মায়ার সংসার ৬ষ্ঠ পর্ব
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1484বার পড়া হয়েছে।
মায়ার সংসার ৫ম পর্বের পর….
এই সংসার জীবনে ঘটে যায় কত শত ঘটনা। কিছু জীবনে কালিমা লেপন করে কিছু আবার হয় ইতিহাস।কিছুই আমরা যেনেশুনে করিনা,ঘটে যায় অনেক ঘটনা যা নিজের অজান্তে।মানা যায়না তবুও মেনে নিতে হয়। মেঘ চাঁদকে ঢেকে দিলে ও জোৎস্না বিলায় সমান তালে হয়ত: ক্ষনিকের তরে মেঘ ঢেকে দেয়,সময় ফুরিয়ে যায় কেটে যায় অন্ধকার,আলোকিত হয় ভূবন।
মৌমিতা ও নান্টুর বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে গাঢ় হতে থাকে।একে অন্যের প্রতি মায়া মমতা জন্মাতে থাকে যেমনটা হয়েছে মায়া ও তুলির মাঝে। মায়া কাজের প্রতি অনেক যত্নবান তাই ধীরে ধীরে সে ব্যাসায় বেশ উন্নতি করছে । তুলি মায়ার কাজে খুবই খুশি। বেতনের ফাঁকে তাকে আর আর্থিক সাহায্য ও করে। এভাবে চলতে থাকে বেশ কিছু দিন মাস বছর।
মৌমিতা স্কুল ছুটি । এক দিন মৌমিতা বায়না ধরল নান্টুদের বাসায় বেড়াতে যাবে । তুলি ও মনে মনে ভাবছিল একদিন ওর বাসায় ঢু মেরে আসবে। যাক মৌমিতার কারণে আজ মায়ার বাসায় যাওয়া যাবে ।
জামান সাহেব ও আজ বাসায় আছে । বিকেলের চা খাওয়ার ফাঁকে।
তুলি : শুনছো ?
জামান সাহেব : কি শুনব কিছু তো বললেই না ।
তুলি : মৌমিতা নান্টুদের বাসায় যেতে চায় ।
জামান: নান্টু কে ?
তুলি : ওর বন্ধু, মায়ার ছেলে ।
জামান : মায়ার ছেলে মানে !? ও তোমার বুটিকের …
তুলি : হ্যা, মায়ার ছেলে ,ভাবখানা তুমি এই নামটা প্রথম শুলনা।
জামান: কত নামই তো ডেইলি শুনি কত মনে রাখা যায় ।আচ্ছা ড্রাইভার দিয়ে পাঠিয়ে দাও ।ঘন্টা খানেক থেকে চলে আসবে ।
তুলি: তুমি কি বললে, মেয়েকে একা পাঠাব ?
জামান: কেন ওকে একা কোচিংএ পাঠাও না ।
তুলি : পাঠাই । সেটা এটা এক হল । যেখানে সে কোন দিন যায়নি।
জামান: তুমি নিয়ে যাও ।
তুলি : হ্যা, তাই ভাবছি । শোন..
জামান: বল।
তুলি : তুমি ও চলনা আমদের সাথে।
জামান: কেন ?
তুলি : কেন আবার কি, তোমার বউ মেয়ে যাচ্ছে তুমি সাথে যাবে।
জামান: বলছিলাম কোন প্রগাম নাই আর আমার কাজ আছে ।
তুলি : কি কাজ ?
জামান: আমার ক্লাবে কাজ আছে ।
তুলি : তুমি আজ আমাদের সাথেই যাবে ।
মৌমিতা : বাবা চল , বাবা চলনা ।
মৌমিতার কথায় জামান সাহেব রাজি হল। গাড়ি ড্রাইভ করে নিজেই নিয়ে গেল ।
মায়াদের বাসার গেটে গিয়ে কলিং বেল টিপলেই ভিতর থেকে
কে ?
আমি,
আমি কে ?
