ভয়ংকর সুদর্শন
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 2192বার পড়া হয়েছে।
আমার একেক সময় একেক রকম শখ বা ভাল লাগা তৈরি হয় । ছোটবেলায় দেশ বিদেশের স্ট্যাম্প সংগ্রহ করার নেশা ছিল। কখনো জমাতাম নেল পলিশ, ছোট ছোট খেলনা আর পুতুলেরও বেশ ভাল রকমের সংগ্রহ ছিল আমার । নানা রঙ আর নকশার টিপ এর পাতা আছে আমার কাছে । এখন কখনও গান আর কখনো বা ভাল ভাল মুভি ডাউনলোড করে দেখার নেশা চাপে … এরকম হাজারো টুকিটাকি শখ আমার ।তবে দুইটা জিনিষের শখ বা নেশা আমাকে কখনই ছেড়ে যায়নি । এক আমার ঘুরে বেড়ানোর শখ আর দুই বই পড়ার নেশা।
একসময় আমি সেবা প্রকাশনীর প্রচুর বই পড়েছি ,নাইন টেন এ পড়ি তখন । তবে মাসুদ রানা আমায় কখনই টানেনি , আমার ভাল লাগতো তিন গোয়েন্দা আর নামিদামি লেখকদের অনূদিত বইগুলো।
সে সময় আমার সাহসের কিছু ঘাটতি ছিল বিধায় ভূতপ্রেত আমি ভীষণ ভয় পেতাম । একবার নানা বাড়িতে আমরা সবাই রাতে ঘুমিয়ে পড়ার পর মাঝরাতে আমার তীব্র চিৎকারে সবার ঘুম ভেঙ্গে গেল । ধাতস্থ হয়ে ঘটনা মানে চিৎকারের কারন বলার সাথে সাথেই আম্মা আমাকে দুইটা বাড়ি মেরেছিলেন হাতপাখা দিয়ে ।আর বলছিলেন তোমাকে না বলেছি ভূতের গল্প পড়বে না ।
আসলে তখন আমি সেবা প্রকাশনীর ব্লাডরাইট বই টা পড়ছিলাম। পিটার ট্রিমেন এর লেখা ড্রাকুলা কে নিয়ে । অনুবাদকের নামটা মনে আসছে না ।যাই হোক রাতে লাইট অফ হবার সাথে সাথে মনে হত ড্রাকুলা বুঝি আশেপাশেই ঘুরে বেড়াচ্ছে ।আর সেদিন আমার রূপা খালা যে কিনা আমার সাথে ঘুমিয়েছিল বিছানায় একটা পেন্সিল টর্চ নিয়ে শুয়েছিল । রাতে ঠান্ডা সরু ধাতব বস্তুটা আমার ঘাড়ে স্পর্শ করা মাত্রই মনে হল ড্রাকুলা ব্যাটা বোধহয় দিলো দাত বসিয়ে। অতঃপর চিৎকার ও মধ্যরাতের পিটুনি।
বহুদিন এই ভয়ংকর কুৎসিত ভূতগুলো আমায় ঘুমের মাঝে ভয় দেখিয়েছে । তবে এখন আর আমি ভূতের ভয় পাই না ।কারন আমি জেনে গেছি বর্তমান পৃথিবীতে এই ভূতগুলো ভয়ঙ্কর হলেও দারুন সুদর্শন আর এদেরও আছে ভালবাসায় ভরা মন।
আমি যদি মাছ মাংস রান্না করে খেতে পারি তাহলে ওরাও পারে রান্না না করেই রক্ত খেতে।
দুটো ক্ষেত্রেই প্রাণীটিকে হত্যা করা হয় ।আমারটা যদি হয় ফুড চেইন তবে ভুতের টা নয় কেন? আর ওরা আজকাল অনেক সভ্য ,দু এক জন বাজে ভ্যাম্পায়ার আর ওয়্যার উলফ ছাড়া কেউ আর মানুষের রক্ত পান করে না , তার পরিবর্তে তারা পান করে পশুপাখির রক্ত আর কোন এক গোধূলি লগ্নে প্রেমে পড়ে মানব তরুণীর।
ধন্যবাদ জানাই স্টেফানি মেয়ারস(টোয়াইলাইট সাগার লেখিকা ) আর এল জে স্মিথ (ভ্যাম্পায়ার ডাইরিস এর লেখিকা) কে, কারন উনাদের কারনে আমার ভুত সম্পর্কে ভয়গুলো কেটেছে । এডওয়ার্ড কুলেন , স্টেফান আর ডেমন সালভাটর কিংবা জেকব ব্লাক দের গল্প পড়ে আর যাই হোক ভয় লাগে না ।
এদের এমন কিছু গুনাবলি উপস্থাপন করা হয়েছে যার ফলে এই প্রেডাটর রাই আজকাল হিরো ।
আর এসব গল্প বা উপন্যাস অবলম্বনে যখন নির্মিত হয় টিভি সিরিয়াল বা চলচিত্র আর ভূতপ্রেত এর চরিত্রে অভিনয় করে সুদর্শন অভিনেতারা তখন তো আর কথাই নেই।
