Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

রঙ্গিন ফানুশ (১ম পর্ব)

: | : ২৯/১০/২০১৩

এক

তমা, অদিতি আর রবিন আজ দৃক গ্যালারীতে এসেছে শ্যাম পুলকের চিত্র প্রদর্শনী দেখতে। প্রদর্শনী কক্ষের দরজা দিয়ে ঢুকে ওরা ডানপাশ থেকে তৈলচিত্রগুলো দেখতে লাগল। রবিন ও অদিতি প্রথম তৈলচিত্র দেখে পাশেরটার সামনে গেল কিন্তু তমা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সেই তৈলচিত্রের দিকে। তৈলচিত্রটিতে একটি পিচ ঢালা পথের দৃশ্য। যেন একটু আগেই এক পশলা বৃষ্টি একে ভিজিয়ে দিয়ে গেছে। কিন্তু দূরের আকাশে পূবে এখন বিশাল রূপালি চাঁদ দেখা যাচ্ছে। রাস্তার পাশে ল্যাম্পোষ্টের বাতি জ্বলছে। চাঁদের আলোতে ল্যাম্পোস্টের ছায়া পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে। সব মিলিয়ে এমন একটি দৃশ্য যে প্রকৃতিপ্রেমী যে কাউকেই ধরে রাখবে।

তমা চিত্রটির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে লাগল। তার পা এক চুলও নড়ল না। কিন্তু রবিন আর অদিতি একের পর এক চিত্র দেখতে লাগল। একটু পরে ওদের দেখা শেষ হয়ে গেলে ওরা প্রথম কক্ষে ফিরে এসে দেখে তমা সেই প্রথম চিত্রের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।

রবিন তমাকে বলল, কিরে টেলেন্ট? এটা এসাইনমেন্টের টপিক্স নাকি? এভাবে আর কত পড়বি?

ঠিক সে সময়েই রুপক ও শান্ত গ্যালারীর কক্ষে ঢুকল। তারা রবিনের কথাটা শুনতে পেল। এ কথা শুনে শান্ত মৃদু হেসে তমার দিকে তাকাল।

তমা জায়গা ছেড়ে দিয়ে পাশের চিত্রের সামনে গিয়ে দাড়াল। রুপক ও শান্ত সে চিত্রের সামনে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল।

অদিতি বলল, তুই দেখতে থাক। আমরা ক্যাফেটেরিয়ায় আছি।

তমা ঠোটে কামড় দিয়ে ভুরু উপরে তুলে অদিতির দিকে তাকিয়ে অসহায়ের মত মাথা ঝাকাল। ওরা দুজন চলে গেল। তমা একটার পর একটা চিত্র দেখতে লাগল।

শান্তও একটার পর একটা চিত্র দেখতে লাগল কিন্তু রুপক প্রথম চিত্রটার সামনেই দাঁড়িয়ে রইল, নিবিড়ভাবে দেখতে লাগল।

তমা সে কক্ষের চিত্রগুলো দেখা শেষ করে পাশের কক্ষে যাওয়ার সময় দেখল রুপকও সেই চিত্রের সামনে দাড়িয়ে আছে। সে পাশের কক্ষে চলে গেল।

শান্ত’র মোবাইলে হঠাৎ ফোন এল। সে গ্যালারীর কক্ষ ছেড়ে বাহিরে গেল কল রিসিভ করতে। শান্ত ফোনে কথা বলতে বলতে ক্যাফেটেরিয়ায় ঢুকল। রবিন আর অদিতি’র পাশের বেঞ্চে গিয়ে বসল। ওয়েটারকে অর্ডার দিল। একটু পরে ৩ জন আলাপচারিতা করতে লাগল। কথা বলতে বলতে হাসতে লাগল।

বেশ কিছুক্ষণ পর ওরা ক্যাফেটেরিয়া থেকে বের হয়ে গ্যালারীতে ঢুকল। ঢুকে দেখে প্রথম কক্ষে তমা একা, আর ও সেই চিত্রের সামনেই দাড়িয়ে আছে। শান্ত আশপাশে তাকিয়ে রুপককে না দেখে তমাকে জিজ্ঞেস করল, রুপক কোথায়?

