Today 23 Nov 2024
banner
নোটিশ
ব্লগিং করুন আর জিতে নিন ঢাকা-কক্সবাজার রুটের রিটার্ন বিমান টিকেট! প্রত্যেক প্রদায়কই এটি জিতে নিতে পারেন। আরও আছে সম্মানী ও ক্রেস্ট!
banner

স্মৃতির পাতা থেকে

লিখেছেন: এস এম আব্দুর রহমান | তারিখ: ১৬/০৫/২০১৪

এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1797বার পড়া হয়েছে।

স্মৃতির পাতা থেকে
___________________________
আজ মঙ্গলবার । ডায়রীর উপরে ১ জানুয়ারী লেখা দেখে আজ জানুয়ারী মাসের ১ তারিখ মনে করার কোন কারণ নেই ।বাস্তবে আজ শুক্রবারও নয়, মঙ্গলবার এবং ১ জুন । আমি এখন বাংলাদেশেও নই , সুদানের দারফোরে । আফ্রিকার একটি ঝঞ্জা বিক্ষুব্দ দেশ ।সেই দেশের শান্তি শৃংখলা রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে জাতি সংঘ ।সেই উদ্দেশ্যেই গ্রহন করেছে একটি মিশন ।আর সেই মিশনের সদস্য হিসেবেই বাংলাদেশ থেকে আগত দলের সাথে আমিও সুদানের আল-জেনিনায় । এখানে একটি তাবুর ভিতর বসবাস ।আমাদের দলের একজন সিনিয়র এ, এস ,পি এর মাধ্যমে ইউ এন প্রদত্ত একটি ডায়রী হাতে পেলাম । আসলে ডায়রী লেখার অভ্যাস আমার নেই । কাজেই জানুয়ারী মাসের ১ তারিখে এই ডায়রী আমার হাতে এলেও ফল একই দাঁড়াতো । ।অর্থাৎ দিন পুঞ্জি হিসেবে প্রতি দিনের কথা লিখা হতো না । তাছাড়া লিখতে চাইলেই তো আর লিখা যায় না । তার জন্য ভাব ভাষা দুটোই দরকার । আমার ভাবও নেই ভাষাও নেই, আছে শুধু অফুড়ন্ত সময় । অবশ্য লেখার মতো পরিবেশও আপাতত নেই ।তবু ঐ যে বলে না নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা । যিনি লিখতে জানেন তিনি সব অবস্থাতেই লিখতে পারেন ।ভাব যদি মনে থাকে তবে তাপ পেলে ফুটন্ত দুধের মতো তা উথলে উঠবেই । যাই হোক ভাবতো আর প্রতিবেশীর বাড়ির পাণ চুন নয় যে ধার করে চালিয়ে দেয়া যাবে ।তবে বাস্তব ঘটনা বোধ হয় লিখে রাখা যায় ।একটি ছবিকে সুন্দর করার জন্য রং তুলির দরকার অবশ্যই । কিন্তু সাদা মাটা একটি ছবি তৈরী করা সম্ভবত খুব বেশী কষ্টকর নয় ।তাই ভাবছি সাদা মাটা একটি ছবি আকার চেষ্টা করা যাক ।
জাতিসংঘ মিশন শব্দটির প্রতি খুব একটা আকর্ষণ আমার কোনদিনই ছিল না । প্রথম জীবনে অনেকেই আমাকে মিশনে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছেন । কিন্তু আমি নিজে তেমন উৎসাহ বোধ করিনি ।কোন এক সময় , তখন আমি পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা থানার ও, সি ছিলাম । ঐ সময় তদানীন্তন পটুয়াখালী
জেলার পুলিশ সুপার সাহেব আমাকে জাতিসংঘ মিশনে যোগদান করার জন্য জোর উৎসাহিত করার চেষ্টা করেন ।তিনি ওয়ার্লেসের মাধ্যমে বলেন –
