প্রাণের প্রিয়তমা (পর্ব-৪)
(পূর্বে প্রকাশের পর)
সাকিব তেজকুনিপাড়ায় বাসা করে থাকে। টিউশনি করে বাসা ভাড়া ও খাওয়া খরচ চালায়। কারণ তারতো বাড়ি থেকে টাকা আসার কোন পথ নেই। তবে সোনিয়াও মাঝে মাঝে তাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করে। বর্তমানে সাকিব বি.এস.সি পরীক্ষা দিয়েছে। কয়েক মাস পরে রেজাল্ট দিবে। সাকিব বুয়া দিয়ে পাক করিয়ে খেত। সোনিয়ার সাথে যখন পরিচয় হয় তখন থেকে সোনিয়া তাকে বুয়া দিয়ে পাক করিয়ে খেতে দেয়নি। কারণ সোনিয়া প্রতিদিন তাকে রান্না করে দিয়ে যায়। সোনিয়ার এমন গভীর ভালোবাসায় সাকিব এমনই পাগল হয়েছে যে তাকে ছাড়া এখন আর কিছুই ভাল লাগেনা। একদিন সোনিয়ার সাথে কথা না হলে মনে হয় হাজার বছর ধরে কথা হয়নি। সোনিয়া যখন রান্না করে তখন সাকিব বসে থাকে যতক্ষণ না তার রান্না শেষ না হয়। মনে হয় তারা স্বামী-স্ত্রী। এভাবেই তাদের প্রতিটি দিন অতিবাহিত হয়। তাদের এ প্রেম কাহিনী বাসার আশেপাশের সবাই জানে। কেউ তাদের ভালোবাসায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াইনি।
শীতের সকাল। শবেমাত্র শহরের মানুষগুলো ঘুম থেকে জেগেছে। কেউ কেউ এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। কারণ বর্তমানে টিভি চ্যানেলগুলোতে সারারাত খোলা থাকে। তাই টিভি দেখে এত রাতে শুয়ে সকালে উঠতে শহরের মানুষের ৮/১০টা বেজে যায়। আজ থেকে দশ বছর পূর্বের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে, তখন কিন্তু এত টিভি চ্যানেল ছিল না। আর গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলো এশার নামায পড়েই গুমিয়ে পড়তো। আর ভোর পাঁচটার আগেই ঘুম থেকে জেগে উঠতো।
সোনিয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেল। আড়মোড়া দিয়ে সোনিয়া বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে গেল। বুকের দিকে চোখ পড়তেই লজ্জায় চোখ উপরে তুলে বলল, তোকে শুধু সাকিবের জন্য যত্ন করে রেখেছি। কেউ এ বুকে হাত দিতে পারবেনা। না! আর দেরি করা যাবেনা। সাকিবের কাছে যেতে হবে। ওকে নিয়ে আজ ঘুরব। পার্কে যাব। কত মজা হবে তাই না! এসব বলতে বলতে সাওয়ার ছেড়ে দিল। ঝটপট গোসল সেরে ফেলল। বাথরুম থেকে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে আসলো। চুলগুলো সুন্দর করে আচরিয়ে সিঁথি করল। গলায় স্বর্ণের একটা চেইন পড়লো। তার প্রিয় আকাশি রঙের শাড়িটা পড়লো। তার সাথে ম্যাচ করে ব্লাউজ পড়লো। ঠোঁটে লাল রঙের লিপস্টিক দিল। কপালে ছোট করে একটা টিপ দিল। বাহ! বেশ সুন্দর লাগছে তো। রূপ চর্চা শেষে বুয়াকে বলল, দিদি।
বুয়া ডাক শুনে দ্রুত এসে বলল, আফা আমারে ডাকছেন?
হ্যাঁ।
আর শুনুন দিদি আমি আজ আমার এক বন্ধুর বাসায় যাচ্ছি। আসতে সন্ধ্যা হবে। বাবা ঘুম থেকে উঠে জিজ্ঞেস করলে বলবেন। ঠিক আছে।
আচ্ছা আফা।
সোনিয়া সাকিবের বাসার দিকে রওনা দিল। সোনিয়া সাকিবের বাসায় এসে দেখে সাকিব এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। দরজায় নক করতেই সাকিব দরজা খুলল। সোনিয়াকে দেখে সাকিব আশ্চার্য হয়ে বলল, সোনিয়া! এত সকালে তুমি?
