স্রোত । (সবটুকু)
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1283বার পড়া হয়েছে।
(১)
পৃথিবীর চিরায়ত সূর্যের দেখা সবাই পায় না । যদিও নিয়তই একইভাবে সূর্যের উদয়-অস্ত হয় তবু মানুষে মানুষে, চোখে চোখে আলোর সাক্ষাত একই হয় না । এমনকি দু”চোখ অনবরত খোলা রাখলেও না । জগতের সকল আলো জন্মের কাছে বন্ধক রেখে যে যাত্রা, সে যাত্রায় চোখ দু’টো রাস্তার ডান-বাম চেনা ভিন্ন আর কোন উপকার দেয় না । পৃথিবীতে জন্মান্ধ মানুষের আকাল পড়ে না । ডানে বামে তাকালেই এদেরকে খুঁজে পাওয়া যায় । এদেরই একজন শেফালী । গ্রামের বাড়ী রংপুরে । বাবা জন্ম দিয়ে দায় সেরেছে, মাতা পেটে নিয়ে ঋনী করেছে । তাই জন্মের ঋন মেটাতে মা’কে নিয়ে ঢাকা এসেছে মাস তিনেক হল । ঘটি বাটি বস্তায় নিয়ে শেফালী যেদিন রংপুরের মাটি ছাড়ে সেদিনও আকাশে ছিল জ্বলজ্বলে রোদ । একেবারে গতর পোড়া রোদ । ঘামে নেয়ে ঘেয়ে যখন রেল ষ্টেশনে পৌঁছে তখন আর চোখের জল আর গতরের ঘাম আলাদা করার উপায় ছিল না । শেফালীর মা রহিমা বেগম একবার পেছন ফিরে তাকিয়ে অজান্তেই কেঁদে উঠতে শেফালী ধমক দিয়ে মায়ের হাত শক্ত করে ধরে ট্রেনে তুলে ।
জগতের কিছু সর্ম্পক প্রকৃতির বে’খেয়ালে হয় আবার প্রকৃতির বে’খেয়ালেই কিছু সর্ম্পক ভেঙ্গে যায় । জাগতিক ন্যায়-অন্যায় এসব সর্ম্পকের উপলক্ষ । তাই হেলায় গড়া সর্ম্পক হেলায় ভাঙ্গে । ন্যায়-অন্যায় পড়ে থাকে চোখের কোনে, টান লাগা স্রোতের দাঁড় বৈঠাহীন পাল ভাঙ্গা নৌকায় । রহিমা বেগমের ঘরও ভেঙ্গেছে টান লাগা স্রোতের তোড়ে । জন্মান্ধ রহিমা দু’চোখ মেলে ধরেছিল বাবার হাত, তারপর জব্বার মিয়ার সংসার । একসময় বাবা গেল, স্বামীর চোখে নতুন জোয়ার এলো । রহিমা বেগম সে জোয়ারে জব্বার মিয়ার সংসার হারালেন । তারপর দিন কানা রাত কানা এক হয়ে রংপুরের মাটি ছাড়লেন ।
শেফালীর অদৃষ্ট অন্যায়ভাবে ভাল হয়ে গার্মেন্টেসে একখানা কাজ জোটে যায় । এদিকে রহিমা বেগমও কয়েক বাড়িতে ঝিয়ের কাজ জুটিয়ে ঢাকায় আসন গেড়ে বসে । হাজারীবাগে মতি মিয়ার বস্তিতে মা মেয়ের নতুন সংসারের যাত্রা শুরু হয় । শুরু হয় নতুন জীবন যুদ্ধের । মাঝ রাতের জ্বলজ্বল তারা এ যাত্রার স্বাক্ষী হয়ে থাকে ।
(২)
মানুষের সুখ যেমন তেমন গরীবের সুখ কচু পাতার পানি । তাই সকালের জোয়ার যদি জলের তেষ্টা মেটায় বিকালের জোয়ার জলে ডোবায় । ক্ষনিকের চাঁদ ক্ষনিকে উঁকি ক্ষনিকেই হারিযে যায় । মাঝখানে চাঁদের নেশায় পথে নেমে পথ ভুলে চাঁদ পথ দুটো’ই হারায় । গরীবের জন্মে পাপ, টিকে থাকাও পাপ ।
শেফালী কাজে যোগ দেওয়ার পর একদিনও কামাই দেয় নাই । তবু গত মাসে হাজিরা খাতায় তিনদিন অনুপস্হিত । এমনকি ওভার টাইমের হিসাবেরও কোন মিল নাই । এ নিয়া সুপারবাইজার বাতেন মিয়ার সাথে কথা বলতে গেলে কোন পাওাই পায় না শেফালী । বরং অশ্রাব্য গালি শুনতে হয় তাকে ।
মাগী ঠিকমত কামে আউয়ো না আবার হিসাব চাও ।
কি কন ভাই আমিতো রোজই আই ।
আইলে হাজিরা খাতায় সই কই ?
