Today 23 Nov 2024
banner
নোটিশ
ব্লগিং করুন আর জিতে নিন ঢাকা-কক্সবাজার রুটের রিটার্ন বিমান টিকেট! প্রত্যেক প্রদায়কই এটি জিতে নিতে পারেন। আরও আছে সম্মানী ও ক্রেস্ট!
banner

ব্যাতিক্রম “মা

লিখেছেন: মনির হোসেন মমি | তারিখ: ১২/০৬/২০১৪

এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1145বার পড়া হয়েছে।

ঠিক কোন বাক্যটি দিয়ে গল্পটি শুরু করবেন ঠিক বুঝে উঠে পারছেন না নাছির সাহেব।প্রায় মাস খানেক কেবল শুরু করতেই লেখা, নিজের মন মত না হওয়ায় একের পর এক কাগজের পৃষ্টা ছিড়ে ডাষ্টবিনের খোরাক বানাচ্ছেন।নাছির সাহেব পাঞ্জেয়ানা মুসলিম যাকে বলে গাল ভরাট দাড়ি,মাথায় টুয়েন্টি ফোর আওয়ারস টুপি,পায়জামা-ঝুব্বা সব সময় ইসলামী মাইন্ডেট থাকেন।ঘরে তার বৃদ্ধ পেরালাইসেস মা।মাকে সেবা করতে সেখানে লোকের অভাব নেই তারপরও নাছির সাহেব তার সহধর্মীনিকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তার মায়ের যাতে, সে কোন অমর্যাদা না করেন।দীর্ঘ দুই বছরের উপরে হবে তার মা অসুস্হ হয়ে ঘরে এক বিছানায় শুয়ে আছেন।তার মলমূত্র ত্যাগে এক জন কাজের মেয়ে রেখে দিয়েছেন। যদিও নাছির সাহেব একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তবুও অতিরিক্ত ব্যায়ের কথা চিন্তা না করে মায়ের শরীর এবং মনের দিকে সে বেশ সজাগ।এক বার মা শুধু ইশারায় প্যারালাইসের কারনে সে তেমন স্পষ্ট করে কথা বলতে পারেন না কিন্তু নাছির সাহেব মা হা করলেই বুঝতে পারেন মা কি বলতে চাইছেন তো একবার বলেছিলেন…বাবারে আমার আর সহ্য হয় না এবার কোন মতে পৃথিবী ত্যাগ করতে পারলেই বেচে যাই…বাস এইটুকুই মায়ের মুখ থেকে বের হওয়া সাথে সাথে নাছির সাহেব বাড়ীর চৌদ্দ গোষ্টি এক করে ফেলেছেন।তার অন্য আরো দুই জন বড় এবং ছোট ভাই,ভাইয়ের বউ,ছেলে মেয়ে,নিজের ওয়াইফ,ছেলে মেয়ে ডেকে এক করে মায়ের সামনে হাজির করলেন।মা তো অবাক ছেলে আমার একি করছে!নাছির সাহেব সবাইকে নিয়ে মায়ের কাছে ভারাক্রান্ত নয়নে মায়ের পায়ের বরাবর বসে মায়ের পা দুটি ধরে রেখেছেন।
-মা,তোমার সামনে সবাইকে দাড় করিয়েছি এবার বলো কে তোমাকে দুঃখ দিয়েছে….বলো মা, তুমি বলো তুমি না বললে যে আমি শান্তি পাব না।
ছেলের কান্ড দেখে মা মিটমিট করে হাসছে।নাছির সাহেব মাকে মিটমিট করে হাসতে দেখেও বুঝতে পারছেন না, মা মনে হয় কিছু লোকাচ্ছেন ঐ হাসির আড়ালে অনেক মায়েরা এমনই করেন শত কষ্ট হলেও ছেলেকে কিছুই বলেননা।তাই আবারও সে বলছেন।
-মা,এই মা তুমি আমার কাছে কিছু লোকাবে না তুমি সত্যি করে বলো কে তোমাকে ব্যাথা দিয়েছে,বলো মা বলো।