‍‍‍‌’’ তুমি মিশনে না গেলে এভাবে চাকরী করে জীবন চালাবে কি করে ?” আমি সে দিন উক্ত বেতার যন্ত্রের মাধ্যমেই বলেছিলাম –আমাকে কেন মিশনে যাওয়ার জন্য তাগিদ দিচ্ছেন স্যার । আপনি আর কোন লোক পান না? মিশনে মানুষ কেন যায় ? টাকার জন্য তো? আমারতো টাকার দরকার নেই ।আমার একটি মাত্র মেয়ে ।অধিক টাকা উপার্জন করলে খাবে কে ?তাহলে আমি মিশনে যাব কেন? সে দিন ছিল ১৯৯৩ সাল ।আর আজ ২০১০ সাল।
আমাকে সেই মিশনে আসতেই হলো ১৭ বছর পর ।
আমি জীবনটা শুরু করেছিলাম একটু অন্য রকম ধাঁচে। প্রথম জীবনে অর্থা চাকরীর শুরুতে কেহ যদি আমাকে চা খেতে বলতেন, তাহলে আমি তাকে বলতাম , আমি আপনার চা খাব কেন? সরকার আমাকে বেতন দেয়না ?জীবনটাকে সৎ পথে পরিচালনা করার জন্য পরিকল্পনাও গ্রহন করেছিলাম । বিয়ের পর অর্থাৎ বিয়ের এক বছর পর আমাদের একটি কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহন করে ।সেই সময় আমরা দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নেই যে , আমরা আর কোন বাচ্চা নিব না ।কারণ তখনকার স্বল্প বেতনের চাকরীতে একটি সন্তানের ভরণ পোষনেই নাভিশ্বাস উঠেছিল । আমরা ধরে নিয়েছিলাম যে, সন্তান যত বাড়বে খরচ তত বাড়বে ।আর সেই খরচা সংকুলান করার জন্য আমাকে অসৎ পথে টাকা উপার্জন করতে হবে । কিন্তু আমি সে পথে রাজি ছিলাম না । পরিকল্পনা মোতাবেক আমাদের জীবন ও চলতে থাকে । স্ত্রী ও মেয়ে নিয়ে বিভিন্ন থানায় থানায় ও সি গিরি করতে থাকি ।আসলে বিধি বাম বলতে একটা কথা আছে না । আমারও তাই হলো । সকল পরিকল্পনা ফেল করে ১৯৯৬ সালের ১ জানুয়ারী আমার একটি পুত্র সন্তান জন্ম নিল । আর তা থেকেই আমি ছেলের বাবা হয়ে গেলাম ।বাবা হওয়ার কারণে যে দ্বায়িত্বও খানিকটা বেড়ে গেল সেটা বুঝেছিলাম । কিন্তু মেয়ে বড় হলেই বিয়ে দিয়ে দিব আর ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে, এ চিন্তা যে সঠিক নয় তা অতি বিলম্বে বুঝলাম , যখন মেয়ে সত্যি ই সত্যিই বিয়ের উপযুক্ত হলো ।আমি একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম । কারণ যে চিন্তা ভাবনা নিয়ে আমি হাসি খুশীতে দিন কাটিয়ে যাচ্ছিলাম তা যে কতটা অমুলক এবং অবাস্তব সেটা বুঝতে পারলাম আসল বাঘ যেদিন এসে সত্যিই হামলা চালালো । যেহেতু হামলা প্রতিরোধ সম্পর্কে আমার কোন পূর্ব পরিকল্পনা ছিলনা , সেহেতু আক্রান্ত হয়ে আমাকে আত্ম রক্ষার জন্য অনাকাংক্ষিত রাস্তাটিই বেছে নিতে হলো । আর তা হলো জাতিসংঘ মিশনে যোগদান । নিজের দেশের জন্য যুদ্ধ করবো তাতে আমার কোন আপত্বিও ছিল না , মানসিক বৈকল্যও ছিল না । দেশকে শত্রু মুক্ত করার জন্য , জাতিকে স্বাধীন করার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম এবং সেজন্য মুক্তি যুদ্ধে অংশও গ্রহন করেছিলাম । মুক্তি যোদ্ধা হিসেবে নিজেও গর্ববোধ করি, আমার সন্তানেরাও গর্ববোধ করে । কিন্তু জাতিসংঘ মিশনে কাজ করা অনেকেই মানবতার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ কৃত মনে করে । আমার কিন্তু তা মনে হয় না ।