স্মৃতির পাতা থেকে–( পর্ব—–৪৬/২ )
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1279বার পড়া হয়েছে।
সুদান আসার দুই দিন আগে অর্থাৎ ১০ ডিসেম্বর শুক্রবার দিন জেড়িনা মযাডামের বাসায় গিয়েছিলাম । আসলে উদ্দেশ্য ছিল ম্যাডামের বড় ছেলে অনিরুদ্ধর সাথে দেখা করা এবং কথা বলা । শুক্রবার করে গেলাম যাতে অনিরুদ্ধকে বাসায় পাই । যেদিন বিয়ের কার্ড দিতে গিয়েছিলাম সেদিনও তাকে বাসায় পাইনি । তাই তার সাথে দেখা হয়নি । অন্যদিন গেলে স্কুলে থাকে । বাসায় গিয়ে নক করতেই কাজের মেয়ে দরজা খুললো । আমি নিজের পরিচয় দিয়ে বললাম—–
‘ আমি শুভর সাথে দেখা করতে এসেছি । মেয়েটি আগের দিন আমাকে দেখেছিল । কিন্তু ভাব দেখে মনে হলো সাত জনমে আমাকে কখনো দেখেনি । আমাকে যেন ঠিক চিনতে পারছে না । ফলে দরজা বন্ধ করে বললো——-
‘ আমি শুভকে ডেকে দিচ্ছি । ‘ একটু পর শুভ এসে হাজির হলো । বললো—
‘ আরে–আঙ্কেল যে ? আসুন, আসুন । ‘ আমি বাসায় ঢুকতে ঢুকতে বললাম—-
‘ তা বাবা শুভ, কেমন আছ ? ‘ শুভ বললো—–
‘ আমি ভাল আছি । আপনি কেমন আছেন ? ‘
‘ আমিও ভাল আছি । তোমার আম্মুর সাথে আজ কথা হয়েছ ?’ শুভ বললো—
‘ হ্যা হয়েছে । আম্মু প্রতিদিন সকালে রিং করেতো । ‘ আমি বললাম—-
‘ তোমার ভাইয়ার সাথে কথা হয়নি ? ‘ শুভ ছোট মানুষ , কথার ভাল মন্দ তেমন বুঝেনা । কাজেই সে বলে ফেলল—-
‘ আম্মু ফোন করলে ভাইয়া বেশী কথা বলে না । ভাইয়া ফোন ধরেই নানুকে ডেকে দেয় । ‘ আমি বললাম—-
‘ তোমার নানু কেমন আছে ? ‘ শুভ বললো——
‘ নানু ভাল আছে । ‘ শুভ ছুট মানুষ, মায়ের কথা শুনতেই মনটা ভার হয়ে গেল । আমি বললাম—-তোমার আম্মুর সাথে কথা বললে মনটা খুব ভাল হয় বুঝি ? শুভ বললো—-
‘ হ্যা ভাল হয়তো । আম্মু বাসায় থাকে না , কম্পিউটারে কথা বলেতো, আম্মুর ছোঁবই দেখা যায় । তাই ভাল লাগে । আমাকে পেয়ে শুভকে বেশ খুশী খুশী মনে হলো । আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম—-
‘ তোমার আপুর বিয়ের অনুষ্ঠান কেমন লাগলো ? ‘ শুভ বললো—-
‘ খুব ভাল লাগলো । আপুকে খুব সুন্দর দেখালো । ‘ আমি বললাম—-
‘ আপুর বরকে ? ‘
‘ সেও সুন্দর । দুজনকেই সিনেমার বর কনের মতো দেখা গেল ।’ আমি বললাম–
‘ তোমার ভাইয়া বাসায় নেই ? ‘
‘ ভাইয়া বাসায় আছেতো । ‘ শুভ বলে ।
‘ তাহলে ভাইয়াকে ডাক, আমি পরিচিত হয়ে যাই । ‘ শুভ তার ভাইয়াকে ডাকতে চলে গেল । ইতোমধ্যে কাজের মেয়ে চা নাস্তা নিয়ে এলো । আমি চা নাস্তা খেতে খেতেই শুভ অনিরুদ্ধকে ডেকে নিয়ে এলো । আমি তাকে দেখেই বললাম—–
‘ গুড মর্নিং অনিরুদ্ধ । ‘ অনিরুদ্ধ বললো—–
‘ আচ্ছালামুয়ালায়কুম ।’
‘ ওয়ালায়কুমাচ্ছালাম বলেই আমি বললাম–ধন্যবাদ তোমাকে । ‘ অনিরুদ্ধ বললো
‘ ধন্যবাদ কেন? ‘
‘ তুমি খাঁটি বাঙ্গালী তাই । ‘
‘ কি করে বুঝলেন যে, আমি খাঁটি বাঙ্গালী ?’
