পোড়া গন্ধে ঘুম আসে না……………
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1862বার পড়া হয়েছে।
মামনি মামনি চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে গেল।ধাতস্থ হতে কয়েক মুহূর্ত সময় লাগল তারপর পরিমরি করে ছুটলাম মামার ঘরে। মামা বেশ কিছুদিন অসুস্থ অবস্থায় আমাদের বাসায় ছিলেন। যেহেতু মামি নেই আর উনার ছেলেটাও স্কুল পড়ুয়া তাই দেখাশোনার কেউ ছিল না।মামার ঘরে পৌঁছে গেছে ততখনে সেলিনা, বাবা সহ সবাই।মামা বললেন, দেখ কি জানি পুড়ছে ।আগুন লাগলো কিনা।নাক কুচকে বুঝার চেষ্টা করলাম বিষয়টা কি।আসলেই তীব্র একটা পোড়া গন্ধ ভেসে আসছে।কিন্তু রান্নাঘর ,মিটার এর ঘর, ইলেকট্রিক সুইচ বোর্ড সব জায়গা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও বাসায় কিছু পেলাম না।
এরপর বেশ কয়েক রাত একই ঘটনার পুনরাবৃতি ঘটলো। আমরা সবাই বেশ অবাক এভাবে মাঝরাতে কোথা থেকে পোড়া গন্ধ আসে? গল্পে ও পড়েছি আবার নানির কাছেও শুনেছি অশরীরী কোন কিছুর উপস্থিতিতে নাকি গন্ধ বা ঘ্রান ছড়ায় , কিন্তু সেখানেও ঠিক মিল খাচ্ছিলও না কারন জীন এর উপস্থিতিতে নাকি ফুলের ঘ্রান আসে (তথ্য সূত্রঃ আমার নানি) আর ভুত পেত্নি হলে পচা মাছ বা বিষ্ঠার গন্ধ (তথ্য সূত্রঃ আমার নানি, ঠাকুরমার ঝুলি ও আ্যমিটিভিল হরর)। এমনিতে আমি অনেক সাহসী কিন্তু আমার সাহসের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে।দিনের বেলা ভুত প্রেত এসব কুসংস্কারে বিশ্বাস না করলেও রাতের বেলা একটু একটু করে কুসংস্কার আমায় আচ্ছন্ন করতে থাকে। যাই হোক কোনরকমে দোয়া দরুদ পরে সেই রাত টা পার করলাম।
সকাল সকাল গেলাম একতালার হুমায়ুন ভাবির এর কাছে। উনাকে জিজ্ঞেস করলাম উনারাও এমন পোড়া গন্ধ পান কিনা। তখন ভাবি ও ভাই আমাকে জানালেন এইটা আশেপাশের বাড়িতে অবস্থিত কারখানার গন্ধ। তার আগে বলে নেই আমার বাস ঢাকা দক্ষিনে। এক সময় আমি বন্ধুদের মজা করে বলতাম যে আমার বাড়ি এমন এক জায়গায় যে আহত হলে হাসপাতাল কাছে আর নিহত হলে গোরস্থান কাছে। আমাদের বাসা থেকে মাত্র দুই মিনিটের হা্টা পথ এ ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড একটু এগুলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ। সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা আর বেগম বদরুন্নেসা কলেজ ও এখানেই।এখানে ঢাকা মেডিক্যাল, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এর আবাসিক হল ও আছে। কিন্তু এই জায়গাটা বর্তমানে দিন দিন মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে ।
অপরিকল্পিত ও নিয়ম বহির্ভূত ভাবে বাড়ি ঘর নির্মাণ আর কলকারখানা সব মিলে এক যাচ্ছেতাই অবস্থা । এখানে এমন অনেক বাড়ি আছে যা বাইরে থেকে দেখে বুঝার উপায় নেই যে ভিতরে কলকারখানা চলছে । আমি কলকারখানার বিপক্ষে নই । কারন অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্পায়নের গুরুত্ব অপরিসিম। কিন্তু কলকারখানা স্থাপন করতে হবে তাদের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে । আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যাবহার কতটুকু নিরাপদ তা ভেবে দেখতে হবে। নিমতলির ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনার কথা নিশ্চয় আমরা ভুলে যাইনি ? ২০১০ সালের ৩রা জুন এর সেই ভয়াবহ অগ্নিকান্ড তাৎক্ষনিক ভাবে কেড়ে নিয়েছিল একশ সতেরটি তাজা প্রান। পোড়া শরীর নিয়ে হাস পাতালে ভর্তি হয়েছিল দেড়শ জনের বেশি। যাদের অনেকেই পরবর্তীতে মৃত্যুবরণ করে। এই দুর্ঘটনা অনেক কেই করেছে এতিম,বিকলাঙ্গ আর সহায় সম্বলহীন। বিলাসবহুল বাড়ির ভিতরেই আছে জুতার কারখানা । আর আমরা সবাই জানি চামড়া পাকা করতে যে রাসায়নিক পদার্থ ব্যাবহৃত হয় তা হল টলুইন ডাই আসাসিনেট।