প্রাণের প্রিয়তমা(র্পব-১২)
(পূর্বে প্রকাশের পর)
পাখীর কলকাকলীতে সোনিয়ার ঘুম ভাঙল। আড়মোড়া দিয়ে ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে যায়। তারপর গোসলটা সেরে রুমে এসে কাপড়টা নাড়ল। পরে সাকিবের পাশে এসে দেখতে পেল সাকিব কি সুন্দর ঘুমাচ্ছে। দু’চোখের পাতা এক হয়ে আছে। হাতটা সোনিয়ার বিছানায়।
সোনিয়া তার পাশে বসে তার গায়ে ধাক্কা দিয়ে বলল, এই সাকিব উঠ। গোসল করবে না?
সাকিব না বলেই নড়ে চড়ে বাঁকা হয়ে চাদরটা টেনে ভালভাবে ঘুমের ভান ধরল।
সোনিয়া সাকিবের পেটের মধ্যে খোচা দিয়ে বলল, এই খাটাস জলদি উঠ। গোসল সেরে নাও।
কিন্তু সাকিব নাছোড়বান্দা। ঘুম থেকে সে কিছুতেই উঠবে না। পরে সোনিয়া বিছানা থেকে উঠে গিয়ে এক গ্লাস পানি আনল। সাথে সাথে চোখে মুখে ঢেলে দিল পানি। এবার না উঠে যাবে কোথায়?
এই কর কি, কর কি বলেই লাফ দিয়ে উঠল সাকিব। তারপর বলল, নাহ্ তোমার জ্বালায় ঘুমাতে পারব না সারারাততো ঘুমাতে দিলে না; এখন ও দিবে না।
আরে বাবা সারা জীবনতো ঘুমিয়েছ। আজ না হয় ঘুম একটু কম হল। এতে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেল।
সাকিব আর কোন কথা না বাড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়ল। সোনিয়া বিছানাপত্র গুচিয়ে রান্না বসাল। আর সাকিব বাথরুমে ঢুকে ভালভাবে গোসল করে নিল। গোসল শেষে সাকিব সোনিয়ার রান্নার কাজে সহযোগিতা করতে লাগল। সাকিবের সহযোগী মনোভাব দেখে সোনিয়া বলল, তুমি তো দেখছি একেবারে বৌ পাগল হয়ে গেছ। একটুও বাইরে বের হতে পার না? যাও না বাইরে গিয়ে দেখে আজ সূর্যটা কোন দিকে উঠেছে।
সাকিব বলল, দেখ আমার তো আর তুমি ছাড়া আপনজন কেউ নেই। বাইরে গিয়ে কি করব।
সাকিব এবার প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলল, বিয়েতো হয়ে গেল। এবার বাড়িতে গিয়ে মাকে তোর তাঁর পুত্রবধূ দেখাতে হবে।
তাতো অবশ্যই।
তো কবে যাবে?
চল না আজই যাই।
আজ কি আর যাওয়া যাবে, চাকরী আছে না?
তো কবে যাবে?
শুক্রবারে যাব। সেই দিন সাথে দু’দিন ছুটি নিয়ে যাব। তা কেমন হয়?
ভালই হয়।
তারপর মাকে, ভাইকে, চাচাকে এখানে নিয়ে আসব। কেমন হবে?
