Today 23 Nov 2024
banner
নোটিশ
ব্লগিং করুন আর জিতে নিন ঢাকা-কক্সবাজার রুটের রিটার্ন বিমান টিকেট! প্রত্যেক প্রদায়কই এটি জিতে নিতে পারেন। আরও আছে সম্মানী ও ক্রেস্ট!
banner

লঞ্চ দুর্ঘটনায় ঝরে যাচ্ছে শত প্রাণ

লিখেছেন: আমির ইশতিয়াক | তারিখ: ০৪/০৫/২০১৪

এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1544বার পড়া হয়েছে।

am-v-shathil52665

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটেছে। নৌ-নিরাপত্তা নিয়ে কারো কোন উদ্বেগ নেই। একের পর এক শোচনীয় লঞ্চ দুর্ঘটনায় মায়ের বুক খালি হচ্ছে। স্ত্রী হারাচ্ছে পিতাকে, ভাই হারাচ্ছে বোনকে। ডাকঢোল পিটিয়ে নৌ-মন্ত্রণালয়ে ‘নৌ-দুর্ঘটনা প্রতিরোধ প্রকল্প’ ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়নি। একটি দুর্ঘটনা ঘটলেই নৌ-মন্ত্রণালয়সহ প্রশাসন জেগে উঠে। মিটিং মিছিল হয়। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তারপর কিছুদিন চলে গেলেই আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এ ব্যাপারে তাদের আর কোন মাথা ব্যথা নেই। প্রত্যেকটি লঞ্চ দুর্ঘটনার পর নৌ- পরিবহন মন্ত্রী ত্রুটিপূর্ণ নৌযানগুলোর বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। কিন্তু বাস্তবে এ হুশিয়ারি উচ্চারণ কর্তৃপক্ষের কানে প্রবেশ করে না। ফলে বার বার লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। মালিক ও চালকদের গাফিলতির কারণে প্রতি বছর বেশ কয়েকটি লঞ্চ দুর্ঘটনায় শত শত লোকের করুণ মৃত্যু আমাদেরকে অসহায়দের মত চেয়ে দেখতে হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নৌযান চালনার নির্ধারিত নীতিমালা মেনে না চলাই এসব ট্রাজেডির মূল কারণ।

গতকাল শনিবার পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার গলাচিপা নদীতে এমভি শাথিল-১ নামে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ প্রায় ১০০জন যাত্রী নিয়ে ডুবে যায়। এতে এ পর্যন্ত ১৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জানি না আরো কত লাশ এখান থেকে উদ্ধার হয়। কলাগাছিয়া লঞ্চ ঘাটের কাছে এক কিলোমিটার দক্ষিণে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা জানান, বেলা সোয়া দুইটার দিকে লঞ্চটি কালবৈশাখীর কবলে পড়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই লঞ্চটি ডুবে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁদের নদী থেকে উদ্ধার করেন। লঞ্চটি উদ্ধারের জন্য উদ্ধারকারী জাহাজ এমভি রুস্তম বরিশাল থেকে গলাচিপার উদ্দেশ্যে রওয়া দেয় কিন্তু এখনও দুর্ঘটনাস্থলে জাহাজটি পৌঁছেনি। এই হচ্ছে আমাদের দেশের উদ্ধার তৎপরতা।

আজ থেকে দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর পূর্বে অর্থাৎ ২০০৫ সালে ১৫ মে রোববার এই পটুয়াখী জেলার গলাচিপার উপজেলার চরকাজল এলাকার বুড়া গৌরঙ্গ নদীতে বেলা ১১টায় দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে ‘প্রিন্স অব পটুয়াখালী’ নামের একটি লঞ্চ ডুবে যায়। ভোর পাঁচটায় পটুয়াখালী লঞ্চ টার্মিনাল থেকে চরমন্তোজের উদ্দশ্যে ছেড়ে যায় এ লঞ্চটি। চরকাজল ঘাট থেকে ৫০০ দূরে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে লঞ্চটি বুড়া গৌরাঙ্গ নদীতে ঢেউয়ের তোড়ে ডুবে যায়। বেশ কিছু যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও অধিকাংশ যাত্রীর করুণ মৃত্যু ঘটে। বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা জানান, লঞ্চটিতে জীবন রক্ষার কোন সরঞ্জামাদি ছিল না। উদ্ধারকারী জাহাজ ‘হামলা এসে অবশেষে লঞ্চটি ও ৮৪টি লাশ উদ্ধার করে। আরো অসংখ্য লাশ নদীতে ভেসে গেছে। জানা গেছে এ লঞ্চটি এর আগেও ৩ বার দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে ডুবে যায়। এটি চতুর্থ বারের মতো দুর্ঘটনার কবলে পড়ে নদীতে তলিয়ে যায়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে ১৯৮২ সালে এই লঞ্চটি নির্মাণের পর ১৯৮৯ সালে এটি পটুয়াখালী সদর উপজেলার লোহালিয়া নদীতে ডুবে যায়। তারপর ১৯৯৬ সালে এটি মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদীতে এবং একই বছরে পটুয়াখালী লঞ্চ টার্মিনালের কাছে নিমজ্জিত হয়।