ছেলের পাগলামী যেন থামছে না তাই দেখে আবারও মিটমিট করে হাসছেন মা ঐ দিকে নূরের ফেরেস্তারাও তা দেখে মায়ের সাথে সাথে হাসছেন।নাছির সাহেবের এবার রাগ হলো মায়ের পায়ের কাছ থেকে উঠে দাড় করানো বাড়ীর লোকদের কাছে যাবে জিজ্ঞাসা করবে কে মাকে দুঃখ দিয়েছে।নাছির সাহেব বসা থেকে উঠতে যেয়ে আর উঠতে পারেননি হঠাং মা নাছির সাহেবের পাঞ্জাবী ধরে ফেলেন ইশারা দেন মায়ের মুখ বরাবর যেতে।নাছির সাহেব মায়ের মুখ বরাবর মুগবয় দেন মা তার কপালে আর্শীবাদের চুমো এটে দিলেন এবং নাছির সাহেবকে বুঝাতে সক্ষম হন এখানে কেউ তাকে অবহেলা করছেন না সবাই তার খোজঁ খবর রাখেন।অতিরিক্ত সুখেও মানুষ যেমন কেদেঁ ফেলেন তেমনি মা সে দিন তার আর এক বন্ধবীর কষ্টের কথা শুনে নিজেকে অন্যের উপর বোঝা ভেবে মনের অজান্তেই কথাগুলো বলে ফেলে ছিলেন কিন্তু মা বুঝতে পারেননি মা পাগল ছেলে তার এত দরদ তার মায়ের প্রতি।মা নাছির সাহেবের বউকেও কাছে ডেকে কপালে চুমু দেন আর ছেলেকে শাষন করে ইশারায় বলেন….আমার দিব্যি লাগে তুমি বউমাকে কখনও কষ্ট দিবে না।ছেলে তাতে মাথাটি নাড়ায়ে সায় দেন।
মায়ের প্রতি ছেলের এমন ভালবাসা স্বার্থপর পৃথিবীতে কমই দেখা যায়।তেমনি আমার দৃষ্টিতে বাস্তব দেখা দেয় এমনি একটি উচ্চ শিক্ষিত এবং ধনাঢ্য পরিবারের মায়ের প্রতি অমর্যাদা আর অবহেলার বাস্তব রূপ।মা বাবার প্রতি ছেলে মেয়েরা যখন অবিচার করেন স্রষ্টা হয়তো ভাবেন পৃথিবীর সৃষ্টিতে সে ভূল করেছিল।আমার খুব নিকটের লোক আমারি স্কুল কালের বন্ধু আমার পাশা পাশি বাড়ী।এমন একটি বাস্তব কাহিনী লেখবার ইচ্ছে আমার ছিল না কিন্তু একান্ত দায় মুক্তির খাতিরে কিছু লেখার ব্যার্থ প্রয়াস মাত্র।কেননা উঠতি জীবনে আমার অনেক গুলো রাত অনেকগুলো দিন বন্ধুর মায়ের কাছাকাছি থেকেছিলাম একটু হলেও মায়ের পরশ পেয়েছিলাম তার কাছ থেকে।আমরা যখন তার কাছে যেতাম সে আমাদের জন্যে অনেক কিছু করত, নিজে কাঠের চুলোয় বিভিন্ন শীতের পিঠা কিংবা ঝাল মুড়ি বানিয়ে রাখত যখন আমরা যাব তখন খেতে দিবে বলে।যখন তখন যে কোন ছেলের বায়না বা আবদার পুরণে বিন্দুমাত্র কার্পুণ্য করেননি।সেই মায়ের প্রতি অবহেলা,বঞ্চনা দেয়া খোদার আরশ সহ কেপে উঠত।
আজকের সূর্যটা যেন আর মেঘে ঢাকা পড়ছে না।বত্রিশ ডিগ্রীর সূর্য্যের তাপমাত্রা যেন গা পুড়ে যাবার অবস্হা।প্রচন্ড এই গরমেই মা বের হন বাসা বাড়ী কাজের জন্য,প্রায় আধা মাইল ত্রিশোর্ধ মা তার ছোট দুই ছেলেকে মানুষের মতন মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।এক সময় যখন এই মা তার প্রথম শশুড় বাড়ীতে আসেন তখন কি না ছিল তার স্বামীর,গোয়াল ভরা গরু,মহিষ, গোলা ভরা ধান,অগণনিত ফসলের জমি,বিশাল রাজকীয় প্রাসাদের মতন বাড়ী আর হবেই না বা কেনো কথিত আছে যে তার স্বামীর ঘরের সামনের রাস্তা দিয়ে কেউ হেটে গেলে পায়ের জুতো হাতে নিয়ে যেতে হতো।