সোনিয়া ঠান্ডা মাথায় বলল, হ্যা আজ সকাল সকাল আসলাম। কারণ তোমাকে নিয়ে আজ আমি বোটানিক্যাল গার্ডেনে যাব।
তাহলে আমার টিউশনি।
সোনিয়া ঘরে প্রবেশ করতে করতে বলল, আজ আমি তোমার কোন কথা শুনতে চায়না। তোমার সব টিউশনি আজ আমি ছুটি ঘোষণা করলাম।
ঠিক আছে কি আর করা। যেন খুব কষ্ট হয়েছে একথাটা বলতে।
সোনিয়া খাটে বসে বলল, তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হও।
সাকিব তার গালে হাত দেখিয়ে বলল, একটু বস আমি সেভটা করে নেই।
সোনিয়া সেভ করার কথা শুনেই দরজাটা লাগিয়ে দিল।
আরে দরজা দিচ্ছ কেন? অন্ধকার হলে সেভ করব কিভাবে?
বাতি আছেনা।
তাই বলে দরজা দিতে হবে?
কেন দরজা দিলাম তা এখনই দেখাচ্ছি। বলেই সোনিয়া বলল, এবার সাহেব আপনার লেজার, ক্রীম, ব্রাশ এগুলো আমার কাছে দিন।
সাকিব সোনিয়ার উদ্দেশ্যটা বুঝতে পেরে রহস্য করার জন্য বলল, তুমি এগুলো দিয়ে কি করবে? তোমার তো কোন দাঁড়ি গোফ নেই।
সোনিয়া চোখ রাঙিয়ে বলল, টিটকারি না করে আমার হাতে দাও বলছি।
সাকিব বাধ্য প্রেমিকের মত লেজারটা তার হাতে তুলে দিল।
সোনিয়া এবার তার সামনে বসে বলল, আজ আমি তোমাকে সেভ করে দিব। তুমি কিছু বলতে পারবে না।
আহ্হা। সাকিব বিরক্তি বোধ করল।
এই তুমি এমন করছ কেন?
না বলছিলাম কি আমি তো পারব।
আচ্ছা, আমি তোমার কে?
প্রেমিকা। প্রাণের প্রিয়তমা।
না তুমি ভুল বলেছ। আমি হচ্ছি তোমার হবু স্ত্রী। অতএব আমার কাজ আমাকে করতে দাও। এই বলে সোনিয়া সাকিবের গালে, থুতনিতে ক্রিম মাখল।
সাকিব তাকে একটু খেপানোর জন্য বলল, এই তুমি আবার নাপিতনী হলে কবে থেকে?
এই ধর আজ থেকেই।
তাহলে নাপিতনী তোমাকে কত দিতে হবে?
আমাকে কোন টাকা দিতে হবে না।
তা হলে কি দিতে হবে।
ভালবাসা।
ভালবাসা! বড় অদ্ভুদ নাপিতিনী তুমি। আমি জীবনেও এমন নাপিতিনী দেখিনি।
এই বেশি কথা বলবেনা। তাহলে কিন্তু গাল কেটে ফেলব।
এ্যা! গাল কেটে ফেলবে! তাহলে চুমু দিবে কোথায়?
কেন? তোমার ঠোঁটে। বলেই আবার বলল, হয়েছে আর ফাজলামো করতে হবে না। এভাবে বক বক করলে সত্যি সত্যি কিন্তু গাল কেটে যাবে। তখন কিন্তু তোমার চেয়ে বেশি কষ্ট পাব আমি। কারণ তোমার সব কিছুইতো আমার।
সাকিব আর কোন কথা না বলে চুপ করে বসে রইল। আর সোনিয়া অভিজ্ঞ নাপিতিনীর মত ধীরে ধীরে সাকিবকে সেভ করে দিল। সাকিব এবার বাথরুমে গিয়ে গোসল সেরে নিল। গোসল করে দু’জন পাশাপাশি বসল।
সোনিয়া সাকিবকে লক্ষ্য করে আদেশের সুরে বলল, আজ থেকে আর সেলুনে সেভ হবেনা। আমি তোমাকে সেভ করিয়ে দিব। সেলুনে সেভ করলে অনেক ক্ষতি হয়। এক ব্লেট দিয়ে তারা একাধিক লোকের দাঁড়ি সেভ করে। ব্লেটের সাথে একজনের জীবাণু অন্য জনের শরীরে প্রবেশ করে।
সাকিব কিছু বলার আগেই সোনিয়া প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলল, আর শোন আল্লাহ চাহেতো যদি পাশ করতে পার তাহলে একটা চাকরির ব্যবস্থা করবে। আর চাকরি হয়ে গেলেই তোমার ঘরণী হব। তখন সারাক্ষণ তোমার পাশে থাকব। তোমার সেবা যত্ন করব। তোমাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরব। তখন আমাকে হারানোর আর ভয় থাকবে না।
সাকিব এসব কথা শুনেই যাচ্ছে কিন্তু কিছুই বলছে না। এবার সে মুখ খুলে মুখে হাসির রেখা অঙ্কন করে বলল, তাহলেতো আজই চাকরির সন্ধানে বের হতে হবে।
আরে এত তাড়াহুড়া করতে নেই। আগে রেজাল্ট বের হোক তারপর। আর আমিতো এখনই গলায় ঝুলিয়ে পড়ছি না। একথা বলেই সোনিয়া ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, এই তাড়াতাড়ি প্যান্ট শার্ট পড়। দেখতে দেখতে তো নয়টা বেজে গেল।
এবার সাকিব প্রিয়তমার প্রাণে তাকিয়ে বলল, মহারাণী কোথায় যেতে হবে?