প্রতি বছরই লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার পর এটিকে উদ্ধারকারী জাহাজের মাধ্যমে উদ্ধার করে কোন প্রকার সংস্কার ছাড়াই বিভিন্ন রুটে চালানো হয়। এই ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চটি কিভাবে নৌযান রুট পারমিট পেয়ে চলাচল করছিল। এ প্রশ্নের জবাব নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়েল কর্মকর্তারা দেবেন কি?

‘প্রিন্স অব পটুয়াখালী’ ডুবার মাত্র দু’দিন মাথায় একই বছরে ১৭ মে মঙ্গলবার এমভি রায়পুরা লঞ্চটি নটাখোলা থেকে আরিচার পথে ছেড়ে আসা যমুনার অশ্বয়পুর নামক স্থানে তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে বিকেল ৪টায় ডুবে যায়। এটিও অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে ডুবে যায়। উদ্ধারকারী জাহাজ ‘রুস্তম’ টানা ছয়দিন চেষ্টা করে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়ে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। ছয়দিদেনর চেষ্টায় মাত্র ৫৫টি লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। আরো শত শত লাশ লঞ্চের ভেতরে রয়েছে বলে ডুবুরিরা জানান। লাশের ওজন ও লঞ্চের ভেতরে পলি জমে যাওয়ায় উদ্ধারকারী জাহাজ ‘রুস্তমের’ পক্ষে লঞ্চটি টেনে তোলা সম্ভব হয়নি।

জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে আরিচায় নিমজ্জিত একটি লঞ্চ উদ্ধার হয়নি। এসব ছোট লঞ্চগুলোকে উদ্ধার না করার কারণ হিসেবে দেখা যায় উদ্ধারকারী জাহাজ ‘হামজা’ ১৯৬৩ সালে বাংলাদেশে আনা হয়। তখন বলা হয় ২৫ বছর পর তা অকেজো হয়ে যাবে। সেই মোতাবেক ১৯৮৮ সালেই তা বাতিল হয়ে গেছে। কিন্তু দীর্ঘ ২৬ বছর যাবত এই অকেজো জাহাজ দিয়েই উদ্ধার কাজ চালানো হচ্ছে। অপরদিকে ‘রুস্তম’ ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশে আনা হয়। তাও ছয় বছর পূর্বেই অকেজো হয়ে গেছে। তাছাড়া বর্তমানে নৌ- পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিআইডব্লিউটিএ‘র কাছে মাত্র ৪ জন ডুবুরি রয়েছে। ৪ জন ডুবুরির মাধ্যমে সারাদেশে লঞ্চ দুর্ঘটনার উদ্ধার কাজ চলে। আর এই অকেজো উদ্ধারকারী জাহাজ দুটো দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছতে সময় লাগে ৩২ ঘন্টা। তাই অচিরেই নতুন জাহাজ কেনার ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

একই বছর এমভি রায়পুরা ডুবার পর ১৯ মে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার মির্জাকালুর কাছে মেঘনায় ঝড়ের কবলে পড়ে যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবে যায়। ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ৭০ মন মালামাল ও যাত্রী নিয়ে একটি ট্রলার বোরহান উদ্দিন উপজেলার মির্জাকালু থেকে তজুমদ্দিন উপজেলার চরজহিরউদ্দীন অভিমুখে রওয়ানা হয়। ট্রলারটি মির্জাকালু থেকে ছেড়ে আসার কিছুক্ষণ পরে ডুবে যায়। এই ট্রলারটিও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া ছোট বড় অসংখ্য নৌ-দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে অথচ এ ব্যাপারে সরকার কোন পদক্ষেই নিচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা অনুসন্ধান করে দেখেছে ৫ কারণে নৌ-দুর্ঘটনা ঘটে।