শেফালী এ কথার কোন জবাব দিতে পারে না । গরীবের জবাব থাকে না । তার উপর যদি হাজিরা খাতায় সই না থাকে তবে’তো কথাই নাই । নিয়মের অনিয়ম হয়, কিন্তু যে জীবন অনিয়মে শুরু তার নিয়ম হয় না । তাই শেফালী ন্যায় অন্যায় ভুলে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে । শেফালীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বাতেন মিয়া এগিয়ে কাছে আসে ।
দাঁড়ায়া আছস কেন ? কামে যা । তোর ব্যাপারটা আমি দেখুম ।
ঠিক আছে ভাই, তয় যাই ।
যা । তয় মোবাইল নম্বরটা দিয়া যা । বিপদে আপদে কামে লাগব ।
বিপদ আপদ আসতে বেশী সময় লাগে না । কাজ থেকে ফিরে শেফালী রান্না সবে শেষ করেছে মাত্র । এখনো খাওয়া দাওয়া শুরু করে নাই । এমন সময় মোবাইলের রিং বেজে উঠে । –
শেফালী মোবাইল রিসিভ করে । হ্যালো কে বলছেন ?
বাতেন মিয়া । সুপারভাইজার বাতেন মিয়া ।
আসসালামু আলাইকুম ভাই । এত রাইতে ফোন দিলেন যে ভাই ।
দিলাম । ভাবলাম কি করস একটু খোঁজ খবর লই । তাছাড়া অফিসে’তো আর খোঁজখবর লওয়া যায় না ।
ও আইচ্ছা ।
হুন ভাবতাছি স্যারের লগে আলাপ কইরা তোর গত মাসের তিনদিনের বেতনের একটা ব্যবস্হা করুম ।
তাইলে’তো ভাই অনেক উপকার অয় ।
হুন উপকার’তো আমি একলা করলে অইবো না । তোরও’তো আমার কিছু উপকার করতে অইবো ।
আমি আবার আপনার কি উপকার করুম ভাই ।
পরে কমুনে আইজকা রাখি ।
তারপর শুরু হয় বিপদ আপদের নিত্য যাতায়ত । কখনো ইঙ্গিতে কখনো সরাসরি নানান অশ্লীল কথা বার্তা শুরু করে বাতেন মিয়া । শেফালী যতউ এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে বাতেন মিয়া ততই একই বিষয়ে ফিরে আসে । শেফালী না পারে কিছু বলতে না পারে লাইন কাটতে । লাইন কাটলে ওভারটাইমের উপর খড়গ, না কাটলে কানের উপর মড়ক । পৃথিবীতে সকল মানুষের সব অধিকার থাকে না । এমনকি নিজ পন্যর উপরও না । তাই শেফালী মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারে না । নিয়তির অসীম বরকত আর প্রযুক্তির সীমাহীন দয়ায় দিনের পর দিন অশ্লীল কথাবার্তা শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে শেফালী । তাই একদিন জোর করেই ম্যানেজারের রুমে ঢুকে পড়ে শেফালী । তারপর সব খুলে বলে । ম্যানেজার কাউছার আনছারী সব শুনে শেফালীকে আশ্বস্ত করে । এবং ভবিষৎতে এরকম হলে তাকে সরাসরি বলার জন্য তার ফোন নম্বর দিয়ে দেয় । শেফালীর ফোন নম্বরও সেভ করে রাখে কাউছার আনছারী ।
সেদিনের পর থেকে বাতেন মিয়া শেফালীকে আর জ্বালাতন করে না ।
(৩)
তারপর কয়েক মাস ভালোই যায় । কাউছার আনছারী সাহেবও মাঝে মাঝে খোঁজ খবর নেয় শেফালীর । শেফালীরা কয় ভাই কয় বোন । থাকে কই । এসব নানান খোঁজ খবর নেয় কাউছার আনছারী সাহেব । ইদানীং গার্মেন্টেসের অবস্হা খুব একটা ভাল যাচ্ছে না । মাঝে মধ্যেই ছোটখাটো গন্ডগোল লেগে যায় । তাছাড়া গত দুইমাস হলো বেতন দেয় না । সামনে ঈদ কি হবে আল্লাহই জানে । এলাকার দোকানে দুই হাজার টাকা বাকী পড়েছে । দোকানদারও আর বাকী দিতে চায় না । শুধু তাদের গার্মেন্টস না । আশেপাশের আরো বেশ কয়েকটা গার্মেন্টেসই একই অবস্হা । বেতন বোনাসের দাবীতে প্রায়ই আন্দোলন মারামারি হয় । কারখানা বন্ধ রেখে মাঝে মাঝে তাকেও আন্দোলনে যেতে হয় । কেন যায় তাও বুঝে উঠতে পারে না । শুধু বুঝে জীবনে টিকে থাকার জন্য দৌড়টা ভীষন প্রয়োজন । তাই দৌড় দেয় । কিন্তু এই দৌড়ের শেষটা কোথায় শেফালীরা জানে না । এই দৌড়ে কে বাঁশি দেয়, কে রেফারী কেউ জানে না । কেউ জানে না কে পক্ষ কে বিপক্ষ । কি নিয়ম কি অনিয়ম ।
এর মাঝে একদিন শেফালীকে ফোন দেয় কাউছার আনছারী সাহেব ।- কি শেফালী কেমন আছ ?
