পিডিএফ ও একজন তরফদার ভাই
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1386বার পড়া হয়েছে।
পিডিএফ ও একজন তরফদার ভাই
***************************
আধুনিক মানুষের তথ্য জানিবার জন্য এখন একটা ক্লিকই যথেষ্ঠ।কারন গুগুল মামাকে কিছু জিঙ্গেস করলেই হল। উত্তর তিনি একটা দিবেনই দিবে।
আর এই উত্তরা উত্তর আধুনিক যুগে বই পড়ার জন্যও তথাকথিত প্রমথ বাবুর লিখনিতে উল্লেখিত কোন লাইব্রেরিরিতে আমাদের জুবাদের যেতেও হয়না। তাদের শুধু চাই পড়ার ইচ্ছে আর চাই শুধু একটা ক্লিক।
বেশ, হাজির সামনে বই।
তবে এই বই কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির পিডিএফ () বই।
তবে এই পিডিএফ বই নিয়ে আবার পোলাপানদের মাঝে বেশ কেচাল। আর এই কেচাল চলে কাগজের বই বনাম পিডিএপ বই। দুই পক্ষের কর্মী সমর্থক কম নহে। দুই দলের দুই পক্ষের কাহারো যুক্তিও আবার ফেলিয়াদেবারো না।
ফেসবুকে বই পড়ুয়া/পোকা/লাভারস/পিডিএফ/—— এমন নানা পেজে বই যিনারা পড়িয়া থাকেন তাঁরা নিয়মিত দুদিন একদিন পর পর ঘর গরম করার মত করে পেজ গরম করতে এই দুই(পিডিএফ/কাগজের—বই) কে নিয়ে চরম গরম পোষ্ট পোষ্টাইতে থেকেন।
সেদিন তো এক ভাই এই দুই বই এর সুবিধা অসুবিধা নিয়ে পাশা পাশী ঘর করে দুই প্রস্থ লিখিয়া ফেলিলেন। আর যাস কই বাবা।
দুই পক্ষের সমর্থক গুষ্ঠি কমেন্ট করিয়ে নিজ নিজ যুক্তি পেশ করিয়া মারামারি লাগিবার উপক্রম।বাঁচোয়া এই যাহা! এহা অনলাইনের যুক্তি তর্ক।
সামনা সামনি হইলে দুই চারজনকে যে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তি করিতে হত তাহা চক্ষু মুদিয়া হলপ করিয়া বলা যাইত।
এতক্ষণ বাজে পেচিয়া ঘটনা হতে অনেক দূর আসিয়া পড়েছে। এবার মূল ঘটনায় আসিয়া পড়ি।
ঘটনার মূলে আছে আমার এই পিডিএফ সংগ্রহের অভিযান।আমার সংগ্রহে হাজার চারেক কাগজের বই থাকলেও ছিল না কোন পিডিএফ বই। তো ফেসবুকের পেজগুলিতে ভাইব্রেদার ও আপিসিস্টাররা আমার না পড়া এবং পড়া বই এর পিডিএফ লিংক দেন, দেন বই এর রিভিউ। এগুলি পড়ে ও দেখে মনে আগ্রহ জন্মাল দেখিনা দুই একটা পিডিএফ পড়িয়া। সেই থেকে গেলাম প্রেমে পড়িয়া। আরে না না কোন ললনার প্রেমে না, প্রেম পিডিএফ বই এর সঙ্গে।
সেই থেকে আজ অব্ধি নানা লেখকের নানা বই এর পিডিএফ নামানো ও সংগ্রহ পূর্ণ উদ্দামে চলছে।
এরি মাঝে কিছু অতিমানবীয় ও ভাল মানুষের সংস্পর্শে এসে নতুন মাত্রা পেল এই পিডিএফ। কিছু ভাই বিভিন্ন সময় জানাল তাদের কাছে এত পরিমাণ (১০০ জিবি—অতিমানব, ৫৮ জিবি—তরফদার ভাই) পিডিএফ বই আছে।
আর যায় কোথায় এদের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করলাম।তাঁরা মনের আনন্দে তা আমাকে দিতে চাহিলেন। তবে তার আগে আরও কয়েকজন ভায়ের কাছ হতে অল্প স্বল্প পরিমাণ বই সংগ্রহ করিয়া আনিলাম(চিনচু, সুমন ভাই তাদের মধ্যে অন্যতম)।
তো বড় দুই বসদের মাঝে অতিমানব থাকেন সুদূর কুষ্টিয়ায়। তাই তার কাছ হতে সংগ্রহ করা একটু কঠিন। তবে তার কাছ হতে কথা আদায় করিলাম অচিরেই লালনের পূর্ণ ভূমিতে আমার পদার্পণ ঘটিয়া যাইবে।
এ দিকে অনেক কষ্টে না খুব সহজেই আমাদের প্রিয় তরফদার ভাইকে রাজি করিয়া ফেলিলাম তার সঙ্গে আমি দেখা করিতে চাই। তিনি বেশ কিছু সময় দিলেন কিন্তু সেই সময় মত আবার আমি যেতে পারছি না। তাই যাত্রা স্থগিত।