বৃষ্টিতে কেউ ছাতা ব্যাবহার করতে পারত না এটাই ছিল এলাকার সবার জন্য আইন কারন সে যে জমিদার।সে সময়কার জমিদাররা যা বলতেন তাই হত আইন।জমি বেচা কেনা হতো মুখের কথার উপর বিশ্বাসের উপর লিখিত দলিলের তেমন একটা প্রয়োজন ছিল না।সেই জমিদার স্বামীর ব্যাবহার ছিল ভয়ংকর।সর্ব ক্ষন মদের নেশায় ভূত হয়ে বাইজীর নৃত্যের তালে টাকার বদলে দলিল ছুড়ে দিত।মিনিটেই জুয়ায় বিলিয়ে দিতেন বিঘায় বিঘায় জমিন,ছিলেন বদ রাগীও কত মানুষ কে যে সে চাবুকের আঘাতে রক্ত জড়িয়েছেন তা বলা মুসকিল।মানুষকে গরু ছাগলের মতন ভাবতেন।সেখানে মা ছিল ভিন্ন তার আরো সতিন থাকলেও সে স্বামীর হারামের রাজত্ত্বে থাকেননি,প্রতিবাদে লাভ হয়নি বরং অত্যাচারিত হতেন সে অবশেষে ছয় সাত বছরের ছেলে দুটোকে নিয়ে বিলাসময় রাজ্য থেকে বেরিয়ে যান দূরে এক অচিন গ্রামে যেখানে কেউ তাকে চিনবে না।মোগলী কিচ্ছা হলেও এটাই বাস্তব আমাদের গ্রামের পূর্ব পূরুষদের রাজকিয় ইতিহাসে।এক সময় এই জগন্য ইতিহাসের ইতি ঘটে,ধ্বংস হয় অহংকারের প্রাচুর্য্য অবশেষে রাজার সন্তানদের ভাড়া বাড়ীতে থেকে জীবনকে ছেড়ে দিতে হয়েছিল মৃত্যুর কাছে।
মা সংগ্রাম করে যাচ্ছেন ছেলে দুটোকে নিয়ে।এ বাসায় ঐ বাসায় ঝিয়ের কাজ করে পেট চালায় এবং ছেলে দুটোকে শিক্ষিত করে মানুষ করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।ছেলে দুটোও ছিল মাশাল্লা দেখার মতন রাজপুত।দিন যায় রাত যায় খেয়ে না খেয়ে মা পরিশ্রম করে ছেলে দুটোকে মের্ট্রিক পাশ করান।দেখতে দেখতে চলে যায় আরো বেশ কয়েকটি বছর।কোন ক দিন মায়ের দেহ যেন আর সয় না ক্লান্ত দেহে মা শুয়ে ছিল সে দিন আর কাজে যেতে পারেননি।ছেলে দুটো কলেজ থেকে ফিরে মায়ের তেমন একটা খোজঁ নেন না চলে যায় বন্ধুদের সাথে আড্ডায় অথবা কোন ক্লাবে।ঘরে ফিরে দেখে মা জ্বরে কাতর হয়ে কাদাঁমুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছেন।ঔষধ কি, লাগবে কি না, মা তুমি কেমন আছো শুয়ে আছো কেনো?কোন প্রশ্নই নেই যেন ছেলেদের।দুনিয়ায় যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছেন।মা ঘরে শুয়ে শুয়ে কেবল আল্লাহর নাম যপছেন।আল্লাহ তার কথা শুনে পরদিন সকালেই জ্বর সেরে যায় কিন্তু পেলো না ছেলেদের কাছ থেকে কোন সেবা।মা আবার ভাবেন,থাক ওদের জানিয়ে শুধু শুধু কি লাভ পোলাপান মানুষ ঘাবড়ে যাবে চিন্তা করবে,এখানেই মায়ের ভিন্নতা অন্য সব মায়েদের চেয়ে সে একটু ব্যাতিক্রম।ছেলেরা আই এ পড়ছেন তবুও যেন তার কাছে ওরা পোলাপান।