আদার ব্যাপারীর গপ্পো – আমি খেয়েছি, আপনারা খাবেন তো ?
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 910বার পড়া হয়েছে।
গত কয় দিন ধরেই শরীরটা বেশ খারাপ যাচ্ছে।শীতের রাজ্যে এই সময়টাতে এমনিতেই তাপমাত্রা কমে যায়। এরই মধ্যে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির কাছাকাছি হয়েছে কয়েকবার। যদিও লন্ডনে এইটি তেমন কোনো নিম্নক্রম উল্লেখযোগ্য তাপমাত্রা নয় এই সময়ের জন্যে। উল্লেখযোগ্য না হলেও লন্ডন শহরে এখন আর মাইনাস (-) তাপমাত্রা খুব একটা দেখা যায়না। আর তাপমাত্রা মাইনাস হলেও খুব বেশিদিন দীর্ঘস্থায়ী হয় না। গত কয়েক বছর ধরে এমনটিই দেখে আসছি। ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’ এর প্রভাবেই এমনটি হচ্ছে বোধহয়।যাক, সেই চিন্তা আমার না করলেও চলবে।এর জন্যে মেলা গবেষক রয়েছেন দুনিয়ায়।
বেশ ঠান্ডা লাগার কারণে ক্রমাগত কাশি হচ্ছে। এটাকে সাধারণত সর্দিজ্বর বা ঠান্ডা লাগাই বলা চলে।এরই মধ্যে গলায় প্রদাহের কারণে কিছুটা অসুবিধাও সৃষ্টি হয়েছে। শ্বাসনালী, নাসিকা যন্ত্র বন্ধ হওয়ার উপক্রম।লেখা লেখিও লাটে উঠেছে।বুকের ভিতর সারাক্ষণই খুঁচখুঁচে কাশির জ্বালা।অতি মাত্রায় কাশির জন্যে ব্যথার যন্ত্রণাও বেড়েছে অনেক। প্রতিদিন ‘হিট ব্যাগের’ ওয়াটার থেরাপি দিয়ে যাচ্ছি। হট ওয়াটার ব্যাগ ভর্তি গরম পানির সেক। রাবারের প্যাকে গরম পানি ভর্তি করে দেহের বিভিন্ন স্থানে পরশ দেয়া। স্বরযন্ত্রের প্রদাহ এবং কষ্টকর শ্বাসটান উপশম হচ্ছে। এই ওয়াটার থেরাপি পৃথিবীর সবচেয়ে আদিম চিকিৎসা।এই চিকিৎসা সবচেয়ে সস্তা আর নিরাপদ।পানির মূল্যে চিকিৎসা ! বলা যায় বিনা মূল্যে। খৃস্টপূর্ব ৪০০ অব্দে হিপোক্রিটাস পানি চিকিৎসার সাহায্য নিতেন।প্রাচীন মিসরীয়, পারস্য, গ্রীক, ভারতীয় ও চীনা সভ্যতার মানুষ পানি থেকে চিকিৎসা নিত।আমিও বেশ সুফল পেয়েছি এই যাত্রায়।তবু ভুগতে হয়েছে অনেকদিন।
সাথে ছিল প্রতিদিন নিয়মিত আদা, দারুচিনি,মধু এবং লেবু মিশিয়ে গরম চা পান।দিনে তিনবার। প্রয়োজন বুঝে আরো বেশিও করেছি। আদা এবং সাথে ব্যবহৃত মশলাগুলো যে কতটা মহার্ঘ্য বস্তু তা জানা থাকলেও এবার হাতে-নাতে টের পেলাম। আদা এখন আমার নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যের অন্যতম একটি। আদা না হলে এখন আর চলেই না।
আদা একটি উদ্ভিদ মূল যা মানুষের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। মশলা জাতীয় ফসলের মধ্যে আদা অন্যতম। আদা খাদ্যশিল্পে, পানীয় তৈরীতে, আচার, ঔষধ ও সুগন্ধি তৈরীতে ব্যবহার করা হয়। এটি ভেষজ ঔষধও বটে। মুখের রুচি বাড়াতে ও বদহজম রোধে আদা শুকিয়ে চিবিয়ে খাওয়া হয়। অধিকন্তু সর্দি, কাশি, আমাশয়, জন্ডিস, পেট ফাঁপায় আদা চিবিয়ে বা রস করে খাওয়া হয়।
আমার মতো খুঁচখুঁচে কাশির জ্বালা নিবারণের জন্যে অনেকের কাছে আদা একটি মহার্ঘ্য ব্যবহার্য হলেও ‘আদার ব্যাপারীরা’ এই মহার্ঘ্য বস্তুটির এত গুণ-কীর্তনের খবর রাখে কিনা কে জানে? আদার ব্যাপারীর নাকি জাহাজের খবর রাখতে বারণ !