অবশেষে ১৪/১২/১৪ইং তারিখ সন্ধ্যা ৭ টাই তিনি সময় দিলেন।আমি নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হতে ৩ ঘণ্টা আগে বাড়ি হতে বের হলাম। কোন রকম রিক্স নিতেই চাইলাম না।
নির্দিষ্ট সময়ের ১ ঘণ্টা ২৪ মিনিট আগে নির্দিষ্ট জায়গায় উপস্থিতি জানান দিলাম। তিনি বললেন আসছি।
তিনি এলেন পাক্কা ২৯ মিনিট পর।
সালাম আদান প্রদানের পর তিনি আমাকে নিয়ে তার বাসার দিকে চলিলেন। আমি ভিতর ভিতর উত্তেজনায় ঘেমে যাচ্ছি। আর কিছুক্ষণ পর আমার হাতে আসছে ৫৮ জিবি বই।
অবশেষে তার রুমে পৌছালাম। মাইরে—— বিশাল রুম মাশাল্লাহ। চারিদিকে বই আর বই, এ যে বই এর সমুদ্র( যদিও আমার স্টক কম না)।
তিনি তার বই এর স্টক ঘুরিয়ে দেখিয়ে আমাকে বললেন— এই আমার বই। মুখে কি এক তৃপ্তির হাসি।
এবার আমি তার জন্মদিনের একটা ছোট্ট গিফট একটা হিমু উপহার দিলাম। জানি এই ছোট্ট উপহার তার কাছে কিছুই নই।
কিছু সময় চাহিয়া তিনি তাহার অন্দর মহলে ফ্রেস হতে চলিয়া গেলেন। আমি তার সংগ্রহ দেখিতে লাগিলাম।
কিছু পর তিনি কিং সাইজের ট্রেতে করে বিস্কুট আর চানাচুর নিয়ে হাজির। আমি হায় হায় করিয়া উঠিলাম—করেন কি তরফদার ভাই।
তাকে দেখারন পর হতেই কেন যেন মনে হয়নি তার সঙ্গে আমার আগে কক্ষনো দেখা হয় নি। কেন যেন মনে হয়েছে অনেক দিনের পরিচয়। এটিই মনে হয় ভাল মানুষ গুলির প্রতি এক ধরনের মানসিক আবেগ।
তার কিং সাইজের টেবিলে কিং সাইজের এলিডি মনিটর এর সামনে চেয়ার নিয়ে বসিয়া ট্রে দেখিয়া বলিলেন শুরু করুন।
শুরু করে , তিনি এবার আমার এক টেরাবাইট লাগিয়া বই কপি মেরে দিলেন। শুরু হল বই আসা।
একটু পর খালাম্মা( উনার মা) চা দিয়ে গেলেন। চায়ে চুমুক দিয়েই ভাললাগায় মনটা ভরে উঠল।মাদের চায়ের হাত মনে হয় এম্নিই হয়।
এর পর পেলাম তার তার কাছ হতে বড় চমক। তিনি আমাকে উপহার দিলেন ** আমাজনিয়া**
উপহার পেয়ে আমি বাকরুদ্ধ।তাকে তখন ধন্যবাদও জানাতে পারিনি।তাই এখন— ধন্যবাদ তরফদার ভাই।
বই যাওয়া শেষ হতে হতে নানা রকম কথা বার্তার সঙ্গে নানা আলোচনা উঠিয়ে আসিল। বই কপি শেষ হতে ৭.৫৫ বেজে গেল। তাকে বললাম এবার তবে উঠি তিনি মৃদু ধমক মেরে বললেন—অই মিয়া যাবেন কই। আজ থেকে যান।
আমি প্রস্তাব পেয়ে হেসে উঠলাম। বললাম না ভাই যান বাড়ি যাই।
তিনি আমার কথা কানেই তুলিলেন না। মানে আমি কট খেয়ে গেলেম রাতের জন্য। তবে এই কট খাওয়া আনন্দের। একজন ভাল মানুষের সান্নিন্ধ্য আরও বেশি করে পাওয়া।
এর পর তিনি তার ২০০ জিবি সিনেমা কপি মেরে দিলেন আমার হারডিস্কে। চলতে থাকল আড্ডাবাজি ।
রাতে খাবার পর তিনি তার অনলাইন লাইব্রেরীর—কালের খেয়ায় আসা বই এর অর্ডার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। আমি এক ফাঁকে এক পিক নিয়ে ফেসবুকে ছেড়ে দিলাম। জানিয়ে দিলাম আজ সারা রাত আছি তরফদার ভায়ের সঙ্গে।
আড্ডা দিতে দিতে দিতে ঘড়িতে দেখি রাত ২টা।
তরফদার ভাই বললেন চলেন শুয়ে পড়ি।আমিও নিমরাজি করার কোন কারন দেখিলাম না।
কম্বলের নিচে শুয়ে টুকটাক কথা চলিতে চলিতে তার মৃদু নাসিকা গর্জন শুনিয়া বুজিলাম তিনি গভীর নিদ্রায় নিমগ্ন।
মৃদু নাসিকা গর্জনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে আমিও গভির ঘুমে———–।
১,৩৫৯ বার পড়া হয়েছে
সহমত
ভাল পোষ্ট।
অনেক ধন্যবাদ , গোলাম মাওলা আকাশ ভাই। বর্তমানে পিডিএফ বইয়ের গুরুত্ব অনেক।
উফ অসাধারণ সময় কাটিয়েছেন। এমন আড্ডাবাজ আমিও কিন্তু আড্ডা আর দেয়া হয় না
খুব ভাল লাগল আপনাদের আড্ডা গল্প।