স্মৃতির পাতা থেকে—-(-পর্ব——৪৬ )
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1072বার পড়া হয়েছে।
কোন দেশে মিশন থাকা না থাকা নির্ভর করে যে দেশে মিশন চলছে সেই দেশের সরকারের ইচ্ছার উপর । কারন সরকার যদি রাজি না থাকে তাহলে সেই দেশে মিশন থাকতে পারে না । আমরা এসেছি শান্তি মিশনে । আফগানীস্থানের মতো যুদ্ধ করতে নয় । এসেই শুনলাম আইভরি কোষ্টে নির্বাচন হয়েছে । নির্বাচনে বিরুধী পক্ষ্য জয়লাভ করেছে । কিন্তু সে দেশের চলতি সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করতে রাজি নয় । বিরুধী দলের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য জাতি সংঘ থেকে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে । ফলে আইভরি কোষ্টের সরকার জাতি সংঘের মিশন কে শত্রু ভাবতে শুরু করেছে । সরকার হুকুম জারী করেছে মিশনের কোন লোক আইভরি কোষ্টে থাকতে পারবে না । এখন জাতি সংঘের সামনে দুটি পথ খোলা ।এক বিরুধী পক্ষের সাথে যোগ দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা । দুই — মিশন গুটিয়ে অন্য কোথাও ছলে যাওয়া । প্রথম পন্থা গ্রহন করার কন উপায় নেই । কারণ যারা ঐ দেশের মিশনে আছে তারা কেহই যুদ্ধ করতে রাজী হবে না । কাজেই মিশন গুটিয়ে চলে আসতে হবে বাদ্য হয়েই । শুনা যাচ্ছে জাতি সংঘ আইভরি কোষ্ট থেকে মিশন গুটিয়ে পাশের দেশে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে । আমাদের সুদানেরই একটি অংশ দক্ষিণ সুদানে আগামী ৯ জানুয়ারী/২০১১ তারিখে নির্বাচন । এই নির্বাচনে যদি আল বশিরের দল কারচুপি করতে না পারে তবে কিছুতেই জিৎতে পারবে না । যেহেতু আইভরি কোষ্টের ক্ষমতা না ছাড়ার খবর সুদানেও পৌঁছেছে , সেহেতু নির্বাচনে হেড়ে গেলে বশির ক্ষমতা হস্তান্তর করবে বলে মনে হয় না । তদুপরী বশিরের বিপদ আরো একটি আছে । সেটা হলো তার উপর জাতিসংঘের গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি আছে । দক্ষিণ সুদানের ক্ষমতা চলে গেলে আস্তে আস্তে তার পতন শুরু হবে । একদিন হয়তো জাতি সংঘ বাহিনী তাকে গ্রেফতারও করবে এবং বিচারে নিশ্চিত তার মৃত্যু দন্ড হবে । এই হিসেব বশির নিজেও জানে । আর জানে বলেই নির্বাচনে হেড়ে গেলেও বশির ক্ষমতা না ছাড়ার সম্ভাবনা প্রায় শত ভাগ । সেই লক্ষণ দেক্ষেই আমাদের সকল ক্যাম্পে ফরমান জারি করে রেখেছে , যাতে আমরা শর্ট লাগেজ গুছিয়ে মোটামুটি মানসিক ভাবে প্রস্তুত তাকি । যে কোন সময় আদেশ হলেই আমাদের স্থানান্তর শুরু হবে । ফরমান শুনে আমরাও প্রস্তুত হয়ে আছি । একবার নাকি এমন এক পরিস্তিতিতে এখানকার জাতিসংঘ মিশনের সব লোক পার্শবর্তী দেশ উগান্ডায় নিয়ে গিয়েছিল । এবারো যদি এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় তাহলে আমাদেরকেও উগান্ডায় নেওয়া হবে । আমরা কিন্তু তাতে তেমন অসন্তোষ্ট নই । কারণ বেতন পাবো ভাতা পাবো খাবার পাবো উপরি হিসেবে আরো একটি দেশ ঘুরা হবে । এ সংবাদে কেহ কেহ বেশ খুশীতেই আছে। আমারো খুব একটা আপত্তি নেই । কিন্তু অসুবিধা হবে বাসার সাথে যোগাযোগে । এখানে মডেম আছে । তাছাড়া খুব কম খরচে কথা বলার জন্য এম, টি, এম একটি প্যাকেজ দিয়েছে। আমরা তথ্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে খুবই সুবিধাজনক অবস্থানে আছি । উগান্ডায় গেলে সেটি থাকবে না । সেখান থেকে কিভাবে কথা বলা যায় তার একটা পন্থা খুঁজে বের করতে হবে আমাদের । যাই হোক এখানেতো কর্তার ইচ্ছায় কর্ম হয় । আমরা কর্তার শাহী ফরমানের অপেক্ষায় আছি ।
এই তো কদিন আগেই দেশ থেকে ঘুরে এলাম । মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের পর প্রায় ১৫ দিন দেশে ছিলাম । কিন্তু সুমনার সাথে কথা বলা হয় নি । সে বিয়ের অনুষ্ঠানে আসেনি । সুমনার আসার খুব ইচ্ছে থাকার কথা । ফোনে তার স্বামীকেও রাজি করিয়েছিলাম । তাহলে সমস্যাটা দেখা দিল কোথায় তা জানা দরকার । সম্ভবত তার স্বামী শেষটায় আসতে রাজি হয়নি । এর অবশ্য দুটো কারণ হতে পারে ।
