স্মৃতির পাতা থেকে ( পর্ব——-৪১/১ )
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1563বার পড়া হয়েছে।
আমাদের মতো দরিদ্র পিড়ীত দেশে হয়তো আরো দীর্ঘ সময় ধরে আমরা তদন্ত কাজে আধুনিক যন্ত্রপাতি পাবো তেমনটা আশা করা যায় না । তাই বলে বাংলা দেশের পুলিশ কোন মামলা তদন্তে সত্য ঘটনা উদ্ঘাটন করবে না এমনতো নয় । বস্তুগত তথ্য প্রমান যেখানে সংগ্রহ করা সম্ভব না হয় সেখানে তদন্তকারী অফিসারদের কোন মামলার ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনের জন্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও স্বাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদের উপরই নির্ভর করতে হয় । তথাপী কোন মামলার ঘটনাস্থলযদি নিষ্ঠার সাথে পরিদর্শন করা যায় তাহলে উক্ত ঘটনার সত্যতা প্রমান করার মতো তথ্য উপাত্ত ঘটনা স্থল থেকেই পাওয়া যায় । ঘটনাস্থল পরিদর্শনে মনোযোগী হলে তথ্য উদ্ঘাটন করা যে কতটা সহজ হয় তা আমি ইতোপূর্বে একটি ধর্ষনের ঘটনা তদন্তের বর্ণনায় বলেছি । ঘটনাস্থল পরিদর্শন প্রসঙ্গে একটি ডাকাতি মামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শনের কথা না বলে পারছি না । তখন আমি পটুয়াখালী সদর থানার ও,সি। সকালে অফিসে বসে কাজ করছি । এমন সময় কয়েকজন লোক এলো থানায় । অভিযোগ নিয়ে এসেছে তাদের বাড়িতে ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে । তাই মামলা রুজ্জু করতে এসেছে । ডিঊটি অফিসার লোকদের আমার নিকট নিয়ে এলো । যে লোকদের বাড়িতে ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে তার নিকট থেকে ঘটনার বিষদ বিবরন শুনলাম । সে লোকটি বললো যারা তার বাড়িতে ডাকাতি করেছে তিনি তাদের মধ্যে ১০ জন ডাকাত চিনতে পেরেছেন । সাধারনত ডাকাতেরা যখন ডাকাতি করে তখন তারা তাদে র পরিচিতি লুকানোর জন্য মুখে কালি বা রং মেখে চেহারা বিকৃত করে অথবা মুখে কাপড় বাধে
বা মুখোশ পরিধান করে , ডাকাতি করে থাকে । ফলে ডাকাতি যারা করে তাদেরকে কেহই চিনতে পারে না । যদিও বা কেহ সনাক্ত করে সেটা দেখে নয় , কথার শব্দ শুনে প্রথম সন্দেহ করে । পরে তাকে গ্রেফতার করে মালামাল উদ্ধার করে সন্দেহ নিশ্চিত করতে হয় । সরাসরি যারা ডাকাত চিনেছে বলে দাবী করে তাদের ক্ষেত্রে ৯৯% ভাগই শত্রুতা মূলক । ১% ভাগ যদি কেহ সত্যিকার অর্থেই চিনতে পারে তাহলে সে কখনো ডাকাতের নাম উল্লেখ করে এজাহার করে না । কারণ সত্যিকার ডাকাত যারা তাদের সাথে কেহ সরাসরি শত্রুতায় জড়িয়ে জীবনের ঝুকি নিতে চায় না । তাছাড়া অতি সহজে চেনা যাবে এমন আকৃতি ধরেও ডাকাতেরা ডাকাতি করতে আসে না । কাজেই কেহ যদি দাবী করে যে, যারা ডাকাতি করেছে , সে ঊক্ত ডাকাতদের চিনতে পেরেছে তাহলে প্রথমেই ধরে নিতে হবে , হয় ডাকাতির ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যে, নয়তো ডাকাতি হয়েছে সত্যি, যাদের আসামী করতে চায় তারা তার শত্রুপক্ষ্য । ডাকাতি যখন হয়েছেই , সেই সুবাদে তাদের একটু হয়রানি করে দিতে চায় । কাজেই এই সকল মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হয় সব চেয়ে বেশী । আমার নিকট বাদী যখন ডাকাতির কথা বর্ণনা করে ১০ জন ডাকাতকে চিনেছে বলে উল্লেখ করলো , তখনই মামলার ঘটনার সত্যতা নিয়ে একটি বড় আকারের প্রশ্ন দেখা দিল । আমি তাকে অনেক বুঝালাম যে, আপনি যাদের নাম উল্লেখ করে মামলা করতে চাচ্ছেন তারা যদি এই মামলার ঘটনার সাথে জড়িত না থেকে থাকে তাহলে তাদের নাম উল্লেখ করে মামলা করবেন না । কিন্তু লোকটি কিছুতেই তা মানলো না । ফলে বাধ্য হয়েই তার বর্ণনা মোতাবেক মামলা রুজ্জু করা হলো । এরকম পরিস্থিতিতে কেহ কেহ মামলা রুজ্জু না করে প্রাথমিক তদন্ত করে ঘটনা মিথ্যা প্রমান করে রেখে দেয় । এই ধরনের পদক্ষেপ নেয়া ভুল এবং অত্যন্ত যুকি পূর্ণ ।
