Today 28 May 2023
banner
নোটিশ
ব্লগিং করুন আর জিতে নিন ঢাকা-কক্সবাজার রুটের রিটার্ন বিমান টিকেট! প্রত্যেক প্রদায়কই এটি জিতে নিতে পারেন। আরও আছে সম্মানী ও ক্রেস্ট!
banner

আদম (আঃ) এর পদচিহ্ন এডাম পিক !

লিখেছেন: মোঃ অলিউর রহমান | তারিখ: ১৪/০৭/২০১৩

এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1874বার পড়া হয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেশে রয়েছে অনেক বিখ্যাত ও দর্শনীয় স্থান। এই সকল দর্শনীয় স্থানের মধ্যে এমন অনেক স্থান আছে যেগুলো আবার মানুষদের কাছে পবিত্র স্থান হিসেবে পরিচিত। এই সকল স্থানে মানুষেরা দর্শন, ভ্রমণ ও প্রার্থনার জন্য আগমন করে থাকে। বিশ্বের সেই সকল বিখ্যাত ও পবিত্র স্থান গুলোর মধ্যে শ্রীলংকার এডাম পিক (Adam’s Peak) অন্যতম।
এডাম পিক পাহাড়ের একটি চূড়ার নাম যেখানে বিশ্বের প্রথম মানব হযরত আদম (আঃ) কে বেহেশত থেকে ফেরেশতারা নামিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মানুষ এই স্থানটিকে দর্শন করে আসছে এবং পবিত্র স্থান হিসেবে সেখানে প্রার্থনা করে আসছে।
AdamsFootPrint
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করার পর তাদের বেহেশতের মধ্যে থাকতে দিয়েছিলেন এবং তাদের বলেছিলেন তোমরা এখানে থাক, বসবাস করো এবং আমাকে স্মরণ করো তবে কখনোও এই গাছের ধারের কাছেও যেও না। মহান আল্লাহ আদম ও হাওয়া (আঃ) কে এক বিশেষ ধরনের গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন। তবে কিছু দিন পর ইবলিশ শয়তানের প্ররোচনায় পরে হযরত হাওয়া (আঃ) এই গাছের ফল খেয়ে ফেলেছিলেন। তাদের এই হীন কৃতকর্মের কারণে মহান আল্লাহ তায়ালা আদম ও হাওয়া (আঃ) কে বেহেশত থেকে বিতাড়িত করেন। আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক ফেরেশতারা হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ) কে বেহেশত থেকে বের করে এনে পৃথিবীতে নির্বাসন দিয়ে যান। পৃথিবীতে এনে ফেরেশতারা হাওয়া (আঃ) কে জেরুজালেমে এবং আদম (আঃ) কে শ্রীলংকায় ফেলে রেখে যান। এরপর দীর্ঘ দিন পর আদম ও হাওয়া (আঃ) আবার পৃথিবীতে একত্রিত হন।
হযরত আদম (আঃ) কে শ্রীলংকার একটি সুউচ্চপাহাড়ের চূড়ায় ফেলে দেয়া হয়েছিল সেই চূড়াটিই এখন বর্তমানে এডাম পিক নামে পরিচিত। এডাম পিক খ্যাত চূড়াটি অবস্থিত যে পাহাড়ে সেই পাহাড়টির নাম সামানালা পর্বত। শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের শ্রীপাডা নামক প্রদেশে এই পাহাড় ও চূড়াটি অবস্থিত । খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম এই চার ধর্মের অনুসারীদের কাছে অতি পবিত্র এই চূড়াটি। চূড়াটির চারদিকে তাকালে দেখা যায় সবুজের বিপুল সমারোহ এবং মাঝেমধ্যে পাহাড়ি উঁচু-নিচু টিলা। সেই সব পাহাড়ি চূড়ার আশপাশে রয়েছে অসংখ্য ছোট নদী ও পাহাড়ি ঝরনা। সব মিলে এক মায়াবী নয়নাভিরাম পরিবেশে অবস্থিত চূড়াটি।
Adams Peak-2