খুব ভাল হবে।
জান তোমাকে পেলে বাবুল খুব খুশী হবে। তবে আমার একটাই ভয়। চাচা অন্য ধরনের মানুষ। তিনিতো এমননিতেই আমার প্রতি রেগে আছেন। তাছাড়া তোমার আমার বিয়ে মেনে নিবেন কিনা জানি না।
তা তুমি চিন্তা করো না। আমি চাচাকে বুঝাবো। দরকার হয় আমি তোমার পক্ষ হয়ে চাচার কাছে মাফ চাইব।
আরো অনেক কথাবার্তার মধ্য দিয়ে রান্নার কাজ শেষ হল। দু’জনে খাওয়া দাওয়ার পর একটু রেস্ট নিল। এদিকে সাকিবের অফিসের সময় হয়ে আসছে। সোনিয়া সাকিবের গায়ে কোট পড়িয়ে সামনা সামনি দাঁড়িয়ে বুতাম লাগাচ্ছে। আর বলছে, শুন, দুপুরে কিন্তু বাসায় এসে খাবে। বাইরের কোন খাবার খাবে না। আর আমার কিন্তু তোমাকে ছাড়া একা একা খেতে ভাল লাগবে না। বলে তাকে একদম বুকের কাছে টেনে নিয়ে বলল, শুন এতদিন লজ্জায় তোমাকে চুমো দিতে পারিনি কিন্তু আজ লজ্জা নেই। এই বলে সাকিবের গালে একে দিল ভালোবাসার চুমো। এবার বলল, আজ তোমাকে চুমো দেয়ার অর্থ হল- তোমার দিকে যেন কোন মেয়ে নজর দিতে না পারে। কারণ তোমার সহকর্মী মেয়েরা না জানি কেমন। তোমার সাথে যদি পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত হয়ে যায়। বলেই হাসল।
সাকিব তার কথায় হেসেই ঘড়ির দিকে তাকাল। ছাড় সময় হয়ে যাচ্ছে।
সাকিব চলে যাচ্ছে। স্ত্রী তার গমনাগপথের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
সাকিব অফিস থেকে আসার পথে সোনিয়ার জন্যে একটা শাড়ী ও কিছু কসমেটিকস নিয়ে আসে। রুমে এসে কোটটা খুলে সাকিব সোনিয়াকে নিয়ে পদ্মাসনে বসল। এবার সাকিব সোনিয়াকে বলল, চোখ বন্ধ কর।
সোনিয়া বলল, কেন?
ওহু। কোন কথা নেই। যা বলছি তা কর।
সোনিয়া চোখ বন্ধ করতেই সাকিব প্যাকেটটি সোনিয়ার হাতে দিয়ে বলল, এবার চোখ খুল।
সোনিয়া চোখ খুলে বলল, ওয়াও। এত কিছু আমার জন্যে!
হ্যাগো আমার সোনা বৌ। আমার তো আর কোন বৌ নেই; তাই তোমার জন্যে এনেছি। জলদি শাড়ীটা পড়ে সেজে নাও। দেখব তোমাকে কেমন দেখায়।
এখন সেজে কি করব? শুধু কাপড়টা পড়ে নিই।
দেখ তোমাদেরকে আল্লাহ রূপচর্চা করার অধিকার দিয়েছে অন্য পুরুষকে দেখানোর জন্যে নয় শুধু মাত্র স্বামীকে দেখানোর জন্যে। তাই তুমি শুধু এখন নয় প্রতিদিন সেজে আমাকে দেখাবে এটাই আমি চাই। যাও আর কোন কথা না বলে কাজ কর গিয়ে।
সোনিয়া আয়নার সামনে এসে চুলগুলো সীঁথি করল। সাকিব তার চুল আচরিয়ে দিল। সাকিবের এসব কাণ্ড কারখানা দেখে সোনিয়া হেসে কুটি কুটি। আবার ভালও লাগছে তার কাছে। গাল পালিশ মেখে, আই ব্রু, মাশকারা, আইলাইন ব্যবহার করে কপালে কালো টিপ দিল। ঠোঁটে গোলাপী রঙের লিপস্টিক দিল। তার বাবার বাড়ি থেকে আনা গলার হার ছড়া, কানের দুল পড়ল। কুচি দিয়ে শাড়ী পড়ল। সাথে ব্লাউজ। বাহ! খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।
তখন সাকিবের মুখ থেকে উচ্চারিত হল। You are very beautiful.
চলবে…
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-১)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-২)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-৩)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-৪)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-৫)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-৬)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-৭)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-৮)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-৯)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-১০)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-১১)পড়ুন।