প্রেমিকার কাছে চিঠি
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 2284বার পড়া হয়েছে।
প্রিয় বৃষ্টিলীনা,
তোমার চিঠি পেয়েছি দশদিন হল। কিন্তু পড়া লেখা আর
নানাবিধ ব্যস্ততারর কারনে তোমায় ফিরতি চিঠি দিতে দেরি হল।
যে সময়টাতে তোমাকে লিখতে বসলাম। সন্ধ্যায় বৃষ্টি হয়েছিল, কিছুক্ষন আগে বাসায় এলাম। সদ্য ভেঁজা পিচঢালা পথ লাজে মরে যাওয়া অভিমানী নবধূর মত বায়না ধরেছিল। যেনো বিমুগ্ধ নাগরিক স্ট্যাচু গুলো নির্জনতার সাক্ষর। এখনো অবশ্য চারদিকে বিজলী চমকাচ্ছে অহরহ। বাড়ান্দায় বসে বাহিরের শুভ্র পরিবেশ টা দেখছি আর তোমাকে লিখছি। আকাশের মেঘ ভাঙা আলোর রশ্মি বিনা অনুমতিতে প্রায়ই আমার ঘরে প্রবেশ করে জ্বলজ্বলিয়ে উঠে। জানো? আমারো না ভয় লাগে! কখন আবার বজ্রের ধমকে সিগারেটের মত নিভে যায় জীবনের আলোটা। কংক্রিটের পাকা উঠানে যখন আসমানি শুভ্রনিল আলোর রেখা সূর্য কিরণের মত লম্বভাবে সরল রেখা বরাবর পরে তখন তার রিপ্লেকশন এসে ধাক্কা খায় আমার চশমার গ্লাসে। বাবা বাসায় নেই। আম্মু আজ চারদিন হল বড় আপুর বাড়ি বেড়তে গেছে। ঠান্ডা লাগছে। ছোটবোন পাতা’কে বলেছি এক মগ কফি বানিয়ে দিতে। খুব মিস করছি তোমার বানানো। আমাদের তো প্রথম দেখা হয় তোমার আচারের কৌটা চুরি করতে গিয়েই। মনে আছে তোমার? আমি ছাঁদে উঠে আচারের কৌটা নিয়ে দৌড় দেই আর তুমি আমাকে দৌড়ে ধরে ফেলেছিলে! ঐ দৃষ্টিপট মনে পরলে খুব লজ্জা লাগে। তুমি জানো’তো আমার উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষা চলছে। এতো পড়া আর ভাল লাগেনা। কিন্তু কী করবো বল? তারপরেও রাত জেগে পড়তে হয়। আচ্ছা তোমার কি আমার দুস্ত ওহীনের কথা মনে আছে? ওইযে, মেসবাহ মাহমুদ ওহীন। যার লেখা একটা কবিতার বই তোমাকে উপহার দিয়েছিলাম গত মাসে। নামটা ছিল “ওহীনের বৃষ্টি ভেজা”। আরে ওইযে কল্পনার পাগলা প্রেমিক ওহীন। বড় ফ্রেমের চশমা পড়া ছেলেটা। গত সপ্তাহে তার ছোট বোন তুলতুলের বিয়ে গেলো। ওহীন কেবল আমায় নিমন্ত্রণ করেনি তারসাথে বিয়ের অনেক কাজের দায়িত্ব ও আমার উপরে চাপিয়ে দিয়েছি ফাজিলটা। ঐ বিয়েতে চলচিত্র পরিচালক কামাল উদ্দিন আহমেদ’র সাথে পরিচয় হয়। বেচারা খুব ভাল মানুষ। ঢাকায় থাকেন। আমায় কার্ড দিয়ে বলেছেন ঢাকায় গেলে কখনো উনার সাথে যেনো যেকরেই হউক দেখা করি। আলাপের এক ফাঁকে তোমার কথা বললাম উনাকে। বায়না ধরে বলেছে তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেনো উনার মস্ত বড় দালান বাড়িটায় দুরাতের জন্য হলেও বেড়াতে আসি। বেচারা এত করেই যখন বলল ভাবছি একবার নাহয় দুরাত