কারণ আমরা জাতিসংঘ মিশনে শুধুমাত্র মানবতার সেবায় আসিনা । অবশ্য শুধু মাত্র বললে ভুল হবে । আমরা আদৌ মানবতার সেবায় আসি কিনা তাতে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে । আসি আর্থিক ভাবে লাভবান হতে, টাকা উপার্জন করতে । বলতে দ্বিধা নেই আমিও সেই উদ্দেশ্যেই মিশনে এসেছি । ১৯৭১ সালের সর্ব ত্যাগী মুক্তিযোদ্ধা এখন বিদেশ বিভূইয়ে অর্থের বিনিময়ে শ্রম দিতে এসেছি । এই কাজটিও গৌরবের হতো যদি আফ্রিকার নিগৃহীত , নির্যাতিত মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়ে নি:সার্থ ভাবে কিছু করতে পারতাম । আমরাতো তা করছিনা । সম্ভবত কোন মহাশক্তিধর দেশের সার্থ রক্ষার জন্য অর্থের বিনিময়ে কাজ করে যাচ্ছি ।
যাক যে কথা বলছিলাম , আমার সেই ছোট্ট মেয়েটির অর্থের আধিক্য না থাকলেও মনের স্বাধীনতায় মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে উড়ে শিশু, কিশোর নামীয় দুটো মহাদেশ পার হয়ে কখন যে এসে যৌবনে পা দিয়েছে আমি বুঝতেই পারিনি । মেয়ে এবার বাইশ পেড়িয়ে তেইশে পা দিয়েছে । আমি নিদ্রা মিঘ্ন মানুষ । কেউ ঠেলা দিয়ে ঘুম না ভাঙ্গালে হয়তো আরো অনেক দিন নিদ্রাচ্ছন্ন থাকতে পারতাম । কিন্তু তা হলো না মেয়ের মা’র জন্য । সে-ই আমাকে জাগিয়ে দিল দীর্ঘ নিদ্রাবাস থেকে ।
রাতে খাওয়ার পরে শুয়ে আছি ,হঠা আমার স্ত্রী আমাকে জিজ্ঞেস করে “আমাদের মেয়ে বড় হয়েছে তা কি তুমি বুঝ ??” আমি সাথে সাথেই বলে ফেলি –কুছ পরোয়া নেহি , বিয়ে দিয়ে দেব ।
মেয়ের মা কথার জের ধরে আবার বলে “মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসছে নানা দিক থেকে । “ আমি বলি- ভাবছো কেন , কথা বলো । আমার স্ত্রী একটু বিরক্তই হয় । একটু রাগত স্বরেই বলে-
তুমি কি জান একটি মেয়ে বিয়ে দিতে এখন কত টাকা খরচ হয় ? “ আমি বলি –
জানিনা তো । বল কত টাকা খরচ হয় । স্ত্রী বলে –
“সম্মান জনক ভাবে মেয়ে বিয়ে দিতে চাইলে এখন নূন্যতম ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয় । “ একথা শুনে আমি যেন শূণ্যে বেড়ানো থেকে ছিটকে মর্তে পরে গেলাম । হঠাৎ করেই আমি যেন চতুর্দিক অন্ধকার দেখতে লাগলাম ্ আবার প্রশ্নও জাগলো , এত টাকা লাগার কারণ কি ? আমার স্ত্রী হয়তো আমার মুখ দেখে বুঝতে পারলো , । এতো টাকা কিষে লাগবে তা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না । তখন সে গহনা পত্র থেকে শুরু করে মেহমানদের খাওয়া দাওয়া সহ বিস্তারিত হিসাব দিল । তাতে আমি নিশ্চিত হয়ে বুঝতে পারলাম তার দেওয়া হিসেবে অতিরিক্ত কোন বাজেট নেই । সত্যিকার অর্থেই আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম । সারা রাত স্ত্রীর সাথে আমার আর কোন কথা হল না ।সকালে গাড়ি এলে সোজা অফিসে চলে গেলাম । অফিস মানেই র্যা ব অফিস । আমার তখন র্যাহব ১১ নারায়ন গঞ্জ পোষ্টিং ।