Today 28 May 2023
banner
নোটিশ
ব্লগিং করুন আর জিতে নিন ঢাকা-কক্সবাজার রুটের রিটার্ন বিমান টিকেট! প্রত্যেক প্রদায়কই এটি জিতে নিতে পারেন। আরও আছে সম্মানী ও ক্রেস্ট!
banner

আসুন জানি খয়ের সম্পর্কে

লিখেছেন: গোলাম মাওলা আকাশ | তারিখ: ১৪/০৯/২০১৪

এই লেখাটি ইতিমধ্যে 2251বার পড়া হয়েছে।

খয়ের
er

ভোজন প্রিয় বাঙ্গালীর খাবারের সীমাবদ্ধতা নেই। দৈনন্দিন তিন বেলা খাবারের পওে অনেকেই অভ্যাসগত কারণে কিংবা শখের বসে পান খেয়ে থাকেন। আর এ পানকে সুস্বাদু করতে নানান ধরনের মশলার সংমিশ্র করা হয়। এর মধ্যে খয়ের হল অন্যতম উপাদান।আর পান খেয়ে মুখ লাল করতে পানে চুন ও খয়ের এর ব্যবহার

vb

হয়ে আসছে সেই প্রাচিন কাল হতে। আর বাংলাদেশে এই খয়ের শিল্পের জন্য বিখ্যাত রাজশাহীর চারঘাট/ বাঘা ও পাবনার সাথিয়া। খয়ের ও খয়ের গাছ নিয়ে মজার কিছু কথা।

* *খয়ের [ khaẏēra ] পানের উপকরণ রূপে ব্যবহৃত গাছ বিশেষের কষায় বা ক্বাথ। খয়ের (বৈজ্ঞানিক নাম: Acacia catechu) একটি কণ্টকময় পর্ণমোচী উদ্ভিদ, যার উচ্চতা প্রায় টেমপ্লেট:M to ft পর্যন্ত হয়। ইংরেজি ভাষায় এই গাছ Catechu, Cachou বা Black Cutch নামেও পরিচিত। এশিয়ার নানা দেশ, যেমন চীন, ভারত এবং ভারত মহাসাগরের নানাদেশে,পাকিস্তান, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, মায়ানমার প্রভৃতি দেশে এই গাছের ফলন হয় ভারতীয় উপমহাদেশে, এই গাছের উপক্ষার (Resin)—’খয়ের’—পানের অন্যতম প্রধান মশলা হিসাবে ব্যবহার করা হয়। অন্য মশলা দেওয়ার আগে, পান পাতায় চুন বা খয়ের মাখানো হয়ে থাকে।

er

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস

জগৎ/রাজ্য: Plantae

বিভাগ: Magnoliophyta

শ্রেণী: Magnoliopsida

বর্গ: Fabales

পরিবার: Fabaceae

উপপরিবার: Mimosoideae

গণ: Acacia

প্রজাতি: A. catechu

দ্বিপদী নামঃ Acacia catechu

sdf

**ব্যবহারঃ

>খাদ্য: এই গাছের বীজ প্রোটিন সমৃদ্ধ তাই এর কষ বা কষায় বা ক্বাথ পানের মশলা হিসেবে খাওয়া হয়।

>পশুখাদ্য: এ গাছের ডাল ও পাতা ছাগল বা গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবে ব্যবহার হয়।

>ভেষজ: খয়ের ২ প্রকার। রক্তসার ও শ্বেতসার। শ্বেতসার খয়েরকে চলতি কথায় পাপড়ি খয়ের বলা হয়।

খয়েরের পাতা, কাণ্ড ও শিকড় দিয়ে ওষুধ তৈরি হয়। দুই ধরনের খয়েরের ব্যবহার একই কাজে।

* খয়ের ডায়রিয়া ও আমাশয় নিরাময় করতে সাহায্য করে।

* গলা ফুলে যাওয়া রোধ করে।

* রক্তপাত, বদহজম, অস্টিও-আর্থ্রাইটিস ও ক্যান্সারের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।

* এটি অশ্বরোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়।

* নানাধরনের ক্ষত ও হাত-পা কেটে গেলে ড্রেসিংয়ের সময় ক্ষেত্রে ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

* মাড়ির কোনো সমস্যা হলে বা মাউথওয়াশ হিসেবেও খয়ের ব্যবহার করা হয়।

* খাবার ও বেভারেজে খয়ের ব্যবহার করা হয়।

* খয়ের গাছের বিচি প্রোটিনের খুব ভালো উৎস।

* গাছের বাকল দিয়ে ওষুধ তৈরি করা হয়।

* আয়ুর্বেদিক ওষুধের উপকরন হিসেবে খয়ের ব্যবহৃত হয়।

* শরীরের জ্বালাপোড়া কমায়।

* জিহ্বায় স্বাদ ফিরিয়ে আনে।

* বহুমূত্র রোগ নিয়ন্ত্রণ করে।

* ত্বকের যেকোনো রোগে উপকারি।

* খয়ের এন্টিফাঙ্গাল হওয়ায় খাবারের প্রিজারভেটিভ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