কাটিয়ে’ই আসবো। অন্য কোন অকেশানে না হউক আমাদের মধুচন্দ্রিমার রাতটা তো কাটানো যায়। কি বল? আজ সন্ধ্যায় পুকুর পাড়ে গিয়েছিলাম, ঠিক যেখানটায় তুমি আঁচল বিছিয়ে বসতে সেখানে অনেকক্ষন দাড়িয়ে মৃদু আলোয় ছলছল শব্দ করা পানির দিকে তাঁকিয়েছিলাম। এছারা আর কি করবো বল? পানির উপরিভাগে একটা হাসের ছানা ভাসছে, ঠিক আমার মতই একা মনে হল তাকে। সঙ্গীহীন জীবন হয়তো তার ক্ষেত্রে ও বহমান। আরেকটা কথা শোন, আমার বড় বোনের মেয়ে রোদেলা তোমার কথা জানতে চেয়েছে। আমি ভাল আছিস বলে দিয়েছি। আরো বলেছে তার মামিকে খুব মিস করছে মেয়েটা এবার মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে তাই তাকে উপহার স্বরুপ আমি একটি হাত ঘড়ি
কিনে দিয়েছি। তুমি আগামী’তে রোদেলাকেও একটা চিঠি লিখো। মেয়েটা বেশ খুশি হবে। জানো? তুমি পাশে নেই বলে তোমার ছোট বোন লিমা আমায় ক্ষুদে চিরকুট পাঠায়। ভারি দুস্টু হয়ে গেছে আজকাল। চিরকুটে দুয়েক লাইন ছন্দ সাজিয়ে কবিতাও লিখে। আর তা কেমন হয়েছে তার মন্তব্য করতে বাধ্য করে আমায়। মেয়েটা আড়ালে খুব ভালবাসে রে আমায়। কিন্তু ও জানেনা আমিযে তোমার প্রেম শাড়ির আঁচলে নিজেকে বেধে রেখেছি। তুমি ওকে বকিও না। ছোট তো তাই এমন করে, এই শোন আমার দুস্ট বন্ধু নয়ন গতকাল তোমার কথা জানতে চেয়েছিল। আর আমায় বলে আমি যেনো তোমাকে বলে ওর জন্য একটা অষ্টাদশী বালিকার সন্ধান দেই। কলেজ বান্ধুবী স্বর্ণা, রিয়া, আইরিন ওরাও তোমার খবর নিয়েছিল। আজ আর লিখতে পারছিনা। পড়তে হবে, আগামী চিঠিতে বলে দিও কবে আমরা বিয়েটা করছি। কাকা বাবুকে পরিষ্কার ভাবে বলে দিওযে, উনার কাছে পন হিসেবে কিছু চাইনা, শুধু চাই উনার পাগলী মেয়েটাকে। লালশাড়ি জড়িয়ে কপালে লালটিপ পড়িয়ে দিলেই উনার কাজ শেষ। তারপর বরন ডালা আমিই সাজাবো।
ইতি,
তোমার আচার চোর/হবু বর।
২,১৮১ বার পড়া হয়েছে
আপনার লেখনী বেশ সুন্দর – মন কাড়ে।
বানানে আরো নজর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।
শুভেচ্ছা জানবেন কবি –
তুই আর তুমির সংমিশ্রপ্ন হয়ে গেছে আচার চোর
বানান ডিকশনারি দেখে নিও
চিঠি ভাল লাগল।
ভাবীরে সালাম দিও আর বিয়ের দাওয়াত যেন পাই।
ভাল লিখেছেন চিঠি । তবে লিখার সময় অনিরুদ্ধ বুলবুল ভাই আর এই মেঘ এই রোদ্দুর আপুর কথাটা মাথায় রাখলে লিখা যে আরো চমকপ্রদ হবে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই ।
ভাল থাকুন খুব । শুভেচ্ছা নিবেন ।
আচার চোরের গল্পটা ফাসঁ হয়ে গেল তো
বুলবুল ভাইয়ের সাথে সহমত দিলাম
……………………..
চমৎকার ভাবনা
শুভ কামনা রইল