আদিকালের এই প্রবাদটির অর্থ মূল্যহীন হলেও এই বাক্যটি দিয়ে অন্তত এটুকু বুঝা যায় যে, জাহাজের খবর নেওয়া আদার ব্যাপারীর কাজ না। জাহাজের খবর রাখবেন জাহাজের ক্যাপ্টেন।বোধহয় সেই সময় আদার মূল্য খুবই কম ছিল। প্রচুর উৎপাদন হতো। বাহিরে থেকে জাহাজে করে আমদানি করা লাগত না। তাই হয়তো ঠাট্টা করেই কেউ একবার বলে ফেলেছিল। আর সেই থেকেই এ প্রবাদ বাক্যের প্রচলন।
আদা মাটিতে জন্মে আর জাহাজ চলে জলে।মাটি আর জল এই দুটোই মানুষের অস্তিত্বের সাথে জড়িয়ে আছে।জল ছাড়া আমরা একদিনও কল্পনা করতে পারি না। আর মাটি সেতো সোনার চেয়েও খাঁটি। আমরা মানুষরা মাটির তৈরী। স্রষ্টা নাকি মাটি দিয়েই মানুষ তৈরী করেছেন। আবার মাটিতেই ছেড়ে দিয়েছেন বসবাসের জন্যে। জীবন সাঙ্গ হলে একদিন আবার সেই মাটিতেই মিশে যাবো।স্রষ্টার এমন কী সমস্যা হতো যদি মানুষকে জলে বসবাসের উপযোগী করে তৈরী করতেন ! পৃথিবীর তিন ভাগের দুই ভাগই তো জল।আমরা মানুষরা বসবাসের জন্যে উপযুক্ত জায়গাও পেয়ে যেতাম বেশি করে।পপুলেশন গ্রোথ নিয়ে এতো মাথা ব্যথা থাকত না।অথৈ জলরাশিতে ডুবে থেকে থেকে মাথাও ঠান্ডা রাখা যেত।’রং হেডেড’ বলে কেউ কাউকে গালমন্দ করতে হতো না। জলে বসবাস করতে করতে ‘ব্যাঙের সর্দি’র মতো শরীরে ঠান্ডা লাগাও একদিন ভুলে যেতাম। ঠান্ডা না লাগলে আদার গরম চাও খাওয়া লাগতো না। যাক স্রষ্টা যা করেছেন হয়তো মানুষদের মঙ্গলের জন্যই করেছেন।
তবে আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর নিয়ে রসিকতা করার দিন এখন শেষ। এখন আর সেই বাস্তবতা নেই। সময় মানুষকে অনেক বদলে দিয়েছে। আজকাল শুধু আদার ব্যাপারীই নয়, সকল ব্যাপারীকেই জাহাজের খবর রাখতে হয়। আবার আদার ব্যাপারীকেও সকল কারবারের দিকেই নজর দিতে হয়। উন্মুক্ত বাজার অর্থনীতির কল্যাণে আমাদের ব্যাপারীরা এখন আর শুধু আদা নিয়েই সীমাবদ্ধ নেই, দেশে উৎপাদিত সবচেয়ে ভালো পন্যটিই কিন্তু বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। আর পন্য পরিবহনে প্রধান এবং সস্তার বাহন এখনো জাহাজ। তাই আদার ব্যাপারীদেরকে এখন জাহাজের খবর রাখতেই হয়।এখন শুধু আদার ব্যাপারীই নয়, রসুন ও পেঁয়াজ ব্যাপারীকেও জাহাজের খবর নিতে হয়। আর একটু এগুলে দেখা যাবে ব্যাপারীদের এখন জাহাজের খবরই নিলেই চলেনা, উড়োজাহাজের খবরও রাখতে হয়। হালে পানের ব্যাপারীকেও উড়োজাহাজের খবর রাখতে হচ্ছে। দেশের মানিকগঞ্জের পান দখল করেছে পাকিস্তানের বাজার। পাকি নারীরা নাকি পান চিবাতে উস্তাদ। কবে, কখন, কোন ফ্লাইটে মানিকগঞ্জের পদ্মা তীরবর্তী মালুচি গ্রামের পান পাকিস্তান যাবে সেই খবরও রাখতে হয় এখন মানিকগঞ্জের নারী পান চাষিদের।
পাকিরা পান চিবাতে উস্তাদ হলেও আদার ব্যাপারীরা ব্যাপারীগিরী ছাড়তে নারাজ।ওই ব্যাপারীরা শুধু জাহাজের খবরই নয়,সমুদ্রের খবরও রাখে। সমুদ্র নিয়ে রয়েছে ব্যাপারীদের গভীর আগ্রহ।এইত সেইদিন আন্তর্জাতিক আদালতে সমুদ্র সীমানা নিয়ে একটি রায় হলো। সমুদ্র বিশেষজ্ঞরা রায়টি খুঁটিয়ে পড়ার আগেই আদার ব্যাপারীরা সেটা বুঝে গেলেন! শুরু হয় ব্যাপারীদের গলাবাজি। গলাবাজির চোটে গনেশদের পেট ভরে গেল।বুঝতে আর বাকি রইলো না হাল আমলে বিশ্বায়নের ধাক্কায় জাহাজ আর আদার কারবার একাকার হয়ে গেছে। জাহাজের কারবারিরা এখন হরহামেশাই আদার ব্যাপারীকে ডেকে পাশে বসায়। গপ্পো করে। আদার রসের রঙিন চাও খেতে দেয় !
ইতিমধ্যে আমিও দুই দুইবার আদার রসের গরম চা পান করেছি। হয়তো আমাকে আরো কয়দিন খেতে হবে নিজ স্বার্থেই। আপনারা খাবেন তো?
৮৯৮ বার পড়া হয়েছে
কবে, কখন, কোন ফ্লাইটে মানিকগঞ্জের পদ্মা তীরবর্তী মালুচি গ্রামের পান পাকিস্তান যাবে সেই খবরও রাখতে হয় এখন মানিকগঞ্জের নারী পান চাষিদের।
আমাদের মানিকগঞ্জের খবরটুকু শুনে ভাল লাগলো।
আপনার বাড়ি মানিকগঞ্জে ! পান খান তো ? পাকিস্তানের নারীদের মুখ রঙিন হয় মানিকগঞ্জের পান দিয়ে । অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
ভাল জিনিস জানতে পারলাম
ধন্যবাদ
জানতে পারলাম অনেক কিছু ধন্যবাদ