মৌমিতা ।
মা মৌমিতা এসেছে (নান্টু বলে)
মায়া নান্টুকে ধমক দিয়ে দরজা খুলে দেখে ঠিকই মৌমিতা।
মায়া : ভাবি আপনি ! ভাই !!
মৌমিতাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে করতে ডইং রুমের বাতি জালিয়ে দিয়ে বসতে দিল। মায়া এখন কি রকবে দিশে হারা। এত বড় লোক তার বাসায় ।ছোপা সেট ঘুচাতে ঘুচাতে মায়া তার মাকে ডাকছে ।
মায়া : মা দেখ কারা এসেছে ।
মায়ার মা রুম থেকে বের হয়ে : কে ?
মায়া: মা মৌমিতা ,তুলি আপা ও জামান ভাই ।
মায়ার মা : খুব খুশি হয়েছি মা, বস বস ।
মায়া : রান্না ঘরে গিয়ে চায়ের পাতিল বের করল ।
তুলি ও পিছে পিছে গিয়ে রান্না ঘরে হাজির ।
মায়া : আপু তুমি ? ড্রইং রুমে বস। আমি ভাইয়ের জন্য চা করে নিয়ে আসি ।
তুলি : শুধু ভাইর জন্য ? আমরা কি দোষ করলাম ।
মায়া: না সবার জন্য হবে ।
তুলি : আরে বোকা একটু মজা করলাম । কারো জন্য করতে হবেনা । আমরা সবাই বাইরে খাব। তুমি আর নান্টু রেডি হও।আন্টি আপনি ও চলেন আমাদের সাথে।
না মা, আমি বাইরে খুব একটা যাইনা তা ছাড়া পলাশ বাইরে,যেকোন সময় চলে আসবে।
তুলি : ও কোথায় গেছে ?
মায়ার মা: ওর এক বন্ধুর বাসায় ।
তুলি : ও কি করছে ?
মায়া : এবার মাস্টারস ফাইনাল ইয়ারে ।
তুলি : ভাল। মায়া চল।
সবাই মিলে বাইরে গেল। খুব আনন্দ ফুর্তির মাঝে কাটাল ওরা । নানটু বাসায় এসে আদো আদো বাক্যে নানীকে তার অভিজ্ঞতার কথা।
মায়ার সততা ও নিষ্ঠা তুলির বুটিক হাউস আজ শহরের একটি নামি দামি পোষাক ব্রান্ড।
মায়া এই ব্যাবসায় যোগদানের আগে রতন ম্যানেজার হিসেবে কাজ করত। রতন তুলির এক গ্রামের ছেলে, সম্পর্কে ফুফাত ভাই। তাই ওকে সবাই একটু আলাদা দৃষ্টিতে দেখে । হাত টান সভাব আছে । তুলি যেনেও সেরকম কোন শাস্তি দেয় নাই । সে ধীরে ধীরে একটু বড় অংকের টাকা মারা পথে হাটে। মায়া যেমন পরিশ্রমি তেমনি সৎ ও। একদিন রতন ২টি পোষাক সেল করল কিন্তু ক্যাশে টাকা জমা দিল না। মায়া ব্যপারটা খেয়াল করল। রতন কে ব্যপারটা জিজ্ঞেস করতেই তেলে বগুনে জলে উঠল।
রতন: আমি কি চোর ?
মায়া : না তা হবে কেন ।
রতন : তা হলে আমাকে সন্দেহ করছেন কেন?
মায়া : তুমি ক্যাশে টাকা জমা দিচ্ছনা কেন ?
রতন : আমি কি চলে যাচ্ছি ?
মায়া বুঝতে পারল সে গায়ে পরে ঝগড়া করবে।সে চুপ হয়ে গেল ।
রতন মায়া কাজে যোনদান করার পর থেকেই মায়ার প্রতি ক্ষিপ্ত । সুযোগ খুঁজছে কিভাবে মায়াকে বিপদে ফেলা যায়। সামনে ঈদ। প্রচুর ওর্ডার হাতে ।সবাই কাজে ব্যাস্ত। মায়াকে বিপদে ফেলার জন্য রতন এক সপ্তাহের ছুটি চাইল।
রতন : ম্যাডাম আমার এক সপ্তাহের ছুটি দরকার।৩
মায়া : কেন ?
