স্মৃতির পাতা থেকে -(৩২/৪ )
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1089বার পড়া হয়েছে।
গ্রামে তো শান্তি নেমে এলো ঠিকই কিন্তু সমস্যা দেখা দিল অন্য জায়গায় । গ্রামের মহিলারা দাবী তুললো —-বিগত ১০ বছর ধরে তারা সব সময় কম্পিত হৃদয়ে বসবাস করছে । এক পক্ষ জমিতে গেলেই অপর পক্ষ্য মারনাস্র নিয়ে ঝাপিয়ে পরে ।মহিলারা ঘরের ভিতর ইন্তেজার করতে থাকে , আজ যেন কার স্বামীর , কার ছেলের, কার ভাইয়ের লাশ ফিড়বে । নিদেন পক্ষে গুরুতর জখম নিয়ে ঘরে ফিরবে । যে ঘটনা ১০ বছর যাবৎ কেউ মিটাতে পারেনি , সেই ঘটনা কে মিটালো , আমরা তাকে দেখতে চাই ? কি আর করা মা জননীদের দাবী ।উপেক্ষা করা গেল না ।দিন তারিখ ঠিক হলো ।খসী জবাই করে রান্না করা হচ্ছে । উক্ত বিচারে উপস্থিত সকল মাতাব্বরদেরও দাওয়াত দেওয়া হয়েছে । একটি বাড়ির মাঝখানের উঠানে বসার আয়োজন করা হয়েছে । বাড়ির চার ভিটায় চারটা ঘর । চতুর্পার্শের ঘর ভর্তি মহিলারা আছেন , তা ফিস ফাস কথা বার্তার শব্দেই বুঝা যাচ্ছিল ।সকলেই যার যার মত ঘরের বেড়া ফাঁক করে আমাদের দেখছিল । চতুর্দিকের সকল ঘর থেকে শ খানেক চোখ আমার উপর । বিষয়টি ভেবে আমার বেশ লজ্জা করছিল । আবার কিছুটা আনন্দ ও উপভোগ করছিলাম । এর মধ্যে আমি শুনতে পেলাম , একজন মহিলা অপর জনকে বলছে—-
“ কে এই ঘটনা মীমাংসা করেছেরে ? “ অপর জন বলে—
“ ঐ দারোগা সাহেব ।“ আবার প্রশ্ন—-
“ দারোগা কোনটা ? “ অপর জন বল লো—
“ঐ যে, টুপি পরা লোক টা বসে আছে , তার বাম পার্শে বসা যে লোক্টা ওনিই দারোগা । ওনিই এই বিবাদ মীমাংসা করে দিয়েছেন ।“ তিনি ভাল করে দেখে যা বললেন, তা শুনে আমার মনে হলো আমি এই দাওয়াতে না আস্লেই ভাল করতাম । ওনি বললেন –
“ কি কইলি ? ঐ ছ্যামড়া দারোগা ? ছিঃ ঐ তো আমাগো রশিদের চেয়েও ছোট । ও কি বুঝে যে ও বিবাদ মীমাংসা কইরা দিল ।“ আমি কথাটা শুনে বেশ লজ্জা অনুভব করতে লাগলাম ।কিন্তু কথাতো মিথ্যে নয় ।যে ঘটনা এলাকার যত ঝানু ঝানু মাতাব্বরেরা এক যুগ ধরে চেষ্টা করেও মিটাতে পারেনি , সেই ঘটনা তিন দিনে মিটিয়ে দিল এক্তা পুচকে ছেলে । তাদের অবাক হবার ই কথা । আমার চাকরী তখন সবেই দুই বছর শেষ হয়েছে । ছাত্র ছাত্র ভাবই তো যায়নি ।কাজেই মহিলার ই বা দোষ কি ? আমাদের বেশ ঝাক জমকের সাথেই আপ্যায়ন করা হলো । বিপত্তি দেখা দিল অন্যত্র । আমি মিটিং শেষে থানায় রওয়ানা হওয়ার আগে দুই পক্ষের ওকিল ও মাতাব্বর গন আমাকে অনুরোধ করলো , পরদিন তারা যখন কোর্টে মামলা তুলতে যাবে , আমি যেন তখন কোর্টে গিয়ে ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবকে বুঝিয়ে বলে কোর্টের মামলাটি তোলার ব্যবস্থা করে দেই । আমি প্রথম অস্বীকার করলাম । কারন আমার জানা ছিল যে , তখন কার ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব ছিলেন অত্যন্ত ঘুষ খোর লোক । তদুপরি তিনি যে ওয়ারেন্ট ইস্যু করেছিলেন , সেই সকল আসামীদের কোর্টে হাজির করে জামিন পাওয়ার বিষয় ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবের সাথে ১০ হাজার টাকা প্রদানের চুক্তিতে ফয়সালা হয়েছিল ।কিন্তু এখন মীমাংসা হওয়াতে ঐ সকল আসামীদের তো আর হাজির হয়ে জামিন নিতে হবে না । ফলে তার চুক্তি মোতাবেক ১০ হাজার টাকাও পাবে না । ওকিলরা বললো—
