স্মৃতির পাতা থেকে –পর্ব ১০(২)
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1377বার পড়া হয়েছে।
আমি দ্রুত ভাবতে থাকলাম , মুখ দিয়ে গন্ধ আসার কারণ কি ?ভেবে পেলাম , কারণ আর কিছুই নয় , আমি সারা দিন সিগারেট খেয়েছি, মুখ দিয়ে সেই সিগারেটের গন্ধই বেরুচ্ছে ।মনটা অত্যন্ত খারাপ হয়ে গেল । ভাবতে লাগলাম একটাই মেয়ে । আর োন বাচ্চা নিব না সিদ্ধান্ত নিয়েছি ।সেই মেয়েটাই যদি আমার দিকে না তাকিয়ে মুখ ঘুড়িয়ে রাখে, তা হলে বেঁচে থেকে লাভ কি ? এর সমাধান করতে হলে হয় জীবন ছাড়তে হবে, না হয় সিগারেট ছাড়তে হবে ।এ দুটোর মধ্যে জীবন ছাড়ার চেয়ে সিগারেট ছাড়াই আমার নিকট সহজ বলে মনে হলো । ভাবতে লাগলাম, যে মেয়ের জন্য সব কিছু ত্যাগ করতে পারি , তার জন্য সিগারেট ছাড়তে পারবো না ? মনের মধ্যে জেদ চেপে গেল ।বাম হাত দিয়ে মেয়েকে বুকের মধ্যে আটকে রেখেছি । তাই ডান হাত পকেটে ডুকিয়ে দিয়ে সিগারেটের প্যাকেট বেড় করে মুড়াতে মুড়াতে ৫ তলায় উঠে সিড়ির মাঝখান দিয়ে ভাঙ্গা সিগারেটের অংশ ফেলে দিয়ে বাসায় প্রবেশ করলাম ।সেই থেকে আজ অবদি আর কোন দিন সিগারেট খাইনি । তাই বলছিলাম অনুরোধ , ভয় , লজ্জাএ সবে ধুম পান বন্ধ করতে পারে না । এক মাত্র কোন কারণে যদি মনের মধ্যে জেদ চেপে যায় , শুধ তা হলেই ধুম পান ত্যাগ করা সম্ভব ।
যাই হোক যে কথা বলছিলাম – আমাদের পাটের নৌকা ভোর রাতে ফুলবাড়িয়া হাটে গিয়ে পৌঁছলো । সকালে পাট নামানো হলো । দুপুরের আগেই পাট বিক্রী শুরু হলো । পাটের আমদানী বেশী । কাজেই খারাপ পাটের চাহিদা নেই বললেই চলে। আমাদের গ্রামের এক ফরিয়া ভাল পাট নিয়েছে ৩০/৪০ মন , তার সাথে খারাপ পাট নিয়েছে ৫ মন । ভাল পাটের ক্রেতা আছে কিন্তু খারাপ পাট কেউ নিতে চাচ্ছে না । ফলে সিদ্ধান্ত হলো খারাপ পাট গুলো হাটের এক ঘরে রেখে আসবে পরের হাটে বিক্রীর জন্য । ভাল পাট গুলো ১০/১২ জনে মিলে দ্রুত গতিতে নৌকায় তুলে দেওয়া হলো ।পাটের দাম নিয়ে এসে দেখা গেল ঘটেছে আর এক বিপত্তি । পাঁচ মন খারাপ পাট যেখানে রাখা ছিল, এক মূহূর্তে সে পাট উধাও হয়েগিয়েছে । কোথাও তার কোন হদিস নেই । যে পাহাড়ায় ছিল সেও নেই । সবাই মিলে খুব খুঁজা খুঁজি হচ্ছে । এমন সময় চাচা মিয়ার পাট পাহাড়াদার রাখালকে পাওয়া গেল । চাচার সেই রাখাল ছিল খুবই বোকা ।ভাল পাট গুলি যখন বিক্রী হয় তখন ক্রেতা বার বার বলছিলেন—
“ এ পাট গুলি খারাপ । এ গুলি চলবে না । এ গুলি নেয়া যাবে না ।“ এই কথা গুলি বোকা রাখাল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনেছিল । খুঁজা খুঁজির এক পর্যায়ে সে বললো—
