Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-৬)

: | : ১৭/০৬/২০১৩

(পূর্বে প্রকাশের পর)
শীতের শেষে প্রকৃতিতে এসেছে মধু বসন্ত। চারদিকে রঙ্গের বিচিত্র সমারোহ। দক্ষিণা বাতাসে মৃদু হিল্লোল মনে জাগায় শিহরণ। গাছে গাছে আমের মুকুলসহ বিভিন্ন ফুল ফুটেছে। বাতাবী লেবুর গাছে ফুল ধরেছে। কোকিল গান গাইছে। নব পল্লবে যেন বাংলার আনাচে কানাচে সবুজের সমারোহ। ফুলে ফুলে অলির গুঞ্জন। সব মিলিয়ে আনন্দময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃতি যেন আজ নববধু সাজে সেজেছে। প্রকৃতির এমন পাগল করা দিন গুলোয় কবিরা হন মূখর। তারা বসন্তকে বরণ করে লেখেন কবিতা। তেমনি করে কবি বেগম সুফিয়া কামাল লিখেছেন কোন এক বসন্তে ’তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি।
‘হে কবি, নীরব কেন ফাগুন যে এসেছে ধরায়,
বসন্তে বরিয়া তুমি ল’বে না কি তব বন্দনায়?’
কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি-
‘দক্ষিণ দুয়ারে গেছে খুলি?
বাতাবী নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল?
দক্ষিণা সমীর তার গন্ধে গন্ধে হয়েছে কি অধীর আকুল?’
………………………………………………………..
‘হোক, তবু বসন্তের প্রতি কোন এই তব তীব্র বিমুখতা?’
কহিলাম, ‘উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি তুমি ব্যাথা?’
কহিল সে কাছে সরি আসি-
‘কুহেলী উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যসী-
গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হস্তে! তাহাড়েই পড়ে মনে, ভুলিতে পাড়িনা কোন মতে?’
এমনই এক সকালে সাকীব বসে বসে বাড়ির কথা ভাবছে। মা কি এখনও আমার জন্যে কাঁদে। দাদা কি বেঁচে আছে? বাবুল কতটুকু বড় হয়েছে? ইত্যাদি ভাবনায় যখন সাকিব ব্যাকুল, ঠিক তখনই সোনিয়া তার বাসায় আসল। হাতে ছিল একটা উপন্যাস। নাম ‘এ জীবন শুধু তোমার জন্য।’ লেখক আমির হোসেন। সোনিয়া বইটি এনেছে সাকিবকে উপহার দেয়ার জন্য। সাকিবকে চিন্তা করতে দেখে সোনিয়া বলল, কি ভাবছ সাকিব?
সাকিব বলল, কিছু না।
কিছু না মানে! তুমি আমার কাছে লোকাচ্ছ কেন?
কোথায় লোকালাম।
এই তুমি এখন যে কোন একটা বিষয় নিয়ে ভাবছ অথচ তুমি বলছ কিছুই না। একি লুকানো নয়?
সাকিব কি যেন বলবে প্রস্তিুতি নিচ্ছে এমন সময় তার মাথায় হাত বুলিয়ে সোনিয়া বলল, মনটা আজ বেশ খারাপ তাই না?
সাকিব মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিল।
আচ্ছা বলতো তোমার ইদানিং কি হয়েছে? এত টেনশন কর কেন? আবার হাত বুলিয়ে বলল, চিন্তায় চিন্তায় শরীরটা একেবরে শুকিয়ে গেছে। কি এমন চিন্তা কর? তুমি কি আমকে নিয়ে বেশি বেশি চিন্তা কর?
সাকিব দীর্ঘ একটা নিঃস্বাশ ফেলে বলল, চিন্তা কি আমার একটা। তোমাকে নিয়েতো স্বাভাবিক চিন্তা আছেই। তাছাড়া বাড়ির চিন্তায় তো আমার ঘুম আসেনা। আবার চাকরির জন্যেও চিন্তা করি।
তুমি এত চিন্তা করিওনা। সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি তোমার প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী বি.এস.সি পাশটা কর। তারপর একটা চাকরি যোগাড় করে বাড়িতে যাও। পরে আমাকে…এটুকু বলেই সে থেমে যায়।
বল থামলে কেন?
কি বলব?
বল, তোমাকে নিয়ে মানে আমাকে নিয়ে ঘর বাঁধবে। তাইনা?
সোনিয়া লজ্জায় মাথা নেড়ে জবাব দিল, হ্যাঁ।
এবার সাকিবের নজর গেল সোনিয়ার হাতের বইটির দিকে। সাকিব বলল, তোমার হাতে এটা কিসের বই?