এই দ্রব্য চরম ভাবে দাহ্য। যার কারনে নিমতলির ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনার সময় মুহূর্তে ছাই হয়ে গেছে কত প্রান। আবাসিক এলাকায় এসব কারখানার স্থাপন কতটা নিরাপদ তা আমরা নিমতলির দুর্ঘটনায় দেখেছি ।তারপরও এ বিষয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই।এখানে আর এক আপদ হলও প্লাস্টিকের কারখানা বা গুদাম।
গত ৮/৪/২০১৪ পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জ এর মাঠের কাছে এরুপ এক কারখানায় আগুন লাগে। মালিকের ভাষ্য অনুযায়ী ক্ষতি হয় আড়াই কোটি টাকার সম্পদ। প্ল্যাস্টিকের পণ্য তৈরির কাঁচামাল আর অন্যান্য দাহ্য পদার্থের উপস্থিতিতে মুহূর্তেই আগুন ভয়াবহ রূপ ধারন করে এবং আশেপাশে তৈরি হয় এক ভিতিকর পরিবেশ। তেজতুরি বাজারের অগ্নিকান্ডে তো এখন পর্যন্ত পাঁচজন মারাই গেছে আর চিকিৎসকের মতে আর চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তারপরও থেমে নেই ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় এসব কারখানা আর দোকান স্থাপন। পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে এসব কারখানা।আর ভয়াবহ ভাবে দুষিত করছে বাতাসকেও। বায়ু দূষণের কুফল হিসাবে ছড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের অসুখ ।বিশেষ করে চামড়ার ক্যান্সার । জানিনা আর কতগুলো দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটলে কতৃ্পক্ষের টনক নড়বে।আমি আমাদের বাসার সবাইকে প্রতিদিন স্মরণ করিয়ে দেই যদি আশেপাশে কোথাও আগুন লাগে তাহলে কিভাবে তারা নিচে নামবে বাড়ির বা জিনিষপত্রের মায়া না করে।আগে মামা কে নিয়ে চিন্তা করতাম যেহেতু তিনি অসুস্থ মানুষ, এখন আর সেই চিন্তা নেই কারন মামা আমার চলে গেছেন না ফেরার দেশে।আর যারা আছে তাদের নিয়েই আমার ভয়।দিন দিন গন্ধ আর শব্দের মাত্রা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। মনে হয় যে কোন দিন ঘটে যেতে পারে আরও একটি ভয়াবহ কোন দুর্ঘটনা । এখনও মাঝে মাঝেই পোড়া গন্ধে ঘুম ভেঙ্গে যায় । আর ভাবি কিছুই কি করার নেই আমাদের?
১,৮২৩ বার পড়া হয়েছে
আসলেই মানা হচ্ছে না আগুন নিয়ন্ত্রণ আইন, নিমতলির ঘটনা বা অহরহ বাড়িতে ঘটে যাওয়া এই সব ঘটনাই শুধু দরকার সচেতনতা।
ধন্যবাদ মন্তব্বের জন্য ।সচেতনতা আর আইনের যথাযথ প্রয়োগ এই দুইটাই দরকার
বিষয়টা খুব গুরুতর সমস্যা আমাদের দেশের জন্য। আবাসিক এলাকা গুলোতে ফ্যাক্টরী স্থাপন। কারখানার স্থাপনের নিয়ম কানুন না মেনে যেনতেন ভাবে এ ধরনের বিপদজনক কারখানা আবাসিক এলাাকায় স্থাপন করা উচিৎ নয়। ধন্যবাদ।
আমি আএ আপনি বুঝি কিন্তু প্রশাসন যে কেন বুঝে না তাই বুঝি না । ধন্যবাদ ভাই
েআল্লাহ জানে এসব কেন প্রশাসন দেখে না। কবে যে সুস্থ সমাজ গঠন হবে।
সুন্দর লিখেছ আপি ভাল লাগল
দেখে কিন্তু কিছু করে না