জ্বী স্যার ভাল ।
শুনলাম তুমি নাকি মাঝে মাঝে আন্দোলনে যাও ।
না স্যার । মানে……..
শোন শেফালী আমি সবই জানি । তাছাড়া তোমাদের দাবীটাও ন্যায্য । কিন্তু আমারও কিছু করার নাই । হাত-পা বাঁধা । এদিকে আমাদের গার্মেন্টসের অবস্হাও ভাল না । ঈদের আগে মালিক শিপমেন্টটা শেষ করেই বোধহয় গার্মেন্টস বন্ধ করে দিবে । বেতন বোনাসও দিবে বলে মনে হয় না ।
স্যার কি কন ? আমরা খামু কি ?
আমি বোধহয় ঈদের পর আর এই গার্মেন্টস খোলা থাকলেও জয়েন করবো না । অন্য একটা গার্মেন্টেসের সাথে কথা হয়েছে । বেতনও বেশী দিবে ।
স্যার আমারও একটা ব্যবস্হা করে দেন না । গরীব মানুষ । চাকরি না পাইলে’তো না খাইয়া মরুম ।
তা চাকরি’তো দুই একটা দেওয়া যেত’ই । কিন্তু সেদিনের পত্রিকায় লাঠি হাতে তোমার যে ছবি দেখলাম সে ছবি যদি কোন মালিকের চোখে পড়ে তবে আর চাকরি হবে বলে মনে হয় না ।
স্যার………. ।
কান্নাকাটি করে লাভ নেই । দেখি কিছু করা যায় কিনা । এক কাজ কর কাল একবার আমার সাথে দেখা করো । কোথায় দেখা করবা আমি ফোনে বলে দিব । অবশ্য কাল‘তো তোমাদের আবার কর্মসূচী আছে । বিজিএমইএ ঘেরাও কর্মসূচী । দেখো কি করবা ?
না স্যার আমি আপনার সাথে দেখা করবো ।
ঠিক আছে রাখি ।
কাউছার আনছারী সাহেব ফোনটা রেখে একটা তৃপ্তির হাসি হাসে । সে জানে শেফালী কাল আন্দোলনে যাবে না । তার কাছেই ধরা দিবে । ছোট্ট একটা মিথ্যা বেশ কাজ দিয়েছে । পত্রিকায় ছবি ছাপানো হয়েছে এমন ক্ষুদ্র মিথ্যা বৃহৎ ইচ্ছা পূরনে বেশ উপকার রাখবে । মাঝে মাঝে মিথ্যা বলতে হয় । সত্যের মাঝে ক্ষুদ্র ক্ষ্রদ্র মিথ্যা জুড়ে দিতে হয় । তাহলে সত্যের চেয়েও বড় সত্য অনাবৃত থাকে । পৃথিবীর কেউ সে সত্যের খোঁজ পায় না । পৃথিবীর সে চোখও আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি ।
শেফালীকে যেদিন প্রথম দেখেছিল কাউছার সাহেব সেদিনই একটা স্রোত বয়ে গিয়েছিল শরীরে । কিন্তু সাধু সজ্জ্বন মানুষ সে । শিক্ষাদীক্ষাও আছে । তাই বাতেন মিয়ার মতো তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুল করা তাকে মানায় না । মানুষের বোকামীরও একটা মাত্রা থাকে । বিশেষত তারমতো শিক্ষিত মানুষের বোকামীর মাত্রাটা আরো সুনির্দিষ্ট । তাছাড়া শিল্পকলার একটা মূল্যায়ন আছে । তাই সবকিছুতেই কিছু শিল্প থাকতে হয় । জলে নামলেই যদি গোসল করতে হয় তবে’তো লুঙ্গি গামছার দোকান দিয়েও লজ্জা নিবারন করা যাবে না ।
(৪)