তমা অবাক হয়ে বলল, কে?

অদিতি সামনে এগিয়ে এসে বলল, তমা, ইনি হচ্ছেন শান্ত। ইনি আর এনার বন্ধু রুপক আমাদের ভার্সিটিতেই সিএসই তে পড়ছেন।

তমা বলল, ও আচ্ছা।

এ সময় রুপক পাশের কক্ষ থেকে এই কক্ষে আসল। তখন শান্ত রুপককে বলল, রুপক, আয় পরিচিত হ’। (হাত দিয়ে দেখিয়ে পরিচয় করিয়ে-) রবিন, অদিতি আর টেলেন্টেড তমা।

এ কথা শুনে তমা ওর বন্ধুদের দিকে তাকাল। রবিন অন্য দিকে তাকাল আর অদিতি ঢোক গিলল।

রুপক এসে রবিনের সাথে হ্যান্ডশেক করল। শান্ত রুপককে বলল, মজার কথা হ’ল এরাও আমাদের ভার্সিটিতেই পড়ে।

রুপক বলল, তাই নাকি? কোন ডিপার্টমেন্ট?

রবিন বলল, ইংলিশ।

শান্ত অদিতিকে লক্ষ্য করে বলল, আপনি কি প্রায়ই আসেন নাকি গ্যালারীতে? আরকি আপনারা?

অদিতি বলল, আসলে তা না। আসার ইচ্ছাটা আসলে তমার। এর আগেও অনেকগুলো প্রদর্শনীতে আসতে চেয়েছিল কিন্তু সুযোগ হয়নি। আজকে আসলাম।

শান্ত বলল, আমাদের রূপক তো প্রতিটা প্রদর্শনীতেই আসে।

অদিতি বলল, আজ তাহলে আসি। ভাল থাকবেন।

শান্ত বলল, আগামী বৃহষ্পতিবার আমাদের ডিপার্টমেন্টে মেহেদী উৎসব হবে। আপনাদের নিমন্ত্রণ রইল। অবশ্যই আসবেন।

অদিতি বলল, ওয়াও! তাই নাকি? অবশ্যই আসব। আমাদের তমা কিন্তু অনেক সুন্দর মেহেদী দিয়ে দিতে পারে। যদিও ও নিজে মেহেদী দেয় না।

শান্ত বলল, তাহলে তো অনেক ভাল। রবিন ভাই, আপনার ফোন নাম্বারটা দেন। (ফোন নাম্বার নিল)। আচ্ছা, তাহলে বৃহষ্পতিবারই দেখা হচ্ছে।

ফেরার সময় শান্ত রুপককে বলল, ভাগ্যিস আজকে আমি তোর সাথে আসছিলাম।

রূপক বলল, কি, আবার পড়লে নাকি?

শান্ত বলল, হুমম যে পড়ে বারবারই পড়ে। তোর মতন নাকি!!

 

দুই

রুপকদের ডিপার্টমেন্টে মেহেদী উৎসব চলছে। দুপুর ১২:২০ মিনিটে অদিতি তমাকে নিয়ে এল। রুপকের হাতে ছিল একটা ডিএসএলআর, সে প্রোগ্রামের ফটোগ্রাফি করছে। রুপকের সাথে দেখা হতেই বলল, অনেক কষ্ট করে ওকে নিয়ে এলাম। শান্ত কোথায়?

রূপক বলল, শান্ত তো ৩ তলায় আছে।

এরপর রূপক ভার্সিটির এক ছোট ভাইকে ডেকে বলল ৩ তলা থেকে শান্তকে ডেকে আনতে। সেই ছেলে শান্তকে ডাকতে গেলে অদিতি বলল, ‘আমি ওর সাথেই যাই। তমা, তোরা কথা বল।’ এই বলে অদিতি চলে গেল।

রূপক তমাকে জিজ্ঞেস করল, কেমন আছেন?