*খদির খয়ের অল্প মাত্রায় ব্যবহারে যৌন সম্ভোগের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং অতি মাত্রায় ব্যবহারে পুরুষত্বহানি ঘটে।

*খয়েরের সঙ্গে তুঁতে ও ডিমের কুসুম মিশিয়ে পূর্ব আফ্রিকার লোকেরা ক্যান্সার রোগে বাহ্যিক ব্যবহার করে।

*ইউনানি মতে, খয়েরের গর্ভস্রাবকারক ও স্ত্রী লোকদের যৌবন দীর্ঘস্থায়ী করে।

>কাঠঃ জ্বালানি হিসাবে অথবা আসবাবপত্র নির্মাণের কাজে ব্যবহার করা হয়।এর কাঠের ঘনত্ব (wood density) প্রতি ঘনমিটারে প্রায় ০.৮৮ গ্রাম। খয়ের গাছ খুব শক্ত, স্থায়ী ও শিগগিরই ঘুণে ধরে না। কতিথ আছে, ‘প্রজাপতি শরীর ত্যাগ করলে তার অস্থি থেকে খয়ের গাছ উৎপন্ন হয়। সে কারণেই খয়ের গাছ অতিশয় কঠিন হয়েছে।’

>অন্যান্য: এই গাছের গুঁড়ির কেন্দ্রীয় অংশের কাঠ (heartwood) থেকে যে উপক্ষার বা কষ বা কষায় বা ক্বাথ নিষ্কাশন করা হয়, তার ব্যবহার হয়—–

*বস্ত্রাদির রং হিসাবে (dye),

* চামড়া পাকানোর কাজে (tanning),

*মাছ ধরার জালের সংরক্ষক (preservative) হিসাবে,

*ওষুধ তৈরির কাজে এবং

*খনিজ তেল ড্রিলিং-এর কাজে তেলের সান্দ্রতা (viscosity) সংরক্ষণে।

>চাষ: জলে ভেজানো বীজ ছড়িয়ে এই গাছের চাষ করা হয়। প্রায় ছ’মাস ধরে নার্সারিতে রাখার পর এই বীজ চাষের মাঠে বপন করা হয়।

>যে ভাবে তৈরি হয় খয়েরঃ খয়ের গাছ দেখতে কিছুটা বাবলা গাছের মতো। ১৫ বছর বয়সী গাছ খয়ের

উত্পাদনের জন্য উপযোগী হয়।খয়েরের এ কাঠ ও ঘনসার ব্যবহৃত হয়। ঘনসার বলতে অনেকে গাছের নির্যাসকে বুঝে থাকেন। কিন্তু মূলত তা নয়। খয়ের গাছের উপরের সাদা অংশ তুলে ফেলে ভেতরের লাল বর্ণের শাঁস বা গাছের অভ্যন্তরে সার পদার্থ কুড়াল দিয়ে কেটে দুই তিন ইঞ্চি পরিমাণ লম্বা করে কুচি কুচি করে

কেটে তা মাটির পাতিলে বিশেষ নিয়মে তাপ দিতে হয়, সেই তাপে লাল বর্ণের শাঁস থেকে লাল রস বের হয়। এই রস গাঢ়

হলে তা পাতিলে ঢেলে রাখা হয়।(ঠিক আখের রস হতে গুড় তৈরির প্রক্রিয়া।) এই অবস্থাকে বলা হয় লালি খয়ের। লালি খয়ের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় শক্ত খাঁটি খয়েরে রূপ নেয়। এগুলো জমাট বেঁধে এলে মাটির ছাঁচে ঢেলে খয়ের তৈরি করা হয়। প্রান্তিক খয়ের চাষিরা ‘নালি খয়ের’ মহাজনদের কাছে বিক্রি করেন। মহাজনরা খয়েরের কেক তৈরি করতে ও ছায়ায় শুকাতে ৩-৪ মাস সময় লাগায়। এজন্য রয়েছে বড় বড় গোডাউন। গোডাউনে বিশেষ যন্ত্রের

সাহায্যে নালি খয়ের ছেঁকে জ্বাল দিয়ে খয়েরের কেক তৈরি হয়। সাধারণত পাঁচ কেজি খয়ের গাছের টুকরো থেকে এক কেজি নালি খয়ের তৈরি হয়।

>দরদামঃ এক গরুর গাড়ি খয়ের কাঠের দাম ১০ হাজার থেকে১ ৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। লালি খয়ের বিক্রি হয় ২৪শ’ থেকে ৬ হাজার টাকা মণ দরে।

>খয়ের চাষের ইতিহাসঃ ইতিহাস হতে জানা যায়, ১৯৪৭ সালের গোড়ার দিকে ভারত থেকে খয়ের গাছের চারা নিয়ে এসে রাজশাহীর চারঘাট-বাঘা বিভিন্ন অঞ্চলে লাগান হত। পরে এ শিল্প পাবনার সাথিয়া অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