আজ সোনিয়া বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে যাবে। একথা জেনেও ইতরামি করার জন্য বললো।
আমি যেখানে যাব সেখানে যাবে।
তুমি কোথায় যাবে?
সোনিয়া রহস্য করে বলল, জাহান্নামের চৌরাস্তায়।
ওখানে গেলে কি হবে।
ওখানে গেলেই বুঝতে পারবে।
সাকিব যেন বিরক্তির সুরে বলল, আহ্হা বল না কোথায় যাবে?।
সোনিয়া সাকিবের গায়ে ধাক্কা দিয়ে বলল, এই তুমি এত বোকা কেন?
কেন? কি হয়েছে?
কোথাও যাবার কথা বললেই তুমি সংকোচ মনে কর।
এসব কথা বলতে বলতে সাকিব প্যান্ট শার্ট পড়ে নিল। এবার সাকিব আয়নার সামনে দাঁড়ালো। ভলো করে চেহারা দেখে নিল। এদিকে সোনিয়া তার বরাবর পেছনে দাঁড়ালো। দু’জনকেই আয়নায় দেখা গেল। সোনিয়া আস্তে আস্তে সাকিবের গালে তার ডান হাতটা রাখল। সদ্য সেভ হওয়া গাল। আহ্ ! কি মসৃণ। সাকিব শার্টের কালার ঠিক করতে করতে তার হাতটা সরিয়ে নিল। তার হাত সরিয়ে নিতে দেখে সোনিয়া বলল, এই তুমি কি আমার মনের কথা বুঝনা, আমি কি চাচ্ছি? এ কথা বলে সোনিয়া তার দু’হাত সাকিবের দু’বাহু ধরে তার দিকে ফিরিয়ে তার হাতে নিজের গালটি দেখিয়ে বলল, এখানে একটা… প্লিজ।
সাকিবও চাচ্ছিল ওকে আজ একটা চুমো দিবে কিন্তু সোনিয়া কি জানি কি বলে তাই দিতে চাইলনা। এখন যখন সোনিয়া নিজেই বলছে তখন আর দেড়ী কিসের। সাকিব সোনিয়ার দু’কান বরাবর মাথাটাকে চেপে ধরে গালটাকে তার কাছে আনল। দু’হাত বগলের পিছন দিয়ে প্রবেশ করিয়ে পিঠে হাত ভুলাতে লাগল। সাকিবের স্পর্শে সোনিয়া শিহরিত হয়ে উঠল। তারপর ধীরে ধীরে সাকিব তার মুখটাকে গুল করে সুন্দুর করে তার গালে একটা ভালোবাসার চুমো এঁকে দিল। মূহুর্তের মধ্যে যেন তারা আজ ভালোবাসার অতল গহরে হারিয়ে গেল। এই চুমোর জন্যই হয়তো সোনিয়া উনিশটি বসন্ত পার করে আসছে। আজ যেন স্বর্গের সুখ পেল ও। ভালোবাসায় এত সুখ তা আগে জানত না।
আর বিলম্ব না করে বোটানিক্যাল গার্ডেনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেল। বাসে দু’জনে পাশাপাশ সিটে বসলো। প্রকৃতির দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন যে মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে এসে পৌঁছল তা টেরও পায়নি তারা। বাস থেকে নেমে এবার টিকেট কাটল। বাগানের ভেতর প্রবেশ করতেই দু’জনে হাত ধরাধরি করে হাঁটতে লাগল। এই গার্ডেন ছোট বড় সবার জন্য উন্মুক্ত। তবে শিশু কিশোরদের চেয়ে প্রেমিক প্রেমিকা ও দম্পতিরা এখানে বেশি আসে। বাংলাদেশীদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকরাও আসে। সারাদিনই নারী পুরুষে ভরপুর থাকে এ গার্ডেন। গার্ডেনের গাছপালার সাথে যেন মানুষ মিশে একাকার হয়ে যায়। সাকিব ও সোনিয়ার মত কত প্রেমিক প্রেমিকার যুগল এখানে আসে তা গুনে শেষ করা যাবেনা।
ওরা হাঁটতে হাঁটতে পদ্ধপুকুর পাড়ে চলে আসল। সেখানে দূর্বাঘাস দেখে বসে পড়ল দু’জনে। সাকিব সোনিয়াকে কোলে নিয়ে বসল। ওর দু’টি হাতে সোনিয়ার বুক ঝাপটে ধরল। কিছুক্ষণ নিরবতা থাকার পর সাকিব বলল, এই শোন।
সোনিয়া ঘাড় ফিরিয়ে সাকিবের দিকে চেয়ে বলল, হ্যাঁ বল।
আর কতদিন আমাদেরকে এভাবে পথ চলতে হবে?
