মহাত্মা গান্ধীর ১০ পরামর্শ
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1802বার পড়া হয়েছে।
“মানুষের উপর কখনো আস্থা হারিয়ো না। মনুষ্যত্ব হচ্ছে সাগরের মতো, যদি সাগরের কিছু ময়লা হয়েও যায় তবুও পুরো সমুদ্র নোংরা হবে না।”
কথাটি বলেছেন মহাত্মা গান্ধী। তার সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছুই নেই। তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তিদের একজন এবং প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা। তিনি ছিলেন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। এর মাধ্যমে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণের অবাধ্যতা ঘোষিত হয়েছিল। এ আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অহিংস মতবাদ বা দর্শনের উপর এবং এটি ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম চালিকা শক্তি, সারা বিশ্বে মানুষের স্বাধীনতা এবং অধিকার পাওয়ার আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা।পৃথিবীর বদলে দিতে এই মহৎ ব্যক্তি বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। যুগে যুগে মানবজাতির জন্য যা অনুপ্রেরণীয় হয়ে থাকবে।
১। নিজেকে বদলাও: ‘পৃথিবীতে বদলাতে হলে প্রথমে তোমার নিজেকেই বদলাতে হবে।’ মহাত্মা গান্ধীর প্রথম পরামর্শই ছিল নিজেকে বদলানো। আপনি বিশ্বকে পরিবর্তন করতে চান, তবে পরিবর্তন আসতে হবে নিজের কাছ থেকে। পৃথিবীর সর্বপ্রথম পরিবর্তন আপনার নিজেকেই করতে হবে। তারপর আপনি অন্য কিছু পরিবর্তন করতে চাইতে পারেন।পৃথিবী পরিবর্তন করে নিজেকে পরিবর্তন না করলে আপনি কখনোই কাঙ্খিত পরিবর্তন খুঁজে পাবেন না। আপনার নিজের ভেতরেই হয়তো যাবতীয় নেতিবাচক ব্যাপারগুলো থেকে যাবে।
২। নিয়ন্ত্রণ আপনার কাছে: ‘কেউই আমাকে আঘাত করতে পারবে না, যদি আমি না চাই।’ আপনি নিজে কি মনে করেন এবং কি করতে চান তা সম্পূর্ণ আপনার ব্যাপার। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের কাছ থেকে আলাদা। হয়তো কিছু স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া আমাদের সবার মাঝেই আছে। কিন্তু তারপরও প্রত্যেকটি ব্যক্তি আলাদা এবং নিজের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ নিজের কাছে। আপনার আবেগ, চিন্তা শুধুই আপনার। অন্যদের দেখে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হওয়ার কিছু নেই।
৩। ক্ষমা করতে শিখুন: ‘দুর্বলরা কখনো ক্ষমা করতে পারেনা। ক্ষমা করা শুধু শক্তিশালীদের পক্ষেই সম্ভব।’ খারাপ কাজের মোকাবেলা অসৎ উপায়ে করলে কারো কোনো লাভ হবে না। বরং অপরাধীর অপরাধ ক্ষমা করতে শিখুন। এটিই আপনাকে অপরাধের বিরুদ্ধে আরো শক্তিশালী করে তুলবে।আপনি যদি অতীত নিয়ে পড়ে থাকেন, তাহলে তা আপনাকে আরও দুর্বল করে তুলবে। অতীত নিয়ে পড়ে থেকে আপনাকে কোনো সাহায্য করবে না। বরং অতীতের ব্যাপার ভুলে নতুনকে আঁকড়ে ধরাই বুদ্ধিমানের মতো কাজ।
৪। কাজ ছাড়া কিছু করা ঠিক না: ‘এক তোলা অনুশীলন এক টন কল্পনার চেয়ে অনেক উত্তম।’ কাজ না করে আসলে কোনো কিছু সমাধা করা যায় না। পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা একটু কঠিন ও কষ্টসাধ্য হলেও বাস্তবায়ন করতে হবে। ঘরে বসে পরিকল্পনা করা এবং বই ঘাঁটাঘাটি করলে খুব একটা লাভ হবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত মাঠে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।বই হয়তো আপনাকে জ্ঞান আহরণে সাহায্য করবে কিন্তু পর্যাপ্ত অনুশীলন ছাড়া কোনো কিছুই অর্জন সম্ভব নয়। সাঁতার শেখাটা আসলে বই পড়ে হবে না। এজন্য আপনাকে পানিতে নামতেই হবে।