কিছু দিন পর ছোট ছেলেটিকে স্বামীর পরিত্যাক্ত কিছু জমি ছিল তার নামে সেই জমি বিক্রয় করে পাঠিয়ে দেন ফ্রান্সে।বড় ছেলেটি দেশেই থেকে যায় সে লেখা পড়া ছেড়ে গাড়ীর কাজে লেগে যায়।ছোট যে ছেলেটি সে ইন্টার পড়া অবস্হায় ফ্রান্সে চলে যায়।ফ্রান্সে সে এক সময় স্যাটেলড হওয়ার জন্য সেখানে এক অর্ধ বয়সী রমণীকে নিকাহ করেন কন্টাক ম্যারিজ বাংলাদেশে যে তার শিকড় রয়ে গেছে সে দিকে তেমন কোন খেয়াল নেই,পশ্চিমা অনুকরণে মাঝে মাঝে দেশে এসে নিজের জম্মভূমির দায় সারা মাত্র।বড় ছেলেকে বিয়ে করান ঢাকাতে তাদের ঘরে ফুটফুটে দুটো সন্তান।কয়েক বছরের মধ্যেই পাচঁ তলা বিশিষ্ট একটি প্রসাদময় বিল্ডিং তৈরী করেন।কিছু দিনের মধ্যে ছোট ছেলেও ফ্রানস থেকে এসে দেশে আরো একটি বিয়ে করেন।মায়ের ঘোর আপত্তি সত্ত্বেও বাধা মানেনি ছেলে বিয়ে করে ঘরে তুলেন।
পাচঁ তলা প্রাসাদে দুই ইউনিটের দুই ভাইয়ের দুইটি ইউনিট রেখে বাকী ইউনিটগুলো ভাড়া দিয়ে দেয় মা কোথায় থাকবে প্রশ্ন ফুফাত বোনের,চাচাত বোনের এবং পাড়া প্রতিবেশীদের কিন্তু যাদের মা তাদের যেন কোন মাথা ব্যাথা নেই মাকে নিয়ে।দেন দরবার বসার অবস্হা।মা যেন একটু অনিহা দেখালেন তাকে নিয়ে দেন দরবার বসাতে তার ভাবনায় ছেলেরা সমাজের চোখেঁ ছোট হয়ে যাবে ।ছেলেদের মান সম্মানের দিকে চিন্তা করে মা বোনদের দেন দরবার করতে দেননি এখানেই মায়ের চিন্তাধারা বোনদের চেয়ে ব্যাতিক্রম।অবশেষে মা পাচঁ তলার সাথে একটি ছোট টিনের ঘরে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন।আর খাবার দাবারের ব্যাপারে দুই ছেলেই খাওয়াবে তবে পালাক্রমে সময় মতন খাবার পাঠিয়ে দিবেন মায়ের ঘরে।
দেখতে দেখতে মায়ের জীবন থেকে চলে গেলো আরো বেশ কয়েকটি বছর মা এখন আর আগের মতন উঠে চলা ফেরা করতে পারেন না।ছোট্র টিনের ঘরটিতে একাই দিন রাত নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছেন।ছেলে আছে আছে ছেলের বউরা আছে নাতিনও।নাতিনরা আগে তার ঘরে এলেও বেশ কিছু দিন যাবৎ নাতিনরাও আসে না আর ছেলে ছেলের বউদেরতো প্রশ্নই আসে না।এই একটি বয়সে সব মায়েরই ইচ্ছে থাকে শেষ বয়সে অন্তত ছেলে মেয়েদের সেবা পাওয়ার কিন্তু তার ভাগ্যে বিধাতাই যেন রাখেনি।একদিন বাহিরের কোন এক ব্যাক্তি খবর দেন পাচ তলায় ছেলেদের তাদের মা আর নেই ডেকেও সাড়া না পেয়ে ব্যাক্তিটি হয়তো ভাবছেন বুড়ি মরে গেছেন।খবর পেয়ে বড় ছেলে,ছেলের বউয়েরা ছোট ছেলে তখন ফ্রান্সে ছিল।নীচে মায়ের ছোট টিনের ঘরে ঢুকতেই বড় ছেলে দরজার চৌকাঠের আঘাত পান কপালে,কপাল ফাটেনি তবে ফুলে টুভলা হয়ে গেছে।ছেলের বড় বউ প্রথমে ঢুকে মায়ের হাত,কান,গলার দিকে তাকিয়ে অবাক হন স্বর্ণের জিনিসগুলো নেই!ছোট বউ আসেন সাথে সাথে বড় ছেলেও ভিতরে ঢুকেন।