ওহ্ আমি ভুলেই গেছি। এটা উপন্যাস বই। তোমার জন্যই এনেছি। লেখকটা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার। দেখতো তাকে চিনতে পার কিনা। আমার মনে হয় তোমাদের গ্রামের আশে পাশের হবে।
সাকিব আগ্রহ করে বলল, কই দাও দেখি, আমাদের এলাকার লেখকের বই। তাকে তো দেখতেই হয়। একথা বলেই সাকিব বইটি হাতে নিল। বইটির পেছনে লেখকের ছবি ও পরিচিতি পরে সাকিব সোনিয়াকে বলল, ওনিতো আমাদের গ্রামের পাশের গ্রামের। ছোট সময় ধরাভাঙ্গা কত গেছি। ওনাকে দেখছি বলে মনে হয় কিন্তু সঠিক খেয়াল করতে পারছি না।
সোনিয়া বলল, ওনি কিন্তু গল্পটা দারুন লিখেছেন। এত রোমান্টিকতা বর্তমানে পাওয়া যায় না। পরিশেষে কিনা নায়িকা কেয়া নায়ক পলাশের জন্য জীবনটা বিলিয়ে দিল তবুও সমাজের কাছে তার ভালোবাসা হার মানতে দেয়নি।
হয়েছে আর বলতে হবেনা। তাহলে তো আমি পড়ে মজা পাব না।
দেখ এই বইয়ের প্রচ্ছদটা কিন্তু আকর্ষনীয় হয়েছে। এত ঝকঝকে প্রচ্ছদ আর কোন বইয়ে পায়নাই। এজন্য লেখক প্রকাশক মোঃ আবু হানিফ ভাইকে ধন্যবাদ দিতে হয়। নতুন ও প্রথম বই হিসেবে এত ভাল লেখা আর কোন লেখকের পাইনি। দোয়া করি তিনি যেন ভবিষ্যতে এর চেয়ে ভাল উপন্যাস উপহার দিতে পারেন। আর এই বইটি যেন পাঠক হৃদয়ে স্থান লাভ করে।
এই তুমি তো দেখছি ওনার খুব প্রশংসা করছ।
প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য বলেই প্রশংসা করছি।
জানো আমি কিন্তু ইতিমধ্যে ওনার ভক্তও হয়ে গেছি। ওনার দ্বিতীয় বইটার নাম ‘প্রাণের প্রিয়তমা’ ঐ বইটার অপেক্ষায় আছি। সাকিব আমাকে কি ওনার বাড়িতে নিয়ে যাবে?
কেন?
ওনার সাথে আমি সরাসরি কথা বলব।
কি বলবে?
বলব তোমার আমার প্রেম কাহিনী নিয়ে একটা উপন্যাস লিখতে।
তাই নাকি?
হ্যাঁ।
ঠিক আছে। কিন্তু আমার তো যাওয়ার জায়গা নেই। তোমাকে নিব কি করে। তবে এখন নয় বিয়ের পর কেমন?
এবার সাকিব প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলল, সোনিয়া আমি যদি কোন দূর্ঘটনার স্বীকার হয় তখন তুমি কি করবে?
সোনিয়া একথা শুনে সাকিবের মুখ চেপে ধরে বলল, সাবধান এমন অলক্ষণে কথা আর কখনো বলবেনা। তাহলে কিন্তু ভীষণ কষ্ট পাব। তোমার কিছু হবে না। তুমি আমার পাশে সারাজীবন থাকবে। এসব কথা বলতে বলতে সোনিয়ার চোখের কোণায় এক ফোঁটা পানি এসে গেল।
এ দৃশ্য সাকিব দেখে বলল, তোমাদের একটা স্বভাব কিছু না হতেই কেঁদে ফেল।
সোনিয়া কেঁদে কেঁদে বলে, কাঁদবনা তুমি এমন অলক্ষণে কথা বল কেন? তুমি জাননা আমি তোমাকে কত ভালবাসি। বল আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।
ঠিক আছে বাবা আর কাঁদতে হবেনা। তোমাকে ছাড়া আমি কোথাও যাবনা। তবে এক জায়গায় তোমাকে ছাড়া যাব।
সোনিয়া আশ্চার্য হয়ে বলল, কোথায়?
কবরে।
তুমি আমার সাথে রসিকতা করছ।
ঠিক আছে আর কিছু বলবো না। বলেই সাকিব তার ডান হাতে সোনিয়ার চোখের পানি মুছে দিল।
আবার প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে সাকিব বলল, ঈদতো প্রায় নিকটবর্তী। আর মাত্র সপ্তাহ খানেক বাকী আছে। তো ভাবছি ঈদের দিন তোমাকে একটা উপহার দিব।
কি উপহার।
উহু, এখন বলবো না। এটা সারপ্রাইজ হয়ে থাকবে।
ঠিক আছে আমিও শুনতে চায়না।
এদিকে কথায় কথায় কখন যেন দশটা বেজে গেল তা তাদের খেয়াল নেই। সাকিব এক পলকে সোনিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সোনিয়া ঘড়ির দিকে তাকিয়েই বলল, কি ব্যাপার তুমি সারাক্ষণ এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে নাকি ভাত খেতে হবে না?