হজরত আদম (আ.) এই চূড়ায় পতিত হয়েছিলেন বলে এই চূড়াটিকে আদম চূড়া বা এডাম পিক বলা হয় । দর্শনীয় ও পবিত্র এই এডাম পিক চূড়ার উচ্চতা ৭৩৫৯ ফুট বা ২২৪৩ মিটার।সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই যে, হযরত আদম (আঃ) কে এই পর্বতের চূড়ায় নামিয়ে দেয়ার ফলে এই চূড়ায় আজও আদম (আঃ) এর পদচিহ্ন রয়ে গেছে। তিনি পৃথিবীতে পতিত হয়ে যেখানে প্রথম পা রেখেছিলেন মহান আল্লাহ আজও সেই স্থানটিকে তার রহমতে চিহ্নিত করে রেখেছেন। আদম (আঃ) এর পদচিহ্নটির মোট পরিমাপ হচ্ছে ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। যার দৈর্ঘ্য ২ ফুট ও প্রস্থ ৬ ইঞ্চি। বৌদ্ধ ধর্ম মতে, খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে এই পদচিহ্ন প্রথম আবিষ্কৃত হয়। আবিষ্কৃত হওয়ার পরে পদচিহ্নের চতুর্দিকে ঘেরাও দিয়ে রাখা হয়েছিল। আদম (আঃ) এর পদচিহ্নকে বৌদ্ধ ও হিন্দুরাও তাদের ধর্মের চিহ্ন বলে প্রচার করে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাবিশ্বাস করেন এই পদচিহ্নটি গৌতম বুদ্ধের, হিন্দুরা বিশ্বাস করেন এই পদচিহ্নটি তাদের দেবতা শিবার। তবে মুসলমানদের পাশাপাশি খ্রিষ্টানরাও বিশ্বাস করেন এটি হযরত আদম (আঃ) এর পদচিহ্ন। যুগ যুগ ধরে লক্ষ লক্ষ পর্যটক পরিভ্রমণ করেছে চূড়াটিতে। বিশ্বের যেসব নামকরা পর্যটক এই চূড়াটিতে পরিভ্রমণ করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ইবনে বতুতা ও মার্কো পোলো। চূড়াটিতে যারা পরিভ্রমণ করেন তারা এর চতুর্দিকে পরিদর্শন করা ছাড়াও স্পর্শ করে দেখেন হযরত আদম (আঃ) এর পদচিহ্ন। বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরাই বেশি এই চূড়ায় যাতায়াত করে। এই ধর্মের অনুসারীরা মনে করেন এই চূড়াটি তাদের অস্তিত্বের আদি প্রতীক।
adams-peak
এডাম পিকে চড়া খুব সহজ বিষয় নয়। পাহাড়টি সুউচ্চ হওয়ার কারণে সেখানে পৌঁছানো খুবই কষ্ট সাধ্য। সেখানে পৌছাতে হলে প্রথমে নৌকায় চড়ে কিছু পথ যেতে হয় তারপর পায়ে হেঁটে উঁচু পাহাড়ে উঠতে হয়। পাহাড়েরচূড়ায় পৌঁছানোর জন্য পাহাড়ের গা বেয়ে তিনটি রাস্তা তৈরি করা আছে। পাহাড়ে চড়ার সময় পথিমধ্যে বিভিন্ন বিপদেরও আশংকা রয়েছে। পাহাড়টির অনেকাংশ সবুজ গাছে ঢাকা থাকার কারণে এই পাহাড়ে রয়েছে অনেক বিষাক্ত সাপ ও পোকামাকড়। এডাম পিককে ঘিরে রয়েছে আরও একটি রহস্য। হাজার হাজার বছর ধরে গবেষণার পরও মানুষ আজও সেই রহস্যের কূলকিনারা করতে পারিনি। আর সেই রহস্যটি হচ্ছে, চূড়ার যে স্থানে আদম (আঃ) এর পায়ের চিহ্ন অবস্থিত সেই স্থানে বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সূর্যের আলো পড়ে না আবার মে থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত মেঘের ঘনঘটা বা বৃষ্টিও সেখানে পড়ে না।
পাহাড়ের নিচে রয়েছে শ্রীলংকান একটি গ্রাম। বিখ্যাত এই পাহাড়কে কেন্দ্র করে পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠেছে বাজার। যেখানে পর্যটকরা বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনে থাকে। এডাম পিক হাজার হাজার বছর ধরে অবিকৃত অবস্থায় রয়ে গেছে। সবার বিশ্বাস এটি আরও কোটি কোটি বছর ধরে রয়ে যাবে সত্য পথের সন্ধান দাতা হিসেবে।

