স্মৃতির পাতা থেকে -( প র্ব — ১৬/ ৪ )
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1046বার পড়া হয়েছে।
আজ রবিবার । বেশ কদিন কেটে গেল আমাদের মিশন জীবন থেকে । সকালেই জানানো হলো আজ ডেপুটি সেক্টর কমান্ডার আসবেন আমাদের প্রশিক্ষণ কোর্সের ক্লোজিং ভাসন দিতে । তিনি একজন পাকিস্তানী অফিসার । আমাদের মধ্যে যারা ডিউটিতে যায়নি তাদের প্রতি আদেশ হলো তারা ক্লোজিং ভাসনে উপস্থিত থাকবেন । তা ছাড়া অফিসার যারা ক্যাম্পে উপস্থিত আছেন তারা সকলেই হাজির থাকবেন । কারণ অফিসার গন সকলেই প্রথম গ্রোপে প্রশিক্ষণ নেওয়ায় । দ্বিতীয় গ্রোপে যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল তারা প্রশিক্ষকদের বক্তব্য কেহ ই সুবিধা মতো বুঝতে পারছিল না । কারণ যারা প্রশিক্ষণ দিতে এসেছেন তারা জাতিগত ভাবে সকলে ইংরেজী ভাষা ভাষী না হলেও নিজেদের ভাষার পাশা পাশি তারা ভাল ইংরেজী জানেন এবং ইংরেজী ভাষাতেই বক্তব্য রাখেন । ফলে আমাদের লোকদেরকে প্রশিক্ষকদের বক্তব্য বুঝাতে হলে এক জন অফিসারকে দুভাষীর কাজ করতে হচ্ছিল । ডেপুটি সেক্টর কমান্ডারও ইংরেজিতে বক্তব্য রাখবেন । তার বক্তব্য যদি আমাদের উপস্থিত ফোর্স ও জুনিয়র অফিসাররা না বুজতে পারেন তাহলে বিষয়টি আমাদের জন্য লজ্জাস্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে ।এ জন্যই সকল অফিসারদের থাকতে বলা । একজন কৃষ্ণংগ মহিলা আমাদেরকে জেন্ডার সম্পর্কে বুঝাতে চেষ্টা করছিলেন । মহিলা উচ্চতায় ৫ ফুট ৮ ইঞ্চির মতো হবে । মিষ মিষে কালো আবার কুস্তিগীরের মতো দেহ । তিনি এ দেষীয় নন । তার দেশ ঘানা । নাম লীনু । দেশে দুটি মেয়ে রেখে ইউ এন মিশনে চাকরী নিয়ে এখানে এসেছেন , মেয়েদের মনের মধ্যে আত্ম নিয়ন্ত্রনাধিকার বিষয়ে স্বচেতনতা তৈরী করতে । তিনি বুঝাচ্ছিলেন জেন্ডার কি ? জেন্ডার এবং সেক্স এর মধ্যে পার্থক্য কি ? তার বক্তব্য আমাদের একজন অফিসার বাংলায় অনুবাদ করে জুনিয়্র অফিসার ও ফোর্সদের বুঝাচ্ছিলেন । মিসেস লিনু কালো , মোটা ও লম্বা বলেছি, কিন্তু তার সম্পর্কে যেটা বলা হয়নি তা হলো , এখানে এসে ,সেনেগাল, ইথিউপিয়ান, নাইজেড়িয়ান এবং সুদানী মিলে যতজন মহিলা দেখেছি তার মধ্যে মিসেস লিনু নিজেকে সুন্দরী বলে দাবী করতে পারেন । কালোর মধ্যে তার যা বেশী সুন্দর তা হলো তার দুটি কালো হরিণ চোখ । যাই হোক মিসেস লিনুর সৌন্দর্য্য বর্ননা করা আমার কাজ নয় । তথাপী আমি তাকে ক্যামেরা বন্ধী করে রাখলাম । মিসেস লিনু তার বক্তব্যে বললেন – অনুন্নত দেশ গুলির মেয়েরা নির্যাতিতা , ভীতু এবং তারা প্রতিবাদ করতে জানে না । এ জন্য তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরী করা একান্ত দরকার । জোক করার জন্য আমাদের যে অফিসার দুভাষীর কাজ করছিলেন – তিনি একটি চুটকী বললেন —তার চুটকীতে বাংগালী মেয়েরা যে খুব বেশী ভীতু নয় তাই বুঝাতে চাইলেন । তিনি বললেন —