জান সোনিয়া আমরা আবেগের তাড়নায় অনেক কিছুই বলি, বাস্তবে কিন্তু তা নই। ভালোবাসার জন্য হয়তো কিছুক্ষণের জন্য পেটকে ভুলিয়ে রাখতে পারব। একবারে কি না খেয়ে থাকতে পারব? পেটের সাথে সবকিছু হার মানে। দুনিয়ার সবকিছু একদিকে আর পেট একদিকে। তবে পেটের পরেই কিন্তু ভালবাসার স্থান। পরে অন্যান্য কাজ।
তা সাকিব তুমি ঠিকই বলেছে।
যাও এবার কথা না বাড়িয়ে রান্না করো গিয়ে।
সোনিয়া একটু রহস্য করে বলল, কাকে বলছ?
সাকিব এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল, এখানে তো তোমাকে ছাড়া আর কাউকে দেখছি না।
তাহলে বুঝি আমাকেই বলছ?
হ্যাঁ।
আমি কি তোমার বিয়ে করা বউ নাকি যে, প্রতিদিন রান্না করে খাওয়াবো? একটা বিয়ে করে নাও। সেই বউ তোমাকে রান্না করে খাওয়াবে। আমি অন্তত মুক্তি পাব।
সাকিব তার ফাজলামো বুঝতে পেরে সেও রসিকতা করে বলল, তা ম্যাডাম কাকে বিয়ে করব?
কাকে বিয়ে করবে সে কথা আমি বলব কি করে। তবে তোমার যদি কাউকে পছন্দ থাকে বিয়ে করবে। আর যদি না থাকে তাহলে বাড়িতে গিয়ে তোমার চাচাকে বলবে বিয়ে করাতে। কারণ বাংলাদেশেতো মেয়ের কোন অভাব নেই।
হ্যাঁ। সোনিয়া আমি একজনকে ভালবাসি। আর আমি তাকেই বিয়ে করব। তবে তার আগে একটি চাকরি নিয়ে নেই। তুমি আর ততদিন ধৈর্য্য ধরে আমাকে পাক করে খাওয়াও। তারপর বিয়ে করা বউয়ের হাতের রান্না খাব। তখন আর তোমাকে বিরক্ত করব না।
বুঝেছি আমার প্রয়োজন শেষ হলে আর আমাকে বিরক্ত করবে না তাইতো? এই বলেই সাকিবের গায়ে একটা চিমটি কেটে চুলার কাছে চলে গেল।
সোনিয়া রান্না বসাল। সাকিব খাটের এক কোনে বসে গান গাইতে লাগল- সোনিয়া সোনিয়া মনটা নিল কাড়িয়া, আমারে ভালোবাসিয়া…।
সোনিয়া বিরক্তবোধ করে বলল, এই দেখছ কি রসের গান ধরছে আমার নায়কে। আমি গরমে মরছি আর তুমি ছাগলের মত ভ্যা ভ্যা করে গান গাইছ। তোমার এই ছাগলা কন্ঠের গান কেউ শুনবেনা।
তাহলে কি করতে হবে আদেশ করুন মহারাণী।
সোনিয়ার কাছে ছিল একটা চামচ। চামচটি হাতে নিয়ে নাড়িয়ে বলল, আমার আদেশ শুন।
বল।
যতক্ষণ পর্যন্ত আমি রান্না করব, ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমাকে পাখা দিয়ে বাতাস করবে।
আরে বাপরে! এত বড় আদেশ! আমার কষ্ট হবে না বুঝি।
সোনিয়া মুখ ভেংচিয়ে বলল, আর আমার বুঝি সুখ হচ্ছে তাইনা?
তাইতো। সত্যি তোমার কষ্ট হচ্ছে?
আমিতো তোমাকে রেঁধে দেয় আর তুমিতো রাক্ষসের মত খেয়ে ফেল।
সাকিব সোনিয়ার এসব কথায় রাগ হচ্ছেনা বরং সেও ইতরামি করে তার প্রতি উত্তর দিচ্ছে।
সাকিব এবার বলল, রাণীর আদেশ কি অমান্য করা যায়। একথা বলেই সাকিব পাখা এনে বাতাস করতে লাগল।
রান্না শেষে দু’জনেই খেয়ে বের হলো অজানা উদ্দেশ্যে। সারাদিন এ বিশাল ঢাকা শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে ঘুরে বেড়াল। শিশু পার্ক, রমনা পার্ক ও সংসদ ভবন ঘুরে যার যার গন্তব্যস্থলে চলে গেল।
চলবে…

 

প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-১)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-২)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-৩)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-৪)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-৫)পড়ুন।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top