২,০১৭ বার পড়া হয়েছে

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ৩২ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ২০ টি
নিবন্ধন করেছেন: ২০১৩-০৫-১৯ ০৭:৪০:২১ মিনিটে
banner

১২ টি মন্তব্য

  1. আমির হোসেন মন্তব্যে বলেছেন:

    আদম (আঃ) এর পদচিহ্ন এডাম পিক ! এই লেখার জন্য
    (অলৌকিক গল্প, ইতিহাস-ঐতিহ্য, দেশ-বিদেশ, ধর্ম ও দর্শন, বিবিধ, ভ্রমণ কাহিনী, রহস্য গল্প)এতগুলো বিষয় কেন? বুঝলামনা ব্যপারটা। যেকোন একটি বিষয় নির্বাচন করুন। তবে আপনার পোস্টটি পড়ে কিছু জানতে পারলাম। ভাল লাগল।

  2. আরিফুর রহমান মন্তব্যে বলেছেন:

    অলিউর ভাই দয়া করে যে কোন বিষয় নির্বাচন করুন। তাহলে আমরা বুঝতে পারি যে আপনি কোন বিষয়ের উপর লিখেছেন। তবে বেশ অনেককিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাধ।

  3. এ হুসাইন মিন্টু মন্তব্যে বলেছেন:

    তথ্য বহুল পোস্ট

  4. সম্পাদক মন্তব্যে বলেছেন:

    আপনাকে অনেক দিন পর পেলাম। ভাল লাগল। নিয়মিত লিখুন।

  5. কাউছার আলম মন্তব্যে বলেছেন:

    আপনার পোস্টটি পড়ে কিছু জানতে পারলাম। ভাল লাগল।

  6. গৌমূমোকৃঈ মন্তব্যে বলেছেন:

    অনেক কিছু জানলাম। শুভকামনা।

  7. mithun মন্তব্যে বলেছেন:

    অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ লেখককে।

  8. তাপসকিরণ রায় মন্তব্যে বলেছেন:

    জানার মত কিছু পেলাম।পড়ে ভাল লেগেছে।ধন্যবাদ।

  9. তুষার আহসান মন্তব্যে বলেছেন:

    “আর সেই রহস্যটি হচ্ছে, চূড়ার যে স্থানে আদম (আঃ) এর পায়ের চিহ্ন অবস্থিত সেই স্থানে বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সূর্যের আলো পড়ে না আবার মে থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত মেঘের ঘনঘটা বা বৃষ্টিও সেখানে পড়ে না।”
    অবাক হওয়ার মত বিষয়।

  10. শাহ্‌ আলম শেখ শান্ত মন্তব্যে বলেছেন:

    তাপস কাকার সনে একমত ।

  11. অনিরুদ্ধ বুলবুল মন্তব্যে বলেছেন:

    “সেই স্থানে বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সূর্যের আলো পড়ে না আবার মে থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত মেঘের ঘনঘটা বা বৃষ্টিও সেখানে পড়ে না” – বেশ তথ্যবহুল সুন্দর পোস্ট। অবাক লাগে যে ভৌগোলিক নিয়ম ও জলবায়ূর স্বাভাবিক গতিবিধি সেখানে কার্যকরী নয়! এটা কতটা গুজব আর কতটা সত্য সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সর্বোপরি, এমন একটা সুন্দর পোস্ট ছবিসহ শেয়ার করেছেন। লেখককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করতে লগিন করুন.

go_top