Today 23 Nov 2024
banner
নোটিশ
ব্লগিং করুন আর জিতে নিন ঢাকা-কক্সবাজার রুটের রিটার্ন বিমান টিকেট! প্রত্যেক প্রদায়কই এটি জিতে নিতে পারেন। আরও আছে সম্মানী ও ক্রেস্ট!
banner

স্মৃতির পাতা থেকে—( পর্ব—–৪২/২ )

লিখেছেন: এস এম আব্দুর রহমান | তারিখ: ০৭/০৯/২০১৫

এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1231বার পড়া হয়েছে।

ফোনটা ছেড়ে দিয়ে ভাবতে লাগলাম , আমাকে বাংলাদেশ থেকে কে ফোন করতে পারে ? সহসা মনে হলো – সুমনা নয়তো ? যতই ভাবতে থাকলাম , সন্দেহটা কেবলই ঘনিভূত হতে থাকলো । বার বার মনে হতে লাগলো অনুমান নয় সুমনাই রিং করেছিল । বেশ কিছুদিন হয় তাকে রিং করা হয়নি । জানিনা কেমন আছে সে । তাকে একটা রিং করা সত্যিই জরুরী কাজের আওতায় পরে । ভাল্বাসার জন্য নয় । একবার ভাবা উচিৎ কতটুকু বয়সই বা তার হয়েছে ? একটা ভুল সে করে ফেলতেই পারে । অবশ্য তার কথিত ভুলটা অভিভাবকের দৃষ্টিতে, প্রেমিকের দৃষ্টিতে নয় । আমরা অভিভাবকেরা এতটা নির্মম হই কিভাবে তা আমি বুঝতে পারি না । যে মেয়েকে জন্মের পর থেকে বুক দিয়ে আগলে ,অন্তরের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে ভাল বেসে বড় করেছি , দীর্ঘ ১৫ টি বৎসর ব্যাপী বড় করেছি তিল তিল করে , তার একটা সিদ্ধান্তেরজন্য তাকে একদম ফেলে দিতে হবে ? আমাদের পিতৃ মাতৃ স্নেহ ভাই বোনের ভাল বাসা কি এতই দুর্বল ? এতই ঠুঙ্কো ? সামান্য একটা দমকা হাওয়াতেই ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেল । বাবা মা ভাই বোনের ভাল বাসা এক মূহূর্তে শত্রুতায় পর্যবসিত হলো । আমাদের ভালবাসা মেয়ের ভালবাসার সাথে গলাগলি ধরে চলতে পারলো না । প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্ব চাওয়া পাওয়া পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে , এ কথাটা আমরা সুধু নিজের বেলায় মনে রাখি , অন্যের বেলায় ভুলে যাই ।প্রত্যেক মানুষেরই বিবেক আছে , বুদ্ধি আছে । সেই স্বাভাবিক বুদ্ধি সম্পন্ন একজন মানুষের উপর অমানুষের মত নিজের চাওয়াটা জোর করে চাপিয়ে দিতে চাই । এক বার ও ভাবি না যে আমার ইচ্ছাটা সে মানছে না বলে আমার যেমন খারাপ লাগছে , তার ইচ্ছেটা না মানলে তারও তেমনি খারাপ লাগবে । আমরা নিজেরা নিজেদেরকে শিক্ষিত বলে দাবী করি । শিক্ষা কি মানুষকে শুধু পুস্তক মুখস্ত করতে শিখায় ? তার মনের বিস্তার ঘটায় না । যদি তাই না ঘটায় তা হলে সেই শিক্ষার উপযোগীতা কি ? আমি ভেবে পাই না , মেয়ে সে বাবা মায়ের কাছে মেয়ে । বস্তুত সে তো একজন মানুষ । মানুষ হিসেবে সুমনার একটা মনওতো থাকার কথা । তা হলে সে মনের পছন্দ অপছন্দের অধিকার থাকবে না কেন ? আমি যদি আমার মেয়ের উপর অধিকার ফলাতে চাই , তা হলে আমাকে মেয়ের প্রতি কতিপয় কর্তব্য ও পালন করা দরকার । কারণ অধিকার ও কর্তব্য পরস্পর পরিপূরক । কর্তব্য পালন করলে তবেই অধিকার জন্মায় । সুমনার বাবা মা সুমনাকে ভরন পোষণ করে বড় করেছে । এতেই তাদের কর্তব্য যথাযথভাবে পালিত হয়েছে বলে আমি মনে করি না । সুমনাকে যদি যথাযথ অভিভাবকত্ব দেওয়া হতো তাহলে আমি অভিভাবক হিসেবে আমার চিন্তা ভাবনা পছন্দ, অপছন্দ সব কিছু তার মনে প্রতি স্থাপন করতে পারতাম । কিন্তু অভিভাবক হিসেবে আমি আমার কর্তব্য যথাযথ ভাবে পালন