“ আমাদের বাংলাদেশের একটি গ্রামের রাস্তা দিয়ে এক যুবতী মেয়ে একাকী হেটে যাচ্ছে । একজন দুষ্ট যুবক মেয়েটিকে একাকী হেটে যেতে দেখে ভাবলো , এই বার তো একটু সুযোগ নেয়া যায় । তখন ছেলেটি মেয়েটির পাশে পাশে হাত্তে থাকে এবং ভাবে , কিভাবে কথা শুরু করা যায় । ছেলেতির হাব ভাব দেখেই মেয়েটি বুঝতে পারছিল যে, ছেলেটি নিশ্চয়ই কোন মতলব নিয়ে এসেসছ । কিছুক্ষণ পায়তারা করে ,ছেলেটি বলে—‘ আপনি কি একা ? ‘ মেয়েটি অত্যন্ত সাহসের সাথে বলে—‘ না আমি একা নই । আমার পায়ে সেন্ডেল আছে ।‘ এই কথা শুনে ছেলেটি দে ছুট । “ চুটকী শুনে মিসেস লিনু সহ সকলেই হেসে ফেললো এবং খুব উপভোগ করলো । নির্ধারিত ক্লাশের সময় শেষ হতেই ডেপুটি সেক্টর কমান্ডারের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনা শুরু হলো । এক সময় প্রহর গুনা শেষও হলো। ডেপুটি সেক্টর কমান্ডার এলেন । তিনি তার বক্তব্যের শুরুতেই বললেন—তিনি ছোট সময় ৫ বছর বাংলা দেশে কাটিয়েছেন । কারণ তার বাবা পাকিস্তানী শাসনামলে খুলনা , কুমিল্লা, ও যশোহর জেলার ডি, সি , ছিলেন । সেজন্যই বাবার সাথে বাংলা দেশে কাঁটিয়েছেন দীর্ঘ সময় । বক্তব্য ইংরেজিতে চলছিল । ছোট বেলা বাংলাদেশে কাটানোর কারণে বাংলাদেশের প্রতি তার গভীর ভাল বাসা আছে , এ কথা প্রথমেই বলে নিলেন । তার পর সেই নাইজেড়িয় গাড়ি ছিন্তাইয়ের ঘটনা । যে জন্য আমার এত কথা বলা তা হলো— তিনি বক্তব্যের মাঝে একবার নয় বেশ কয়েকবার বললেন – “ আমি জানি বাংলাদেশীরা অত্যন্ত সাহসী । বাংগালী অত্যন্ত সাহসী জাতি ।“ তিনি এ কথা বলে মৃদু মৃদু হাসছিলেন ।তার কথা এবং হাসিতে সহজেই বুঝা যাচ্ছিল যে , তিনি এ ক থা দিয়ে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের কথাই বুঝাচ্ছেন । আমরাও নিশ্চয়তা প্রদান করলাম যে , আমাদের নিকট থেকে গাড়ি ছিনিয়ে নেওয়া এতটা সহজ হবে না । তার বক্তব্য শুনে আমি মনে মনে ভাবছিলাম – হায়রে একাত্তর , তোর কথা মনে হলে এখনো আমাদের রক্তে যেমন শিহরণ জাগে , পাকিস্তানীদের তেমনি লজ্জায়, ভয়ে রক্ত হীম হয়ে যায় ।
৯৯৯ বার পড়া হয়েছে
ভাল লাগল এ পর্বও।
মেয়েদের সোন্দর্যের বর্ণনা ভাল লাগল। ছেলেদের চোখ সুন্দরের বর্ণনা না দিয়ে পারেই না হা হা হা হ