“ আইনানুসারে তিনি মামলা তুলে দিতে বাধ্য ।তথাপী আপনি একটু থাকলে ভাল হয় ।“ সকলের অনুরোধে আমি রাজি হতে বাধ্য হলাম ।পর দিন উভয় পক্ষ থানায় এলো ।তাদের নিয়ে আমি উপজেলা কোর্টে গেলাম ।উভয় পক্ষের ওকিল সাহেব্রা কোর্টেই হাজির ছিলেন । দুই পক্ষের বাদী ও ওকিল সাহেবদের নিয়ে ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবের কক্ষে প্রবেশ করে এই মামলার সকল ঘটনা স্ববিস্তারে বললাম ।একি জমি নিয়ে ইতো পূর্বেই দুই পক্ষের ১২ টি মামলা কোর্টে বিচারাধীন আছে ।তাছারা যে কোন সময় দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি লেগে প্রাণ হানির সম্ভাবনা রয়েছে ।সে সকল ভেবে আমি সকল মামলা মীমাংসা করে দিয়েছি । বর্ত্মানের ঘটনা নিয়ে উপজেলা কোর্টে যে মামলাটি দায়ের হয়েছে , আমি সকলের পক্ষ থেকে সেই মাম্লাটি প্রত্যাহার করে দেওয়ার অনুরোধ জানালাম । ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব মামলা তুলে নিতে অনুমতি দেওয়ার কথা অস্বীকার করলেন । উপরন্তু তিনি আমাকে বললেন—-
“আপনাকে তো কোন ঘটনা মীমাংসা করার জন্য সরকার নিয়োগ দেয়নি ।এ দ্বায়িত্ব আপনার নয় ।“ আমি বললাম—-
স্যার, আমার দ্বায়িত্ব সম্পর্কে আমি সচেতন আছি ।এলাকার শান্তি শৃংখলা রক্ষা করাও আমার দ্বায়িত্ব ।তা ছাড়া আমি কখনোই কোন অনুরোধ নিয়ে আপনার কাছে আসতাম না । শুধু নিরীহ লোক গুলোর অনুরোধ ফেলতে পারিনি বলেই এসেছি ।তার সাথে আমার অনেক কথা কাটা কাটি হলো ।আমি ম্যাজিষ্ট্রেটের চেম্বার থেকে বেড়িয়ে এলাম ।ওকিল সাহেব রাও আমার সাথে সাথেই বেড়িয়ে এলেন ।অল্প সময়ের মধ্যেই এ ঘটনা কোর্ট এলাকায় প্রচার হয়ে গেল । ওকিল সাহেবরা কম বেশী সকলেই আমাকে পছন্দ করতেন । তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো যে, এই ঘুষ খোর ম্যাজিষ্ট্রেটের কোর্টে আর মামলা পরিচালনা করবেন না । তারা আদালত বর্জনের ঘোষনা দিয়ে ফেললেন ।এই সংবাদ অতি দ্রুতই ইউ এন ও সাহেবের নিকট পোঁছে গেল ।তিনি ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবের স্বভাব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন ।উপায়ান্তর না দেখে ইউ, এন , ও, সাহেব এসে ওকিল দের সকল দাবী মেনে নিয়ে অবস্থা সামাল দিলেন ।আমি শুধু অবাক হলাম এই ভেবে যে, আমার মতো সামান্য একজন সাব-ইন্সপেক্টরের প্রতি ভাল্বাসা বা সম্মান প্রদর্শনের জন্য উপজেলা বার সমিতি র সকল ওকিল সাহেবরা ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবের আদালত বর্জন করার জন্য দৃঢ় সংকল্প বদ্ধ হয়েছিলেন ।আমার ধারনা মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে আমি উক্ত থানা এলাকার সকল শ্রেনীর লোকের ভাল বাসা অর্জন করতে পেরেছিলাম ।ফলে তারা আমার কাজের মূল্য দিয়েছিলেন ।
১,০৮২ বার পড়া হয়েছে
পড়ে বেশ ভালই লাগলো
সুন্দর লিখা
আপনাকে শুভেচ্ছা
ভাল লাগল পড়ে
লিখে যান সাথেই আছি
স্মুতিময় ডায়েরী ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে।
ভাল লাগে কবি, লিখে যান।
আমার ধারনা মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে আমি উক্ত থানা এলাকার সকল শ্রেনীর লোকের ভাল বাসা অর্জন করতে পেরেছিলাম ।ফলে তারা আমার কাজের মূল্য দিয়েছিলেন ।
আমারও কিন্তু তাই মনে হচ্ছে ! খুবে ভালো লাগলো এ পর্বও ! শুভেচ্ছা জানবেন ।