তমা বলল, জ্বি ভাল। আপনি?

রুপকঃ হুমম ভাল।

তমাঃ আর কি গিয়েছিলেন গ্যালারীতে?

রুপকঃ নাহ। প্রোগ্রামটা নিয়ে একটু ব্যস্ত ছিলাম।

তমাঃ সেদিনকার ঐ পেইন্টিংটা কিন্তু অসাধারণ ছিল।

রুপকঃ হুমম, শ্যাম পুলকের কাজগুলো আসলেই অসাধারণ হয়।

তমাঃ তার কি একক প্রদর্শনী হয় না?

রুপকঃ এই তো সামনেই ২২ তারিখে তার দ্বিতীয় একক প্রদর্শনী।

তমাঃ আচ্ছা?

রুপকঃ চলুন, আপনাকে মেহেদী দেয়ার সিটে বসিয়ে দেই।

এরপর রূপক তমাকে নিয়ে গিয়ে সাজানো সিটগুলোর একটিতে বসিয়ে দিল। তমা একজনকে মেহেদী দিতে লাগল। আর রূপক ফটোগ্রাফি করতে লাগল। তমারও কিছু ফটো তুলল।

এসময় অদিতি ফিরে এল। সে হাতে মেহেদী নিল। তমা দিয়ে দিল। অদিতির অনেক জোরাজুরিতেও তমা হাতে মেহেদী নিল না। ফেরার সময় তমা রুপককে বলল, যদি কিছু মনে না করেন, একটা কথা বলি?

রূপকঃ হ্যা, বলেন।

তমাঃ আসলে আমার ফ্রেন্ডরা এসবে যেতে চায় না। একা একাও আবার যাওয়া যায় না। আপনি কি ২২ তারিখে আমাকে সাথে নিয়ে যেতে পারবেন?

রুপকঃ (একটু অবাক হয়ে) আচ্ছা, ঠিক আছে।

তমাঃ আপনার নাম্বারটা দিন। আমি ফোন দিব।

রূপক ওর নাম্বার দিল। তমা আর অদিতি বিদায় নিয়ে চলে এল।

 

তিন

২২ তারিখে শ্যাম পুলকের চিত্র প্রদর্শনী দেখতে গ্যালারীতে আসল তমা ও রূপক। ঘুরে ঘুরে পেইন্টিং দেখতে লাগল।

তমাঃ আপনি ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্ট, আপনি পেইন্টিং পছন্দ করেন কেন?

রুপকঃ ছোটবেলা থেকেই আমার পেইন্টিং ভাল লাগে। আসলে আমি যে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি সেটা আমার জীবনকে চালিয়ে নেয়ার জন্য আর পেইন্টিং- সে আমার হৃদয়কে চালিয়ে নেয়ার জন্য।

তমাঃ কিন্তু যেটা আমাদের passion, সেটাই তো আমাদের profession হিসেবে নেয়া উচিৎ।

রুপকঃ আমাদের এই প্রিয় আর্টিস্ট শ্যাম পুলক বলেছিলেন- ‘যা ভালবাসি তা প্রমান করার জন্যে নাকি আবার পরীক্ষা পাশ করতে হবে, এ আমার দ্বারা হবেনা।’ যদি আমি এখন পেইন্টিং এ পড়তাম তাহলে দেখা যেত আমার বিভিন্ন বিষয় মুখস্ত করতে হত, তারপর সেগুলোর পরীক্ষা দিতে হত, আঁকার উপরে পরীক্ষা দিতে হত, অনেক বিষয় আছে যা আমাকে মুখস্ত করে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে হত অর্থাৎ আমার শিল্পসত্বাকে পরীক্ষার খাতা দিয়ে বিচার করা হ’ত। যা আমি চাই না।

তমাঃ কিন্তু আমি তো লিটারেচার পছন্দ করি, লিটারেচারই পড়ি এবং দেখা যায় পরীক্ষায় ভাল মার্কসই পাই, তার মানে কি লিটারেচারের প্রতি আমার ভালবাসাকে পরীক্ষা করা হচ্ছে? হীন করা হচ্ছে?