রবিবার অফিসের গাড়িতেই চলে যাই । সারা সপ্তাহ র্যাযবের নিয়ন্ত্রনাধীন বিদ্যু উন্নয়ন বোর্ডের ডাক বাংলোতে থাকি আর মেসে চলে খাওয়া দাওয়া । অফিসে গিয়ে সারা দিন ভাবলাম । যতই ভাবলাম ততই স্পষ্ট হয়ে উঠলো , আমি শুধু মেয়েকে স্নেহ দিয়েছি, ভালবাসা দিয়েছি,কিন্তু তার ভবিষ্য তৈরীর জন্য কোন পরিকল্পনাই করিনি । আমি উনিষ বছর চাকরী করেছি অথচ আমার কোন সঞ্চয় নেই । সঞ্চয়ের প্রয়োজন আছে এ কথা আমার কোন দিন মনেই হয়নি ।সঞ্চয়ের কথা বললে আমি সব সময় বলতাম, সঞ্চয় দিয়ে কি হবে ? যত দিন চাকরী করবো ততদিন সরকার বেতন দিবে, সরকারী বাসা দিবে । অবসর গ্রহন করলে সরকার পেনশন দিবে । তা হলে সঞ্চয় দিয়ে কি হবে ? আজ বুঝতে পারছি আমার ধ্যান ধারণা , হিসাব কিতাব কতটা ভুল ছিল । অবশ্য সঞ্চয় করার আমার কোন উপায়ও ছিল না । যে বেতন পেতাম তা দিয়ে সংসার খরচ চালানোই ছিল কষ্টকর । যদিও আমার স্ত্রী কোন দিনই বুঝতে দেয়নি সংসার কিভাবে চলে । আমি সব সময় আমার স্ত্রীকে বোকা ভাবতাম । চলমান জীবনের এই দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে এত দিনে বুঝতে পারলাম, আসলে বোকা সে নয়, বোকা আমি । জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে আমার কোন ধারনাই নেই । আমার বন্ধু বান্দব অনেকের কাছেই শুনেছি , যদিও আমার ঘনিষ্ট কোন বন্ধু নেই বললেই চলে- তাদের স্ত্রী গন স্বামীর উপর টাকা উপার্জনের জন্য চাপ সৃষ্টি করে । আর সে কারণেই তারা ছুটে বেড়ায় টাকার পিছে । কিন্তু আমার স্ত্রী সে দিক থেকে একেবারেই অন্য রকম ্ সংসার চালানোর জন্য টাকার প্রয়োজন হয়তো ছিল , কিন্তু অর্থের প্রতি অতি আকাং্খা তার কোন দিনই ছিল না । সংসার কিভাবে চলে তা আমি কোন দিনই জানতাম না । সম্ভবত জানার কোন চেষ্টাই আমি করিনি । আসলে প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ অনেক কিছুই করে , প্রয়োজন হলে হয়তো আমিও করতাম । কিন্তু আমার স্ত্রী আমাকে তা কখনও বুঝতেই দেয়নি । অফিসে যাওয়া আর মাস শেষে বেতনের টাকাটা স্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া, এটাই ছিল আমার কাজ । সকারে অফিসে যাওয়ার সময় আমার পকেটে গাড়ি ভাড়ার টাকা আছে কিনা তা আমাকে কোন দিন খোঁজ করে দেখতে হয়নি । তাহলে বুঝতেই পারেন যে আমার স্ত্রী কতটা বোকা আর আমি কতটা চালাক ।

১,৮১৭ বার পড়া হয়েছে

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ৩৩১ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ২৪৮৪ টি
নিবন্ধন করেছেন: ২০১৩-০৯-০৮ ১৩:৩৯:৪৭ মিনিটে
banner

১ টি মন্তব্য

  1. শাহ্‌ আলম শেখ শান্ত মন্তব্যে বলেছেন:

    সুন্দর লিখেছেন , খুব ভাল লাগল ।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করতে লগিন করুন.

go_top