। রীতা অভিযোগ করে বলেছিল-তোদের পুরুষ জাতটাকে চেনা বড় দায়। তিমির বুঝতে পারেনি। হেসে বলেছিল-আমাদেরকে তো তোরা চিনতে পারিস না, কিন্তু তোদের এই মেয়ে জাতটাকে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাও চিনতে পারে না। তোদের মনটা এমনিই এক বিস্ময়। রীতা বাঁকা চোখে তীব্র ঘৃনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে বলল – চিনতে চেষ্টা করেছিস কখনও ?
তিমির কোন জবাব দেয়নি। পথ চলতে সামান্য ক’মিনিটের কথা বার্তা। তারপর থেকে আর দেখা হয়নি। সংগীতার মুখে রীতার কথা শুনে কেবলই মনে হচ্ছে রীতা শেষ প্রশ্নটা এভাবে করলো কেন। নাকি এই জীবন বেঁচে নেওয়ার পেছনে আরও কোন নিগুঢ় রহস্য লুকিয়ে আছে।

তিমির আর একটা সিগারেট হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ফ্যাল ফ্যাল করে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে শো কেসের উপর বাঁধানো ছবিটার দিকে। কি যেন বলতে গিয়েও বলতে পারল না। ভাবল রীতাও এভাবে সুখী হতে পারত। কিন্তু পারে নি। সুখ তো সবার কপালে সয় না। কোন উত্তর জানা নেয়। দু’পা সামনে এগিয়ে এসে বলল-আজ চলি রে। তোকে অনেক কস্ট করতে হলো।
– সে কি বলছিস। বোস। এক কাপ চা খেয়ে যা।
– না। ভালো লাগছে না। তোর স্বামীর সাথে দেখা হলে ভালো হতো। চলি।
– আচ্ছা, আবার আসবি কিন্তু। সংগীতা দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেয়।
তারপর থেকে আরও কয়েকবার যাওয়া হয়েছে সংগীতার বাসায়। কোন ফল হয়নি। আশা ছিল অমিত বাবু ইচ্ছা করলে একটা চাকরী দিতে পারে। আসলে অমিত বাবু যে তারই সমবয়সী বান্ধবীর স্বামী সে কথা তিমিরের মনেই ছিল না। কতটা ব্যাক্তিত্বহীন হলে এমনটা বলা যায়। সংগীতাও বলেছে অমিতকে। একটা চাকরীর জন্য। অমিত বলেছিল চেষ্টা করবে।
তিমির সে চেষ্টার মর্যদা রেখেছে। বার বার গিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছে। একসময় যখন বুঝতে পারল সংগীতাও কেমন যেন আর আগের মত বন্ধু বৎসল হতে পারছে না বরং তিমিরের অসহায়ত্বের উপর করুনার প্রচ্ছন্ন ছায়া ফেলছে, সেদিন তিমির মাথা নিচু করে বেরিয়ে এসেছিল। আসলে নিজের দুর্বলতা অন্যকে বুঝতে দেওয়াটা উচিত হয়নি। এই মুহুর্তে তিমিরের নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে।
চলবে———

১,৬৫৭ বার পড়া হয়েছে

লেখক সম্পর্কে জানুন |
একজন চাকরিজীবি। অবসরে লেখালেখি। সামাজিক দায়বদ্ধতাও আছে অনেকটা। তারই মধ্যে কিছু বিচ্ছিন্ন ভাবনার যোগফল এই প্রচেষ্টা। ভ্রমন, বই পড়া, গান শোনা প্রিয় শখগুলোর অন্যতম। আপনাদের ভালো লাগা, মন্দ লাগা, পরামর্শ, গঠনমূলক সমালোচনা সবই মন্তব্য হিসাবে পেতে ভালো লাগে। মন্তব্য পেলে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো অনেক বেশী।
সর্বমোট পোস্ট: ৭০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ৬৯১ টি
নিবন্ধন করেছেন: ২০১৩-০৫-২৮ ০৩:৪৬:৩৪ মিনিটে
banner

৪ টি মন্তব্য

  1. আমির হোসেন মন্তব্যে বলেছেন:

    আপনার এই পর্ব খুব ভাল লাগল।

  2. মিলন বনিক মন্তব্যে বলেছেন:

    অনেক ধন্যবাদ…একটা পর্বের চাইতে পুরো উপন্যাসের মানদন্ডটা নিয়ে রিভিউ আশার করবো…

  3. আমির হোসেন মন্তব্যে বলেছেন:

    পুরো উপন্যাস না পড়েতো উপন্যাসের মানদন্ড নিয়ে মন্তব্য করতে পারবো না।

  4. শাহ্‌ আলম শেখ শান্ত মন্তব্যে বলেছেন:

    এ পর্ব ভাল লাগল ।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করতে লগিন করুন.

go_top