রুপকঃ ঠিক তা না। লিটারেচার পড়ানো যায়। কিন্তু তা যদি এমন হত উপন্যাস-কবিতা লেখা শেখানো হচ্ছে, ধরেন ‘নজরুল কবিতা পাঠশালা’ কিংবা ‘রবীন্দ্রনাথ উপন্যাস পাঠশালা’ খুলে শেখানো হচ্ছে- তাহলে তা মানা যায় না। শিল্প শেখানো যায় না। শিল্প মনের, মননের। ইঞ্জিনিয়ারিং এর পড়াশোনা যদি হয় মস্তিষ্কের তবে শিল্পটা হৃদয়ের।

তমাঃ তাহলে কি জয়নুল আবেদীন চারুকলা ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে ভুল করেছিলেন?

রুপকঃ না। কারণ, তিনি শিল্পীদের জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরী করেছিলেন। এখানে আর্টের প্রতি যাদের অনুরাগ আছে, তারা এমন একটা পরিবেশ পাচ্ছে যেখানে একসাথে পেইন্টিং নিয়ে আলোচনা করতে পারবে, পেইন্টিং করতে পারবে। কিন্তু, এর মাধ্যমে যে সার্টিফিকেট দেয়া হচ্ছে সেইটা নিয়েই হল সমস্যা। কারণ, সার্টিফিকেট দিয়ে তো আর পেইন্টিং হয় না।

তমাঃ তা ঠিক। কিন্তু, পরীক্ষা দিয়ে তো আসলে মেধা বিচার করা হচ্ছে।

রুপকঃ এখানেই তো আমার যত সমস্যা। আমার মনে হয় কেউ আসলে কম-বেশি মেধাবী না, সবাই মেধাবী। একেকজন একেক দিক দিয়ে। কিন্তু, আমরা সবাই তাকে তা প্রকাশ করার সুযোগ দেই না, আমরা তার উপর অন্য কিছু চাপিয়ে দেই। সেই বোঝা বইতে বইতেই সে তার মেধা প্রকাশ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যেমন- একটা কথা আমরা সবাই ভুলে যাই, আমরা ছোটবেলা যে স্বপ্নগুলা দেখি বা যে সকল বিষয়ে আমরা বিষ্মিত হই, পরবর্তীতে সে সকল বিষয়ে স্বপ্ন দেখতে বা বিষ্মিত হতে ভুলে যাই। তোমার কি মনে হয় এটা শুধু শুধুই?

তমা কিছুক্ষণ ভাবল। একটু পর হেসে ফেলল। তারপর বলল- তাই তো। আমিও তো ছোটবেলায় অনেক স্বপ্ন দেখতাম। সেগুলা তো এখন মনেই পড়ে না। অবাক করার বিষয় হল- যে বিষয়ে আমি সচরাচর বিষ্ময় প্রকাশ করতাম, সেগুলো এখন স্বাভাবিক লাগে আমার কাছে। তোমার কি মনে হয়? এটা পারিপার্শ্বিক চাপের কারণে এমন হয়?

রুপকঃ আসলেই তাই। আসলে আমরা ধীরে ধীরে স্বপ্ন দেখতে ভুলে যাই, বিষ্মিত হতে ভুলে যাই। এর কয়েকটা কারণ- যখন আমরা ছোট থাকি তখন দেখা যায় আমরা ছোট ছোট ঘটনায় বিষ্ময় প্রকাশ করি কিংবা আমাদের অদ্ভুত অদ্ভুত স্বপ্নের কথা বাবা-মা’কে বলি। তখন তারা খুব বিরক্ত হন। তারপর যখন ধীরে ধীরে আমরা বড় হই, স্কুল-কলেজে আসি, তখন বই-পরীক্ষা-রেজাল্টের চাপে আমরা আমাদের স্বপ্নের কথা ভুলে যাই, কোন বিষয়ে বিষ্মিত হতেই ভুলে যাই।

তমাঃ বড় হয়ে আমরা স্বপ্নের কথা ভুলে যাই সে বুঝলাম, কিন্তু বিষ্মিত হতে কিভাবে ভুলে যাই?

