ঐ নতুনের কেতন ওড়ে
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1138বার পড়া হয়েছে।
বাংলা একাডেমীর সদর দরজার পাশে চায়ের স্টলে জমপেশ আড্ডা। গরম গরম সিঙ্গারা আর ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপের সঙ্গে তারা তর্ক জুড়ে দিয়েছে। বাংলা সাহিত্যে গীতগোবিন্দের প্রভাব কিংবা ইউসুফ জোলেখার কাব্য নিয়ে। এসব তরুণ বাংলা একাডেমীর তরুণ লেখক প্রকল্পের প্রশিক্ষণার্থী। ক্লাস শেষে আড্ডা দিচ্ছেন একাডেমীর সদর দরজায়। কেউ কেউ আবার আড্ডা ছেড়ে চলে যান বাংলা একাডেমীর বিক্রয়কেন্দ্রে রবীন্দ্রবিষয়ক নতুন বইটি কেনার জন্য। প্রতিদিন সকাল ১১টা বাজতেই তরুণ লেখকদের আনাগোনায় বাংলা একাডেমীর নজরুল মঞ্চের চারপাশ মুখরিত থাকে। ক্লাস শেষে আবার তারা চলে আসে নজরুল মঞ্চের সামনে। হয়তো কেউ একজন তার লেখা নতুন কবিতাটি পাঠ করছেন অন্যরা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বর্তমান মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের আগ্রহে ও উদ্যোগে এই প্রকল্পটি ২০১০ সাল থেকে পুনরায় সচল হয়েছে। প্রতি ছয়মাস অন্তর নতুন ব্যাচ ভর্তি করছে। এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে তরুণ লেখকদের আÍপ্রকাশের সুযোগ তৈরি করা। একই সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া।
এবার লেখা জাক পেছনের কথা, বাংলা একাডেমীর তরুণ লেখক প্রকল্পের শুরু হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। জুলাই’৯৫ থেকে জুন’৯৭ পর্যন্ত এই প্রকল্পে ১৬০ জন প্রশিক্ষণ নেয়। এই কর্মসূচির একটি বৈশিষ্ট্য ছিল অংশগ্রহণকারীদের লেখা গ্রন্থ প্রকাশ করা। প্রথম পর্যায়ের এই প্রশিক্ষণে ১৩৯টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। যেখানে রয়েছে কাব্যগ্রন্থ, ছড়া, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধগ্রন্থ। যদিও প্রথম পর্যায়ে প্রকাশিত এই বইগুলোর কোনো কোনোটি সে সময়ের গবেষকদের বিরূপ সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। শুধুমাত্র প্রকল্পের নীতিমালার কারণে অনেক দুর্বল বইও প্রকাশিত হয় সে সময়ে। সরকারের অনাগ্রহের কারণে ১৯৯৮ সালের পর প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১০ সালের পর এই প্রকল্পটি নতুন আঙ্গিকে শুরু হয়েছে। নতুন করে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে ভাবা হয়েছিল কবি মোহাম্মদ রফিককে। তার অসুস্থতার জন্য শেষ পর্যন্ত হায়াৎ মামুদকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রশিক্ষণের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে বাছাই করা হয় তাদেরই যারা লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত। বাংলা একাডেমী জাতীয় দৈনিকগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করলে সে বিজ্ঞাপন অনুসারে আগ্রহীরা আবেদন করেন। এদের মাঝ থেকে বাছাই করা হয় প্রশিক্ষণার্থী। তারপর তাদের টানা ছয়মাস তত্ত্বীয় ক্লাস, শিক্ষাসফর ইত্যাদির মধ্য দিয়ে সাহিত্যের ইতিহাস ও টেকনিক বিষয়ে জ্ঞান দেয় হয়। এই প্রকল্পে সাহিত্যের ইতিহাসের পাশাপাশি বাংলাদেশের ইতিহাস ও অর্থনীতি বিষয়ে লেখকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা অধ্যাপক, সৃজনশীল লেখক ও অনুবাদকেরা ক্লাস নিয়ে তরুণদের ভাবনার জগতকে নবপথগামী করেন। ২০১০ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের বেশ কয়েকটি ব্যাচ এরই মধ্যে এখান থেকে প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন। দুটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এরই মধ্যে কক্সবাজার ও চুয়াডাঙ্গায় বাংলা একাডেমী আয়োজিত আঞ্চলিক সাহিত্য সম্মেলনে অংশ নিয়েছে। তারা প্রবন্ধপাঠ ও আলোচনা শোনার পাশাপাশি স্বরচিত লেখা পাঠ করেছে।
বাংলা একাডেমীর এই প্রকল্পটি হয়তো নতুন লেখক তৈরি করতে পারবে না। কেননা প্রশিক্ষণ দিয়ে লেখক বানানো যায় না। তবে যারা লেখালেখি করতে চায় তাদের ভাবনার জগতকে নতুন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।
১,১৯৪ বার পড়া হয়েছে
“বাংলা একাডেমীর এই প্রকল্পটি হয়তো নতুন লেখক তৈরি করতে পারবে না। কেননা প্রশিক্ষণ দিয়ে লেখক বানানো যায় না। তবে যারা লেখালেখি করতে চায় তাদের ভাবনার জগতকে নতুন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।”
এটাই সার কথা।
ধন্যবাদ আপনাকে একটি ভিন্নতর বিষয় আমাদের সামনে তুলে ধরার জন্য।
এটাই আপনার প্রথম পোস্ট দেখছি,
চলন্তিকায় স্বাগতম!
বেশ তো লিখেছেন !
অনেক ভাল লাগল ।
বাংলা একাডেমীর এই প্রকল্পটি হয়তো নতুন লেখক তৈরি করতে পারবে না। কেননা প্রশিক্ষণ দিয়ে লেখক বানানো যায় না। তবে যারা লেখালেখি করতে চায় তাদের ভাবনার জগতকে নতুন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।
====================================================================================
একমত।
লেখাটি মনদিয়ে পড়লাম…
ভাল লাগল