১.     নৌযানের কাঠামোগত ও কারিগরি ত্রুটি ও দুর্বল।

২.     নৌযান চালনার দুর্বলতা ও ত্রুটি।

৩.     নৌযানের স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারী পদ্ধতিতে যাত্রী ও মাল বোঝাই।

৪.     ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বোঝাই।

৫.     ঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান নৌ-দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি হওয়ার প্রয়োজন যাতে এ ধরনের দুর্ঘটনা আর না ঘটে। আর উপরোক্ত কারণগুলো সনাক্ত করে নৌদুর্ঘটনা রোধে যাতে কার্যকরি পদক্ষেপ নেন। কারণ জাতি আর এ ধরনের অনাকাংখিত দুর্ঘটনার শিকার হয়ে চোখের পানি ফেলতে চায় না।

১,৬০১ বার পড়া হয়েছে

লেখক সম্পর্কে জানুন |
আমির ইশতিয়াক ১৯৮০ সালের ৩১ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার ধরাভাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা শরীফ হোসেন এবং মা আনোয়ারা বেগম এর বড় সন্তান তিনি। স্ত্রী ইয়াছমিন আমির। এক সন্তান আফরিন সুলতানা আনিকা। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন মায়ের কাছ থেকে। মা-ই তার প্রথম পাঠশালা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করেন মাদ্রাসা থেকে আর শেষ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। তিনি লেখালেখির প্রেরণা পেয়েছেন বই পড়ে। তিনি গল্প লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলেও সাহিত্যের সবগুলো শাখায় তাঁর বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। তাঁর বেশ কয়েকটি প্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো- এ জীবন শুধু তোমার জন্য ও প্রাণের প্রিয়তমা। তাছাড়া বেশ কিছু সম্মিলিত সংকলনেও তাঁর গল্প ছাপা হয়েছে। তিনি নিয়মিতভাবে বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকায় গল্প, কবিতা, ছড়া ও কলাম লিখে যাচ্ছেন। এছাড়া বিভিন্ন ব্লগে নিজের লেখা শেয়ার করছেন। তিনি লেখালেখি করে বেশ কয়েটি পুরস্কারও পেয়েছেন। তিনি প্রথমে আমির হোসেন নামে লিখতেন। বর্তমানে আমির ইশতিয়াক নামে লিখছেন। বর্তমানে তিনি নরসিংদীতে ব্যবসা করছেন। তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা একজন সফল লেখক হওয়া।
সর্বমোট পোস্ট: ২৪১ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ৪৭০৯ টি
নিবন্ধন করেছেন: ২০১৩-০৬-০৫ ০৭:৪৪:৩৯ মিনিটে
Visit আমির ইশতিয়াক Website.
banner

৫ টি মন্তব্য

  1. জসীম উদ্দীন মুহম্মদ মন্তব্যে বলেছেন:

    ভাল মানের লেখা !

  2. আরজু মূন মন্তব্যে বলেছেন:

    আমির ভাই আপনার লেখা দিনদিন উন্নত হচ্ছে।বিশেষ করে প্রবন্ধ/বিশ্লেষন ধর্মী লেখাগুলি আপনি বেশ ভাল লিখেন।চমৎকার সচেতনতামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন।অনেক ধন্যবাদ।

    শুভেচ্ছা রইল আপনার লেখক জীবনে।ভাল থাকুন।

  3. তাপসকিরণ রায় মন্তব্যে বলেছেন:

    সত্যি লিখতে লিখতে লেখার মান যে অনেক বেড়ে যায় তা স্পষ্ট আপনার কলমে ধরা পড়ে।আপনার ভ্রমণ সম্বন্ধী এবং এ লেখাটি তার প্রমাণ।এমন সুন্দর তথ্যমূলক ঘটনার ধারাবহ বিবৃতি কোন ভাল রিপোর্টারই দিতে পারেন বলে জানতাম। আন্তরিক ধন্যবাদ,ভাই!

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করতে লগিন করুন.

go_top