-কি রে ছোট আম্মার গলা হাত কানের জিনিসগুলো কই?
-আমিতো জানি না দিদি।
-বললেই হলো আমাদের ছাড়া আর কে নিবে বল?
-পরশু ফুফাত বোনেরা এসেছিল,আম্মা ওদের দিয়ে দেইনিতো?ছোট বউয়ের কথা।
-হতেও পারে,
কিছু ক্ষণের মধ্যেই ঘর ভরে যায় আশে পাশের মানুষের। কেউ বলছেন আহারে!কত ভালো মানুষ ছিল, কেউ কেদে দিয়েই বলছেন এইতো কিছুক্ষন আগেও না আমি কথা বলে গেলাম,হায়রে!মানুষের জীবন,কেউ আবার অট্ট্রেলিকা বসবাস রত ছেলেদের ভৎসনা করতেও ছাড়েন নি,,,কেমন ছেলেরা,ওদের কি আর কম আছে যে মাকে ছোট্র একটা টিনের ঘরে রাখবে!এর রকম জীবিত মানুষগুলোর কত যে আকুতি তার জন্য অথচ মৃত্যুর আগে এই কথাগুলোই কেউ বলে না।এ রকম বৃদ্ধাদের অবহেলায় বেলায় কেউ এগিয়ে আসেন না মনে হয় এটাই মানুষের চরিত্র।বড় ছেলে খবর পেয়ে বাড়ীর ভিতরে ঢুকে অবাক হন এত লোকজন দেখে সেও তো মানুষ তার উপর মায়ের বড় ছেলে, মৃত মায়ের প্রতি একটু দরদতো আসবেই।ছেলে মা মা বলে মায়ের কাছে গিয়ে বসে কাদঁছেন।মায়ের হাতটি ধরে যখন ছেলে অঝোরে কাদছেন তখন ছেলে আন্দাজ করতে পারেন তার মায়ের হাতের শিরায় রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে ছেলে সবাইকে চুপ করতে বলেন এবং ভিড় কমিয়ে ঘরের বাহিরে যেতে বলেন। মোবাইলটা হাতে নিয়ে ডাক্তারকে খবর দেন।ছোট বউ বড় বউ সবাই হতভম্ভঃ….কি বলছেন ভাই জান আম্মা বেচে আছেন?ছোট বউয়ের প্রশ্ন।সবাই যেন আল্লাহ-রসূলের নাম জবতে শুরু করলেন।ডাক্তার সাহেব এসে মায়ের পাশে বসে খুব স্লোল ভাবে মায়ের কানের কাছে কথা বলছেন আর মায়ের চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিলেন।মা এবার ইশারায় অল্প অল্প করে কথা বললেন।
-যাক….ভালই হলো এই সুযোগে পৃথিবীর মানুষগুলোকে..চেনা হলো।বলেই আবারও চোখঁ বন্ধ করলেন।ডাক্তার সাহেব মাকে কিছু খাবার দেবার জন্য ছেলের বউদের বললেন।বললেন মা খুবই দূর্বল তাকে নিয়ম অনুযায়ী ভাল বিটামিন জাতীয় খাদ্য দিতে হবে।তৎক্ষনাত ছোট বউ কিছু ফল টল কেটে মাকে ডাকছেন।মা কয়েকবার ডাক দেবার পর জবাব দিলেন…আমি রোজাঁ রেখেছি।ডাক্তার সাহেব এবার ক্ষেপে যান।
-এ সময় কিসের রোজা রেখেছেন,আপনিতো অনেক দূর্বল।
-মরেতো যাইনি বাবা,ছেলেদের মঙ্গলার্থে কিছু নফল রোজা রাখছি তাই একটু ঝিমিয়ে ছিলাম।
এখানে মায়ের মমতার ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়।যেখানে বন্ধু বান্ধব, স্ত্রী খালা বোনেরা যা ভাবেন না,সেই ভাবনা ছেলেদের মঙ্গলার্থে মৃত্যু পথ যাত্রী মায়ের আল্লহর দরবারে রোজাঁ রেখে ছেলেদের মঙ্গল চেয়ে যাচ্ছেন অথচ সে অবহেলিত।তাই বলা যায় অন্য সবার চেয়ে ব্যাথিক্রম মায়ের স্নেহ মায়া ভালবাসা।
