ওকি গাড়িয়াল ভাই…
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1506বার পড়া হয়েছে।
গ্রাম বাংলার আহবমান ঐতিহ্য গরুগাড়ী আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে যেতে বসেছে। এতে করে গাড়িয়ালরা অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছে, তাই বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়ছে। আবার অনেকেই বয়সের ভারে নূয়ে পড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
এক সময়ে গ্রাম গঞ্জে, হাটে-বাজারে উত্তাল কণ্ঠস্বরে ধ্বানিত হত ‘‘ওকি গাড়িয়াল ভাই, হাকাও গাড়িতোর চিলমারির বন্দরে’’। গ্রাম বাংলার সহজ সরল মানুষেরা গরুগাড়ি করে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তরে বিভিন্ন মালামাল সরবরাহসহ বিয়েতে নতুন বউকে গরুগাড়ি করে শ্বশুরালয়ে নিয়ে যেতো। এখন সেই গরুগাড়ি তেমন চোখে পড়েনা। কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুগাড়ি আজ প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। হারিয়ে যেতে বসেছে আদিকালের উত্তাল কণ্ঠস্বর ওকি গাড়িয়াল ভাই।
আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিকাশে গরুগাড়ির পরিবর্তে যন্ত্রচালিত গাড়ি চালু হওয়ায় এবং গ্রাম বাংলার সহজ সরল মানুষেরা যন্ত্রচালিত গাড়িতে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে মালামাল সরবরাহসহ চলাচল করছে। ফলে গরুগাড়ি এখন বিলুপ্তির পথে এবং গাড়িয়ালরাও অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়ছে। আবার অনেকেই বয়সের ভারে নূয়ে পড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়তে না পেরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। কয়েকজন গাড়িয়াল এর সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, ‘‘আগে আমরা গরুগাড়ি চালিইছি, এখন যুগ পাল্টে যাওয়ায় শ্যালো মেশিন/পাওয়ার টিলার দিয়ে নছিমন, করিমন ও চাঁন্দেরগাড়ি তৈরী করে ওগুলো চালাচ্ছি। আবার অনেকের সিএনজি চালাচ্ছে’’। আধুনিক সভ্যতার ক্রম বিকাশে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুগাড়ির চাহিদা না থাকায় গাড়িয়ালরা শ্যালো মেশিন/পাওয়ার টিলার, ব্যাটারী চালিত অটো রিক্্রা এবং সিএনজি চালানোর পেশায় ঝুঁকে পড়েছে। তারা আরও জানান, নছিমন, করিমন, চাঁন্দেরগাড়ি এবং ব্যাটারী চালিত গাড়ি ও সিএনজি চালিয়ে প্রতিদিন ৫শ টাকা থেকে ৮শ, টাকা আয় করে। অপর দিকে রয়েছে জীবনের ঝুঁকি। এর কারণ হিসেবে তার স্বীকার করে বলেন, তারা নির্দিষ্ট কোন ড্রাইভারী প্রতিষ্ঠানে ড্রাইভারী প্রশিক্ষণ দেননি, তাদের নেই কোন লাইসেন্স, তারা রোড ও লাইট সিগন্যাল জানেন না এবং সরকার কর্তৃক তাদের কোনরূপ রোড পারমিড দেননি। তবে কোন রকমে কিভাবে চালাতে হয় সেটা তারা জানেন। তারা আরও বলেন, গরুগাড়ি ছিল পশু চালিত গাড়ি এবং পশুরা মানুষের কথা শুনতো। বর্তমানে যে সমস্ত নছিমন, করিমন, লক্কর-ঝক্কর চাঁন্দেরগাড়ি, ব্যাটারী চালিত গাড়ি তারা চালাচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে ব্রেক/ কন্ট্রোল ক্ষমতা তেমন নেই। নির্দিষ্ট স্থানে ব্রেক করলে, তার থেকে ৫০-৭০গজ দূরে গিয়ে ব্রেক হয়। এর ফলে ঘটছে নানা রকম দুর্ঘটনা। আর জীবন বাঁচার তাগিদে তারা এই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই স্বীয় পেশায় আয় উপার্জন করে আসছেন।
১,৫৭৪ বার পড়া হয়েছে
হারিয়ে যেতে বসেছে আদিকালের উত্তাল কণ্ঠস্বর ওকি গাড়িয়াল ভাই।
ভালো লাগলো আপনার লিখা টি
আপনার জন্য অনেক শুভ কামনা
হারিয়ে যাওয়ার পথেই তো নতুনের আগমন
তবু ও নষ্টালজিয়াই ভোগী,
স্মৃতী বড় বেশী অনুসারী
আনন্দ ও বেদনার।
ভাল লেগে গেলো।
গরুর গাড়ি এখন সোনার গাঁও যাদুঘরে শোভা পাচ্ছে। ডিজিটাল যুগে এসে গরু কিছুটা আরামবোধ করছে।
ছোটকালে দেখেছি ঐতিহ্যবাহী গরুগাড়ী, এখন আমরা আমাদের সন্তানদের গল্প বলে বুঝাতে হবে গরুরগাড়ী কি জিনিষ। সত্যিই…
নছিমন, করিমন, চাঁন্দেরগাড়ি এগুলোর চেয়ে গরুগাড়ীই ভালো ছিল।
কবি আরজু আপা র সাথে সহমত