সেদিন সকাল হতেই বিজিএমইএ অফিসের সামনে বেতন ভাতার দাবীতে গার্মেন্টস কর্মীদের ব্যাপক আন্দোলন সংগ্রাম শুরু হয় । গার্মেন্টস কর্মীরা এলোপাতাড়ি গাড়ি ভাঙ্গতে থাকে । পুলিশও সমানে টিয়ারশেল, কাঁদানে গ্যাস মারতে থাকে । শুরু রাষ্ট্রের হেনতেন ব্যক্তিদের দৌড়াদৌড়ি । বিজিএমই’র কর্মকর্তারাও দৌড়ঝাপ শুরু করেন । শেফালী আন্দোলনে ভরসা পায় না, রাষ্ট্রের কৃপা আশা করে না । তাই কাউছার সাহেবের খাঁচায় ধরা দেয় । কাউছার সাহেব জ্ঞানী লোক । তাই শেফালী বুঝতেই পারে না তীব্র স্রোতের ভাঙ্গন যন্ত্রনা । শেফালীর শুধু মনে পড়ে স্যার একগ্লাস কোক খেতে দিয়েছিল । তারপর মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছিল । ব্যস আর কিছু মনে পড়ে না । কাউছার সাহেবের শরীরে বয়ে চলা স্রোতের তোড়ে মাটির যমুনায় ছেদন পড়ে । টান পড়ে শিকড়ে । সে স্রোতে সমূলে উৎপাটিত হয় বৃক্ষ । ওদিকে তীব্র আওয়াজে ভেসে আসে…… বেতন চাই দিতে হবে, দিতে হবে ।
একসময় পৃথিবী শান্ত হয় । স্রোত থামে । কিন্তু জন্মান্ধ মানুষের স্রোতে ভাসা জীবনের শেষ হয় না । এমনকি শেষ হবে এমন বিশ্বাসও কেউ রাখে না ।
নিঃশব্দ নাগরিক ।
১,২৪৫ বার পড়া হয়েছে
বেশ
ভাল লাগল ।
আবার পড়া
ভাল থাকবেন ।
টান লাগা স্রোতের দাঁড় বেঠাহীন পাল ভাঙ্গা নৌকায় ।
বেঠাহীন ? হবে বৈঠাহীন ।
শেফালী কাজে যোগ দেওয়ার পর একদিনও কামাই দেয় নাই । তবু গত মাসে হাজিরা খাতায় তিনদিন অনুপস্হিত । এমনকি ওভার টাইমের হিসাবেরও কোন মিল নাই । এ নিয়া সুপারবাইজার বাতেন মিয়ার সাথে কথা বলতে গেলে কোন পাওাই পায় না শেফালী । বরং অশ্রাব্য গালি শুনতে হয় তাকে ।
মাগী ঠিকমত কামে আউয়ো না আবার হিসাব চাও ।
কি কন ভাই আমিতো রোজই আই ।
আইলে হাজিরা খাতায় সই কই ?
বর্তমান গার্মে্নট ফ্যাক্টরীগুলো আইডি কার্ড আর পাঞ্চ কার্ড নিয়ে সমৃদ্ধ ।সুতরাং আমরা যারা পোষাক কারখানা নিয়ে লিখি এই বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে।
একটা সময় ছিলো পোষাক কারখানায় হাজিরা খাতা ছিলো ।এখন সেই পদ্ধতি নাই।অনেক পরিবর্তন হয়েছে।লেখককে এই বিষয়ে নজর দেওয়ার অনুরোধ রইলো।
কম্পিউটারের বাটন ভুল চাপায় বানান ভুল হয়েছে । এজন্য দুঃখিত । ভবিষৎতে বাটন চাপায় আমাকে আরো বেশী সর্তক হতে হবে ।
আমি আপনাকে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি এখনো অধিকাংশ গার্মেন্টস কারখানায় হাজিরা খাতা ব্যবহার করা হয় । কর্মকর্তা পর্যায়ে কার্ড পাঞ্চ উল্লেখযোগ্য হলেও কর্মচারীদের বেলায় এই সুবিধা এখনো অপ্রতুল ।
আমি নিজেও গার্মেন্টসে কিছুদিন কাজ করেছি ।
ধন্যবাদ ।
নি:শব্দে নি:শব্দে কঠিন গল্প লিখে ফেলেছেন, জীবন এত কষ্টের কেন, বিশ্বাস এত ঠুনকো কেন, পুরুষরা পশু কেন।
গল্প চমৎকার লিখেছেন
কষ্ট করে শ্রম দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ ।