পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন ও একটি টকশো ।
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1427বার পড়া হয়েছে।
আপনি যত বড় জ্ঞানী অথবা বেকুবই হয়ে থাকেন না কেন, ততক্ষন পর্যন্ত আপনি মুক্তমনা অসাম্প্রদায়িক মানুষ হতে পারবেন না, যতক্ষন না আপনি ধর্মের, বিশেষত ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু বলতে বা লিখতে পারবেন । একবার জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে ঠোঁটের ফাঁক গলিয়া ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে দু’চার কথা বলিলেন’তো কেল্লাফতে । আপনার মুক্তমনার বিকাশ রড সিমেন্ট দিয়াও ঠেকানো যাবে না । শিক্ষা সংস্কৃতি, ক্রিয়া, জ্ঞান বিজ্ঞান, রাজনীতি, সমাজ কিংবা কোথাও আপনার ন্যূনতম পদধূলি থাকুক আর না থাকুক, মুক্তমনা অসাম্প্রদায়িক পৃথিবীতে আপনার প্রচার কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না । আপনি মোটামুটি এক লাফে মহাজ্ঞানীর কাতারে চলে যাবেন ।
সেদিন কোন এক বাংলা চ্যানেলে এবারের পাঠ্যপুস্তকে ভুল আর পরিবর্তন নিয়ে একখানা টকশো শুনলাম । অবশ্য সম্পূর্ন টকশোতে ভুল বিষয়ক ব্যাপারটা আপনি খুব একটা খুঁজে পাবেন না । যত আলোচনা সমালোচনা সব পরিবর্তন নিয়ে । সবচেয়ে আশ্চর্য হবেন এই টকশোতে অংশগ্রহনকারীদের চেয়ে উপস্হাপকের উত্তেজনা দেখে । আর সেই উত্তেজনা শুধুমাত্র হেফাজতের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তির উপরই । অবশ্য টকশো’র যা বিষয়বস্তু (শিক্ষার হেফাজত) তাতে তার লাফালাফি নেহায়েত অগ্রাহ্য করার মতো নয় । শুধুমাত্র আসনখানা পরিবর্তন করলেই ব্যাপারখানা জমত । একজন মুক্তমনা উপস্হাপকের (!) এমন আচরন সত্যি ভিমরী খাওয়ার মতো ।
এই টকশো দেখে আমি যা শিখলাম তা হলো, নব্বই শতাংশ মুসলমান যখন রামায়ন আর রাঁচী ভ্রমন পড়ে তখন তা মুক্তমনা অসাম্প্রদায়িক চিন্তাচেতনাকে এগিয়ে নেয় । আর বাকী দশ শতাংশ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা যখন চার খলিফার জীবন কাহিনী আর মুসলিম রাষ্ট্র তুরস্ক ভ্রমন পড়ে তখন তা মৌলবাদী জঙ্গি চিন্তাধারাকে প্রশ্রয় দেয় । এমনটা না হলে ২০১০ সালে পাঠ্যপুস্তকে যখন পরিবর্তন পরিমার্জন আনা হলো তখন পঁচাশি অথবা একশত পঁচাশি মুক্তমনা অসাম্প্রদায়িক (!) ব্যক্তিবর্গের বিবৃতি আমরা দেখতে পারতাম । কিন্তু আমরা তা দেখতে পাইনি । সুতরাং মুক্তমনা অসাম্প্রদায়িক হতে গেলে লেখার শুরুতে যা বলেছিলাম আপনাকে সেখানেই ফিরে যেতে হবে ।
টকশোতে হেফাজতের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তি অবশ্য ভিন্ন ধর্মালম্বীদের জন্য বিকল্প উপায়ের কথা বলেছেন । পাশাপশি কিঞ্চিৎ সরকারের দালালি করতে গিয়ে সরকারকে জনগনের নির্বাচিত সরকার বলেছেন ।যা চূড়ান্ত মিথ্যা এবং অসত্য । তিনি তাদের দাবী দাওয়ার বিষয়ে সরাসরি কিছুই স্বীকার করেননি, তবে সরকারকে ধন্যবাদ দিতে ভুল করেননি । কিন্তু টকশোতে উপস্হিত মুক্তমনা অসাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর প্রতিনিধি এ বিষয়ে কোন বক্তব্য না রেখে রামায়ন, রাঁচী আর পাঁঠাবলীর অসাম্প্রদায়িক বিদ্যা বিতরন নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন । উপস্হিত সরকারি প্রতিনিধি কি বলেছেন বা কি বুঝাতে চেয়েছেন তা ঠাহর করা মুশকিল ।
এই দেশের মানুষ সবছিুকেই ফ্যাশন হিসেবে নিতে শুরু করেছে । তারা পরের দেখাদেখি কুকুর পোষবে, কিন্তু নিজের বুদ্ধিতে ছাগল পালবে না । তাই এদের নিয়ে আমার কিছু বলার নেই । শুধু একটা প্রশ্ন-মুক্তমনা অসাম্প্রদায়িকতাকে ফ্যাশন হিসেবে নিয়েছেন, নেন, শুধুমাত্র একটা কাজ করেন । ভারতের কোন পাঠ্যপুস্তকে হিন্দু ধর্মের কোন একটি পৃষ্ঠা বাদ দিয়ে মুসলমান ধর্মের একটি পৃষ্ঠা সংযোজন করতে বলুন । এবং পারলে করে দেখান । আপনাদের অসাম্প্রদায়িকতার দৌড় আমরা একটু দেখতে চাই । অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনায় সীমান্ত, কাঁটাতার কিংবা ভিন্ন রাষ্ট্রের স্হান নেই । তো শুধুমাত্র বাংলাদেশ নিয়ে পড়ে আছেন কেন? যদি না পারেন, প্লিজ এসব ব্যবসা বন্ধ করেন । আয়নায় তাকান । আপনার আর অন্ধ ধর্ম বিশ্বাসী, জঙ্গিদের মধ্যে কোন পার্থক্যে দেখতে পাবেন না । হ্যাঁ পার্থক্যে একটা আছে । তা হলো প্রকাশের । এখানেও সত্যটা এই, যার যেটা সুবিধা তারা সেটাই বেছে নিয়েছেন বৈকি অন্য কিছু নয় ।
……………….নিঃশব্দ নাগরিক ।
১,৪০২ বার পড়া হয়েছে