রুপকঃ আজকে তোমার বাবাকে যদি এই প্রশ্ন কর- ‘বাবা, আমরা যে আছি, যদি এটা সত্যি না হয়, যদি হয় আমাদের ছায়াটাই আসল, তবে কেমন হত?’ তাহলে দেখবে তোমার বাবা হয়ত এ শুনে এক মস্ত হাই তুলেছেন। ঠিক যেমনটা আজ থেকে বহু বছর আগে গ্যালিলিওর ‘যদি পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে’ শুনে মানুষ হাই তুলত।

তমা কিছু না বলে হাসল। একটু পরে হাতঘড়ি দেখে বলল- ‘অনেক দেরি হয়ে গেল। এখন তো ফিরতে হয়।’

রুপকঃ চল, তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।

তমাঃ না থাক। আমার আবার একটা কাজ আছে। পরে দেখা হবে। আমি তোমাকে ফোন দিব। ভাল থেকো।

রুপকঃ আচ্ছা, বিদায়।

তমাঃ বিদায়।

 

চার

সেদিন রাতে তমা ওর বাবাকে খাবার টেবিলে জিজ্ঞেস করল- ‘আচ্ছা, বাবা, যদি ছায়াটাই আসল, কায়াটাই মিথ্যে হয় তাহলে? সে কি হওয়া সম্ভব?

এ কথা শুনে তমার ব্যাঙ্কার বাবা হাই তোলার পরিবর্তে ধমক দিয়ে বলল- তোমার মাথা কি নষ্ট হয়ে গেছে? কোন সাবজেক্টে এসব লেখা আছে? কোন স্যার?

তমা কিছু না বলে আস্তে করে উঠে চলে গেল। রুমে গিয়ে হাসতে লাগল।

তমা রাতে রূপককে ফোন করল।

তমাঃ হ্যালো! কেমন আছ?

রূপকঃ উমম, ভাল। কিন্তু আপনি?

তমাঃ কেন, চিনতে পারনি?

রূপকঃ ওহ, তুমি। কেমন আছ?

তমাঃ ভাল। তোমার কথাটা কিন্তু ঠিক হয়নি।

রূপকঃ কোন কথাটা?

তমাঃ ঐ যে বললে বাবা হাই তুলবে।

রূপকঃ তুমি সত্যি সত্যি জিজ্ঞেস করেছিলে?

তমাঃ (হাসতে হাসতে) হ্যা! করেছিলাম তো। একথা শুনে বাবা হাই এর বদলে আমাকে ধমক দিল।

রূপক হাসল।

তমাঃ হুমম। তাহলে তো তোমার কথাই ঠিক- আমরা বিষ্মিত হতে ভুলে যাচ্ছি।

রূপকঃ আমার মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দার্শনিক শিশুরা। কারণ, দর্শনের শুরুই বিষ্মিত হওয়া থেকে আর শিশুরাই সবচেয়ে বেশি বিষ্মিত হয়। যে এই বিষ্মিত হওয়াকে ধরে রাখতে পারে, সেই দার্শনিক হয়।

তমাঃ তুমি সিএসই তে কেন ভর্তি হলে? আজ সকালে মনে হচ্ছিল তোমার তো আর্ট পড়া উচিৎ ছিল। এখন মনে হচ্ছে ফিলসফি পড়া উচিৎ ছিল।

রূপকঃ যেন তাড়াতাড়ি জব পেতে পারি। কারণ, আমার বাবা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। তিনি আমাকে জব দিতে পারবেন। আর তারও তাই ইচ্ছা।

তমাঃ তার মানে কি তুমি নিজের ইচ্ছায় সিএসই তে ভর্তি হয়েছ?