‘ একজন খাঁটি বাঙ্গালী আর একজন খাঁটি বাঙ্গালীকে চিনবে না কেন ? গুড মর্নিং এর পরিবর্তে তুমিতো গুড মর্নিং বলোনি ! ‘
‘ হ্যা বাঙ্গালী হয়ে গুড মর্নিং বলাটা আমার কাছে মেকী মেকী মনে হয় । তাই আমি কখনো গুড মর্নিং বলিনা । ‘ আমি বললাম—–
‘ ঠিক বলেছ । আমিও বলিনা । আজই প্রথম পরীক্ষামুলক ভাবে বলেছি । তাও ফেল করলাম । তুমি কি জান যে, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা ? আমি এখনও টি,ভি,তে বাংলা সিনেমা দেখি । বাঙ্গালীদের সাথে ক্রিকেট খেলা হলে , সেই খেলার সব কয়টি আমি দেখি । ‘ শুভ খুশীতে উৎফুল্ল হয়ে বললো—-
‘ আপনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ? আপনার নিকট মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতে হবেতো ? ”
বাবা সে গল্প অনেক ভয়ংকর গল্প । আজতো সময় নেই। আর একদিন এসে তোমাদের দুজনকে মুক্তি যুদ্ধের গল্প শুনিয়ে যাব । আচ্ছা অনিরুদ্ধ আজ কি আম্মুর সাথে কথা হয়েছে ? অনিরুদ্ধ বললো —–
‘ আম্মু যখন রিং করেছিলেন, তখন আমি ঘুমাচ্ছিলাম । তাই আজ কথা হয়নি । ‘ আমি বললাম–শোন অনিরুদ্ধ , বিদেশে থাকলে দেশের মানুষের কথা খুব মনে হয় । কাজেই আম্মু যখন রিং করে তখন আম্মুর সাথে কথা বলো কেমন । অনিরুদ্ধ বললো-
‘ ঠিক আছে বলবো ।’ আমি বললাম—
‘ এ সপ্তাহে তোমার আব্বুর সাথে দেখা হয়েছে ? ‘
‘ না দেখা হয়নি ।’
‘ কেন ? ‘আব্বুর সাথে দেখা করোনি কেন ? তোমরা যদি আব্বুর সাথে যোগাযোগ না করো তা হলে আমরা আব্বু আম্মুকে কাছা কাছি এনে দিব কি করে ? ‘ অনিরুদ্ধ বললো—-
‘ আপনি কি সে রকমই ভাবছেন ? ‘
‘ অবশ্যই । ভাবছি মানে কিগো, আমিতো মোটা মুটি পণ করে বসে আছি । কথাটা শোনে মনে হলো , কথাটি অনিরুদ্ধর মনে ধরেছে । তার মুখে একটা খুশীর আভা ভেসে উঠলো । আমি বললাম—
‘ তোমরা যদি আমার সাথ দাও তা হলে কাজটা আমার জন্য সহজ হবে । সাথ দিবে কিনা বলো ? অনিরুদ্ধ আমার হাত ধরে বললো—-
‘ আমরা আপনার সাথ দিব । বলুন আমাদের কি করতে হবে ? ‘
‘ তোমাদের কিছুই করতে হবে না । শুধু আজ থেকে তোমরা আম্মু ফোন করলে তার সাথে ভাল ভাবে কথা বলবে । আর তোমার আব্বুর সাথে দেখা হলে তাকে বলবে তোমার আব্বু যদি তোমাদের দেখতে চান তাহলে তিনি যেন এ বাসায় এসে তোমাদের দেখে যান । ‘ শুভ বললো—–
‘ আম্মু মানা করেছে যে । ‘
‘ করোক মানা । তবু তোমরা বলবেই । তাছাড়া বলবে , তোমার আম্মুতো এখন বাসায় নেই । কাজেই আসতে অসুবিধা কি ? আস্তে আস্তে বলতে বলতেই তিনি একদিন বাসায় আসতে শুরু করবেন । তোমরা আপাতত শুধু এ-টুকুই করবে । পরে কি করতে হবে সেটা আমি বলে দিব । আর স্কাইপিতে তোমাদের সাথে আমার কথা হবে । ঠিক আছে ? ‘ তারা উভয়েই বললো—-
‘ হ্যা ঠিক আছে । ‘
‘ তা হলে আজ থেকে আমরা তিনজন বন্ধু হয়ে গেলাম । কি বলো ? ‘
‘ হ্যা আমরা বন্ধু হয়ে গেলাম । ‘
‘ তা হলে হাতে হাত দাও ।’
আমার হাতের উপর প্রথম অনিরুদ্ধ এবং পরে শুভ হাত রাখলো । ‘ আমি বললাম–
‘ প্রমিজ করো আমরা কেউ কারু কথা অমান্য করবো না । তারা দুজনেই বললো-
‘ ঠিক আছে অমান্য করবো না । ‘ বেশ তা হলে শোন —
‘ আমাদের প্লান কাউকে বলা যাবে না । আমি পরে তোমাদের সাথে স্কাইপিতে যোগাযোগ করবো । আজ আসি তাহলে ।
‘ আমি তাদের কাছ থেকে বিদায় নিলাম । আমি দুটি বাচ্চার মুখেই খুশীর ঝিলিক দেখতে পেলাম । ভাবলাম , খোদাই জানেন সফল হতে পারবো কিনা ? এ সব ভাবতে ভাবতেই আমি আমার বাসায় পৌঁছলাম ।’
১,২৬৬ বার পড়া হয়েছে
সব পড়া হয়নি মাঝে মাঝে পড়েছি চলতে থাকুক
কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ । শুভ কামনা । ভাল থাকুন ।
উফ ভাল লাগল খুব এ পর্বটি
শুনে খুশী হলাম । সম্প্রতি লেখার প্রতি আকর্শন কমে গেল কেন ? শুভ কামনা ।