“ চাচা কি খুঁজছেন ?” চাচা বলেন –
“ তুই জানিস না ? সবাই মিলে পাট খুঁজা খুঁজি হচ্ছে, আর সে এতক্ষণে বলে কি খুঁজছেন ?” চাচা রাগ করে বলেন-–“ তোকে যে এখানে পাটের পাহাড়ায় রেখে গেলাম , সে পাট কই ? তোর শোনার কাজ নেই । “ চাকর ছেলেটি আবার বলে—“ চাচা তাও বলেন ।“ চাচা রেগে গিয়ে বলেন –
“ শুনতে পাসনি ? তোকে এখানে পাট পাহাড়ায় রেখে গেলাম , সে পাট কই ?” রাখাল তখন দাঁত কেলিয়ে হেসে দিয়ে বলে –“ ও—তাই বলেন । আমি ভাবছি না জানি কি । সে পাটতো আমি চালিয়ে দিয়েছি । “
“ চালিয়ে দিয়েছিস মানে ? “ চাচা জিগায় । রাখাল ছেলেটি বলে—
“ ঐ লোক জনেরা যে বললো, এ পাট চলবে না । তাই আপনারা যখন ভাল পাট নৌকায় তুলে দিলেন, তখন আমি খারাপ পাট গুলি গোপনে পালিয়ে পালিয়ে সব ঐ নৌকায় তুলে দিয়েছি । ভাইবেন না ,কেউ দেখেনি ।বলে কিনা এ পাট চলবে না । লোক গুলি কি বোকা না চাচা ? “ বলেই মুচকি মুচকি হাসতে লাগল । চাচা বললেন-
“ খুব ভাল করেছিস ।“ এ রকম লোককে এ ছারা আর কি বলা যায় । সে থাকতে চাচার পাট চলবে না , এ কথা তার মোটেই ভাল লাগেনি । তাই সে সকল পাট চালিয়ে দিয়েছে । গোপনে পাট দিলে যে ঐ পাটের দাম দিবে না ,এ রকম চিন্তা করার মত মস্তিস্কের উর্ভরতাই তার নেই । পরে পাটের খরিদ্দারকে বিষয়টি জানানো হলো । তিনি বললেন—“ নৌকা হতে পাট খালাশ করার সময় যদি গননায় পাট বেশী হয় তাহলে পরের হাটে উক্ত পাটের দাম দিয়ে দেব । “ পরের হাটে অবশ্য উক্ত পাটের দাম দিয়ে দিয়েছিল । সে সময় বোকা লোকের অঞ্জতার কারণে সংঘটিত বিপত্তির জন্য খেসারত দিতে হয়নি । আজ সে দিনের কথা কল্পনাই করা যায় না । আজকের সমাজের মানুষ গুলো যেন সব সময় চিন্তা করতে থাকে – কখন , কিভাবে, কাকে ঠকিয়ে কাকে প্রতারিত করে নিজে অর্থ প্রতি পত্তি অর্জন করবে এবং বড় লোক বনে যাবে ।
১,৩৫৪ বার পড়া হয়েছে
জিদ ধরে সিগারেট ছাড়ার গল্প ভাল লাগলো। তবে এরকম জিদ সবাই ধরতে পারেনা। অবশ্য ধরলেই কাজ হয় সেবিষয়ে আপনার সাথে আমি একমত।
অনেক ধন্যবাদ গল্প লেখার জন্য।
আজকের সমাজের মানুষ গুলো যেন সব সময় চিন্তা করতে থাকে – কখন , কিভাবে, কাকে ঠকিয়ে কাকে প্রতারিত করে নিজে অর্থ প্রতি পত্তি অর্জন করবে এবং বড় লোক বনে যাবে । ++++++++++++
সুন্দর লিখেছেন রহমান ভাই। আপাতত শুভেচ্ছা জানিয়ে যাই …………….ভাল থাকবেন।
জিদ ধরে সিগারেট ছাড়ার গল্প ভাল লাগলো। তবে এরকম জিদ সবাই ধরতে পারেনা। অবশ্য ধরলেই কাজ হয় সেবিষয়ে আপনার সাথে আমি একমত।
ভাল লাগল গল্পটি । বেশ ।