গল্পের শুরুতে মধ্যবিত্ত গ্রাম্য নাছির সাহেবের মায়ের কথা বলা হয়েছিল তার মা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে শুখি মানুষ প্যারালাইসেসে সর্বক্ষণ শুয়ে থেকে অন্যের সাহায্যে নিয়ে বেচে আছেন সেই মায়ের মুখে হসি যেন সর্বক্ষণ লেগেই থাকে তার অন্য সম বয়সী বান্ধবীরা হিংসায় পড়ে থাকেন।সেই নাছির সহেবের ছোট ভাইয়ের বউয়ের কারনে ছোট ভাইও ধীরে ধীরে মায়ের প্রতি যত্নের ভালবাসার ফাটল ধরতে শুরু করছিল এক বার সমান্য কটু কথাও মাকে বলে ফেলেন।নাছির সাহেব বুঝতে পেরে ছোট ভাইকে শাসায় এবং বুঝায়।ছোট ভাই বড় ভাইয়ের কোন কথারি প্রতিত্তোর দেননি বরং উল্টো বউকে শাসান।
-তোমার কি ইচ্ছে?
-আমিই কেবল খেটে যাবো?
-তুমি একা কই আমি,ভাইয়া,ভাবী ওরাতো খাটছেন যখন যে সময় পাচ্ছে মায়ের পাশে থাকছেন,তাছাড়া মা কে দেখাশুনা ছাড়াতো তোমার আর কোন কাজ নেই বাড়ীর বাকি সব কাজতো ভাবীই করছেন আবার সময় পেলে মায়ের দিকেও খেয়াল দিচ্ছে,কাজের মেয়েটি হঠাৎ চলে যাওয়াত তোমার একটু বেশী করতে হয়,এটাকে তুমি যদি কষ্ট মনে কর তাহলে তুমিও যেনে রাখো তোমারও একদিন মায়ের মতন এমন বয়স হবে তখন তুমিও তোমার কর্মের ফল পাবে তখন বুঝতে আমি তোমাকে কেনো মায়ের প্রতি যত্ন নিতে বলেছিলাম।ম এখন সেই আমাদের শিশু কালে ফিরে গেছেন আমাদেরকেও এক দিন এই অবস্হ্যায় যেতে হবে এ সময় যত্ন না নিলে আমরা স্রষ্টার কাছে কি জবাব দেবো বলো,যে আমাকে পৃথিবীর আলো দেখালো,যার জন্য আজ তুমি আমার হতে পেরেছো সেই তাকে অবহেলা!না তা হয় না,আমারও ভাইয়ার মতন পরিষ্কার কথা, যত দিন মা ভাই বেচে থাকবেন ততদিন তুমি আমার কোন কথার অবাধ্য হতে পারবে না বিশেষ করে মায়ের প্রতি যত্নের অবহেলা করতে পারবে না তাতে তুমি আমার সংসার করো আর নাই করো।……যাই মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে আসি তোমার ভ্যান ভ্যনানিতে মাকে কিছু মন্দ বলেছিলাম।
ছোট ভাই নিজের ভূল বুঝতে পেরেছিল,তাই সেও শক্ত হলো বউয়ের প্রতি।আসলে আমাদের সমাজে আমরা অযথাই পরিবারের বিচ্ছেদে সহজেই বউকে দোষী করে ফেলি এটা ঠিক নয় ছেলের মন ঠিক থাকলে,ইচ্ছে থাকলে আর ছেলের মায়ের দুধের কৃতজ্ঞতার কথা মনে থাকলে পরের মেয়ের বউয়ের কি সাধ্য আছে যে ছেলের মনে মা বাবার প্রতি বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করে।ছোট ভাই যখন উঠে যাচ্ছেন মায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে ঠিক তখনি ছোট বউ পেছন থেকে স্বামীর হাতটি ধরেন।
-কোথায় যাও?আমাকে নিবে না?আমিও যাবো মায়ের কাছে।
-চলো….