যতদিন চালানো যায়।
যতদিন চালানো যায় মানে। এভাবে কি আমাদের জীবন চলবে?
তাহলে কি করতে হবে?
সংসার পাততে হবে না?
সংসার কি বললেই পাতা যায়। তাছাড়া তোমার একটা চাকরি না হলেতো সংসার পাতা যাবে না।
তা অবশ্যই ঠিক।
এবার সাকিব প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলল, আচ্ছা সোনিয়া তোমার বাবা আমাদের এ সম্পর্ক মেনে নিবেতো?
দেখ বাবার ব্যাপারে কিছু বলবে না। ওনি মেনে নেক বা না নেক তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আমি তার একমাত্র মেয়ে। আমার মতের বিরুদ্ধে করলে সোজা তোমার কাছে চলে আসব।
চলে আসলেই কি সব সমস্যার সমাধান হবে?
সোনিয়ার দু’চোখ খানা তার দিকে তুলে বলল, হ্যাঁ সমাধান হবে।
কীভাবে?
সোনিয়া নরম গলায় বলল, শোন মেয়েদের জন্মই হয় স্বামীর ঘরে চলে যাবার জন্যে। আমি আমার বাবার সাথে চিরদিন থাকব না। স্বেচ্ছায় তোমার কাছে দিলে চলে আসব না দিলেও চলে আসব। কারণ বিয়ের পর নারীর স্বামীই সব কিছু। এখন কথা হচ্ছে আমার বাড়িতে তুমি থাকবে না, তোমার বাড়িতে আমি থাকব। তোমার চাচা, মা আমাদের এ সম্পর্ক মেনে নিবে কিনা সেটা চিন্তা কর। আমার ব্যাপারে চিন্তা করতে হবে না।
সোনিয়ার কথা শুনে সাকিবের যেন এবার টনক নড়ল। তা তো ঠিকই বলছ। এমন করে তো কখনো ভেবে দেখিনি। চাচা, মা তাদের সাথে রাগ করে বাড়ি থেকে চলে আসছি, আজ চার বছর গত হয়েছে। এখন কীভাবে তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়াবো। আর তোমার কথাই বা কি করে বলবো। চাচা যা না করবে তাই হবে।
সোনিয়া তাচ্ছিল্যের গলায় বলল, তাহলে কি হবে?
আরে এত চিন্তা করো না। বাড়িতে জায়গা না পেলে কি বাংলাদেশে জায়গা পাব না।
আচ্ছা ঠিক আছে। এখন আর এ ব্যাপারে চিন্তা করতে হবে না। এখন কথা হচ্ছে…। হঠাৎ করে তার মনে পড়ল তার ছোট ভাইটির কথা। এই তোমার ছোট ভাইটির নাম যেন কি?
বাবুল।
ওকে না, দেখতে খুব ইচ্ছে করে।
কিন্তু কীভাবে তোমাকে দেখাব। ওর ছবিও তো আমার কাছে নেই।
এই তোমার ছোট ভাই কি দেখতে তোমার মতই?