৫। বর্তমানকে কাজে লাগান: ‘আমি ভবিষ্যৎ দেখতে চাই না। আমি বরং বর্তমান নিয়েই বেশি চিন্তিত। ঈশ্বর আমাকে ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেননি।’ বর্তমানকে মেনে যেকোনো কাজ করা ভালো। বর্তমান বাস্তবতাকে মেনে আপনার জীবন সাজাতে হবে। ভবিষ্যৎ দেখা অসম্ভব, তাই ভবিষ্যৎ সুন্দর করতে আপনাকে বর্তমানকে সঠিকভাবে লালন করতে হবে।যে মুহূর্তে আপনি বেঁচে আছেন সেই মুহূর্তটাকে নিয়েই বাঁচার চেষ্টা করুন। পরবর্তী মুহূর্তের আশংকায় বর্তমান নষ্ট করা বোকামি ও সময় নষ্ট।
৬। প্রত্যেকেই মানুষ: ‘আমি নিজেদেরকে আর ১০টা মানুষের মতোই মনে করি, যারা সবসময় ভুল করে। তবে আমার মাঝে ভুল স্বীকার করার সৎ সাহস রয়েছে।’ মানুষ মাত্রই ভুল। মানুষ ভুল পদক্ষেপ নেবে এটাই স্বাভাবিক। তবে ভুল করে হতাশ হলে চলবে না। ভুলকে শুধরে নিয়ে সামনে এগিয়ে চলতে হবে। পৃথিবীতে যে ব্যক্তিরা অনেক কিছু অর্জন করেছেন তারা প্রত্যেকেই মানুষ। চাঁদে যাওয়া থেকে শুরু করে এভারেস্ট আরোহী প্রত্যেকেই রক্ত-মাংসের মানুষ ছিলেন। আপনিও তেমন একজন মানুষ। তারা পারলে আপনিও পারবেন। তারা কেউই বিশেষ কিছু ছিলেন না। তাদের ইচ্ছেশক্তিই তাদের এমন অর্জনে সহায়ক হয়েছে। তাই নিজেকে নিয়ে নেতিবাচকতা এবং হতাশা দূর করুন।
৭। ধৈর্যশীল: ‘প্রথমে তারা তোমাকে অবজ্ঞা করবে, তারপর তোমাকে দেখে হাসবে, তারপর ঝগড়া করবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয় তোমারই হবে।’ জীবনে চলার পথে ধৈর্য ধারণ করুন। এটি আপনাকে গন্তব্যস্থলে নিয়ে যাওয়ার পথে সহায়ক হবে। সহনশীল থাকলে আপনি লক্ষ্য করবেন আপনার চারপাশের প্রতিবন্ধকতা আস্তে আস্তে দূর হতে শুরু করছে।গান্ধী তাঁর অহিংস আন্দোলনে সফল ছিলেন কারণ তার অনুসারীরা সবাই ধৈর্য ধরে তার পাশে ছিলেন। কেউই তাকে ত্যাগ করেননি।
৮।মানুষের ভালো খুঁজে বের করুন এবং সাহায্য করুন: ‘কোনো ব্যক্তি তখনই মহৎ হয় যখন সে মানুষের ভালো কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে।’ প্রত্যেকটি ব্যক্তির মাঝে ভালো কিছু অবশ্যই আছে। একই সঙ্গে কিছু খারাপ গুণাবলী থাকাও স্বাভাবিক। আপনি তার ভালো গুণগুলোর দিকে মনোযোগ দেন তবে সেটাই হবে বুদ্ধিমানের মতো কাজ। তবেই আপনার কাছে পৃথিবী ইতিবাচক ও সুন্দর মনে হবে।
৯।সৎ ও নির্ভেজাল থাকুন: ‘সুখ সেখানেই আছে যেখানে তুমি চিন্তা করো, বলো এবং যা করো।’ আপনার সামাজিক গুণাবলী বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আপনার নিজের কাছে সৎ থাকাটাই বেশি জরুরি। আপনি নিজের কাছে সৎ এবং খাঁটি থাকুন। আপনি নিজেকে নিয়ে যা চিন্তা করছেন, যেভাবে উপস্থাপন করতে চাচ্ছেন সেটা যদি করতে পারেন তবে আপনি অবশ্যই মানসিকভাবে অনেক শক্তিশালী ব্যক্তি।আপনার চিন্তা এবং কাজের সমন্বয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনেক মানুষই কাজ ও কথার সামঞ্জস্য রাখতে পারেন না। নিজের কাছে সৎ থাকুন এবং সৎ কাজ করুন। পৃথিবী বদলে যাবে।
১০।নিজেকে বিকশিত হতে দিন: ‘স্বাভাবিক বিকাশ জীবনের সূত্র। যে ব্যক্তি সবকিছুতেই হিসেব রাখতে চায়। সম্পূর্ণ বিকাশে শেকল পড়াতে চায়, সে নিজেকে ভুল পথে পরিচালিত করছে।’ আপনি আপনার গুণাবলীকে বিকশিত হতে দেবেন এবং নিজেই এর বিচার করবেন। কিন্তু প্রতিভা বিকশিত হতে না দেয়া বোকামি, সেটা যে ক্ষেত্রেই হোক। অবশ্যই আপনি নিজেই ভালো বুঝবেন যে নিজেকে নিয়ে কি করবেন। কিন্তু যেকোনো বস্তুই বিকশিত হতে দেয়া প্রকৃতির নিয়মকেই অনুসরণ করা। তাই নিজেকে সম্পূর্ণরুপে বিকশিত হতে দিন। এটিই আপনাকে নিয়ে যাবে বহুদূর।
তথ্যসূত্রঃ http://www.now-bd.com/2015/05/19/404011.htm
১,৭৮০ বার পড়া হয়েছে
ভালো লাগলৌ পড়ে খুব
ধন্যবাদ কবি।
প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানবেন –
গান্ধীর কথা বাসি হলেও খাঁটি । খুব ভালো লাগলো জেনে । অনেক ধন্যবাদ আপনাকে জানার সুযোগ করে দেয়ার জন্য ।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ কবি।
ভালবাসা জানবেন –
মেনে চলার চেষ্টা করব
কবিকে শুভেচ্ছা জানাই –
সুন্দর পোষ্ট অনেক ধন্যবাদ