আমার কলেজ পড়ুয়া মামাতো বোনের ফেসবুকের কভার ফটো তাই এডওয়ার্ড কুলেন(রবার্ট পাটিন্সন) আর প্রকৌশলের ছাত্র মামাতো ভাই এর প্রোফাইল পিকচার এ দেখি ডেমন সালভাটর(আয়ান সামারহল্ডার) এর মুখ । ছোট ভাইটি আবার জেকব ব্ল্যাক এর দারুন ভক্ত ।তার প্রিয় পশু নেকড়ে !!! ভীষণ শখ তার বাস্তবে নেকড়ে দেখার ।
গল্পের আসরে তো ছোট সেই বোনটি বলেই ফেলল ইশ!!আমার যদি এরকম বিএফ থাকতো !! কি মজাই না হত ! আমিও বেলার মত ওঁর ঘাড়ে চড়ে গাছের মগডালে উঠতাম ।
কি ভয়ংকর ইচ্ছা!! বাস্তব বা অবাস্তব পরের ব্যাপার , সে কল্পনায় এমন এক মানুষকে বা তার মত কাউকে চাইছে যে কিনা বেঁচে থাকে রক্ত পান করে ।
ফ্যান্টাসি বা কল্পনার জগতে অনেক কিছুই হতে পারে কিন্তু তা যখন মন ও মগজ কে আচ্ছন্ন করে ফেলে তা ক্ষতি ছাড়া ভাল ফল বয়ে আনে না । অবাস্তব কল্পনায় গা ভাসায় অনেকেই।
এই ত সেদিন অনলাইন নিউজ এ দেখলাম যুক্তরাজ্যের সাউথওয়েলসে পিরেটা ব্লেজ ও অ্যান্ডি ফ্লিথ নামের এক দম্পতি গত তিন বছর ধরেনিয়মিত পরস্পরের রক্ত পান করছেন। শুক্রবার যুক্তরাজ্যের একটি টিভি শো ‘দিসমর্নিংয়ে’ তারা এ কথা জানান।
রক্তপানের উপকারিতা উল্লেখ করেতারা বলেন, আমাদের একটি সন্তান আছে। সে আমাদেরকে পরস্পরকে কাছে আসতেসাহায্য করেছে। তবে পরস্পরের রক্ত পান করার মাধ্যমে আমাদের মাঝে আত্মিকবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে।
পাগল কি আর গাছে ধরে???
আর যুক্তরাষ্ট্রের পেন্সিল্ভানিয়ার এক মা তো রীতিমত টয়াইলাইট এর দ্বারা অনুপ্রানিত হয়ে নিয়মিত রক্তপান করছে !!
আসলে এরা সবাই মানসিক বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েছে ।ড্রাকুলা সিনড্রোম নামে এক মনের অসুখের কথা আমরা জানি যখন আক্রান্ত ব্যাক্তি রক্ত পানে আসক্ত হয়ে পরে। সে নিজেকে স্বাভাবিক মানুষ না ভেবে অতিপ্রাকৃত কোন সত্ত্বা ভাবে ।
এই অতিপ্রাকৃত চরিত্র গুলো টিন এজ ছেলেমেয়েদের উপর আরও ব্যাপক প্রভাব ফেলে । কারন এই বয়সি ছেলেমেয়েরা এমনিতেই কল্পনার রাজ্যে ভেসে বেড়ায় । ক্যামব্রিজ ইউনিভারসিটির সাহিত্যের অধ্যাপিক মারিয়া নিকলাজেভা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যদিও বিজ্ঞানীরা এখনও জানে না সাহিত্য মানব মস্তিস্কে কতটুকু প্রভাব ফেলে কিন্তু এটা নিশ্চিত যে এর কিছু প্রভাব তো আছেই।
পিচ্চির দল তো আজকাল আর ভূত বা ভ্যাম্পায়ার কে ভয় পায়না এসব হিরোর কল্যাণে । আর আমাদের দেশীয় ভুতপেত্নি মানে মেছো ভূত, মামদো ভূত আর শাকচুন্নিরা তো ম্লান হয়ে গেছে এইসব বিদেশি ভয়ংকর সুদর্শন ভূতেদের দাপটে ।
কারন আজকাল আর কেউ ঠাকুর মার ঝুলি পরে না বিশেষ করে শহুরে ছেলেমেয়ে গুলো তো একদমই না।
২,১০৮ বার পড়া হয়েছে
অনেক বড় পোষ্ট, একটু পড়েছি, সময় পেলে পড়ে পড়ে নেব।
আমি মনে করি ভুত বলতে কিছু নেই।
আমি ও দিনের বেলা ভাবি ভূত বলে কিছু নেই কিন্তু………………
খুব সুন্দর
চমৎকার
তাই, ধন্যবাদ আপনাকে কষ্ট করে পড়ার জন্য
সুন্দর
ভালো ভাবনার ভালো লিখা
পড়ে ভালো লাগলো ……………বেশ
শুভ কামনা থাকলো