রতন : আপনাকে সব কিছু বলতে হবে ?
মায়া : এখন কাজের খুব চাপ তা ছাড়া হঠাৎ ছুটি লাগবে কেন জানতে চাইলাম।
রতন : কারণ কিছুনা । আমার শরীর ভাল না কয়েক দিন রেষ্ট লাগবে।
মায়া : না কাজের খুব চাপ তুমি ২ দিনের রেষ্টে যাও।
রতন : না দিলে বলেন আমি তুলি আপুর কাছ থেকে ছুটি নিব।
মায়া বুঝতে পারল সে ইচ্ছা করেই ঝামেলা করছে।কথা না বাড়িয়ে সে এক সপ্তাহের ছুটি দিল।
রতন পরের দিন সকালে তুলির বাসায় হাজির। ্
তুলি : রতন তুই এই সময় বাসায় ?
রতন : আপু এমই এলাম,অনেক দিন তোমার সাথে দেখান নাই তাই এলাম।
তুলি : আচ্ছা । তোদের কেমন চলছে ? মায়া কেমন করছে ?
রতন : ভাল । মায়া ম্যাডাম তো একটু .. থাক।
তুলি : বল কি হয়েছে ? একটু বেশি বকাঝকা করে ? আমি বলেছি সবাইকে কড়া দৃষ্টিতে রাখতে ।
রতন: আপু তোমার জন্য একটা ড্রেস নিয়ে এসে ছি ।
তুলি : কেন আনতে গেলি । দেখি , খুব সুন্দর তো , কোথায় পেলি ?
রতন : তোমার জন্য আমি আমার এক বন্ধুকে দিয়ে বানিয়েছি । (রতন মনে মনে দুষ্টু বুদ্ধি আটে)
আপু কেমন হয়েছে ?
তুলি : খুব ভাল,দাম কত ?
রতন : কেন ? দাম লাগবেনা।
তুলি : বোকা তুই কত টাকা আর বেতন পাও ।বল আমি মায়াকে বলব তোকে টাকা দিয়ে দিবে ।
রতন : আপু একটু কথা বলি ।
তুলি : বল,
রতন : থাক পরে বলব.. এই বলে সে চলে যাবে তুলি তার ড্রেসটি দিয়ে বলল এটা অফিসে নিয়ে রাখ আমি পরে নিব।
রতন ছুটি নিল কিন্তু সে সুস্থ্য আছে । তুলির কথা মত ড্রেসটি নিয়ে বুটিকে গেল ।
বুটিকে ঢুকতেই মায়ার সাথে দেখা ।
মায়া : রতন তুমি ? তুমি না ছুটি নিলা ।
রতন : ম্যাডাম দেখেন তো ড্রেসটি কেমন ?
মায়া : খুব ভাল ।কার জন্য কিনেছ, তোমার বান্ধবির জন্য ?
রতন : কি যে বলেন না ।বান্ধবি পাব কোথায় , দেখেন আপনার পছন্দ হয়েছে কিনা।
মায়া: পছন্দ হয়েছে কিন্তু কার জন্য এনেছ । আর বল আজ তুমি অফিসে কেন?
রতন : এটা আমি আপনার জন্য এনেছি ।
মায়া মনে মনে ভাবে গত কালকে যে ঘটনা গেল সে আবার আমার জন্য ড্রেস আনল কেন ? তা হলে আমি কি ওকে কালকে ভুল বুঝেছিলাম ..।
রতন তার প্লান মত এগুচ্ছে ।
চলবে ৭ম পর্ব
১,৪৯৫ বার পড়া হয়েছে
দুষ্ট লোকের মাথায় শয়তানি থাকলে বিপদে পড়তে সময় লাগে না। সুন্দর আগাচ্ছে। ভাল লাগল
পড়লাম এই পর্ব।বেশ ভাল লেগেছে।পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।শুভকামনা থাকল।
দারুন লাগলো ।