ফেলে আসা স্রোত । ( স্মৃতিচারন। )
আমার দাদী যাকে আমার প্রায় আট নয় বছর বয়সে হারিয়েছি । সেই আমার দাদীর কাছেই বড় হয়েছি ছয় বছর বয়স পর্যন্ত । কারন আমার বয়স যখন দশ মাস তখন জন্ম নেয় আমার ছোট ভাই । আমার মায়ের পক্ষে দুই সন্তানকে এক সাথে পালন করা সম্ভব নয় তাই দাদী আমাকে তার সাথে করে বাড়িতে নিয়ে যায়।
এই কারনে আমার শৈশবটা কেটেছিল দাদার বাড়িতে । পদ্মার নদীর থেকে অনেকটা দুরে আমার দাদার বাড়ি পূর্ব নাম বিক্রমপুর বর্তমানে মুন্সিগন্জ । শ্রীনগর থানার পাঠাভোগ গ্রামের সিকদার বাড়ি আমার দাদার বাড়ি ।
গ্রামের বাড়িতে সবাই খুব ভোরে উঠত। ভোরে ঘুম ভাংগলেই দেখতাম দাদি পাটখড়ি দিয়ে ঘেরা ছন দিয়ে ছাওয়া পাকের ঘরের মাটির চুলায় ফু দিয়ে লাকড়িতে আগুন ধরাছ্ছে । আহ ! সেই ভোরে আগুন দেওয়া চুলার ধোয়ার ঘ্রান এখনও যেন পাই । সকালে ঘুম থেকে উঠলেই ছোট ফুপু নয়ত দাদী আমাকে বেতের পেয়ালা ( বেত দিয়ে বানানো পেয়ালা যা তখন পাওয়া যেত । এখন আর নাই ।) করে মুড়ি আর মিঠাই দিত । গরম কাল হলে আখের মিঠাই শীতকাল হলে খেজুরের মিঠাই দিত। জানিনা এতে হয়ত আমার পেটে কৃমির প্রকোপটা বেশি ছিল। তাই প্রায় মধ্যরাতে ঘুমের মাঝে প্রচন্ড পেটের ব্যাথা হত । সেই ব্যাথায় চিৎকার করে কান্না করতাম । তখন দাদী আর ফুপু কতকিছুই না খাওয়াত । পিয়াজের রস খাওয়াত এতে না কমলে সেই গভীর রাতে বাড়ির পিছনের জংগলে অনাদরে বেড়ে উঠা আনারস গাছের কচি পাতার গোড়ার সাদা অংশটা পাটায় বেটে রস বের করত। সেই রস খাওয়ানোর পর আমার পেটের ব্যাথা কমত।
আমার সবচেয়ে বেশি ভয় করত সকালে পায়খানায় যাওয়া । কি এক বিভিষিকাময় এক অবস্থা । ঐ এলাকায় বছরে চার মাস পানি থাকে । পানি থাকা বলতে পাহাড় সমান উচু ভিটাটা ছাড়া ক্ষেত-বিল, ডোবা-পুকুর , নদী রাস্তা-ঘাট সব পানিতে ডুবে থাকে । তখন কোসা নৌকায় করে গ্রামের লোকদের চলাফেরা করতে হয়। সবার বাড়িতেই একটা দুইটা কোসা নৌকা থাকে। পাহাড় সমান উচু ভিটার পায়খানাটা থাকত ভিটা সমান উচুতে বেশ কিছুটা দুরে কোন ডোবার উপর । পায়খানাটা বানানো হত বিরাট লম্বা লম্বা চারটা বাশের খুটি দিয়ে । ভিটা থেকে পায়খানায় যেতে চিকন একটা সাকো বা পুল থাকত। ওটার উপর দিতে খুব সাবধানে যেতে হত । একটু বেশি নড়াচড়া করলেই সাকোটি হেলতে দুলতে থাকত । এই হেলাদুলা যদি থামানো না যেত তাহলে পাপৎ ধরনী তল। আর পড়বি পড়বিত পর সোজা মলমূত্রের ভাগারে । আর কিছু বলতে চাইনা । তখন সেখানে বড় বড় গুই সাপ দেখা যেত । এখন নাই ।
চলবে……।