১৯৫২ সালে চারঘাটের স্থানীয় ব্যক্তি মুন্সি নূরুল হক ও তাহের উদ্দিন প্রামানিকের উদ্যোগে চারঘাটে খয়ের শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। পঞ্চাশের দশকে তদানিন্তন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত বিহারিদেও মাধ্যমে এই শিল্পের উন্নয়ন ও প্রসার ঘটে। সে সময় স্থানীয় ব্যাক্তিরা ব্যাপক ভাবে এই শিল্পের সাথে জড়িয়ে পড়েন। বাংলাদেশে খয়েরের মোট চাহিদার শতকরা ৯০ ভাগই চারঘাট থেকে পূরণ করা হয়। খয়ের গাছ দেখতে কিছুটা বাবলা গাছের মত। জানা গেছে, কেবল রাজশাহী জেলার চারঘাট থানাতেই তৈরী হত। বৃহত্তর রাজশাহী জেলার পুঠিয়া, লালপুর, নাটোর সহ বিভিন্ন অঞ্চলে এই খয়ের গাছ পাওয়া যায়, সেখান থেকে খয়ের চাষীরা গরুর গাড়ি অথবা অন্য যানবাহনে করে চারঘাটে এসে বিক্রয় করত।

ষাট, সত্তর ও আশির দশক ছিল খয়ের শিল্পের জন্য সুবর্ণ সময়। ওই সময়ে চারঘাটের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ খয়ের শিল্পের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু নব্বই দশকের প্রথম দিকে নানাবিধ কারণে এই শিল্পের ধ্বংস নামে। খয়ের শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য চারঘাটের ব্যবসায়ীরা বহুমুখী সমবায় সমিতি গঠন করে। তারপরও খয়ের ব্যবসায় টিকে থাকা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়নি।

>যা প্রয়োজনঃ রাজশাহীর বাঘা- চারঘাটে ও পাবনার সাঁথিয়ার ঐতিহ্যবাহী খয়ের শিল্প বর্তমানে ধ্বংসের মুখে। সরকারী পৃষ্টপোষকতার অভাবে এ শিল্পের সংঙ্গে জড়িত পরিবারগুলো অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। এক সময় এ পেশায় সাথে জড়িত ছিল প্রায় ২ লাখ মানুষ। এখন তা ২ হাজারের কোটায় নেমে এসেছে। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে এক সময় ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পটি বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাবে। প্রাচীন উৎপাদন পদ্ধতি, আমদানিকৃত খয়েরের সাথে দেশী খয়েরের অসম প্রতিযোগীতা দৌরাত্ম্যসহ নানাবিধ কারণে শিল্পটি আজ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে পৌঁছেছে।

আর এ জন্য প্রয়োজন কিছু ব্যবস্থা —–

*ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য সরকারি পৃষ্টপোষকতার প্রয়োজন।

* পুঁজি সংকট কাটাতে ব্যাংকঋনের ব্যবস্থা করতে হবে।

* ভেজাল খয়ের আমদানি বন্ধ করতে হবে।

*প্রাচীন উৎপাদন পদ্ধতি বাদ দিয়ে নতুন উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।

*আমদানিকৃত বিদেশী খয়েরের সাথে অসম প্রতিযোগীতা বন্ধ করতে হবে এ জন্য আমদানি কমিয়ে দেশীয় শিল্পের প্রতি সরকারের মনোযোগ দিতে হবে।

* প্রচুর পরিমানে কাচাঁমালের ব্যবস্থা করতে হবে।

*ইজারাদার ও মধ্যবর্তী দালালদেও দৌরাত্ম কমাতে হবে।

* নির্দিষ্ট সময়ে খয়ের বিক্রি বা বাজারজাত করনের অসুবিধা দূর করতে হবে।

* রং তৈরির ক্ষেত্রে এবং ট্যানারি শিল্পে দেশী খয়েরের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।

*প্রতি বছর খয়েরের যে উৎপাদন হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প। প্রতি বছর তা ধাপে ধাপে তা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিতে হবে কৃষি মন্ত্রালয়কে।

২,১৫০ বার পড়া হয়েছে

লেখক সম্পর্কে জানুন |
আমি খুব সাধারণ।
সর্বমোট পোস্ট: ১৩৩ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ৯৭৪ টি
নিবন্ধন করেছেন: ২০১৪-০৮-২২ ১৬:৩০:৪৭ মিনিটে
banner

১০ টি মন্তব্য

  1. আর এন মিলি মন্তব্যে বলেছেন:

    বিয়ের দাওয়াত এ গেলে পান খেতে আমার বেশ লাগে তবে অনেকেই বলে খয়ের খাওয়া নাকি খারাপ

  2. দীপঙ্কর বেরা মন্তব্যে বলেছেন:

    Besh kotha
    besh bhalo post
    mone thakbe

  3. ঘাস ফড়িং মন্তব্যে বলেছেন:

    অনেক তথ্য জানলাম

  4. এই মেঘ এই রোদ্দুর মন্তব্যে বলেছেন:

    খয়েরের গুনাগুন সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল অনেক ধন্যবাদ সুন্দর পোস্টটির জন্য।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করতে লগিন করুন.

go_top