এতক্ষণ কথার মাঝেই দু’জনের চোখেরঁ পানি টলটল করছিল তা এখন আর ধরে রাখতে পরেননি।দুজনের চোখের পানি গাল বেয়ে মাটিতে পড়ছে এ যেন তাদের অন্তরের সূদ্ধির সূরা প্রবাহিত হলো।এমনি ভালবাসায় সিক্ত হয়ে নাছির সাহেবের মা দীর্ঘ চার বছর প্যারালাইসেসে বিছানায় শুয়ে শেষ নিঃষাস ত্যাগ করেন ফেব্রুয়ারী ২০১৩।
এবার আসা যাক মূল কথায় অবাঞ্চিত ব্যাতিক্রম মায়ের কাছে।কিছু মায়ের ভাগ্যে বিধাতা জম্ম থেকেই কষ্টের ঠিকানি দিয়ে দেন।তার ভূয়া মৃত্যুতে সবাই যখন ব্যাস্ত তার সম্পদ কব্জার করার তখন মায়ের মন থাকে একটু খানি ভালবাসা পাবার তৃঞ্চায় শুষ্ক মরুভূমি।সেই যাত্রায় মায়ের মৃত্যু না হলেও এ যাত্রায় সে আর বেচে নেই।সেই একাকিত্ত্ব জীবনে আরো প্রায় বছর খানেক বেচেছিল কিন্তু পাননি কারো আদর যত্ন ছেলেদের বিশাল অট্রেলিকার পাশেই লোকে মন্দ বলবে ভেবে একটি ছোট টিনের ঘরেই শেষ নিঃষাস ত্যাগ করেছিলেন বৃদ্ধ সংগ্রামী মা।মৃত্যুর সময় তার পাশে কেউ ছিলনা ছেলে,ছেলের বউ নাতি নাতনী কেউ ছিল না মৃ্ত্যুর মুহুর্তে মায়ের মুখে জল দিবে বলে। তবে হ্যা ছিল একজন, না কোন মানুষ নয় ছিল কুকুর নামের মায়ের পালিত প্রভু ভক্ত একটি বোবা জন্তু।মায়ের মৃত্যুর পর পর অথ্যাৎ ফজরের আজাঁনের পর হতেই কুুকুরটি এক বার মায়ের ঘরের ভিতর ঢুকে আবার বাহিরে এসে অট্রেলিকার উপরের দিকে চেয়ে ঘেউ ঘেউ করতে থাকে।এ ভাবে প্রভু ভক্ত কুকুরটি প্রায় আধ ঘন্টা যাবৎ ঘেউ ঘেউ করছে তাতেও কারো কোন সাড়া শব্দ নেই,অবহেলিত মায়ের ছোট ছেলের ঘরের নাতিন বিল্ডিংয়ের উপর থেকে কুকুরটি ঘেউ ঘেউ শব্দ পেয়ে মাকে বলল মা তেমন কোন গুরুত্ত্ব দেননি।এর পর সকালে দুধ দিতে আসা দুধওয়ালী ছেলেদের দুধ দিতে এসে কুকুরটির অস্বাভাবিক আচরণ তার সন্দেহ হলো সে মায়ের ঘরে ঢুকে মাকে কয়েক বার ডাক দিয়েও সাড়া না পেয়ে ছেলের বউদের বলেন।ছেলের বউয়েরা মায়ের কাছে এসে শিরা ধমনী পরীক্ষা করে দেখেন এবার মা সত্যিই পর পাড়ে চলে গেছেন।
মনে রাখা জরুরী“মৃত্যুই একমাত্র চির সত্য এই পৃথিবীর”

১,১৫৮ বার পড়া হয়েছে

লেখক সম্পর্কে জানুন |
"চাই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি"
সর্বমোট পোস্ট: ৮ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১৮ টি
নিবন্ধন করেছেন: ২০১৪-০১-১৬ ০৪:৪৮:৪৮ মিনিটে
Visit মনির হোসেন মমি Website.
banner

৩ টি মন্তব্য

  1. জসীম উদ্দীন মুহম্মদ মন্তব্যে বলেছেন:

    পড়লাম মনির ভাই । ভাল লেগেছে ।

  2. দীপঙ্কর বেরা মন্তব্যে বলেছেন:

    Porhte somoy laglo
    besh
    bhalo thakben

  3. মনির হোসেন মমি মন্তব্যে বলেছেন:

    ধন্যবাদ ভাইয়া।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করতে লগিন করুন.

go_top