রূপকঃ অবশ্যই। স্কুল জীবন থেকে রীতিমত আমি স্বপ্ন দেখেছি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। তবে সে স্বপ্ন আমার ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়েছে আমার বাবা। ছোটবেলা থেকে সে আমাকে উৎসাহ দিত এ বিষয়ে, স্বপ্ন সেখান থেকেই তৈরী হয়েছিল।

তমাঃ চাকুরী পাওয়ার জন্য তুমি পড়াশুনা করছ?

রুপকঃ অবশ্যই। পেট চালাতে গেলে চাকুরীর চিন্তা করতে তো আমরা বাধ্য।

তমাঃ যার প্রতি তোমার অনুরাগ সেটা দিয়ে কি পেট চলত না?

রূপকঃ আমার পেট চলত। কিন্তু বাবার ইচ্ছা পূরন হত না। আমি বুঝি না, বাবা-মা কেন তাদের নিজেদের স্বপ্ন আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়?

তমাঃ কারণ, এটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। আমরা যা না হতে পারি, আমরা চাই নিজেরা না পারলেও আমাদের সন্তানকে দিয়ে সে স্বপ্ন পূরণ করাতে। পথ চলাতে আমরা যে বাধা পেয়েছি, যা ভাল মনে করেছি, আমরা চাই আমাদের সন্তান যেন সে বাধায় আর না পড়ে, তাই ভুল করার আগে সেই ভাল দিকটা আমরাই তাদের ধরিয়ে দেই।

রূপকঃ হুমম, তা বুঝলাম। কিন্তু, তা কেন পজিটিভ হবে? বাবা-মা’র স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে তো আমরা মনকেই শান্ত রাখতে পারিনা। দেখা যায়- আমরা আমাদের স্বপ্ন এবং বাবা-মা’র স্বপ্নের মাঝখানে পড়ে থাকি। আমাদের স্বপ্নও পূরণ হয় না, self satisfiction এর অভাবে বাবা-মা’র স্বপ্নও পূরণ হয় না।

তমাঃ তা ঠিক। আমারও একটা স্বপ্ন ছিল। আমার স্বপ্ন ছিল নজরুল সঙ্গীত শিল্পী হবার।

রূপকঃ তাই নাকি? সে তো আমার গুরু। তাহলে তুমি শিখলে না কেন?

তমাঃ ঐ যে, বাবা-মা! তারা চান না গান শিখি। আচ্ছা, আজ অনেক কথা হল। পরে আবার কথা হবে। বিদায়।

রূপকঃ আচ্ছা, বিদায়। ভাল থেকো।

 

পাঁচ

কয়েকদিন পর একদিন শান্ত, রূপক, তমা, অদিতি সবাই মিলে গল্প করছিল। সবাই গল্প-গুজব, হাসাহাসি করছিল। অথচ যার দুষ্টুমির করার কথা সবচেয়ে বেশি ছিল সেই শান্তই শান্ত হয়ে রইল। অদিতি জিজ্ঞেস করল, কি ব্যাপার? তুমি অমন মনমরা হয়ে বসে আছ যে!

শান্তঃ আসলে কি জানো, আমার এক কাছের ফুফাতো ভাই গত পরশু আত্মহত্যা করেছে।

অদিতিঃ বল কি! কিভাবে?

শান্তঃ আমি যতটুকু জানতাম- ও একটি মেয়েকে ভালবাসত। মেয়েটাও। মেয়ের বাড়িতে বিয়ের জন্য পাত্র দেখা শুরু করলে ও ফুপা-ফুফুকে জানিয়েছিল। কিন্তু তারা মেনে নেয় নাই। ওদিকে মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। পরে মেয়ে বিয়ের ২ দিন আগে ওর সাথে পালিয়ে আসে। এরপর ওরা একটি পুকুর পাড়ে আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যা করার আগে ওরা একটি সুইসাইড নোট লিখে রেখে যায়।

রূপক বলল, কেন যে এরকম করে এরা! বুঝি না। যাই হোক- তুই আর মন খারাপ করিস না।

 

( ২য় পর্বের লিঙ্ক )

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top