হ্যাঁ কিছুটা মিল আছে আমার সাথে।
এভাবে কিছুক্ষণ পর পর প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বিভিন্ন কথা বলতে বলতে দুপুর দু’টো বেজে গেল। সূর্য এখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ল। গার্ডেনের অসংখ্য গাছের ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো দেখা যাচ্ছে।
একটি মেয়ে কতগুলো বকুল ফুলের মালা নিয়ে আসল। মেয়েটির পরনে একটি ময়লা জামা ও একটি হাফপ্যান্ট। আজ সে অসহায় পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছে বিধায়, যে বয়সে লেখাপড়ার কথা ছিল সে বয়সে মালা বিক্রি করে পেট চালাচ্ছে। মেয়েটি অসহায় দৃষ্টিতে ডান হাতে একটি মালা নিয়ে সাকিবের সামনে ধরে বলল, ভাইজান মালা নিবেন, মালা। দুই ট্যাহা দাম। নেন না একটা মালা। আফারে খুব মানাবে।
একথা শুনে সোনিয়া হেসে উঠল। মেয়েটি আবার বলল, হাসবেন না আফা। সত্যি আপনারে মানাবে। আর আফনারা যদি আমাদের কাছ থেকে না নেন তাহলে আমরা খামু কি? মা কইছে, চুরি করা মহাপাপ । তাই চুরি করি না। ভিক্ষাও করা ভাল না। তাই মালা বেইচ্যা ভাত খাই।
এতটুকুন মেয়ের এ সমস্ত মিনতি মাখা কথা শুনে সাকিব ভাবতে লাগল এত ছোট মেয়ে অথচ কত সুন্দর করে কথা বলে। মেয়েটির প্রতি তার মায়া হল।
সাকিব তাকে বলল, তোমার এখানে মালা কয়টি?
মেয়েটি গুণে বলল, ভাইজান দশটা।
দাও আমার কাছে দাও।
মেয়েটি সবগুলো মালা সাকিবের হাতে দিল। সাকিব সবগুলো মালা সোনিয়ার গলায় ও খোপায় পড়িয়ে দিল। বাহ! গার্ডেনের প্রকৃতি পরিবেশে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে সোনিয়াকে। এবার সাকিব মানিবেগ থেকে একটা বিশ টাকার নোট বের করে মেয়েটির হাতে দিল। মেয়েটি চলে যাচ্ছিল, এমন সময় সাকিব বলল, শোন। মেয়েটি কাছে আসতেই বলল, তোমার নাম কি?
মেয়েটি বলল, বকুল। জানেন ভাইজান আমার মা আমার নাম কেনে বকুল রাখছে?
কেন?
আমি খুব বকুল ফুল পছন্দ করি তাই বড় হইছি পরে আমার মা আমার নাম বকুল রাখে। এই জন্যে তো আমি আপনাগো লাগি বকুল ফুল তোলে মালা বানাইয়া আনি।
সোনিয়া এবার জিজ্ঞেস করল, তোমার মা, বাবা নেই?
একথা বলতেই বকুলের দু’চোখে পানি এসে গেল। কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, না আফা। আজ থাইকা দুই বছর আগে আমার বাবা মারা গেছে। আর মা আছে। আমি ফুল বেছে যা পাই তা দিয়ে আমডা চলি।
তোমার বাবা কীভাবে মারা গেছে?
গাড়ির তলে চাপা পইড়া।
মেয়েটির দুঃখ দেখে সোনিয়ার খুব মায়া হল। সে ভ্যানেটি ব্যাগ থেকে পঞ্চাশ টাকার একটা নোট বের করে বলল, এই নাও, এই টাকা দিয়ে তোমার মায়ের জন্যে ভাল খবার কিনে নিবে।
বকুল টাকা দেখে বলতে লাগল, না আফা না, ট্যাহা লাগব না। আমি ভিক্ষা নেই না।
বকুলের কথা শুনে সোনিয়া ও সাকিব আশ্চার্য হয়ে গেল। এটা ভিক্ষা নয় তোমাকে উপহার দিলাম।
সোনিয়া বারবার দেওয়ার পরও সে টাকাটা নিচ্ছে না। এক সময় জোর করে তাকে টাকাটা দিয়ে দিল। মেয়েটি সালাম জানিয়ে চলে গেল। হকারকে ডেকে কোকাকলা, কেক, কলা আনল। দু’জনে মিলে খেয়ে নিল। এদিকে সূর্য মামা তার ত্যাজ হারিয়ে কমতে লাগল। আর তখই তাড়াতাড়ি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল।
চলবে…
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-১)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-২)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-৩)পড়ুন।