না করায় ট্রেন লাইন চ্যুত হয়ে গিয়েছে । এতে ট্রেনের দোষ কোথায় ? দোষ যদি কিছু থেকে থাকে তবে তা হলো ট্রেনের চালকের । চালকের আসনে বসে যদি চালক ঘুমায় , তা হলে সেই ট্রেন দুর্ঘটনা কবলিত হওয়াই স্বাভাবিক । অথচ সকল দোষ অবলীলায় ট্রেনের উপর চাপিয়ে দিয়ে কি নির্ভাবনায় আমরা ঘুমিয়ে আছি । বাবা মায়ের ভালবাসা একবারো কেঁদে উঠেনি । একবারো ঘুমের ঘোরে কেঁদে উঠেনি এই বলে যে, আমার সুমনা জলে পরে সাতার কাটতে না জেনে ডুবে মারা গেল না তো ? একবারো কেও ভাবলো না সুমনা ডুবে মারা যাচ্ছে চলো সবাই মিলে তাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করি । না সবাই অমানুষের মতো মুখ ফিড়িয়ে নিয়েছে । আর সুমনা জলে ডুবে এখনও মারা যায়নি বটে , তবে বাঁচার জন্য সাতার কাটতে কাটতে এখন নিথর হয়ে গেছে । এই সময় যদি তাকে ভাসিয়ে রাখার জন্য কোন সাহায্য করা না হয় , তা হলে সেদিন আর বেশী দূরে নয় , যে দিন শোনা যাবে যে, সুমনা আর নিজেকে ভাসিয়ে রাখতে পারেনি । সুমনা যে সময়ে ঝাপিয়ে পরেছে সেটাইতো কিছু না বুঝে ঝাপিয়ে পরার উপযুক্ত সময় । সে যুদ্ধ শুরু করেছে । এখন তাকে পরামর্শ দিয়ে , অনুদান দিয়ে যুদ্ধে জয়ী করাইতো বুদ্ধিমানের কাজ । ভেবে দেখা উচিৎ , আমরা কি প্রাণহীন সুমনাকে চাই নাকি প্রাণোজ্জল সুমনাকে চাই । প্রাণহীন সুমনাতো একটি মৃতদেহ মাত্র । তাকে দিয়ে তার বাবা মার কি উপকার হবে তা আমি জানি না , তবে এ কথা জানি যে, প্রাণোজ্জল সুমনাকে বাঁচিয়ে রাখার দ্বায়িত্ব তার বাবা মারই ছিল । যে দ্বায়িত্ব পালনে তারা ব্যর্থ হয়েছে । যাই হোক আমি জানি সুমনার জন্য আমি কিছু করতে পারবো না ,তবে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে আমি শেষ চেষ্টা করে যাবো । আমি সুমনাকে রিং করলাম । রিং বেজে উঠতেই উপাশ থেকে সুমনা বললো–
‘ রিং করতে তো ইচ্ছে করেই না জানি , কিন্তু রিং ধরতেও কি কোন অসুবিধা আছে ? ‘
তোমার রিং ধরতে আমার অসুবিধা —। আমার অসুবিধা আছে কিনা ? হ্যা আছে । তুমি কি জান যে, বাংলা দেশ থেকে সুদান ফোন করলে প্রতি মিনিট তোমার মোবাইল থেকে কত টাকা করে কেটে নিবে ?
জানি না । জানতেও চাই না । কিন্তু আপনাকে নিয়ে কি করি বলুনতো ?
একদিন বলেছি না , হাড়িয়ে যাও তেপান্তরে । তা হয়েছে কি তোমার ?
কি হয়েছে সেটাই যদি বুঝতেন , তা হলেতো আমার কোন চিন্তাই ছিল না আমি না পারছি বাঁচতে , না পারছি মরতে । এতদিন তো তবু মনে মনে ভাবতাম –যখন কুলিয়ে উঠতে না পারবো, তখন হাড়িয়ে যাব অসীমের ঠীকানায় । কিন্তু এখনতো তাও পারছি না ।
আর কটা দিন অপেক্ষা করো , আমি দেশে ফিরি । তাহলে তোমার আর অসীমের ঠিকানায় হাড়িয়ে যেতে হবে না । যখনই হাড়িয়ে যেতে ইচ্ছে করবে , সোজা আমার কাছে ছলে আসবে । বাস হয়ে গেল ।

১,২১৩ বার পড়া হয়েছে

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ৩৩১ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ২৪৮৪ টি
নিবন্ধন করেছেন: ২০১৩-০৯-০৮ ১৩:৩৯:৪৭ মিনিটে
banner

২ টি মন্তব্য

  1. সবুজ আহমেদ কক্স মন্তব্যে বলেছেন:

    বরাবরের মতো অসাধারন লিখা

  2. এই মেঘ এই রোদ্দুর মন্তব্যে বলেছেন:

    ভাল লাগল অনেক

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করতে লগিন করুন.

go_top