প্রথমতঃ–ডাকাতি সংঘটনের অভিযোগ আসলে আইনত দিক থেকে থানা পুলিশ মামলা রুজ্জু করতে বাধ্য । প্রাথমিক তদন্ত করে মামলা রুজ্জুর কোন অবকাশ নেই । মামলা রুজ্জুর পর তদন্তে তা মিথ্যা প্রমান হলে সে মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে । প্রয়োজনে মিথ্যা মামলা দায়ের করার অপরাধে বাদীর বিরুদ্ধে দঃ বিঃ ২১১ ধারায় প্রসিকিউশন দেওয়া যেতে পারে । তাতে পুলিশের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকবে না ।
দ্বিতীয়তঃ–যদি ডাকাতির অভিযোগের মামলা রুজ্জু না করা হয় তা হলে ও,সি, বিপদে পরবে ইহা ৯০% ভাগ নিশ্চিত । কারণ যিনি একটি ডাকাতির মিথ্যা মামলা দায়ের করতে এসেছেন তিনি নিসন্দেহে একজন টাউট স্বভাবের লোক হবে তাতে কোন ভুল নেই । থানায় মামলা রুজ্জু করাতে না পেরে তিনি সাথে সাথেই দৌঁড়ে যাবেন কোর্টের উকিলদের কাছে । বাংলাদেশের উকিলদের কাজই হলোকিভাবে একটি মিথ্যে মামলা রুজ্জু করিয়ে ময়াক্কেলের টাকা লুটে নেয়া যায় । ফলে কোর্টে একটি মামলা দায়ের হলে সাথে সাথেই উক্ত কোর্ট পিটিশনের উপরনিয়মিত মামলা রুজ্জুর নির্দেশ সহ ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব সেটি থানায় পাঠিয়ে দিবেন । তখনতো মামলা রুজ্জু করতেই হবে । মাঝখান থেকে ক্ষতি হবে এই যে , উক্ত ব্যক্তি উকিলের কথায় ও, সি’র বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার অভিযোগে একটি দরখাস্ত পুলিশ হেড কোয়াটারে দাখিল করবে । তখন ও,সি,র বিরুদ্ধে মামলা সাপ্রেশনের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা রুজ্জু হবে । কাজেই কোন অভিযোগের ঘটনা মিথ্যা এটা অনুমান করে মামলা রুজ্জু থেকে বিরত থাকা উচিৎ নয় । কারণ মিথ্যা মামলা করতে এসেছিল সে তার শত্রুদের বিরুদ্ধে , কিন্তু যখনই ও,সি, মামলা রুজ্জু না করবে তখনই সে লোক তার শত্রুদের পিছু ছেড়ে দিয়ে ও,সি,র বিরুদ্ধে লেগে যাবে । কোন ঘটনা সাজানো হলে প্রথম পদক্ষেপে তা মিথ্যা প্রমান করা যত সহজ , পরবর্তীতে নানা মুখী তদন্তের কারনে সাজানো সাক্ষীরা এতই পেকে যায় যে, তখন মিথ্যা ঘটনাকেও মিথ্যা প্রমান করা প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে পরে । কাজেই মামলা রুজ্জু না করলে ও,সি,র পক্ষে বিভাগীয় মামলা থেকে নিজেকে বাঁচানোই কষ্ট হয়ে দাঁড়ায় । সেখানে যারা মিথ্যা মামলায় হয়রানী হচ্ছিল তাদের বাঁচানো অত্যান্ত কঠিন হয়ে পরে । আর যদি মামলা রুজ্জু করে তদন্ত শেষে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয় তখন উক্ত বাদী নিজের বিরুদ্ধে দঃ বিঃ ২১১ধারায় প্রোসিকিউশন দায়ের হচ্ছে , সেটা ঠেকাতেই জীবন বাজী রেখে দৌঁড়াতে থাকে । তার শত্রুর বিরুদ্ধে বা ও,সি,র বিরুদ্ধে সে লাগবে কখন ? যাই হোক এজাহারের বর্ণনাতেই যেহেতু মামলার ঘটনার সততা নিয়ে আমার সন্দেহের সৃষ্টি হলো সেহেতু আমি ভাবলাম এই মামলা কোন দারোগার নিকট হাওলা করলে , হয় সত্য কথা বেড় করতে পারবে না , নয়তো যাদের নামে মামলা করেছে তারা অপরাধী না হলেও তাদের হয়রানী করবে । ফলে মামলাটির তদন্তভার আমি নিজেই গ্রহন করলাম ।
১,৫৪৭ বার পড়া হয়েছে
বরাবরের মতো ভালোই লাগলো পড়ে
সহস্র শুভেচ্ছা জানাছি
কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ । ভাল থাকুন সতত ।
ভাল লাগল পর্বটি
ভাল লেগেছে শুনে খুশী হলাম । আসলে এ পর্বটি পুলিশের জন্য লেখা । শুভেচ্ছা রইল ।