এক– অনুষ্ঠানে আসার জন্য উপহার নিয়ে সমস্যা হতে পারে । আমরা মুখে যাই বলি না কেন আমাদের সমাজে উপহার পদ্ধতিটা এখনো বেশ দাপটের সাথে চালু আছে । যতই বলা হোক উপহার দেওয়ার কোন দরকার নেই , তথাপী উপহার ব্যাতীত কেহই বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির হয়না । আমার ভিতরের অবস্থা কেমন সেতো শুধু আমি একাই জানি । কিন্তু বাইরে থেকেতো সুমনার বর মনে করে থাকবে যে আমি বড় লোক , বড় চাকরী করই । সেখানে ছোট খাটো উপহার নিয়ে আসে কিভাবে । এমনিতেইতো সে ছোট চাকরী করে বলে হীনমন্যতায় ভোগে ।
দুই– বিয়েতে আসার জন্য সুমনার অতি উৎসাহ তার কাল হয়ে দাড়াতে পারে । হয়তো তার স্বামী ল্যাং মারা কোন কথা বলে থাকতে পারে । যে জন্য সুমনা রাগ করে বিয়েতে আসার প্রোগ্রাম বাতিল করে থাকতে পারে । যাই হোক না কেন বিয়েতে না আসতে পারার কারনে সুমনা মানসিক কষ্টের মধ্যে আছে , তাতে আমি নিশ্চিত । আসলে তাকে বিয়েতে আনার আমার অন্য উদ্দেশ্য ছিল । আমি চাচ্ছিলাম, এই বিয়ের উপলক্ষে তার সাথে তার অন্যান্য আত্মীয় স্বজনদের সাক্ষাৎ হয়ে যাক । এতে নানা দিক থেকে উপকার হতে পারে । সুমনার আত্মীয় স্বজনেরা তাকে সহজভাবে গ্রহন করতে পারে । অথবা তার সাথে খারাপ আচরণ করতে পারে । এর যে কোনটাই করুকনা কেন, সুমনার বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করা আমার জন্য সহজ হবে । কেহই তার পক্ষ নিয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি । সেই জন্য সুমনা বেকায়দায় পরেছে । তা না হলে সুমনার বড় বোন প্রেম করে বিয়ে করেছে । তার খালাত বোন সব কটাই প্রেম করে বিয়ে করেছে । খালাতো ভাই প্রেম করে বিয়ে করেছে । তা হলে একা সুমনা কি অপরাধ করেছে ? মূলত তাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কেহ তার পক্ষাব্লম্বন করেনি । এই জন্য সুমনা বিপদে পরে আছে । আমি চাচ্ছিলাম সুমনা এই বিয়েতে আসুক এবং সুমনার আত্মীয় স্বজনদের সাথে তার দেখা হোক । তাদের আচরণের উপর ভিত্তি করে আমি সুমনার বিষয়ে এগুতে পারতাম । কিন্তু সে এলো না । এ ই জন্য আমি বেশ দুশ্চিন্তায় আছি । দুশ্চিন্তা মুক্ত হওয়ার জন্য আমি সুমনাকে রিং করলাম । সুমনা রিং ধরে বললো——-
” এত দিন পরে রিং করলেন ? মরে গেলেতো এতদিনে কোলখানিও শেষ হয়ে যেত । কেন যাইনি সে জন্য রিং করেছেন তো ? ” আমি বললাম——
‘ না, মোটেই না । তুমি ভাল আছ কিনা সেই দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম । ‘
‘ তা এত দিন পর দুঃশ্চিন্তা হয়ার কারণ ? ‘
‘ এত দিন পর নয় ডার্লিং । তুমিতো জানই অন্য মানুষের মত আমার এত টাকা পয়সা নেই । কাজেই খরচের টাকা কিভাবে কভার দেওয়া যায় সেই চিন্তায়ই এ কদিন কেটে গেল । ‘
‘ তা টাকা নেই বলে বুঝি মেয়ের বিয়েটা এত ধুম ধাম করে দিলেন ? ‘
‘ তোমার বিয়েটাওতো ধুমধাম করে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল । কিন্তু তার জন্য তো সময়ই পাওয়া গেল না । তা ধুমধাম করে মেয়ের বিয়ে দিলাম তা তুমি জানলে কি করে ? ‘
‘ সব কিছু জানতে হয় না অনুভব করতে হয় । ‘
‘ আমারই তীরে আমাকে বদ । বেশ উন্নতি হয়েছে তো তোমার । তা অনুভবে আর কি কি বুঝলে ? ‘
‘ সব কথাই আপনাকে বলে দিব নাকি ? ‘
‘ কাছে থাকলে বুকে চেপে ধরে হৃদয়ের উষ্ণতায় বুঝে নিতাম । দূরে আছি তাই সে সুযোগ নেই । ‘
‘ সুযোগের অপেক্ষায় দিন গুনতে থাকুন । মরার পরতো কোন দাবীদার থাকবে না তখন সুযোগ পাবেন । ‘
‘ বেশ দেখাই যাক অপেক্ষার প্রহর কবে কাটে । তা- তুমি না আসার কারণ ? তোমার বর তো আমার নিকট রাজি হয়েছিল । আমি তোমার জন্য একটা উপহার কিনে রেখেছিলাম । যদি তুমি তোমার বরকে নিয়ে বেকায়দায় পর । আসলে গেইট থেকেই তোমার হাতে ধরিয়ে দিতাম । ‘
‘ আমি আসতে চেয়েছিলাম । কিন্তু ‘ও’ যেতে রাজি হলো না । এখন মনে হচ্ছে গেলে ভালই হতো । ‘
১,০৬১ বার পড়া হয়েছে